![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি কেবলই স্বপন করেছি বপন বাতাসে--- তাই আকাশকুসুম করিনু চয়ন হতাশে। ছায়ার মতন মিলায় ধরণী, কূল নাহি পায় আশার তরণী, মানস প্রতিমা ভাসিয়া বেরায় আকাশে। কিছু বাঁধা পড়িল না কেবলই বাসনা-বাঁধনে। কেহ নাহি দিল ধরা শুধু এ সুদূর-সাধনে। আপনার মনে বসিয়া একেলা অনলশিখায় কী করিনু খেলা, দিনশেষে দেখি ছাই হল সব হুতাশে।।
আমাদের মাকে আমরা বলতাম তুমি, বাবাকে আপনি।
আমাদের মা গরিব প্রজার মত দাঁড়াতো বাবার সামনে,
কথা বলতে গিয়ে কখনোই কথা শেষ ক’রে উঠতে পারতোনা।
আমাদের মাকে বাবার সামনে এমন তুচ্ছ দেখাতো যে
মাকে আপনি বলার কথা আমাদের কোনোদিন মনেই হয়নি।
আমাদের মা আমাদের থেকে বড় ছিলো, কিন্তু ছিলো আমাদের সমান।
আমাদের মা ছিলো আমাদের শ্রেনীর, আমাদের বর্ণের, আমাদের গোত্রের।
বাবা ছিলেন অনেকটা আল্লার মতো, তার জ্যোতি দেখলে আমরা সেজদা দিতাম
বাবা ছিলেন অনেকটা সিংহের মতো, তার গর্জনে আমরা কাঁপতে থাকতাম
বাবা ছিলেন অনেকটা আড়িয়াল বিলের প্রচন্ড চিলের মতো, তার ছায়া দেখলেই
মুরগির বাচ্চার মতো আমরা মায়ের ডানার নিচে লুকিয়ে পড়তাম।
ছায়া সরে গেলে আবার বের হয়ে আকাশ দেখতাম।
আমাদের মা ছিলো অশ্রুবিন্দু-দিনরাত টলমল করতো
আমাদের মা ছিলো বনফুলের পাপড়ি;-সারাদিন ঝরে ঝরে পড়তো,
আমাদের মা ছিলো ধানখেত-সোনা হয়ে দিকে দিকে বিছিয়ে থাকতো।
আমাদের মা ছিলো দুধভাত-তিন বেলা আমাদের পাতে ঘন হয়ে থাকতো।
আমাদের মা ছিলো ছোট্ট পুকুর-আমরা তাতে দিনরাত সাঁতার কাটতাম।
আমাদের মার কোনো ব্যক্তিগত জীবন ছিলো কিনা আমরা জানি না।
আমাদের মাকে আমি কখনো বাবার বাহুতে দেখি নি।
আমি জানি না মাকে জড়িয়ে ধরে বাবা কখনো চুমু খেয়েছেন কি না
চুমু খেলে মার ঠোঁট ওরকম শুকনো থাকতো না।
আমরা ছোট ছিলাম, কিন্তু বছর বছর আমরা বড় হতে থাকি,
আমাদের মা বড় ছিলো, কিন্তু বছর বছর মা ছোটো হতে থাকে।
ষষ্ঠ শ্রেনীতে পড়ার সময়ও আমি ভয় পেয়ে মাকে জড়িয়ে ধরতাম।
সপ্তম শ্রেনীতে ওঠার পর ভয় পেয়ে মা একদিন আমাকে জড়িয়ে ধরে।
আমাদের মা দিন দিন ছোটো হতে থাকে
আমাদের মা দিন দিন ভয় পেতে থাকে।
আমাদের মা আর বনফুলের পাপড়ি নয়, সারাদিন ঝরে ঝরে পড়েনা
আমাদের মা আর ধানখেত নয়, সোনা হয়ে বিছিয়ে থাকে না
আমাদের মা আর দুধভাত নয়, আমরা আর দুধভাত পছন্দ করিনা
আমাদের মা আর ছোট্ট পুকুর নয়, পুকুরে সাঁতার কাটতে আমরা কবে ভুলে গেছি।
কিন্তু আমাদের মা আজো অশ্রুবিন্দু, গ্রাম থেকে নগর পর্যন্ত
আমাদের মা আজো টলমল করে।
_____________________________________________
লেখক হুমায়ুন আজাদের অনেক লেখা পড়েছি, কিন্তু কবিতা আগে
পড়িনি। এই প্রথম পড়লাম।
ভালো লাগাটা সবার সাথে শেয়ার করলাম।
২| ০৩ রা এপ্রিল, ২০১০ রাত ৮:০৮
সুরঞ্জনা বলেছেন: আপনি আমি ব্যাতিক্রম হলেও সে কালে বেশীর ভাগ পরিবারে
মায়ের অবস্থান, মায়ের অসহায়ত্ব, বড় হবার পর সন্তানের উপলব্ধিতে
থেকে যায়। পিতৃতান্ত্রিক সমাজে মায়ের ভুমিকাকে কতটা অবহেলার
সাথে স্মরন করা হয়। পরিবারে তাঁর মতামত, পছন্দ-অপছন্দ কতটুকু
গুরুত্ব দেয়া হয়। এই সব মাদের কথা পড়লে মনটা খুবই খারাপ হয়ে যায়।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। আপনার লেখা গুলো পড়ছি।
শুভেচ্ছা।
৩| ০৩ রা এপ্রিল, ২০১০ রাত ৮:৩২
ভাঙ্গন বলেছেন:
এই কবিতাটা প্রথম যেদিন পড়ি, সেদিন পড়ার পরে ঝিম ধরে বসে ছিলাম কতক্ষণ,জানিনা।
সত্যি, কতগুলো অসাধারণ কথা বলা হয়েছে এই মা'কে নিয়ে।
.............
আমার বাবাকে ধন্যবাদ জানাই। দেখি, পরিবারের যেকোন কাজে আম্মার পরামর্শ বাবা অকপটে গ্রহণ করেন।
০৩ রা এপ্রিল, ২০১০ রাত ৮:৫৯
সুরঞ্জনা বলেছেন: ভাঙ্গন তোমার বাবা, আমার বাবার চাইতে হুমায়ুন আজাদের ছেলে বেলার বাবারা বেশীর ভাগই এমনি ছিলেন। আর মায়েরা তো মুর্তিমান
আত্মবিসর্জনকারী।
আমার নানাকেই দেখেছি, উনি ঘরে থাকলে জোরে কথা বলা নিষেধ।
ভাত,ডাল এমন খুঁটে খেতেন, মনে হত উনি মনোযোগ দিয়ে কালো
খুঁজতেই বসেছেন। আর যদি সত্যি পেয়ে যেতেন, তাহলে স্বসব্দে
বাসন ভেঙ্গে উনি বীরের বেশে উঠে যেতেন।
আমার নানি শামুকের মত নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে ভাঙ্গা বাসন কুড়াতেন আর আক্ষেপ করতেন, উনার জন্যই নানা খেতে পারলেন না।
উনারা কেউ অশিক্ষিত ছিলেন না। নানা ১৯৭৪ সালে শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের স্বর্ন পদক পেয়েছিলেন। নানি ও চিঠি পত্র লিখতে পারতেন।
কিন্তু তখনকার সমাজ ব্যাবস্থাই ছিলো অন্য রকম। ঐ সময়েও ব্যাতিক্রম ছিলো অনেক পরিবার।
৪| ০৩ রা এপ্রিল, ২০১০ রাত ৮:৪৪
হাসনাত মো: আদনান বলেছেন: হুমায়ুন আজাদ এর শব্দ চয়ন অনন্যসাধারণ। উনার 'শুভেচ্ছা' কবিতাটিতে ছন্দ নিয়ে যে অসাধারন খেলা দেখিয়েছেন তাতে আমি উনার কবিতার ভক্ত হয়েছি অনেক আগেই। এই কবিতাটিও আমার দারুন প্রিয়। আর আমার বোন এটা পড়েও খুব সুন্দর। মা কে নিয়ে এর চেয়ে ভাবাবেগময় লেখা আমি আর পড়িনি। লেখক হুমায়ুন আজাদ এর চেয়ে কবি হুমায়ুন আজাদ কে আমার বেশি প্রতিভাবান মনে হয়। আপনার কি মত?
--- চাকরি আর পড়াশুনার চাপে কবিতা পড়া ভুলেই গিয়েছিলাম। ধন্যবাদ আপনাকে, আবার ইচ্ছেটাকে জিইয়ে তোলার জন্য।
০৩ রা এপ্রিল, ২০১০ রাত ৯:০৪
সুরঞ্জনা বলেছেন: লেখক হুমায়ুন আজাদের সাথে ভালো পরিচয় থাকলেও কবি হুমায়ুন আজাদের সাথে এই কবিতাটি দিয়েই আমার পরিচয়ের সুত্রপাত।
তবু মনে হচ্ছে কবি হুমায়ুন আজাদই বেশি প্রতিভাবান।
কবিতা পড়া কোনো চাপেই বাদ দেবেন না। কবিতা হলো মন্ত্রের মত।
আমার যখন খুব মন খারাপ থাকে, তখন আমি কবিদের সাথে কথা বলি। মন ভালো হয়ে যায়।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
৫| ০৩ রা এপ্রিল, ২০১০ রাত ৮:৪৮
নিউটন বলেছেন: আমার প্রিয় মানুষের কবিতা ভাল তো হবেই।
অসাধারন, ভাবায়।
০৩ রা এপ্রিল, ২০১০ রাত ৯:০৮
সুরঞ্জনা বলেছেন: ঠিক বলেছেন নিউটন, অসাধারন, ভাবায়।
ধন্যবাদ আপনাকে।
৬| ০৩ রা এপ্রিল, ২০১০ রাত ৯:০১
হানিফ রাশেদীন বলেছেন: হুমায়ুন আজাদের কবিতাও কিন্তু অনেক ভাল, তাঁর লেখা আমাকে বেশ টানে, হয়তো বুঝতেই পারছেন, আপনার ব্লগে আমার আসা হয়ে উঠে নি, প্রথম পাতায় হুমায়ুন আজাদের কবিতা দেখেই চলে এলাম। তাঁর নামে যে দৃস্টিভঙ্গি বিদ্যমান তা ঠিক নয়, অবশ্য এ-ও ঠিক যে, তাঁর সবকিছু যে ঠিক তা-ও নয়। আমারো হুমায়ুন আজাদ অনেক পড়া, তাঁর সব বই-ই পড়বো।
ভাল থাকবেন। আমার ব্লগে আমন্ত্রণ রইলো।
০৩ রা এপ্রিল, ২০১০ রাত ৯:১১
সুরঞ্জনা বলেছেন: আমার ব্লগে না আসাটাই স্বাভাবিক। আমি তো নিয়মিত কিছু লিখিনা।
আর লেখাও তেমন কিছু নয়। প্রিয় কবিতা দেখে যে আমার আঙ্গিনায়
উঁকি দিয়েছেন। খুশী হলাম।
যাবো আপনার আঙ্গিনাতে।
শুভেচ্ছা।
৭| ০৩ রা এপ্রিল, ২০১০ রাত ৯:০৩
আলী আরাফাত শান্ত বলেছেন: প্রিয় কবিতা!
০৩ রা এপ্রিল, ২০১০ রাত ৯:১২
সুরঞ্জনা বলেছেন: জেনে ভালো লাগলো।
ভালো থাকুন।
৮| ০৩ রা এপ্রিল, ২০১০ রাত ১১:২৯
শায়মা বলেছেন: কবিতাটা আসলেই সুন্দর!
০৩ রা এপ্রিল, ২০১০ রাত ১১:৫৪
সুরঞ্জনা বলেছেন: আসলেই শায়মা। মন ছুয়ে যাওয়া।
৯| ০৩ রা এপ্রিল, ২০১০ রাত ১১:৩২
দুরন্ত স্বপ্নচারী বলেছেন: এটা তো আগে পড়িনি। প্রিয়তে গেল।
আর আপনাকে অসংখ্য থ্যাঙ্কস।
০৩ রা এপ্রিল, ২০১০ রাত ১১:৫৭
সুরঞ্জনা বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ দুরন্ত স্বপ্নচারী।
আমার ভূবনে স্বাগতম।
আসলেই কবিতাটি অনেক মন ছুয়ে যাওয়া।
১০| ০৩ রা এপ্রিল, ২০১০ রাত ১১:৩৭
দুরন্ত স্বপ্নচারী বলেছেন: আমি আগে পড়িনি। এখন মুগ্ধতায় ভাষা হারিয়ে ফেলেছি।
আজাদ সম্পর্কে কোন প্রশংসাই যথেষ্ট নয়। অসাধারণ কবিতা। পরিপূর্ণ জীবন।
০৬ ই মে, ২০১০ দুপুর ১২:১৫
সুরঞ্জনা বলেছেন: ধন্যবাদ দুরন্ত।
১১| ০৩ রা এপ্রিল, ২০১০ রাত ১১:৩৮
দুরন্ত স্বপ্নচারী বলেছেন: কতদিন এমন করে মুগ্ধ হই না!
০৬ ই মে, ২০১০ দুপুর ১২:১৭
সুরঞ্জনা বলেছেন:
১২| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১০ রাত ১:৪৬
ফাহাদ চৌধুরী বলেছেন: মুগ্ধ হওয়ার মত কবিতা!!!
০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:২৭
সুরঞ্জনা বলেছেন: আসলেই মুগ্ধ হওয়ার মত।
১৩| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১০ রাত ৩:৫৯
বাবুল হোসেইন বলেছেন: Click This Link
১৪| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:৩২
সুরঞ্জনা বলেছেন: দেখলাম। আমিও চাই পোষ্টটা ষ্টিকি করা হোক।
১৫| ০৬ ই মে, ২০১০ সকাল ১০:১৫
দক্ষিনা বাতাস বলেছেন: কিন্তু যেন ভাই
ইহার চেয়ে নাম যে মধুর
তিন ভূবনে নাই
আমি জানিনা যে এই অপূর্ব ছোট্ট চার লাইনের ছড়াটি ঠিক আছে কিনা, তবে চোখ
বন্ধ করে বলতে পারব যে প্রথম শব্দটি হল "মা"
আপনার লিঙ্ক টা আমার ফেসবুক গ্রুপ এ যোগ করলাম
মা Click This Link
০৬ ই মে, ২০১০ দুপুর ১২:১৮
সুরঞ্জনা বলেছেন: ধন্যবাদ ভাইয়া।
১৬| ০১ লা জুন, ২০১০ বিকাল ৪:৪১
সোমহেপি বলেছেন: ++++++++++
১৭| ০৭ ই মে, ২০১৬ সকাল ৮:৪৫
রুদ্র জাহেদ বলেছেন: প্রিয় কবিতা
১৮| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:১৫
মিকাইল ইমরোজ বলেছেন: এই কবিতা আমাকে ক্ষত বিক্ষত করে। আমাকে ছিড়ে ফেলে। সত্যিই মায়েরা খুব অসহয়, অন্তত আমার মা।
©somewhere in net ltd.
১|
০৩ রা এপ্রিল, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:৫৬
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: সেকালে মায়েদের অবস্থা এমন করুণ আর বাবারা ডাকসাইটে ও দাপুটে ছিলেন।
আমার বাবাকে দেখেছি অন্যরকম। শৈশব-কৈশোরের দিনগুলোতে প্রচণ্ড ডানপিটে স্বভাবের জন্য মাকে যমের মতো ভয় পেতাম, আর বাবা বাড়িতে থাকলে সাত খুন মাফ হয়ে যেতো। বাবা ছিল সেসময় সমস্ত আশা-ভরসার স্থল। আমার মা ও বাবার মধ্যে যে অনাবিল প্রেমময়তা দেখেছি, তার হুবহু ছায়া আমার পারিবারিক জীবনেও বিরাজমান।
সময় পেলে দেখবেন : বাবা-কিশোর এবং ১৯৭১ : অস্পষ্ট স্মৃতি থেকে