নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সুজন মাঝি এখন প্রবাসে

প্রবাসী

সুজন মাঝি এখন প্রবাসে › বিস্তারিত পোস্টঃ

সরল মজুমদার ও কুমুদীনির প্রেম কাহিনী

১৩ ই মে, ২০১৫ দুপুর ১২:৫৭

নেত্রকোনা জেলা মোহনগঞ্জ উপজেলার সরল মজুমদার ও কুমুদীনির প্রেম কাহিনীঃ

ইতিহাস, নাটক কিংবা পুঁথিতে আমরা কতো প্রেম কহিনী পড়ি। কতো প্রেমের ছড়াছড়ি দেখি । ময়মনসিংহ গীতিকায় আমরা
দেখতে পাই বেদের মেয়ে মহুয়ার জন্য ব্রাম্মণ পুত্র নদের চাঁদ জাতি-কুল-মান সব ডুবিয়েছিল। শরৎ চন্দ্রের বিলাসী গল্পে দেখি মৃত্যুঞ্জয় একজন
সাপুড়ের মেয়েকে ভালবেসে জাতিচ্যুত হয়েছিল । ঠিক তেমনি ধরণের একটি প্রেম কাহিনী আছে এই মোহনগজ্ঞে ।
একজন জমিদার তনয়কে জেলের মেয়ের সঙ্গে প্রেম করার অপরাধে ত্যাজ্যপুত্র হয়ে জীবন কাটাতে হয়েছে ।
ঘটনাটি ঘটেছিল মোহনগজ্ঞ পৌর শহর থেকে দু ' মাইল দুরেবড়তলী গ্রামে । প্রবীণদের বর্ণনা অনুযায়ী বড়তলী গ্রামের রাজেন্দ্র মজুমদারের ছেলে
সরল মজুমদার সবেমাত্র ম্যাট্রিক পাশ করে শহর থেকে বাড়ীতে এসেছে । এ সময় গ্রামের জেলে পাড়ায় পদ্ম মাঝি নামে এক জেলে ছিল ।
তার ছিল এক মেয়ে নাম কুমুদীনি । লোকে কুমী বলেই ডাকতো । পূর্ণ যুবতী এই কুমী খুব ভাল গান
গাইতে পারতো । তার কন্ঠে মধু ঝরতো । যুবক সরল মজুমদার একদিন গ্রামের ভেতর দিয়ে বেড়াতে বেড়াতে
দূর থেকে কুমুদীনির গান শুনে তার বাড়ীতে হাজির হল । এর পর থেকেই শুরু হল প্রায় নিয়মিত যাতায়াত ।
সরল মজুমদারও খুব ভাল বাঁশী বাজাতে পরতো । ফলে দু'জনের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা বাড়লো । প্রথম দিকে অনেকেই মনে করল, জমিদারের ছেলে গান শুনতে
আসে । তাতে কি.? এদিকে গানের ফাঁকে ফাঁকে দূ'জনের মধ্যে চললো মন দেয়া-নেয়ার পালা । এই পালা যখন সাঙ্গ হল অর্থাৎ একে অপরকে
বেঁধে ফেলল প্রেমের রশিতে, তখন ঘটনাটা জানজনি হয়ে সরল মজুমদারের বাবার কানে উঠল । রাজেন্দ্র মজুমদার ঘটনা শুনে তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠলেন ।
মনে মনে ভাবলেন, যে ছেলেকে এত টাকা-পয়সা খরচ করে লেখাপড়া শেখাচ্ছি, সে অবশেষে একটি জেলের মেয়ের সঙ্গে কেলেংকারী করে জাতি
কুল-মান সব ডুবাবে । ভাবতে লাগলেন কি করে তাকে এই পথ থেকে ফেরানো যায় । সিদ্ধান্ত নিলেন আপাততঃ লেখাপড়ার চাপ দিয়ে কোলকাতা
পাঠিয়ে দিলে পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে । ছেলেকে যখন বললেন, কোলকাতা যাওয়ার কথা, তখন সরল মজুমদার যেতে রাজী হল না ।
রাজেন্দ্র মজুমদার পড়লেন ভীষণ সংকটে । যে কাজ তিনি কৌশলে সমাধান করতে চেয়েছিলেন, সেটা আর হল না ।
এদিকে সরল মজমদার, তাকে কোলকাতা পাঠানোর প্রস্তাবের গূঢ় অর্থ অনুধাবন করলেও কুমুদীনির বাড়ী যাতায়াত বন্ধ করেনি । বরং আরও বেড়ে চলছে ।
এ নিয়ে গ্রামের যত্রতত্র রসালো আলাপ-আলোচনা শুরু হলো । এই আলোচনা নিয়মিত ভাবেই রাজেন্দ্র মজুমদারের কানে আসতে লাগলো । অবশেষে
রাজেন্দ্র মজুমদার, সরাসরি সরল মজুমদারকে কুমুদীনির বাড়ীতে যেতে নিষেধ করলেন । সরল মজুমদারের মা এবং আত্মীয়-স্বজনরাও তাকে
খুব ভাল করে বুঝালেন । কিন্তু সবই অরণ্যে রোদন হল । পরিশেষে , রাজেন্দ্র মজুমদার শান্তিপূর্ণভাবে কাজ সমাধান করতে না পেরে একদিন লোকজন
নিয়ে সরল মজুমদার কে ধরে একটি ঘরের ভিতর বন্দী করে রাখলেন এবং খাওয়া দাওয়া সমস্ত বন্ধ করে দিলেন । কয়েকদিন পর তার মা ছেলের দুঃখে
দরদী হয়ে এবং অবস্থার পরিবর্তন হবে মনে করে রাজেন্দ্র মজুমদারের অজ্ঞাতে ঘরের তালা খুলে দিলেন । কয়েক দিন অনাহারে , অর্ধাহারে থেকে যদিও
শরীর দুর্বল হয়ে পড়েছিল তবু ছাড়া পেয়ে ঘর থেকে বের হয়েই চলে গেল সেই কুমুদীনির বাড়ীতে । এর পরেও তাকে একাজ থেকে বিরত করার
চেষ্টা হয়েছে । কিন্তু ব্যর্থ হয়ে অবশেষে রাজেন্দ্র মজুমদার তাকে ত্যাজ্যপুত্র করলেন । ত্যাজ্যপুত্র হয়ে সরল মজুমদার কুমুদীনিকে নিয়ে পার্শ্ববর্তী খুঁচিরগাঁও
গ্রামের দাসের পাড়ার নিবারণ সরকারের বাড়ীতে আশ্রয় নিল । নিবারণ সরকার তখন তাদের বসত বড়ীর সংলগ্ন একটি বাড়ীতে একটি ছোট্ট ঘর বেঁধে দিল ।
এই ঘরেই সরল মজুমদার কুমুদীনিকে নিয়ে বাকী জীবন কটিয়ে পাকিস্তান আমলের প্রথমদিকে প্রায় পঁয়তাল্লিশ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছে ।
সরল মজুমদারের মৃত্যুর পর তার মৃতদেহ দাহ করার জন্য কোন লোক আসল না । তখন কুমুদীনি একা এই লাশ টেনে একটি কলার ভেলায় তুলে নিজে
বেয়ে নিয়ে ডিঙ্গাপুতা হাওরে ভাসিয়ে দিয়েছিল । এরপর কুমুদীনি এখান থেকে দূরে তার এক আত্মীয় বাড়ীতে চলে যায় ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.