নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি খুবই সাধারন একজন মানুষ।লিখালিখি ভাললাগে।লিখালিখির মাঝে আমি আমাকে খুঁজে পাই তাই লিখি।

সিয়াম মেহরাফ

আমি নিজেকে খুব ভালবাসি।

সিয়াম মেহরাফ › বিস্তারিত পোস্টঃ

“শিক্ষার ফল”

০৯ ই মার্চ, ২০১৬ দুপুর ২:৫৯

--কিরে আলামত?তোর পোলায় কেমন রেসাল্ট
করছে?
--ভালা না আলম ভাই।ওই যে কি জানি কয় এ
মাইনাস না কি হেইয়া পাইছে।
--আমার পোলায় এ প্লাস পাইছে।তোর পোলায়
তো পরীক্ষার সময় মাঠে গেছিল ক্রিকেট
খেলতে।এহানে,ওহানে দৌড়াইছে পড়ালিহা
রাইখা ওর এ প্লাস কেমনে আইবো?
--হয় আলম ভাই।পরীক্ষার মধ্যে ওরে এত
মারতাম,,এত গালাগালি করতাম হেরপরেও ও
খেলতে বাইরাইতো।কি আর কমু ভাইজান?
মাইনষের পোলাপাইন এ প্লাস পাইয়া লাফায়
আর আমার বজ্জাত পোলা এ মাইনাস না কি
হেইয়া পাইয়াই লাফালাফি শুরু করছে এইডাই
নাকি ভাল রেসাল্ট।
--এহনো সময় আছে তোর পোলারে ভালভাবে
লিহাপড়াডা করতে কইস।নাইলে কপালে পরে
অনেক দুঃখ আছে এই আমি কইয়া দিলাম।
--আলম ভাই ওই বজ্জাত ছেমরারে কইলেও কাম
হইবে না।আস্ত বজ্জাত পোলা একটা।কারো কথা
শুনে না,,না ওর মায়ের কথা না মোর কথা।
ছেমরাডারে লইয়া অনেক ঝামেলায় আছি।
--যেমনে কইরাই হোক ওরে বুঝা।নাইলে ও আস্তে
আস্তে আরো বজ্জাত হইয়া যাইবে।সেদিন
হুনলাম আবুল ভাইয়ের ছোট ছেলেডারে
পিডাইয়া পলাইছে।ভাগ্য ভাল আবুল ভাই তোর
পোলারে ধরতে পারে নাই।পারলে আধমরা
বানাইয়া দিত।
--ওরে কইতে কইতে আমার মুখ ব্যাথা হইয়া যায়
তাও ও হোনে না আমার কতা।সেই সকালে ঘর
দিয়া বাইরায়,দুপারে যহন ওর মায় পুহুরে পানি
আনতে যায় তহন পলাইয়া পলাইয়া ভাত খাইয়াই
আবার বাসা দিয়া বাইরায়।আর ওর খোঁজ পাওয়া
যায় না।আবার বাসায় ফেরে সেই রাইত ১০টায়।
সারাদিন কি খায় কই থাহে আল্লাহ মালুম।আর
সহ্য হয় না এই জ্বালা ইচ্ছে হয় মইরা যাইগা।
--অমন কতা কইস না আলামত।এহনো অনেক সময়
আছে বুঝাইবার।ওরে একটু ভালভাবে বুঝা,,এরম
থাইকলে ওরে কেউ এক পয়সাও দাম দিবো না।
ভালমত পড়ালিহা করতে কইস।কামে দিবে।আর
নাইলে ওরে কোন কাজে লাগাইয়া দে।
--ভাবতাছি পড়ালিহা আর করামু না ওরে কামে
লাগাইয়া দিমু।
--ওরে একবার আমার লগে দেহা করতে কইতে
পারবি?দেহি ওরে বুঝাইয়া-সুঝাইয়া পড়তে
কইবার পারি কিনা।
--আচ্ছা ভাইজান।আমি দেহি ওরে কইয়া-সইয়া
পাডানো যায় কিনা আপনের ধারে।
--আচ্ছা যা।আমার বাড়িতে আইজ দুপুরে আইস।
আমার পোলার এ প্লাস পাইছে দেইখা গ্রামের
সব গরিব মানুষগুলানরে একটু একবেলা ডাইল-ভাত
খাওয়ামু।
--আচ্ছা ভাই পারলে আইমুনে।
--পারলে না আইতেই হইবো তোর।আর যদি পারো
তোর পোলাডারে লইয়া আইস।
--বজ্জাতটায় তো ঘরেই থাহে না কেমনে আনুম?
আইচ্ছা খুঁইজা পাইলে কান ধইরা নিয়া আসুমনে।
--আইচ্ছা যা।
.
.
.
(আলামতের সেই বজ্জাত ছেলেটার নাম আলি।
এস.এস.সি পরীক্ষার মধ্যেও সারাদিন
খেলাধুলার পিছনে পরে থাকত।ভালভাবে
পড়ালেখাই করে নাই।তারপরেও অন্য ছাত্রদের
খাতা দেখে লিখে এ মাইনাস পাইছে।ক্লাস ৮
পর্যন্ত ভালোয় পড়ালিখা করছে কিন্তু তারপর
থেকে আর তেমন গুরুত্ব নেই পড়ালিখায়।অন্যের
খাতার লিখা চুরি করে করে এতদুর আসছে।তবে
ছেলেটার আচার-ব্যবহার খুবই ভাল)
.
.
.
দুপুরে বাড়ি যেতে যেতে আলামত রাস্তায়
আলিকে দেখে।দেখে পিছন থেকে গিয়াই কান
ধরে বাড়িতে নিয়ে যায়।এরপর রওয়ানা করে
আলম ভাইয়ের বাড়ির উদ্দেশ্য করে রওয়ানা হয়।
.
.
.
--কিরে আলামত আইছোস?
--হুম আলম ভাই আইলাম।
--তয় তোর বজ্জাতটা কই?আইছে না খুঁইজাই
পাওনাই?
--হয় ভাই আইছে।কিন্তু কই গেল কইতে পারলাম
না।
--ওই তো দেখছি।তুই এইখানে দাড়াঁ আমি ওর
লগে কথা কইয়া আইতাছি।
--আইচ্ছা ভাই।
.
.
(এটা বলেই আলম সাহেব চলে গেল আলির সাথে
কথা বলতে।আলিকে ডেকে তার ঘরে নিয়ে গেল
আলম সাহেব।)
.
এরপর বললেন-
--আলি কেমন আছোস?
--ভালা আলম কাকা।আপনে কেমন আছেন?
--হুম ভাল।হুনলাম তুই নাকি পড়ালিহা করতে
চাও না?
--এই পড়ালিহা করতে ভালা লাগে না কাকা।
--দেখ বাবা! পড়ালেহা করতে ভালা না
লাগলেও পড়ালিহা করতে হয় নাইলে মানুষের
নাহান মানুষ হয়া যায় না।তুই পড়ালিহা না
করলে তোর ভালা লাগে,আর পড়ালিহা করলে
তোর আব্বা-আম্মার ভাল লাগবে।এহন তুই কি
তোর একলার সুখ দেখবি না তোর আব্বা-আম্মার
দিকেও একটু দেখবি?ভাইবা দেখ বাবা
--কাকা মোর পড়ালিহা ভালা লাগে কিন্তু মুই
মোর আব্বা-আম্মার লেইগা সব করতে পারি
--তাইলে বাবা তুই একটু ভালভাবে পড়ালিহা কর
তাইলে তোর আব্বা-আম্মা অনেক খুশি হইবে।আর
তুই খারাপ হইয়া গেলে কেউ তোর দিকে ফিরাও
চাইবে না।তোর আব্বা-আম্মারে খারাপ কইবে।
এহন ভাইবা দেখ তুই কি চাও।
--কাকা মুই পড়ালিহা করলে সত্যিই মোর আব্বা-
আম্মা খুশি হইবে?
--হয় বাবা।তুই পড়ালিহা কইরা মানুষের মত মানুষ
হলে তোর আব্বা-আম্মা অনেক খুশি হইবে।
--তাইলে কাকা মুই আইজ থেইকাই ভালভাবে
পড়াশুনা করুম।
--সত্যি কইতাছস বাবা?
--হয় কাকা।সত্যি কইতাছি আইজ থেইকা
ভালভাবে পড়ালিহা করুম।আব্বা-আম্মার মুখ
উজ্জল করুম
--এইত ভালা পোলার মত একখান কথা কইছো।যা
বাবা আইজ থেইকা ভালভাবে লিহাপড়া কর।
--আচ্ছা কাকা আসি।আসসালামু আলাইকুম।
--অলাইকুম সালাম।
.
.
.
এরপর থেকে ভালভাবে পড়াশুনা করতে থাকে
আলি।নিজের বাবা-মায়ের মুখ উজ্জলের জন্য
সবসময় চেস্টা করে গেছে।যথাসাধ্য চেস্টা
করছে।আগে কারো কথা শোনেনি।আর সেদিন
আলম কাকার কথায় অনেকটা আশ্বাস পেয়েছিল
আলি।সেই থেকেই শুরু।পিছনের সব ভুলে গিয়ে
ভবিষ্যতে এগিয়ে যায় আলি।
.
.
.
আজ প্রায় ১০ বছর পর আলী শহর থেকে গ্রামে
ফিরেছে।মত বড় একজন ইঞ্জিনিয়ার হয়েছে সে।
গ্রামের সবাই আলামতকে বলছে-""কিরে আলামত
তোর পোলা ইঞ্জিনিয়ার হয়ে গ্রামে ফিরল
আমাগো মিস্টি খাওয়াবি না?""।আলামত হেসে
উত্তর দেয়-""অবশ্যই খাওয়াবো ভাইজানেরা""
.
খুশিতে আলামতের বুক ফুলে উঠে।তার সেই
বজ্জাত ছেলেটি আজ মস্ত বড় ইঞ্জিনিয়ার।
ওদিকে আলিও অনেক খুশি।কারন সে তার বাবা-
মায়ের মুখ উজ্জল করতে পেরেছে।
.
.
.
মাঝে মাঝে গুরুজনদের একটি কথা নিজের
জীবনে কাজে লাগালে জীবনে অনেক বড়
সফলতা পাওয়া যায়।গুরুজনদের দেয়া একফোঁটা
আশ্বাস বদলে দিতে পারে খারাপ একটি
উদ্দেশ্যহীন জীবন।যা পরবর্তীতে পরিনত হয়
উদ্দেশ্যযুক্ত জীবনে,আর পায় বিশাল বড় এক
সফলতা।
.
-Siam Mehraf

মন্তব্য ২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৫:২৯

কল্লোল পথিক বলেছেন:







বাহ!চমৎকার।

০৯ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১০:০৯

সিয়াম মেহরাফ বলেছেন: ধন্যবাদ ভাইয়া @পথিক

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.