![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সেই কবে ... সভ্যতার আদিলগ্নে সূচিত হয়েছিল নিজেকে জানার অদম্য বাসনা। গ্রিক দর্শনের ‘know thyself’ কিংবা ভারতবর্ষের প্রাচীন দার্শনিকদের, “আত্মনাং বিধি”–র উত্তর আজো মেলেনি লাখো লাখো বছরের মানব ইতিহাসে। এই আত্মঅন্বেষণই তাজাকলমের জীবন তপস্যা। তবে নিজেকে জানার সাধনা বৈরাগ্যের পথে নয় বরং মানুষের সাথে থেকে, মানুষকে ভালোবেসে, মানুষের মাঝেই তাজা কলম খুজেঁ পেতে চায় আপন অস্তিত্বের ভূভাগ। তবুও তাজা কলম পৃথিবীতে এক গৃহী সন্নাসী কারন সে নিয়ত খুজেঁ ফিরছে শূণ্য খেকে আসা এবং শূণ্যতেই বিলীন হওয়া মানব জীবনের গুঢ় রহস্য। বিশেষ অনুরোধ: এ ব্লগে প্রকাশিত লেখাগুলো কপিরাইটের আওতাভূক্ত । লেখকের অনুমতি ছাড়া এখানে প্রকাশিত কোন লেখা কিংবা লেখার অংশ বিশেষ কেহ অন্য কোথাও প্রকাশ করলে বেআইনি কাজ হিসেবে বিবেচিত হবে। প্রয়োজনে লেখকের সাথে যোগাযোগ করুন।
আমার জন্মান্তর হয়েছে তাও তো অনেকগুলো বছর পেরিয়ে গেছে। সেই শেয়ালডাকা শিশুপল্লীটি তো কবেই ছেড়েছি। গ্লোবালাইজড যুগের কল্যাণে এখন তো আমি বার্লিনবাসী। বটবৃক্ষের মতোন এ শহরেই আজ আমার শাখাপ্রশাখা ঝুড়ি ছেড়েছে। আমার চাকরি, গবেষণা আর আমার পরিবার। ছাত্রজীবনের ভালবাসা ভিনদেশী মেয়ে ক্রিশ্চিন আর আমি যেন দুজনে দুজনা। দুজনের ভালবাসার ফসল চাষ আর শান্তিকে নিয়ে এই প্রাচুর্য গৃহই তো আমাদের স্বর্গোদ্যান।
পূর্ব জন্মের অনেক গল্পগাঁথাই আজ বিস্মৃতির অতলে। তবু জাতিস্মর স্মৃতি করে তাড়া। আজো অম্লান সেই কিশোরী মুখ । রাতের গভীরে নির্জনে আসে চুপিচুপি। করে প্রশ্ন, 'আসলেই কি সুখে আছো তুমি?' ওর প্রশ্নে আমি হারিয়ে যাই, শিশির ঝরা সেই শীত ভোরে.. বকুল তলায়। ফুল কুড়ানোর নেশায় আসতো ও, আমিও যেতাম নেশায় নেশায়। কীসের নেশায়.. ও কি তখন জানতো তা ! ফুল কুড়ানো শেষে অঞ্জলীতে এক মুঠো ফুল ধরতো আমার নাকের কাছে, সুঘ্রাণে হতাম মাতোয়ারা। একদিন বললো " আমি কইতাছি বকুল ফুলের মতই সুন্দর হইবো তুমার জীবন। সেইদিন হয়তো আমার কথা ভুইলা যাইবা।" স্পষ্ট মনে আছে, এ কথার জবাবে বলে উঠি, "একটা থাপ্পর মারবো তোরে । তোরে ভুইলা যামু! তুই-ই তো আমার বকুলফুল। সারা জীবন থাকবি আমার সাথে সাথে।"
তারপরই তো হয় জন্মান্তর। বাবার বদলী চাকুরীর সুবাদে ঢাকায় আসা, ঢাকা কলেজে প্রি-ইউনিভার্সিটি, জার্মানে স্কলারশিপ নিয়ে পড়তে যাওয়া, বাবা-মার অমতে বিয়ে করা, জার্মান নাগরিকত্ব পেয়ে যাওয়া, বিদেশ বিভুঁইয়ে ভালো চাকুরীর সুযোগ পাওয়া। চাকুরী, গবেষণা আর ফুরসুত পেলেই ক্রিশ্চিন, চাষ আর শান্তিকে নিয়ে হলিডে করতে বেরিয়ে পড়া। কোথায় যে হারিয়ে গেল বকুল আর বকুলের সুঘ্রাণ!
ইনসোমোনিয়া রাতে প্রায়ই ক্রিশ্চিন ঘুমিয়ে গেলে বিড়াল সন্তর্পণে স্টাডিতে যাই অসমাপ্ত কোন পেপার শেষ করবো বলে। চারপাশে মৌ মৌ বকুলের ঘ্রাণে হই আপ্লুত... শূন্যে দেখি ভেসে আছে পূর্বজন্মের মুখস্ত হওয়া সেই কিশোরী মুখ। আমাকে প্রশ্ন করে, 'সুখে আছো? আসলেই কি সুখে আছো তুমি?'
মাথা যায় আওলাইয়া। সুখ? সুখ কাকে বলে রে বকুলফুল...
©somewhere in net ltd.