নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্রোতের অজানা টানে সমুদ্র বালিয়াড়ি বেয়ে বোহেমিয়ান- গৃহকোন, জীবন যাপন ফেলে চলে যায়। তুমি দুহাত বাড়িয়ে আলিঙ্গনে বাঁধতে চাও জোছনা গলে হারিয়ে যায় সুখ । আছড়ে পরা ঘূর্ণিজল মনে বাজায় অচেনা সবুজ দিগন্ত ..

রোকসানা লেইস

প্রকৃতি আমার হৃদয়

রোকসানা লেইস › বিস্তারিত পোস্টঃ

শিমুল ফুলের কাছে শিশির আনতে গেছে সমস্ত সকাল

০৫ ই আগস্ট, ২০২১ ভোর ৪:১৫

উনত্রিশ বছর তার জীবন সময়ে মাত্র দশ বছর তার কাব্য জীবন। সৃজনশীল আধুনিক কবি হিসাবে আজও তিনি বিখ্যাত। এত অদ্ভুত সুন্দর চিন্তা। চিত্রকল্প একটা লাইন পরে হাজার ভাবনায় ডুবে যাই বারেবারে তাঁর লেখা পড়ে। একসময় মুখস্ত ঠোঁটস্ত ছিল সব কবিতা। এত্ত সুন্দর করে মানুষ কি ভাবে লিখতে পারে। এত ব্যাপ্তী চিন্তার। অথচ খুব অল্প সময় পেলেন তা প্রকাশ করার। তবে যা রেখে গেলেন, লিখে গেলেন তা অতুলনীয়। এখনো তেমন করে কাব্য ভাণ্ডারে তাঁর উজ্জ্বল উপস্থিতি বাংলা সাহিত্যে রয়ে যাবে।


ঝিনুক নীরবে সহো

ঝিনুক নীরবে সহো, ঝিনুক নীরবে সহে যাও
ভিতরে বিষের বালি, মুখ বুজে মুক্তা ফলাও!
এই দুটো লাইন যেন ছিল আমাদের বাইবেল। কথায় কথায় একে তাকে আমরা ঝিনুক নীরবে সহো বলেই শান্তনা দিতাম। কিন্তু নীরবে সওয়ার মাঝে বিষের বালি থেকে যে মুক্ত ফলানো সম্ভব সেটা যেন মনে ততটা বিস্তৃতি পেত না তখনও। মুখস্তর মতন কাব্য বলে যাওয়ায়। কিন্তু যত দিন গেলো অভিজ্ঞতা বাড়ল বুঝতে পারলাম। কি অসাধারন কথা বলে গেছেন। বিষের বালি থেকে মুক্ত গড়ে উঠবে। উপভোগ করলাম দেখলাম কত চোখের সামনে । মানুষ মুক্ত গড়ছে বিষের বালি থেকে। সম্ভব কবির বলে যাওয়া মিথ্যা নয়

বনভূমিকে বলো

বনভূমিকে বলো, বনভূমি, অইখানে একটি মানুষ
লম্বালম্বি শুয়ে আছে, অসুস্থ মানুষ
হেমন্তে হলুদ পাতা যেরকম ঝরে যায়,
ও এখন সে রকম ঝরে যাবে, ওর চুল, ওর চোখ
ওর নখ, অমল আঙুল সব ঝরে যাবে,
বনভূমিকে বলো, বনভূমি অইখানে একটি মানুষ
লম্বালম্বি শুয়ে আছে, অসুস্থ মানুষ
ও এখন নদীর জলের স্রোতে ভেসে যেতে চায়
ও এখন মাটি হতে চায়, শুধু মাটি
চকের গুঁড়োর মতো ঘরে ফিরে যেতে চায়,
বনভূমিকে বলো, বনভূমি ওকে আর শুইয়ে রেখো না !

ওকে ঘরে ফিরে যেতে দাও। যে যাবার
সে চলে যাক, তাকে আর বসিয়ে রেখো না।
হয়তো খুব অল্প বয়সে অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় জীবনের সুখের চেয়ে অসুখের কথা তার বেশি মনে হতো। কল্পনার বাহনে চড়ে অনেক পৃথিবী ভ্রমণের ইচ্ছে হলেও নিরবে বনভূমির মাঝেই শব দেহের শুয়ে থাকা যেন জীবনের বাস্তবতা। অথচ মন ঘরে ফিরতে চায় মন উড়ে জীবনের সুখ পেতে চায়। কেমন এক আঁধার জড়িয়ে ধরে এ কবিতা পড়ার পর। মন খারাপের বৃষ্টি নামে। চকের গুঁড়োর মতনও সে যদি ফিরে আসতে পারত সংসারে। আহা।


তোমার চিবুক ছোঁব,কালিমা ছোঁব না

এ ভ্রমণ আর কিছু নয়, কেবল তোমার কাছে যাওয়া
তোমার ওখানে যাবো, তোমার ভিতরে এক অসম্পূর্ণ যাতনা আছেন,
তিনি যদি আমাকে বলেন, তুই শুদ্ধ হ’ শুদ্ধ হবো
কালিমা রাখবো না!

এ ভ্রমণ আর কিছু নয়, কেবল তোমার কাছে যাওয়া
তোমার ওখানে যাবো; তোমার পায়ের নীচে পাহাড় আছেন
তিনি যদি আমাকে বলেন, তুই স্নান কর
পাথর সরিয়ে আমি ঝর্ণার প্রথম জলে স্নান করবো
কালিমা রাখবো না!

এ ভ্রমণ আর কিছু নয়, কেবল তোমার কাছে যাওয়া
এখন তোমার কাছে যাবো
তোমার ভিতরে এক সাবলীল শুশ্রূষা আছেন
তিনি যদি আমাকে বলেন, তুই ক্ষত মোছ আকাশে তাকা–
আমি ক্ষত মুছে ফেলবো আকাশে তাকাবো
আমি আঁধার রাখবো না!

এ ভ্রমণ আর কিছু নয়, কেবল তোমার কাছে যাওয়া
যে সকল মৌমাছি, নেবুফুল গাভীর দুধের সাদা
হেলেঞ্চা শাকের ক্ষেত
যে রাখাল আমি আজ কোথাও দেখি না– তোমার চিবুকে
তারা নিশ্চয়ই আছেন!

তোমার চিবুকে সেই গাভীর দুধের শাদা, সুবর্ণ রাখাল
তিনি যদি আমাকে বলেন, তুই কাছে আয় তৃণভূমি
কাছে আয় পুরনো রাখাল!
আমি কাছে যাবো আমি তোমার চিবুক ছোঁবো, কালিমা ছোঁবো না!।

শুধু চিবুককে ঘিরে পৃথিবী ঘুরে আসা এই যে বিশাল চিত্রকল্প তিনি আঁকতে পারতেন। এর কোন তুলনা হয়না। শুধু পাঠে মুগ্ধ হই আর নিবেদিত হই। বুদ হয়ে রই তার কাব্য শব্দ ভাণ্ডারে নিমগ্ন মুগ্ধতায়।


আমি অনেক কষ্টে আছি

আমার এখন নিজের কাছে নিজের ছায়া খারাপ লাগে
রাত্রিবেলা ট্রেনের বাঁশি শুনতে আমার খারাপ লাগে
জামার বোতাম আটকাতে
অমন কেন যত্ন করে লাগিয়ে দিতে?
অমন কেন শরীর থেকে
আস্তে আমার ক্লান্তিগুলো উঠিয়ে নিতে?
তোমার বুকের নিশিথ কুসুম
আমার মুখে ছড়িয়ে দিতে?


জুতোর ফিতে প্রজাপতির মতন তুমি উড়িয়ে নিতে?
বেলজিয়ামের আয়নাখানি কেন তুমি ঘরে না রেখে
অমন কারুকাজের সাথে তোমার দুটি চোখের মধ্যে রেখে দিতে?
রেখে দিতে?
আমার এখন চাঁদ দেখতে খারাপ লাগে
পাখির জুলুম, মেঘের জুলুম, খারাপ লাগে

কথাবার্তায় দয়ালু আর পোশাকে বেশ ভদ্র মানুষ
খারাপ লাগে,
এই যে মানুষ মুখে একটা মনে একটা
খারাপ লাগে
খারাপ লাগে
মোটের উপর আমি এখন কষ্টে আছি,
কষ্টে আছি বুঝলে যুথী
আমার দাঁতে আমার নাকে, আমার চোখে কষ্ট ভীষণ
চতুর্দিকে দাবী আদায় করার
মতো মিছিল তাদের কষ্ট ভীষণ
বুঝলে যুথী,
হাসি খুশী উড়নচন্ডী মানুষ
আমার তাইতো এখন খারাপ লাগে
খারাপ লাগে
আর তাছাড়া আমি কি আর যীশু না হাবিজাবি
ওদের মতো সব সহিষ্ণু?
আমি অনেক
কষ্টে আছি কষ্টে আছি কষ্টে আছি ।।

অথবা যদি বলি
দেখা হলো যদি আমাদের দুর্দিনে
আমি চুম্বনে চাইব না অমরতা!
আমাদের প্রেম হোক বিষে জর্জর
সর্পচূড়ায় আমরা তো বাঁধি বাসা।

ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র আবুল হাসানের সাথে প্রেম সে সময়ের বিখ্যাত সুন্দরী এবং গুণী নারী সুরাইয়া খানমের। যার প্রেম পাওয়ার জন্য অনেকেই উন্মুখ সে ভালোবাসে কৃষকায় রুগ্ন ছেলেটিকে। রুগ্ন বা কৃষকায়ার ভিতরে জাগোয়ার শক্তি বা উদ্দিপ্ত আলোর শিখা তা হয়তো একজন সুরাইয়া খানম আবিস্কার করেছিলেন।
যে প্রেম অনেক দূর এগিয়ে যাবে না হাতধরাধরি করে তা হয় তো বুঝতে পেরেছিলেন ক্ষণজন্মা কবি । তাই তো তিনি প্রতিক্ষণের কষ্ট তবু উড়িয়ে দেন, বলেন আমি চুম্বনে চাইব না অমরতা! আমাদের প্রেম হোক বিষে জর্জর। সর্পচূড়ায় আমরা তো বাঁধি বাসা।
একবার একটি গল্প শুনেছিলাম, সায়ীদ স্যারের কাছে।
সে সময় বাংলা একাডেমির বইমেলা চলছে। আমার প্রথম কবিতার বই প্রকাশ পেয়েছে সেবার। প্রতি দিন বইমেলায় যেতাম। আর রাত আটটায় দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফিরার পথে বটতলায় আমাদের আডডা জমে উঠত। আসলে অনেক বড় কবিরা এক সাথে গল্প আড্ডায় মেতে উঠতেন। আমি বলা যায় সর্ব কনিষ্ঠ। তাদের গল্প শুনতাম।
সেখানে থাকতেন আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ, মহাদেব সাহা, নির্মলেন্দু গুণ, রফিক আজাদ,রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, আনিসুল হক সে সময়ে বিটিভির জনপ্রিয় টেলিভিশন উপস্থাপক ছিলেন। পরে ঢাকা উত্তরা সিটি কর্পোরেশনের প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন। আনিসুল হক এক একটা প্রশ্ন করতেন আর এক একজন তার উত্তরে নানান মজার গল্প বেরিয়ে আসত। গল্প বেশি করতেন আবু সায়ীদ, নির্মলেন্দু গুণ, রফিক আজাদ।
সায়ীদ স্যার যদিও তিনি আমার সরাসরি স্যার না উনাকে আমি চিনি অন্যদের স্যার হিসাবে আর নিজে বিটিভির জনপ্রিয় অনুষ্ঠান চতুরঙ্গের উস্থাপক হিসাবে উনাকে চিনি।
গল্পটা ছিল এমন। তখন সবারই তরুণ বয়স। একটা লেখা লিখে বন্ধুদের সাথে শেয়ার না করা পর্যন্ত মনে শান্তি হয় না।
এমন অবস্থায়। আবুল হাসান একটা কবিতা লিখেছেন। পরদিন প্রেমিকাকে দিবেন। কিন্তু তার আগে কবিতাটা বন্ধুদের দেখিয়ে নেয়ার জন্য হন্যে হয়ে খুঁজছেন সবাইকে। হাঁটতে হাঁটতে উনার পায়ের চটির শুকতলা খুলে পরছে। বন্ধুদের দেখা পাচ্ছেন না। সে সময় তো আর এমন ফোনে যোগাযোগের সুযোগ ছিল না।
যা হোক এক সময় মধুর কেন্টিনের সামনে দেখা হলো। সবাই নানা কথা বলায় ব্যাস্ত। আবুল হাসান এক সময় সবাইকে থামিয়ে দিয়ে নিজের কবিতাটি শুনাতে চাইলেন। সবাই মনেযোগ দিয়ে অপেক্ষা করছেন সদ্য লেখা পদ্য খানী শোনার জন্য।
সার্টের বুক পকেট থেকে ভাঁজ করা কাগজ বের করে আবুল হাসান পড়ছেন অনেক আবেগ তাড়িত হয়ে। এদিকে বন্ধুরা কেউ হাসি চাপতে পারছেন না। পড়া শেষ করে সবার মতামত চাইছেন।
আর সবাই হো হো করে হেসে উঠছেন।
বেচারা বুঝতে পারছেন না বন্ধুরা এমন করছে কেন।
উনার কবিতার লাইন ছিল এমন তুমি আমার ভালোবাসা সারমেয়। এবং বেশ অনেক বার নানা ভাবে সারমেয় শব্দটি ভালোবাসা সরূপ ব্যবহার হয়েছে।
পরে বন্ধুরা বললেন। এই কবিতা দিলে প্রেমিকা চটি খুলে মারতে বাকি রাখবেন না। আর প্রেম ছুটে যাবে তাতক্ষনিক।
সারমেয় শব্দের অর্থ জেনে নিজেও অনেক হাসলেন। তবে শব্দটি ভীষণ ভালো লেগেছিল তাই কবিতায় ব্যবহার করেছিলেন জানালেন।
আসলে বাংলা ভাষায় অনেক শব্দ কঠিন। আর সব সময় ব্যবহার হয় না বলে অর্থ জানাও মুশকিল।




গোলাপের নীচে নিহত হে কবি কিশোর

গোলাপের নীচে নিহত হে কবি কিশোর আমিও ভবঘুরেদের প্রধান
ছিলাম ।
জোৎস্নায় ফেরা জাগুয়ারা চাঁদ দাঁতে ফালা ফালা করেছে আমারও
প্রেমিক হৃদয় !
আমিও আমার প্রেমহীনতায় গণিকার কাছে ক্লান্তি
সঁপেছি
বাঘিনীর মুখে চুমু খেয়ে আমি বলেছি আমাকে উদ্ধার দাও !
সক্রেটিসের হেমলক আমি মাথার খুলিতে ঢেলে তবে পান করেছি মৃত্যু
হে কবি কিশোর
আমারও অনেক স্বপ্ন শহীদ হয়েছে জীবনে কাঁটার আঘাত সয়েছি
আমিও ।
হৃদয়ে লুকানো লোহার আয়না ঘুরিয়ে সেখানে নিজেকে দেখেছি
পান্ডুর খুবই নিঃস্ব একাকী !
আমার পয়ের সমান পৃথিবী কোথাও পাইনি অভিমানে আমি
অভিমানে তাই
চক্ষু উপড়ে চড়ুইয়ের মতো মানুষের পাশে ঝরিয়েছি শাদা শুভ্র পালক !
হে কবি কিশোর নিহত ভাবুক, তেমার দুঃখ আমি কি বুঝি না ?
আমি কি জানি না ফুটপাতে কারা করুণ শহর কাঁধে তুলে নেয় ?
তোমার তৃষ্ণা তামার পাত্রে কোন কবিতার ঝিলকি রটায় আমি কি
জানি না
তোমার গলায় কোন গান আজ প্রিয় আরাধ্য কোন করতলও হাতে লুকায়
আমি কি জানি না মাঝরাতে কারা মৃতের শহর কাঁধে তুলে নেয় ?
আমারও ভ্রমণ পিপাসা আমাকে নারীর নাভিতে ঘুরিয়ে মেরেছে
আমিও প্রেমিক ক্রবাদুর গান স্মৃতি সমুদ্রে একা শাম্পান হয়েছি
আবার
সুন্দর জেনে সহোদরকেও সঘন চুমোয় আলুথালু করে খুঁজেছি
শিল্প ।
আমি তবু এর কিছুই তোমাকে দেবো না ভাবুক তুমি সেরে ওঠো
তুমি সেরে ওঠো তোমার পথেই আমাদের পথে কখনও এসো না,
আমাদের পথ
ভীষণ ব্যর্থ আমাদের পথ

সেরে উঠা হলো না প্রেমিকা এবং পৃথিবীর সৌন্দর্য ছেড়ে ক্ষণজন্মা কবি চলে গেলেন জন্ম চার আগস্ট ১৯৪৭।
মৃত্যু ছাব্বিশ নভেম্বর ১৯৭৫। মৃত্যুর পরে তাকে দেয়া হয় বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ১৯৭৫ সালে। একুশে পদক ১৯৮২ সনে।
কবি চলে গেছেন রেখে গেছেন তার অসাধারন ভাবনার ভাণ্ডার ।
আমার লেখা মূখ্য নয় আসুন কবিকে স্মরন করি আজ তার জন্মদিনে। এবং পড়ি তার কিছু কবিতা । হারাই ভাবনার চিত্রকল্প জল্পনার পৃথিবীতে তাকে ঘিরে।
উদিত দুঃখের দেশ

উদিত দুঃখের দেশ, হে কবিতা হে দুধভাত তুমি ফিরে এসো!
মানুষের লোকালয়ে ললিতলোভনকান্তি কবিদের মতো
তুমি বেঁচে থাকো
তুমি ফের ঘুরে ঘুরে ডাকো সুসময়!
রমণীর বুকের স্তনে আজ শিশুদের দুধ নেই প্রেমিক পুরুষ তাই
দুধ আনতে গেছে দূর বনে!
শিমুল ফুলের কাছে শিশির আনতে গেছে সমস্ত সকাল!
সূর্যের ভিতরে আজ সকালের আলো নেই সব্যসাচীরা তাই
চলে গেছে, এখন আকাল
কাঠুরের মতো শুধু কাঠ কাটে ফল পাড়ে আর শুধু খায়!
উদিত দুঃখের দেশ তাই বলে হে কবিতা, দুধভাত তুমি ফিরে এসো,
সূর্য হোক শিশিরের ভোর, মাতৃস্তন হোক শিশুর শহর!
পিতৃপুরুষের কাছে আমাদের ঋণ আমরা শোধ করে যেতে চাই!
এইভাবে নতজানু হতে চাই ফলভারানত বৃক্ষে শস্যের শোভার দিনভর
তোমার ভিতর ফের বালকের মতো ঢের অতীতের হাওয়া
খেয়ে বাড়ি ফিরে যেতে চাই!
হে কবিতা তুমি কি দ্যাখোনি আমাদের ঘরে ঘরে তাঁতকল?
সাইকেলে পথিক?
সবুজ দিঘীর ঘন শিহরণ? হলুদ শটির বন? রমণীর রোদে
দেয়া শাড়ি? তুমি কি দ্যাখোনি আমাদের
আত্মহুতি দানের যোগ্য কাল! তুমি কি পাওনি টের
আমাদের ক্ষয়ে যাওয়া চোখের কোণায় তুমি কি বোঝোনি আমাদের
হারানোর, সব হারানোর দুঃখ – শোক? তুমি কি শোননি ভালোবাসা
আজও দুঃখ পেয়ে বলে, ভালো আছো হে দূরাশা, হে নীল আশা?




মন্তব্য ১৮ টি রেটিং +৬/-০

মন্তব্য (১৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই আগস্ট, ২০২১ ভোর ৫:২০

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: পোস্ট খানা ডাবল পোস্টিং হয়েছে।


দারুন সব কবিতায় সমৃদ্ধ পোস্ট। এখানে অসাধারণ প্রেমের কবি আবুল হাসানের কিছু কবিতাও উল্লেখ আছে। আহ কতো চমকপ্রদ কবির লেখা। এক সময় খুব পড়তাম আবুল হাসান। পরে না পড়ার কারণ ভিন্ন। যদি অন্যের প্রভাব পড়ে কবিতায়। লিখেছেন বেশ।


সুন্দর ।+

০৫ ই আগস্ট, ২০২১ দুপুর ১২:০৭

রোকসানা লেইস বলেছেন: দারুণ কবিতাগুলোর জন্যই এই পোস্ট করলাম। আমার তো আরও কবিতা দিতে ইচ্ছা করছিল। কোনটা রেখে কোনটা বাদ দেই, সিজেকেই কঠিন ভাবে বিচার করতে হলো।
কবি আবুল হাসানের সাথে জানা শোনতো তাঁঁর কবিতা পড়েই।
এ সব কবিতা বারেবারে না পরলেও মনের ভিতর গেঁথে আছে।
প্রভাব পরে না ভালোলাগে। পড়ে সমৃদ্ধ হই।
ধন্যবাদ সেলিম আনোয়ার
আবার পড়ুন প্রভাব পরবে না ভালোলাগবে।

২| ০৫ ই আগস্ট, ২০২১ সকাল ৮:৪৩

*কালজয়ী* বলেছেন: নির্বাচিত কবিতার লাইনগুলো সত্যিই মনমুগ্ধকর। সুন্দর ভাবে তুলে ধরেছেন।

০৫ ই আগস্ট, ২০২১ দুপুর ১২:২০

রোকসানা লেইস বলেছেন:
নির্বাচন করলাম খুব অল্প ইচ্ছে ছিল সব ভালোলাগা ঢেলে দেই।
ধন্যবাদ কালজয়ী।

৩| ০৫ ই আগস্ট, ২০২১ সকাল ৯:২১

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:



আবুল হাসান বাংলা ভাষার ষাট দশকের জনপ্রিয় কবিদের একজন। সত্তর দশকেও ছিলেন সমানভাবে জনপ্রিয়।
১৯৭০ সালে সমগ্র এশিয়াভিত্তিক এক প্রতিযোগিতায় তিনি প্রথম স্থান অর্জন করে বিশেষ পুরস্কার লাভ করেন।
পরে ওই কবিতাটি কলকাতা থেকে প্রকাশিত সমগ্র পৃথিবীর প্রতিনিধিত্বশীল কবিদের কবিতা-সংকলনে অন্তর্ভুক্ত হয়।
বাংলা ভাষায় প্রকাশিত 'পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ কবিতা' (১৯৭০) শীর্ষক ওই গ্রন্থে তদানীন্তন পাকিস্তানের একমাত্র প্রতিনিধি
কবি আবুল হাসানের কবিতাটি স্থান পেয়েছিল ।

তাঁর কিছু কবিতা এখানে তুলে দিয়ে সেগুলির মর্মকথা সুন্দরভাবে বর্ণনা করেছেন ঠিক যেন সেই চতুরঙ্গের
উপস্থাপিকার সুললিত ভঙ্গিতেই ।

আবুল হাসানের কাব্যসম্ভার আমার সংগ্রহে যত্নেই আছে। সময়-সুযোগ পেলে নিজের মতো করে এখনো পড়ি
আবুল হাসানের কবিতা। কয়েক দিন পর পর যে কয়জন কবির কবিতা পুনরায় পড়ি, আবুল হাসান তাঁদের
একজন । জন্মদিবস উপলক্ষ্যে কবির প্রতি রইল শ্রদ্ধাঞ্জলী ।

তার তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ রাজা যায় রাজা আসে । হ্যাঁ বলতে পারি তিনি এখন রাজার আসনেই আছেন ।
হাসপাতালের বেডে শুয়ে বুকের অসহ্য যন্ত্রণা সহ্য করেও তিনি লিখেছেন বেশ কিছু কবিতা।তাঁর স্বল্প-পরিসর
জীবন ঠিকই যেন মায়াবী করুন । তাঁর লেখা মায়াবী করুণ কবিতাতেও উঠে এসেছে তেমনটিই-
এটা সেই পাথরের নাম নাকি? এটা তাই?
এটা কি পাথর নাকি কোনো নদী? উপগ্রহ? কোনো রাজা?
পৃথিবীর তিন ভাগ জলের সমান কারো কান্না ভেজা চোখ?
মহাকাশে ছড়ানো ছয়টি তারা? তীব্র তীক্ষ তমোহর
কী অর্থ বহন করে এই সব মিলিত অক্ষর?

(আবুল হাসান/রাজা যায় রাজা আসে।)

কবিতা যেন তার কথাই বলে - সে এক পাথর আছে কেবলি লাবণ্য ধরে, উজ্জ্বলতা ধরে আর্দ্র/ মায়াবী করুণ।
এই যে উজ্জ্বলতা ধরে আর্দ্র/ মায়াবী করুণ।এসব শব্দ বন্ধেই, শুরুতেই আবুল হাসান জানান দিয়ে রেখেছেন এক করুণ
জীবনের আর্তি। কবিতাটির রন্ধ্রে রন্ধ্রে বিষাদের সঙ্গে জীবনের জন্য কি যে মায়া জড়িয়ে রয়েছে, তা পাঠক মাত্রই
টের পান।বাংলার আর এক কবি জীবনানন্দ দাসের মত হাজারো কবির কবিতার মধ্যে থেকে আলাদা করে বলে
দেওয়া যায় এটি আবুল হাসানের কবিতা।

কবিতাপ্রেমী মানুষদেরকে সাহচর্য, শুশ্রূষা দিয়ে যাচ্ছে আবুল হাসানের কবিতা। প্রবল প্রতাপে তিনি
নিন্দুকের উদ্দেশেও বলেও গেছেন—
তোমরা হারাও আর আমরা বারবার খুঁজে আনি
এখন আমাদের পালা, ঝিনুকের ভিতরে থাকা মুক্তার মত তার কাব্যসম্ভাব খুঁজে
বের করে তার কাব্যসুধা পান করা। তাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করা ।

তবে এটা সত্য যে সমসাময়িক অনেক কবিই বিস্মৃতির অতলে চলে গেছেন। কিন্তু কবিতা
পাঠকরা মনে রেখেছেন তাঁকে, আরো বহুকাল মনে রাখবেন কবি আবুল হাসানকে। এটা নিশ্চিত
করে বলা যায়।

এ নব প্রজন্মের লেখক ও কবি সাহিত্যিকগন ষাটের দশকের এক আধুনিক কবির কবিতা সম্ভারের সাথে
আরো ভাল করে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পাবেন আপনার এই পোষ্টটির মাধ্যমে ।

অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইল ।

০৬ ই আগস্ট, ২০২১ রাত ১:০০

রোকসানা লেইস বলেছেন: অসম্ভব সুন্দর মন্তব্য পোস্টটিকে আরো সমৃদ্ধ করল।
আপনিও কিছু কবিতার দারুণ বিশ্লেষণ দিলেন। খুব ভালোলাগল। জীবনের জন্য আর্তি পৃথিবী ব্যাপী বিচরণ তার লেখায়। মানুষের কষ্ট, রজনীতির ছলাকলা কি সুন্দর করে উপস্থাপন করেছেন শব্দমালায়।
ঠিক বলেছেন, এত ব্যতিক্রমি তার লেখা, অনেকর লেখার ভীড়ে ঠিক চেনা যায়। যারা তাঁর পাঠক তারা খুঁজে পেয়ে যাবেন তাদের। তবে দিনদিন হারিয়ে যাচ্ছেন তিনি। এই সময়ের অনেকে তাকে পড়েননি এটা মানতে কষ্ট হয়। জানি না কোন পাঠ্য বইয়ে উনার কবিতা সংযোজিত হয়েছে কিনা। পরিচয় তো অনেক সময় বিদ্যালয় এবং পরিবারে করাতে হয়। মননের গড়নটা তৈরি করে দিতে হয়। আমরা তা থেকে দূরে চলে যাচ্ছি প্রতিদিন।
কী অর্থ বহন করে এই সব মিলিত অক্ষর কী দারুণ কথা। প্রতিটি শব্দ প্রতিটি বাক্য যেন এক একটা রাজ্য।
আমি চেষ্টা করলাম পুরো কবিতা দেওয়ার। তাই ছোট করার জন্য অনেক লেখাই বাদ দিতে হলো। উনার কবিতা প্রতিটি যেন ভিন্ন কথা বলে ভিন্ন আবেদন। ভালোলাগল জেনে আপনি মাঝে মাঝে আবুল হাসান পড়েন।

আসলে উনি রাজা এবং রাজার মতনই বিরাজ করছেন তার ভুবন নিয়ে। আমার কাছেও সব গুলো কাব্য গ্রণ্থ ছিল । অগ্রণ্থিত লেখা নিয়ে সম্পাদিত উনার গল্পসহ শেষের বইটাও ছিল যা আমার পরিচিত জনরাই প্রকাশ করে ছিলেন।
বিদেশে নিয়ে এসেছিলাম সমুগ্র। এবার দেশে গিয়ে দেখলাম বাকি বইগুলোতে উলু ধরেছে।
বাংলাদেশের আবহাওয়ায় বই আর ছবি সংগ্রহে রাখা কঠিন সমস্যা।
১৯৭০ সালে সমগ্র এশিয়াভিত্তিক এক প্রতিযোগিতায় তিনি প্রথম স্থান অর্জন করে বিশেষ পুরস্কার লাভ করেন। উনার কবিতা নির্বাচন এবং প্রকাশের খবরটাও একটা বড় পাওনা হলো আপনার মন্তব্যে আর্কাইভ হয়ে রইল।
অনেকে জানেন না তারা জানবেন।
শুভকামনা ভালো থাকুন

৪| ০৫ ই আগস্ট, ২০২১ সকাল ৯:৩৬

শেরজা তপন বলেছেন: দু-চারজন বিশিষ্ট কবি ছাড়া আমি কবিতা বিশেষ একটা পড়িনা বললেই চলে!
কবি আবুল হাসান সন্মন্ধে ও তার কবিতার বিষয়ে কিছুই জানতাম না বলা চলে।
কয়েকটা কবিতা পড়লাম আপনার সৌজন্যে- কাব্যের গভীরতা ব্যাপক!
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে চমৎকার স্মৃতিকথা শেয়ার করার জন্য কবি।
ভাল থাকুন

০৬ ই আগস্ট, ২০২১ রাত ১:১২

রোকসানা লেইস বলেছেন: যাক কিছু একটা নতুন উপহার দিতে পারলাম আপনাকে। বাক্য বিন্যাশ উপমার ব্যবহারে এত রিচ কবিতা তিনি লিখে গেছেন। আশা করি উনি এখন আপনার ভিতর বসত করবেন। মাঝে মধ্যে পড়ে নিবেন দু একটা কবিতা। ভীষণ ভালোলাগবে।
কবিতা কি ভাবে যেন আমার ভিতরে ঢুকে গেছে। জামা কাপড় গহনা কেনার চেয়ে বইয়ের প্রতি আগ্রহ। সব সময়। লাইব্রেরি ছাড়াও নীলক্ষেতের পুরানো বইএর দোকান আমার প্রিয় ছিল।
আমাকে নতুন উপমা দিলেন হাহা হা।
কবিতা ভালোবাসি। কবিতা লিখি, কবি এখনও হলাম কিনা জানি না। তবে অনেক লেখার ভীড়ে কবিতা মাঝে মাঝেই শব্দ নিয়ে খেলা করে মনে।
ভালো থাকবেন অনেক শুভেচ্ছা রইল

৫| ০৫ ই আগস্ট, ২০২১ সকাল ১১:৩৭

কবিতা ক্থ্য বলেছেন: অসাধারন কাব্য সংগ্রহ।

শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।

০৬ ই আগস্ট, ২০২১ রাত ১:২২

রোকসানা লেইস বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ কবিতা ক্থ্য
পড়েছেন জেনে প্রিত হলাম।
শুভেচ্ছা থাকল

৬| ০৫ ই আগস্ট, ২০২১ দুপুর ১:৩৮

ফুয়াদের বাপ বলেছেন: পদ্য-গদ্য মিলেমিশে একাকার কি মুগ্ধকর পাঠভোগ্য যাদু মেশানো লেখা পড়লাম। পড়ার ঘোরের সাথে ধন্যবাদ রেখে গেলাম।

০৬ ই আগস্ট, ২০২১ রাত ১:২৪

রোকসানা লেইস বলেছেন: সুন্দর ঘোরের মন্তব্য অনবদ্য
ভালো থাকবেন

৭| ০৫ ই আগস্ট, ২০২১ দুপুর ২:১৯

রাজীব নুর বলেছেন: পোষ্ট টি ভালো লাগলো।

০৬ ই আগস্ট, ২০২১ সকাল ১১:০৭

রোকসানা লেইস বলেছেন: ধন্যবাদ রাজীব নুর

৮| ০৫ ই আগস্ট, ২০২১ বিকাল ৪:২৩

হাবিব বলেছেন: দারুণ ...++

০৬ ই আগস্ট, ২০২১ সকাল ১১:০৭

রোকসানা লেইস বলেছেন: ধন্যবাদ হাবিব

৯| ০৬ ই আগস্ট, ২০২১ রাত ২:৩২

মাসউদুর রহমান রাজন বলেছেন: পোস্টের প্রথম লাইনটা পইড়াই বুঝতে পারছিলাম কবি আবুল হাসানকে নিয়া লেখা। অনেক আগে তার কবিতাসমগ্র পড়ছিলাম। তখন মাত্র সাহিত্য পড়তে শুরু করছি। সাহিত্যিক হওয়ার খায়েশ হইছিল তখন। এক বড় ভাই কইলো তাইলে এই কবির কবিতা পড়। হজম করতে পারি নাই।
বহুদিন পর তাঁর কথা মনে করায়া দিলেন। খুব ভালো লেখা হইছে। ভালো থাকবেন।

১০| ০৬ ই আগস্ট, ২০২১ সকাল ১১:১৪

রোকসানা লেইস বলেছেন: যাদের একটু ধারনা আছে তারা অবশ্যই বুঝতে পারবেন। সাহিত্যিক হইতে পারেন বা না পারেন তার কথামালা একবার মনে গেঁথে গেলে তার থেকে বেরিয়ে আসা মুশকিল।
সাহিত্যিক হতে হবে নিজের মতন। নিজের ভিতর কিছু না থাকলে কিছু হবে না। অনেক কিছু গুলে খেলেও।
ধন্যবাদ মাসউদুর রহমান রাজন, লেখার প্রশংসা করার জন্য। আসলে কবির কবিতাগুলোই আবার সবাই মিলে পড়তে চাইলাম এক সাথে। কত পছন্দের কবিতা দিতে পারলাম না বড় হয়ে যাচ্ছে বলে।
ভালো থাকবেন শুভেচ্ছা রইল

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.