নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্রষ্টার সৃষ্টি আমি, আমি সর্বশ্রেষ্ঠ…

স্টিক্স অ্যাকিলিস

পৃথিবীতে আসার জন্যে জন্মেছি, মৃত্যুর জন্যে আবার পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবো। এইতো আমি………

স্টিক্স অ্যাকিলিস › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটা পায়েল

১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ৮:৩৮

অক্টোবর ২৪ তারিখ

সানভির তখনও বুঝতে পারছিলো না কি করবে। মাসের শেষের দিকটায় এসে তার কাছে টাকা ছিলো না।
২৫ তারিখ সোহার জন্মদিন। চঞ্চল একটা মেয়ে। হাসতে জানে, কাঁদতে জানে আবার হাসাতেও জানে। কোন চাহিদা নেই মেয়েটার, শুধু আদর করে সানভির একবার ভালোবাসি বললেই সে ঘুমিয়ে যেত।
সোহা কল দিয়ে বলেছিলো তাকে যেন ওইদিন লাল রংয়ের শার্ট পড়ে আসে। সারাটা দিন তাকে নিয়ে ঘুড়বে।

মজার ব্যাপার হচ্ছে, সানভিরের কোন লাল শার্ট নেই। আর এই একদিনের মাঝে টাকা মেনেজ করে শার্ট কিনে আনাও তার পক্ষে সম্ভব ছিলো না। তাই আর এক ফ্রেন্ডের কাছ থেকে লাল রংয়ের শার্ট নিয়ে নেয়।

২৫ তারিখ সকাল....

খুব তরিঘরি করে রেডি হয়ে রউনা দেয় সানভির। বোকা স্বভাবের একটা ছেলে, সোহা যাই বলে শুধু মাথা নেরে যায়। কখনোও প্রতিবাদ করে না।

পার্কের কোন এক পাশে সোহা বসা। দৌড়ে সামনে যায় সানভির। সোহা একবার সানভিরের চোখের দিকে তাকানোর পর আর তাকাচ্ছে না। সে বুঝতে পারছিলো সোহা অনেকটা রেগে আছে, ১ ঘন্টা বসিয়ে রেখেছে তাকে।
ভেবেছিলো হাতটা ধরে সরি বলবে, কিন্তু সেই সাহসটা পাচ্ছিলো না সে। আস্তে গিয়ে পাশে বসে হাতের আঙুল দিয়ে মৃদু স্পর্শ করতে সোহা সানভিরের দিকে রাগান্বিত ভাবে তাকিয়েই অট্ট হাসি...
- হা হা হা...। এই তুমি শার্ট পড়তেও জানো না..?
সানভির শার্টের দিকে তাকিয়ে দেখে বোতামগুলো উলট পালট হয়ে আছে।
সোহা আর একটু কাছে এসে সানভিরের শার্টের বোতামগুলো লাগিয়ে দিতে দিতে....
- কি এমন কাজটা ছিলো যে আমাকে ১ ঘন্টা বসিয়ে রেখেছো.? আবার শার্টটাও ঠিকমত পড়লে না.!
- আসলে....
- থাক থাক, আর কিছু বলতে হবে না।

হঠাৎ করেই দুইজন চুপচাপ। দুইজনেরই চোখ সোজা সামনের দিকে। সানভির যে সোহাকে প্রচন্ড রকম ভয় পায় সেটা সোহা জানে। আবার সোহা সানভিরকে ভয়ও দেখায়। ভিতুর মত চেহারাটা দেখে সে মুচকি হাসে...
- কি ব্যাপার, আমার গায়ে তোমার শরীরটা একটু লাগলে কি পঁচে যাবে?
- না মানে...। আসছি....! ( আস্তে করে সোহার গা ঘেসে বসে সানভির )
- কই দেখিতো তোমার হাতটা, আজকে কয়টা মেয়ের হাত ধরেছো..? আমি হাত দেখে সব বলে দিতে পারি।
- আমিতো কারো হাত....
- চুপ, যা বলতে বলছি তা করো, হাতটা দাও।

সানভিরের হাত আর পা থর থর করে কাঁপছে। হাতটা এগিয়ে দেয় সোহার হাতের ওইদিক। হাতটা ধরে সে। হাতে কি জানি দেখছে সোহা।
হাতে কয়েকটা কালো দাগ...
- এই দাগ কিসের..?
- জানি না...
উড়না দিয়ে দাগটা মুছার চেষ্টা করেও ব্যার্থ হয়েছে মেয়েটা। সে আর মাথা ঘামায় নাই দাগটা নিয়ে। হাতটা শক্ত করে ধরে আছে। সানভিরের খুব ব্যাথা করছিলো হাতে কিন্তু বলতে পারছিলো না সোহা রাগ করবে তাই...
- সকালে কিছু খেয়েছো..?
- ইয়ে মানে...
৩-৪ দিন হবে মেসের খাওয়া দাওয়া ঠিক নেই, খালা এসে রান্না করে না ঠিক মত। সোহা জানতো সেটা, আর সেইজন্যেই সানভিরের জন্যে একটা বিরিয়ানির প্যাকেট নিয়ে আসে...
- এইদিকে আসো...
মুখে তুলে দিচ্ছে সোহা, নিচের দিক তাকিয়ে খাচ্ছে সানভির। সোহা সানভিরের ভিতু চেহারাটা দেখে মিটমিট করে হাসছে আর বিরিয়ানি মুখে তুলে দিচ্ছে।

খাওয়া শেষ হওয়ার পর সানভির পকেট থেকে টিসু পেপার বের করার আগেই সোহা তার উড়না দিয়ে মুখটা মুছে দেয়। সানভির সোহার মুখের দিকে একবার তাকিয়ে আবার মাথা নিচু করে রাখে।
আবার দুইজন নিস্থব্ধ, সানভিরের হাতটা আবার কাছে টেনে নিয়ে ধরে আছে। ( ঐ সময় হাত দেখার নাম করেই সোহা সানভিরের হাতটা ধরেছিলো )

আবার চুপচাপ দুইজন, সামনের দিকে তাকিয়ে আছে দুইজনের চোখগুলো।
হঠাৎ করে সানভির হাতটা সরিয়ে পকেটে হাত দেয়, মেয়েটাও অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে সানভিরের হাতের দিকে।
পকেট থেকে একটা কিছু বের করেছে সে।

একটা পায়েল......!
সানভিরের অনেক প্রিয় একটা জিনিস, অনেকটা দুর্বলতা আছে পায়েলের প্রতি তার।
পায়েলটা হাতে নিয়ে ভয়ে ভয়ে তাকায় সোহার দিকে। সোহা জানে পায়েল কিনার জন্যে টাকাটা সে এত সহজে পায় নাই।
- টাকা কোথায় পেলে..?
- না মানে...
- হাতটা দাও এইদিকে।
হাতটা দিতে চাইছিলো না সানভির। জোড় করে হাতটা টেনে নিয়ে ভালো করে হাতের দিকে তাকিয়ে দেখে হাতে যে দাগগুলো ছিলো সেটা নিতান্তই কোন দাগ ছিলো না। জখম হয়ে যাওয়া কালো দাগ...
- আমার মাথায় হাত রেখে বলো তুমি টাকা কোথায় পেয়েছো..?
- না মানে, ৩ দিন রাতের বেলায় ওয়ার্কশপে কাজ করেছিলাম। লোহা টেনে নিতে গিয়ে হাতে......

কথাটা শেষ করার আগেই সোহা সানভিরকে জড়িয়ে ধরে হুরমুরিয়ে কান্না শুরু করে দেয়....
- কে বলেছিলো তোমাকে এতটা কষ্ট করতে, হ্যা? বেশী ভালোবাসা দেখাও তুমি?
আমিতো কিছুই চাই না তোমার কাছে, শুধু ঘুমানোর আগে একটা বার তোমার মুখে ভালোবাসি শুনতে পারাটাই আমার কাছে আমার চাহিদা।

বুঝে উঠতে পারছিলো না সানভির। কখনোও মেয়েটাকে এভাবে কাঁদতে দেখে নি। বুক থেকে সোহার মাথাটা সরিয়ে হাত দিয়ে মুছে দেয় চোখগুলো।
এখন সোহাও বোকার মত হয়ে গেছে, কিচ্ছু বলছে না। বসার জায়গাটা থেকে নিচে নেমে আসে সানভির, সোহার পায়ের কাছে।
সেও অবুঝের মত করে পা বাড়িয়ে দেয় সানভিরের দিকে।
সানভির পায়েলটা পড়িয়ে দেয় সোহার পায়ে। উপড়ে উঠে এসে আবার বসে মেয়েটার পাশে। এবার সোহার হাতটা সানভির টেনে এনে ধরে রাখে।
সোহাও সানভিরের কাধে তার মাথাটা রাখে। যেন হাজার বছরের স্বপ্ন আঁকা ছিলো দুইজনের।
দুপুরের সময়টা যাচ্ছে, এভাবেই বসে আছে দুইজন। এভাবেই হয়তো সারাটা জীবন কাঁটিয়ে দিবে তারা...

ভালো থাকুক ভালোবাসা, ভালো থাকুক ছোট্ট মিষ্টি প্রেমেটা
বেঁচে থাকুক ভালোবাসা, পায়ে পড়িয়ে দেওয়া পায়েলের মাঝে.....

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ৯:৩৪

মাহবুবুল আজাদ বলেছেন: বাহ অনেক ভাল লাগল। বেঁচে থাকুক ভালবাসা আজীবন।

২| ১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:০৬

স্টিক্স অ্যাকিলিস বলেছেন: সেটাই কাম্য

৩| ১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:০৬

গেম চেঞ্জার বলেছেন: খারাপ হয়নাই। বর্ণনা খুব ফাইন মনে হলো। এটাতেও +

৪| ১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:০৫

স্টিক্স অ্যাকিলিস বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে..

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.