নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সত্য সাহা

স্বাধীনতা আমার শক্তি। ৭১ আমার চেতনা।

সত্য সাহা

আমি সাংবাদিক ও ক্ষুদ্রলেখক। সত্য তুলে ধরাই আমার লক্ষ্য।

সত্য সাহা › বিস্তারিত পোস্টঃ

জামায়াতী ঘরানার প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের পোয়াবারো

১৮ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ১২:০৯

রাজনীতির মাঠে ব্যর্থ হলেও কৌশলে ছড়ানো হচ্ছে মওদুদীবাদী চিন্তাধারা : বিকল্প হতে পারে ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় -ড. মোঃ আখতারুজ্জামান : এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম দ্রুত শুরু করা না হলে ইসলামী শিক্ষা ও সরকারের সামগ্রিক রাজনীতি ভয়াবহ সঙ্কটে পড়বে - এ এম এম বাহাউদ্দীন

ফারুক হোসাইন : এইচএসসি, আলিম ও সমমানের পরীক্ষায় প্রতিবছরই বাড়ছে পাসের হার ও জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা। ভালো ফল করা সব শিক্ষার্থীই বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছে। সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিতদের পাশাপাশি মাদরাসা থেকে আলিম পাস করা শিক্ষার্থীরাও অংশ নেন এই প্রতিযোগিতায়। অথচ উচ্চমাধ্যমিক পাস করা বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর জন্য উচ্চশিক্ষার সুযোগ রয়েছে সীমিত। ফলে একদিকে যেমন উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আসন সঙ্কট রয়েছে। অন্যদিকে বাড়ছে উচ্চশিক্ষার চাহিদা। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে জামায়াতী ঘরানার প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর হয়ে ওঠেছে পোয়াবারো অবস্থা। চটকদার বিজ্ঞাপন, শিক্ষাবৃত্তির লোভনীয় প্রস্তাব, নানা সুযোগ-সুবিধার প্রচারণা এবং উচ্চ শিক্ষার তীব্র আকাক্সক্ষাকে কাজে লাগিয়ে তারা বিপুলসংখ্যক তরুণ শিক্ষার্থীর মাঝে ছড়িয়ে দিচ্ছে মওদুদীবাদী চিন্তাধারা। শিক্ষাবিদরা মনে করেন জামায়াতী চিন্তা-চেতনার বিপরীত, মাদরাসা শিক্ষার্থীদের বিকল্প এবং বিদ্যমান উচ্চশিক্ষার আসন সঙ্কটের সমাধান হতে পারতো ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়। এটিতে একদিকে যেমন মাদরাসা থেকে পাস করা বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পারতো। অন্যদিকে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা গড়ে উঠতো প্রকৃত ইসলামী শিক্ষা ও জাতীয় মূলধারার সংস্পর্শে। অনুসন্ধানে জানা যায়, এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় সরকার আন্তরিক থাকলেও সরকার ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা জামায়াতের সাথে সম্পৃক্ত একশ্রেণির কর্মকর্তা এটি বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। জামায়াতের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সুযোগ করে দিতেই তারা এটি করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

গত ১৩ আগস্ট ২০১৪ সালের এইচএসসি, আলিম ও সমমানের পরীক্ষার ফল অনুযায়ী আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে পাসের হারে শীর্ষে রয়েছে মাদারাসা শিক্ষা বোর্ড। আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে গড় পাসের হার ৭৫ দশমিক ৭৪ শতাংশ, অন্যদিকে মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৯৪ দশমিক ৮ শতাংশ। কেবল ২০১৪ সালেই নয়, গত পাঁচ বছর ধরে প্রতিবারই এইচএসসি, আলিম ও সমমানের পরীক্ষায় ১০ শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে পাসের হারে শীর্ষ স্থান অর্জন করে আসছে মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড। মাদরাসা থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি সাধারণ ধারার বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির সুযোগ না পেয়ে উচ্চশিক্ষার তীব্র আকাক্সক্ষা থাকায় ভর্তি হচ্ছে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে। দেশে বর্তমানে ৭৯টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হলেও এর মধ্যে ১০ থেকে ১২ প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হচ্ছে জামায়াতে ইসলামীর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ মালিকানায়। সার্বিকভাবে দেশে রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনায় বাধাগ্রস্ত হওয়ায় দলটি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের একটি অংশকে গড়ে তুলছে তাদের চিন্তা-চেতনায়। এজন্য চটকদার বিজ্ঞাপন, শিক্ষাবৃত্তি, ভর্তুকিসহ নানা সুযোগ-সুবিধার কথা বলে আকৃষ্ট করছে শিক্ষার্থীদের। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে না পারা, অন্যান্য প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তুলনামূলক বেশি খরচ হওয়ায় শিক্ষার্থীরাও ঝুঁকছে জামায়াতী ঘরানার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দিকে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে যে কোন বিভাগের শিক্ষার্থীদের ইসলামিক স্টাডিজ, কুরআন কিংবা হাদিস স্টাডিজের কোর্সের নামে পড়ানো হচ্ছে মওদুদীবাদী আদর্শ। ফলে রাজনৈতিকভাবে সরকার এই আদর্শবাদীদের কোণঠাসা করতে চাইলেও বিকল্পভাবে তারা প্রতিবছর গড়ে তুলছে তাদের আদর্শ ও চিন্তাধারার একশ্রেণির তরুণ শিক্ষার্থী।

অথচ এই সুযোগ সন্ধানীদের বিকল্প হিসেবে ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠতে পারতো বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রফেসর ড. মোঃ আখতারুজ্জামান। তিনি বলেন, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হলে তা হতো উচ্চশিক্ষার জন্য একটি বাড়তি সংযোজন। প্রাথমিকভাবে বেশিসংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তি হতে না পরলেও, ক্রমান্বয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি উচ্চশিক্ষার সম্প্রসারণ এবং মূল কেন্দ্রে পরিণত হতে পারে। তিনি বলেন, জামায়াতী ঘরানার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো উচ্চশিক্ষার আসন সঙ্কটকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করে যেভাবে নিজেদের লোক তৈরি করছে এই বিশ্ববিদ্যালয় তার বিকল্প হিসেবে গড়ে উঠতো। প্রকৃতপক্ষে ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রকৃত ইসলামী শিক্ষা সম্প্রসারণ এবং আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার কাজ করবে বলে মনে করেন দেশের অন্যতম এই শিক্ষাবিদ।

ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে মাদরাসা শিক্ষকদের একক পেশাদারি সংগঠন বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি আলহাজ্ব এ এম এম বাহাউদ্দীন বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ফলে সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। তবে মাদরাসা শিক্ষার্থীদের চাওয়া ছিল তারা যেনো এবছর আলিম পাস করেই এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পায়। ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়টির ভিসি নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এখন শুধু সরকারের একটি ঘোষণার অপেক্ষা। ঘোষণাটি হলেই তিন দিনের মধ্যে সার্বিক ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়ে যাবে। তিনি আরও জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের ফাইল মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়ার পরও অজ্ঞাত কারণে তা কার্যকর হচ্ছে না। শিক্ষকদের একমাত্র অরাজনৈতিক সংগঠনটির সভাপতি বলেন, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম দ্রুত শুরু করা না হলে ইসলামী শিক্ষা ও সরকারের সামগ্রিক রাজনীতি ভয়াবহ সঙ্কটে পড়বে।

তিনি আরও বলেন, কেবল ঘোষণা ও আইন পাস করেই সরকার ধর্মপ্রাণ মানুষের যে শুভেচ্ছা ও সমর্থন পেয়েছিল, কথামতো বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ গতিশীল করা হলে এ সমর্থন শতভাগ বেশি হয়ে যেতো। অবিলম্বে সরকার ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম পুরোমাত্রায় শুরু করে আলেমসমাজ ও ধর্মপ্রাণ জনগণের মন জয় করার সুযোগ নিতে পারে। বহু কাক্সিক্ষত এ দাবিটি এ মুহূর্তে বাস্তবায়ন না করা হলে সরকারের আন্তরিকতা নিয়ে, প্রশ্ন উঠবে। শেষ ভরসা হিসেবে সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক ও সবস্তরের ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত মনযোগ আশা করছেন।

গতবছরের ১৮ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ-২০১৩ বিল পাস হয়। অথচ একই বছরের কিন্তু ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় বিলের পর ২৩ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ-২০১৩ বিল পাস হয়। ইতোমধ্যে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, ট্রেজারার, রেজিস্টার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। গঠিত হয়েছে সিনেট ও সিন্ডিকেটও। -



সুত্র ঃ ইনকিলাব

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.