![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি নিজেকে খুব ভালবাসি।
মানুষ বেঁচে থাকার তাগিদে স্বপ্ন দেখে।সেগুলো নিয়েই বাঁচতে চায়।ভাগ্য সবসময় সহায় থাকেনা।অনেক ক্ষেত্রেই হারাতে হয় নিজের প্রিয় মানুষকে।ভেঙে না অপূর্ন থাকা স্বপ্নগুলো।প্রিয় মানুষ বলতে যে শুধু ভালবাসার মানুষগুলো তা নয়।বাবা,মা,ভাই,বোন থেকে শুরু করে পুরো ফ্যামিলি।সবসময় রক্তের সম্পর্কগুলো ভাল থাকে না।ভাল রাখা যায় না।চাইলেও পারা যায়না।কিছু কিছু ক্ষেত্রে রক্তের সম্পর্ক ছাড়া মানুষগুলো আপন হয়ে যায়।বেশিদিন হয়ত থাকে না নতুন হয়া সম্পর্কটা,কিন্তু ব্যতিক্রমগুলো টিকে থাকে।
.
বেঁচে থাকার মানে স্বপ্নকে ডুবিয়ে বেঁচে থাকা নয়।আবার অন্যভাবে বেঁচে থাকার মানে স্বপ্নকে নিয়েও বেঁচে থাকা নয়।কেননা, সবার ভাগ্যে স্বপ্ন গুলো পুর্নতা পায় না।মানুষ খাবার চুরি করে খায়।যখন তাদের ক্ষুধা চরম পর্যায়ে চলে যাই।হ্যা।রাস্তার সেই সব মানুষেরা, যাদের কাছে নেই স্বপ্ন,নেই কোন গন্তব্য।আসলে এটা নয় যে তাদের জীবনে স্বপ্ন ছিল না।তাদের লাইফে স্বপ্ন একসময় ছিল কিন্তু পৃথিবী প্রত্যেকটাবার সুর্যকে একবার অতিক্রম করার সাথে সাথে তাদের স্বপ্নগুলো ধুয়ে মুছে যায়।তারা একসময় ওই স্বপ্নগুলো নিয়ে ভাবেনা।কারন তারা জানে এখন তাদের বাঁচতে হবে।টাকা নেই।খাবে কিভাবে?? চুরি করে খায়।চুরি করে কেন খায়? কারন তাদের টাকা নেই।দুটোর উত্তর এক।তারাও মানুষ।সমাজের একশ্রেনীর লোকেরা হয়ত আমাকে গালি দিবে।বলবে যারা রাস্তায় থাকে তারা তো ভিখারী।ওরা মানুষ না।ক্ষুধা পেলে ডাস্টবিন এর খাবারও খায়।আমি তাদের বলব আপনি খাচ্ছেন তাই বুঝতে পারছেন না তাদের কষ্টটুকু।ক্ষুধার যন্ত্রনা কতটুকু তার ধারনা আপনার আমার নেই।তাইতো বলি বাঁচার মানে যে স্বপ্ন নিয়ে বাঁচা একমাত্র তাই নয়।স্বপ্ন ছাড়াও বাঁচার মানে আছে।বাঁচার অর্থ আছে।যেটা হচ্ছে বেঁচে থাকা।বাঁচতে হবে।বাঁচতে হলে খেতে হবে।তারা টাকা পায়না।তাদের স্বপ্নগুলো কালের বিবর্ধনে বিনস্ট।তাদের কে টাকা দিবেন আপনি? হয়ত ৫-১০ টাকা।সর্বোচ্চ ১০০০।তাদের দুদিন ভাল যাবে।পরদিন তাদের আবারো ক্ষুধা পাবে।আমাকে বলবে- "ভাই তারা তো কাজ করেও খেতে পারে।"আমি বলব-" নারে ভাই ওদের একজনের হাত নেই।অন্যজনের পা নেই।কারো কারো চোখ নেই" তারা উত্তর করতে পারবেনা।চুপসে হয়ে যাবে।ভাববে আমাকে হারানোর জন্য কথা।পাবে না।
.
মানুষ অসহায়ের মত বেঁচে আছে।স্বপ্ন ছাড়া,নয়ত স্বপ্ন নিয়েই। পৃথিবীতে কেউ পুরোপুরি সুখি এটা কখনোই হতে পারেনা।হয়ত তারা উপরে উপরে চেস্টা করে নিজেকে সুখি প্রমান করার জন্য আপনার সামনে ভাল সাজতে।কিন্তু তার মনেও কষ্ট নামক জিনিসটা বাসা বেঁধে আছে।আপনার আমার দরজার প্রত্যেক বুধবার মুসাফির আসে, একবাটি চালের জন্য। একবাটি চাল তারা পেলে খুশি।হাসিমুখে চলে যায়।কিন্তু ওই মানুষটার ভিতরে কি চলে সেটা আমরা বুঝতে পারিনা।চেস্টাও করিনা কখনো বুঝার।
.
আমার বাসাতে একদিন একজন মুসাফির এসেছিলেন।আমি তখন বারান্দায় বসে প্রত্যেকদিনের মত পায়চারি করছি।আমাদের বারান্দাটা একটু দুরে দরজা থেকে।কিন্তু দরজার সামোনটা দেখা যায়।লোকটা দরজায় কড়া নাড়ছে।দৌড়ে গেলাম একবাটি চাল দিব বলে।তার আগেই আম্মা সেখানে চাল নিয়ে প্রস্তুত।বুধবার এমন টাইমে পরিচিত কেউ আসার কথা না।সাধারনত মুসাফির আসে।আম্মা জানে,আমি জানি বাসার সবাই জানে। দরজার সামনে বসার জায়গা ছিল।লোকটা বসে পড়লো ক্লান্তিতে।একটা হাত নেই।তাও ডান হাত।আমাকে বললো এক গ্লাসের পানি খাবে।আমি ফ্রিজ থেকে পানি নিলাম আর এমনি পানি তার সাথে মিলিয়ে তাকে পানি দিলাম।এক গ্লাসে তার হলোনা।বললো আরো একটা গ্লাস যেন তাকে নেই।বললো না ঠিক।এক প্রকার অনুরোধ।আমি আবারো এনে দিলাম।খেয়ে নিল।এবারে একটু স্বস্তি পাচ্ছে।কথা বলা শুরু করলো।কিসে পড়াশুনা করতেছি,কি করি ইত্যাদি।সব বললাম।পাশ থেকে আমার ছোট্ট চাচাতো ভাই আসলো।বয়স মাত্র ৩ বছর।ওকে দেখে ওর মাথায় হাত বুলাল।বলতে লাগলো তার ছেলের হয়ত এখন এরকম একটা ছেলে আছে।"হয়ত" শব্দটা খুব অশান্তি দিচ্ছিল আমাকে। বললাম -"হয়তো কেন?" বললো ছেলেকে পড়াশুনা করিয়েছে অনেক দুর।সে একটা গাছের ফ্যাক্টরিতে কাজ করতো।ছেলের চাকরীর জন্য টাকা লাগবে,তাই টাকা যোগার করার জন্য রাতদিন খাটলো।গাছের ফ্যাক্টরির পাশাপাশি রাতে রিকশা ভাড়া করে চালাতো।বউ ছেলে জন্ম দেয়ার সময়েই মারা গেছে।ছেলের চাকরীর টাকা জোগাড় করতে গিয়ে গাছ কাটার সময় নিজের একটা হাত নস্ট করেছে।হাতটা নেই।ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে শরীর থেকে।ছেলের জন্য জমানো টাকা দিয়ে অল্প খরচ করে হাতটা সেলাই করালো ঠিক যতটুকু দরকার ছিলো।পরে ওই বাম হাত দিয়েই সব করলো।লোন নিলো একটা এনজিও থেকে।তারপর ছেলেটার টাকা জোগাড় হয়ে গেলে তাকে চাকরীতে পাঠালো।বিদেশে বড় চাকরী।মাসে ৩০ হাজার না যেন ৪০ হাজার টাকা বলল।ঠিক খেয়াল নেই।ছেলেটা কথা দিয়েছিল লোন শোধ করে দিবে।রুটিন করে প্রত্যেক মাসে বাবাকে ৩০হাজার টাকার ৮হাজার টাকা পাঠাতো।ফোন দিতো। ৬ মাস পর থেকে আর টাকা আসলো না,ফোনও আসলো না।ব্যাস লোকটা এভাবেই অসহায় হয়ে গেলো।বেঁচে আছে লোন পরিশোধ করবে বলে।অপেক্ষায় আছে তার ছেলে আসবে বলে।অপেক্ষায় আছে তার নাতী/নাতনীর মুখ দেখবে বলে।অপেক্ষায় আছে ছেলে তাকে একবার ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করবে সে কেমন আছে।আমাকে প্রশ্ন করলো তার এখন কি করা উচিত।আমি কিচ্ছু বলতে পারলাম না।শুধু তার মুখখানার দিকে তাকিয়ে ছিলাম ক্ষানিকটা সময়।পরে আম্মা ডাকতেই বাস্তবে ফিরলাম।আমার উত্তর না পেয়ে হয়ত উনি বুঝতে পারলেন।আমাকে বললো-"বাবা যাই।দোয়া করি তোমরা যেন অনেক বড় হও।কিন্তু আমার ছেলের মত হয়ো না।বাবা-মা মাফ করলেও আল্লাহ করবেনা"
.
বাস্তবতা কতোটা নিষ্ঠুর।এরা বাঁচে বাঁচার জন্য।দুবেলা খাবার খুঁজে বাঁচার জন্য।মনে কোন একটা ছোট্ট গন্তব্য নিয়ে বা গন্তব্য ছাড়াই চলতে থাকে সারাজীবন।মৃত্যুর আগ পর্যন্ত।দেহ নিস্তেজ হয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত।
.
সিয়াম মেহরাফ
©somewhere in net ltd.
১|
১২ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১০:১৮
বিজন রয় বলেছেন: লেখাটি ভাল লাগল।
++++