![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি নিজেকে খুব ভালবাসি।
মাঝে মাঝে একটা জায়গায় আমি যাই।নামটা নাহয় পরেই বলি।বিশাল আয়তনের জায়গাটায় মাটির মধ্যে থেকে দাঁড়িয়ে আছে বিশাল বিশাল গাছ।আবার আছে ছোট ছোট ফুল গাছ।ফুল গাছ ছাড়াও আরো অনেক গাছ।
.
চারপাশটা নিঝুম।কোন টু,টা শব্দ নেই চারিপাশে।এখানে অবশ্য কোন মানুষ বসবাস করেনা।তবে হ্যা বসবাস আছে অনেকের,এটা সত্য।অস্বীকার করা যাবেনা।
.
আমাদের মত কিছু মানুষ ছাড়া এখানে যাদের প্রতিনিয়ত বসবাস তারা শুয়ে আছে সবাই।ঘুমিয়ে আছে।প্রানহীন দেহ।দেখতেও পাওয়া যাবে না।যায়না।সবাই মাটির নিচে শুয়ে আছে।সবার মধ্যে দুজনকে আমি চিনি।একজন আমার বাবা,অন্যজন দাদা।দাদাকে সেখানে চিরতরে রেখে দেয়া হয়েছিল ২০০৯ সালে।আর বাবাকে ২০১৫ তে।
.
স্থানটার নাম কবরস্থান।সবাই ঘুমিয়ে আছে মাটির নিচে।কারো প্রান নেই।কেউবা বিশাল ১০তলা এপার্টমেন্ট করে রেখেছিল।কেউবা বিশাল ধনী ব্যবসায়ী ছিল।কেউবা ছিল গরীব।হয়ত তার ছোট একটা রিকশা ছিল।যে যতই করে রাখুক কিছুই নিয়ে যেতে পারলোনা।আফসোস!! খালি হাতে যেতে হলো সবাইকে। শুধু সাথে নিতে পেরেছিল মহান আল্লাহর ইবাদাতের জন্য যা করেছিল সেই আমলটুকু।আর কিচ্ছুনা।
.
হয়ত সেখানের কেউ কাউকে খুব ভালবাসতো।তাকে পায়নি বিধায় সুইসাইড করেছে।আজ সে সেই মানুষটাকে সাথে নিয়ে মরতে পারেনি।যার জন্য মরেছিল সে পরে আছে অন্য কারো ঘড়ে। কানের সোনার দুল,হাতের সুন্দর চুড়ি।গায়ে ভাল ভাল দামী পোষাক। ছেলেমেয়েও হয়ত আছে।মোট কথা সুখেই আছে। একটা মানুষ তার জন্য পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করলো হয়ত তাকে মনেই নেই! ভুল করে হলেও কখনো তার জন্য চোখের পানি অপচয় করেনি।রক্তের সম্পর্কের ছিলনা তো।তাই!
.
মানুষগুলো কেমন যেন! কিছুই নিতে পারবেনা যেনেও পৃথিবীতে সুখ লাভের আশায় দামী,গাড়ি,এপার্টমেন্ট, বিশাল ব্যবসা ইত্যাদি শুরু করে।তবে কি হবে! কিছুই তো নিয়ে যেতে পারেনা।
.
জীবনের শেষ বয়সে,জীবনের শেষ দিনে চিন্তা করে-"ইসস এসব না করে যদি এগুলোর পিছনে নস্ট করা সময়টুকু আল্লাহর ইবাদাতে নষ্ট করতাম,তাহলে শান্তিতে মরতে পারতাম"। কিন্তু আর যে সময় নেই।কালকেই যে তার মৃত্যু কে জানত! এভাবেই হয়।সবার সাথেই।
.
পৃথিবীটা তো কিছুই না পরীক্ষাক্ষেত্র। সেখানে ফেল করলে উঠে দাঁড়ানো যায়,কিন্তু একটু ভুলের ক্ষতিপুরন আখিরাতেও করা যায়না।পৃথিবীটা কিছুই না।কিন্তু জীবনের শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত পৃথিবীর ভাল কাজগুলো করলেই তো পরবর্তী আখিরাতে শান্তি।নয়ত জাহান্নাম।মরতে তো হবে সবাইকেই।শুধু একদিন আগে বা পরে।
.
ভালবাসার মানুষটাকে বলে, তাকে ছাড়া একটা দিন,একটা মুহুর্তও চলবেনা।অথচ সেই মানুষটা কাল না থাকলে দু-তিনদিন চোখের পানি নষ্ট করে আবার নতুন করে দিনগুলো কাটায়।একসময় হয়ত তার মনেই থাকেনা যে মানুষটাকে ছাড়া একটাদিন বাঁচবে না বলেছিল তাকে ছাড়া অনেকটা দিন পার ইতোমধ্যে করে ফেলেছে সে! এভাবেই চলবে জীবন।জীবনের মত চলবে।ভালবাসা থাকবে।কিন্তু যেতে হবে একা।সবাইকেই একা যেতে হবে।
.
ঝড়ের রাতে সেই পরিচিত কবরস্থানের গাছের পাতা নড়বে।কবরটা ঢেকে যাবে ঝড়েতে ঝরে পরা পাতায়।ওই কবরের ভিতর থাকা প্রানহীন দেহটার আত্মীয়রা ঘুমাবে কাথার নিচে আরামে।অথচ মনেই রাখবেনা ওই রাতে কবরটার ভিতর থাকা মানুষটাকে।বৃষ্টিতে কবরের উপরে থাকা মাটিগুলো সমান হয়ে যাবে ভিজে।পানিতে তলিয়ে যাবে হয়ত সেই কবরস্থানের পুরোটা জায়গা।বৃষ্টি পরলে ছাতা হাতে নিয়ে কেরোসিন তেল আনতে যাব ঠিকই তবে ভুলেও কবরস্থানে আর সেই ছাতিটা নিয়ে আসা হবেনা।
.
গ্রীষ্মকালে গাছের সুষ্ক পাতাগুলো কবরটাকে ডেকে দিবে।আবর্জনায় পরিপুর্ন।যাকে মানুষটা ভালবেসে বিয়ে করেছিল সেও হয়ত ভুলে যাবে এখানটাকে তার স্বামী ঘুমিয়ে আছে।কবরটা ময়লায় টাকা।কেউ বুঝবেনা।কেউ খেয়াল করবেনা।শুধু সেই বিশাল দন্ডায়মান গাছগুলোর উপরে বসে থাকা নতুন পাখিগুলো দেখবে তাকিয়ে তাকিয়ে।ওরা অবুজ।কিছুই করতে পারবেনা।হয়ত উপলব্ধি করতেও পারবেনা।প্রচন্ড গরমে, কড়া রোদে বন্ধুদের সাথে পার্টিতে যাওয়া যায়,কিন্তু সেই গরমটুকু সহ্য করে কবরস্থানে আর যাওয়া যায়না।
.
এভাবেই চলবে জীবন।মৃত্যুর পরে যারা যারা পরপর দুদিন কবরে এসে কবর জিয়ারত করতো তারাও ভুলে যাবে।একসময় আর তাদের পায়ের চিহ্ন ও কবরে পরবেনা।এভাবেই দিন যাবে।আস্তে আস্তে যারা কাঁদতো তারাও ভুলে যাবে।
.
সবাইকেই যেতে হবে একটাই জায়গায়।মাটির নিচে।পৃথিবীর মানুষের দেয়া নামগুলো যেমনঃ- গরীব, ধনী,মধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে সবাইকে যেতে হবে।তবুও পৃথিবী আজকে নানা ভাবে ডাক দিচ্ছে।সবার একটাই ঠিকানা।একটাই স্থান।সেটা হলো কবর! কেউ ভাবেনা।কেউ না।সে চলে গেলে অন্য কারো জীবন কখনো থেমে থাকবেনা।জীবন আসলেই চলবে জীবনের নিয়মে।একসময় সেই মানুষগুলোও হারিয়ে যাবে।সেই একটা স্থানেই যাবে।কবরস্থান!!!
২| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১০:১২
বিজন রয় বলেছেন: সুন্দর।
+++
©somewhere in net ltd.
১|
০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৯:৫৫
আমিই মিসির আলী বলেছেন: খুবই সুন্দর একটা লেখা লিখেছেন।
ভূমিকা অনেক ভালো লেগেছে।