| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বাড়ির পাশ দিয়ে যে রাস্তাটি বয়ে গেছে,শুনশান নীরবতায় একাকী শুয়ে থাকতো। কদাচিত মানুষের পথচারনায় তার বুকে স্পন্দন জাগতো। সকাল বিকাল গরুর পাল নিয়ে, রাখাল পেরিয়ে যেত এই পথে। জ্যৈষ্ঠ, ভাদ্র মাসে টুপটাপ আম পড়ার শব্দ ধুপ ধাপ করে পাকা তাল পড়তো। এছাড়া পাখির গানে মুখরিত থাকতো এলাকা।
আমাদের বাড়ির পাশেই এই রাস্তা, তার পাশেই পিসিমার বিশাল বাড়ির মাঠ, পুকুর আর ফল ফলার এর গাছ । আমাদের বাড়িতে বড়ই গাছ থাকলেও পিসিমার বাড়ির বড়ই গাছের বড়ই অনেক বেশি মজা লাগত। সকাল, দুপুর, বিকাল যখন ইচ্ছে হতো পিসিমাকে বলে ঝাঁকা ভর্তি করে বড়ই পেড়ে নিয়ে চলে আসতাম। নিয়ে আসতাম কামরাঙ্গা চালতা আর তাল। এরপর চলত ভর্তা, আচার বানানোর ধুম।
এক সকালে পিসীমার চোখ লাল, কাঁদতে কাঁদতে বিদায় নিলেন। চলে যাচ্ছিরে আর দেখা হবে না। আর কখনো দেখা হলোও না পিসিমার সাথে। আমরা সবাই কাঁদলাম শেষবারের মতো দেখা পিসিমার সাথে। কলকাতা চলে গেলেন। সেখানে ওনার ছেলে-মেয়েরা ছিল। দেশে শুধু পিসিমার এক ছেলে দাদা রয়ে গেলেন। কিছুদিন পর পর সেই বিশাল আমাদের খেলার মাঠ, পিসিমার বাড়ির জায়গা, টুকরো টুকরো করে বিক্রি করে দিলেন দাদা।
দু চারটে চালা ঘর উঠলো শহরের কিছু মানুষ, স্থানান্তরিত হল সেইসব বাড়িতে। যাদেরকে আগে থেকেই চিনতাম। একটু একটু ঘরবাড়ি জেগে উঠলো খেলার মাঠ জুড়ে, খেলার মাঠ আর রইল না।
নতুন কিছু প্রতিবেশী যোগ হলো আমাদের পাড়ায়। যাদের যাতায়াতের পথ আমাদের বাড়ির পাশের শুনশান রাস্তাটি ধরে।
গত কয়েক বছর দেশে আসছি আর পরিবর্তন দেখছি। চালা ঘরের বাড়িগুলো এক একটা কয়েকতলা দালান হয়ে উঠছে। ইট সুরকি, ধুলা হইচই, কামলাদের চিৎকার। মেশিনের শব্দ, হাতুড়ির শব্দ, লোহা লক্করের শব্দ । আমাদের বাড়ির জানালা খুলে রাখার উপায় নাই।
ধুলার আস্তরণে বাড়িঘর গাছ অন্য এক রূপ ধারণ করল,
ইট সুরকির লালচে আভরণ মেখে।
প্রতিবার দেখি এক চিলতে সবুজ যেটুকু বাকি ছিল, সব দালানের আড়ালে ঢাকা পড়ে গেছে। আরো দালান উঠছে।
চেনা পরিচিত শুনশান পাড়া ইটকাঠের নগরী হয়ে উঠেছে, বহতল দালানের সমারোহ রাস্তা ঘিরে।সবুজের কোনগুলোতে কঠিন ইটের দালান দাঁড়িয়ে, যে মানুষ গুলো বাস করে এইসব বাড়িতে, তাদের সাথে পরিচয় নেই। নতুনের মেলা।
সবুজের ছোঁয়া এখানে আর কোথাও নেই । বাচ্চাদের হইচই চিৎকার খেলাধুলা আনন্দ রাগ অভিমান কিছু নেই। অচেনা মানুষের ভিড়ে পাড়া হয়ে গেছে অচেনা।কয়েকজন পাড়ার মানুষের পাড়া হয়ে গেছে হাজার জনতার ভিড়।
০৪ ঠা জুন, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৪
রোকসানা লেইস বলেছেন: সব কিছু পরিবর্তনশীল । কিছু বিষয় তবু মনে হয় একই রকম থেকে গেলে ভালোলাগে।
ধন্যবাদ
২|
০৩ রা জুন, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:১৩
শায়মা বলেছেন: সময়ের সাথে সবকিছুই বদলে যায়...... এই জীবনে যতটুকু দেখা হলো ভাবলেই অবাক লাগে এইখানে যা আছে এখন তা এক সময় অন্যকিছু ছিলো ........
০৪ ঠা জুন, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৯
রোকসানা লেইস বলেছেন: ঠিক প্রতিদিন আমাদের বড় হয়ে বদলে যাওয়ার মতনই আমাদের চারপাশ পরিবেশ বদলে যাচ্ছে। তবু কিছু বিষয় স্মৃতির সাথে মিলে থাকলে ভালোলাগে।
আরো অনেক কিছু দেখার বাকি আছে বদলে যাওয়া পৃথিবীর।
কেমন আছো শায়মা?
শুভ সুন্দর থেকো
৩|
০৪ ঠা জুন, ২০২৫ সকাল ৯:৩৮
রাজীব নুর বলেছেন: সব ক্কিছু বদলে যায়। এটাই নিয়ম। বদলায় না শুধু ধর্ম ও ধর্মের নিয়ম কানুন।
০৪ ঠা জুন, ২০২৫ বিকাল ৪:০০
রোকসানা লেইস বলেছেন: ঠিক সব বদলায়। কে বলেছে ধর্ম বদলায় না প্রয়োজন মতন ধর্মও বদলায় এখন।
আমার চেনা ধর্ম কত বদলে গেছে এখন।
৪|
১০ ই অক্টোবর, ২০২৫ সকাল ৭:১৯
খায়রুল আহসান বলেছেন: আপনি সাহিত্যিক মানুষ। কি চমৎকার করেই না অল্প কথায় একটি ছোট্ট পাড়ার (সম্ভবতঃ মফস্বল পাড়ার) ক্রম পরিবর্তনের একটি ধারা বিবরণী দিয়ে গেলেন। ছোট্ট পরিসরে যেন সেই পাড়াটি, পাড়ার পিসিমা, দাদা এবং অচেনা ক্রেতাদের ছবিগুলোও একে একে ফুটে উঠল। এত অল্প পরিসরে পরিবর্তনের এমন একটি চিত্র তুলে ধরা সব লেখকের পক্ষে সম্ভব নয়। আপনাকে অভিনন্দন!
©somewhere in net ltd.
১|
০৩ রা জুন, ২০২৫ বিকাল ৪:৩৮
আধুনিক চিন্তাবিদ বলেছেন: হুম...সময়ের সাথে সাথে এভাবেই সব বদলে যায়।