নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আত্মনাং বিধিই হোক যাপিত জীবনের প্রেরণার উৎস।

তাজা কলম

সেই কবে ... সভ্যতার আদিলগ্নে সূচিত হয়েছিল নিজেকে জানার অদম্য বাসনা। গ্রিক দর্শনের ‘know thyself’ কিংবা ভারতবর্ষের প্রাচীন দার্শনিকদের, “আত্মনাং বিধি”–র উত্তর আজো মেলেনি লাখো লাখো বছরের মানব ইতিহাসে। এই আত্মঅন্বেষণই তাজাকলমের জীবন তপস্যা। তবে নিজেকে জানার সাধনা বৈরাগ্যের পথে নয় বরং মানুষের সাথে থেকে, মানুষকে ভালোবেসে, মানুষের মাঝেই তাজা কলম খুজেঁ পেতে চায় আপন অস্তিত্বের ভূভাগ। তবুও তাজা কলম পৃথিবীতে এক গৃহী সন্নাসী কারন সে নিয়ত খুজেঁ ফিরছে শূণ্য খেকে আসা এবং শূণ্যতেই বিলীন হওয়া মানব জীবনের গুঢ় রহস্য। বিশেষ অনুরোধ: এ ব্লগে প্রকাশিত লেখাগুলো কপিরাইটের আওতাভূক্ত । লেখকের অনুমতি ছাড়া এখানে প্রকাশিত কোন লেখা কিংবা লেখার অংশ বিশেষ কেহ অন্য কোথাও প্রকাশ করলে বেআইনি কাজ হিসেবে বিবেচিত হবে। প্রয়োজনে লেখকের সাথে যোগাযোগ করুন।

তাজা কলম › বিস্তারিত পোস্টঃ

ফেইসবুকের পেত্নীটি / মোহাম্মদ আন্ওয়ারুল কবীর

২৫ শে জুন, ২০১৪ দুপুর ১:১৫

কৌশিক বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। গভঃ ল্যাবেটরি স্কুলে ক্লাস নাইনে পড়ছে। ধানমন্ডি তিন নম্বর রোডে ওদের বাসা। স্কুল থেকে বাসা হাঁটা দূরত্ব। স্কুলে যাওয়া আসা নিজে নিজেই করে। অবশ্য নিচু ক্লাসে থাকতে আম্মু স্কুলে ওকে আনা নেওয়া করতো। ক্লাস ফাইভে উঠতেই ও জেদ করেই আম্মুকে বারন করে। বলে, "আম্মু, এই এতোটুকু রাস্তাও কি আমাকে একাকী যেতে দিবে না? তুমি যদি অন্য ছেলেমেয়েদের আম্মুদের মতোন আমাকে স্কুলে আনা নেওয়া করো তাহলে আর কোনদিন স্কুলে যাবো না।" আব্বুও সায় দেন, "কৌশিক ঠিকই বলেছে। ওকে স্বাবলম্বী হতে দাও। বেশী তুলু তুলু করো না তো!" রাগে গজ গজ করে আম্মু বলেন, " তাই বলে এই বয়সে! ঠিক আছে তোমাদের যা ইচ্ছা করো।" সেই থেকেই স্কুলে কৌশিকের একাকী যাতায়াত শুরু।



বয়সের তুলনায় কৌশিক অনেক ম্যাচিউরড। পড়াশুনায় খুবই ভালো্ ক্লাস এইট পর্যন্ত পরীক্ষায় প্রতিটি বিষয়ে এ++ পেয়ে আসছে। শুধু পড়াশুনায় নয়, স্কুলে খেলাধূলাতেও ওর বেশ নামডাক। বিশেষ করে ক্রিকেট টিমে স্পিনবোলার হিসেবে ও নাম্বার ওয়ান। ফিজিকাল স্যার, যিনি একসময় জাতীয় দলে খেলতেন তিনিও তার বলে প্রায়ই কাবু হয়ে যান।



কৌশিকের নেশা বই পড়া। হুমায়ুন আহমেদের হিমু চরিত্র এর বেশ পছন্দ। এই কিছুদিন আগেও সে ক্যাটক্যাটে হলুদ পাঞ্জাবি পড়ে হিমু সেজে ঘুরে বেড়াতো্। অবশ্য ইদানিং ওর অন্য নেশা ধরেছে। ক্লাস এইটে বৃত্তি পা্ওয়াতে মাসকয়েক আগে আব্বু ল্যাপটপ কিনে দিয়েছেন। বেসিক কম্পিউটিং ওয়ার্ড প্রসেসিং, এক্সেল স্কুলের ল্যাবে বসে বসেই শিখে নিয়েছিলো সে। নিজের কম্পিউটারে এখন সে শিখছে ফটোশপে ডিজাইন আর থ্রী ডি অ্যানিমেশন করা। এছাড়া ইন্টারনেট ব্রাউজ করে নতুন নতুন বিষয় জানতেও ওর বেশ ভালো লাগে।



ইতোমধ্যেই ফেইসবুকেও অ্যাকাউন্ট করেছে কৌশিক। ওর খালা লন্ডনে সেটেলড। খালাতো ভাইবোন টিনা ও আকাশ ওখানেই স্কুলে পড়ছে। ফেইসবুকে ওদেরকে অ্যাড করে নিয়েছে। রাতে মাঝে মধ্যে ওদের সাথে চ্যাট করে।



বৃহস্পতিবার গভীর রাত পর্যন্ত কৌশিক জেগে গল্পের বই পড়ে কিংবা কম্পিউটারে টুকটাক কাজ করে। । এ নিয়ে আব্বু-আম্মু কিছু বলেন না।



সেদিনও ছিলো বৃহস্পতিবার। রাত প্রায় দুইটা। আব্বু-আম্মু ঘুমিয়ে পড়েছে। জাফর ইকবালের নতুন সায়েন্স ফিকশনটি পড়া শেষে ও কম্পিউটারে বসে। ফেইসবুকে লগ ইন করলো। ভাবছে আকাশের সাথে চ্যাট করবে। লগ ইন করতে না করতেই হঠাৎ মেসেজ এল, বাংলাফন্টে লেখা, "আমি চার্মেক্তি হনুন্ডা। ক্যামন আছো কৌশিক?" মেসেজ-টা পড়ে ও বেশ অবাক হলো। চার্মেক্তি হনুন্ডা, এ আবার কী ধরণের নাম! চলে গেলো ওর প্রোফাইলে। একটি স্কেলিটনকে প্রোফাইল পিকচার হিসেবে ব্যবহার করেছে সে। সিটির ঘরে লেখা আছে বেলফাস্ট আর দেশের নাম আয়ারল্যান্ড। ডেইট অব বার্থ ২০০০, সেক্স- ফিমেল। তার মানে কৌশিকের বয়েসীই সে। তবে নামটা দেখে কৌশিক মোটামোটি নিশ্চিত এটা কোন ফেইক আইডি। তাই সে মেসেজে সাড়া না দিয়ে অনলাইনে থাকা ফ্রেন্ডের লিস্টে আকাশকে খুঁজতে থাকে। আকাশ অফলাইনে। আকাশকে একটি মেসেজ দিয়ে রাখলো সে। ইতোমধ্যে আবারো চার্মন্ডির মেসেজ। " কি, রিপ্লাই করলে না?" কৌশিক ভাবে একটু কথা বলে দেখিই না, ফেইক হলেও আইডিটার পেছনে তো কেউ একজন আছে। সে চ্যাট করতে শুরু করে -

- এমন বিদঘুটে প্রোফাইল নেইম নিলে কেনো?

- কী বলছো! আমাদের নাম তো এমনই হয়।

- তোমাদের নাম বলতে কি বোঝাচ্ছো? কোন দেশী তোমরা?

- কেন আমার প্রোফাইলেই তো দেয়া আছে আমি আয়ারল্যান্ড থেকে। আর আমাদের নাম মানে আমাদের নাম।

-হুম। তা তুমি কি পড়ছো?

- আমি স্কুল ফাইনালে।

- স্কুলের নাম কি?

- কিংসোটাই মাদুঙ্গা আমাদের স্কুলের নাম।

-এটা আবার কেমন নাম হলো? আফ্রিকান জুলুদের মতোন শব্দ তোমার নাম, তোমার স্কুলেন নাম?

- নাহ্। এটা আমাদের ভাষা, আমাদের স্কুল, আমরা তোমাদের মতোন নই।

- কী বারবার আমাদের, আমাদের বলছো? তোমরা কে?

- আমরা তো মানুষ নই। আমরা ভূত। আমি ভুতের মেয়ে পেত্নী।

- ভূত বলে কিছু নেই... আমি বিশ্বাস করি না!

- যা জানো না তা নিয়ে কথা বলো না প্লিজ। আসলে তোমরা মানুষরা অনেক কিছুই জানো না ...

- তুমি তো আসলে আমাদের মতোন কেউ, ফেইক আইডিতে কথা বলছো। আমারে মফিজ ভাইবো না!

- আসলে কি জানো, ফেইসবুকের কোটি কোটি ইজজারের মাঝে প্রায় অর্ধেকই ভূতদের আইডি। তোমরা ফেইক আইডি মনে করো।

- কী আবোল তাবোল বকছো এবার।

- আচ্ছা আমি যে বাংলায় তোমার সাথে কথা বলছি, অন্যদের সাথে তাদের ভাষাতেই কথা বলি। ভূত-পেত্নীরা কিন্তু মানুষের সব ভাষাতেই কথা বলতে পারে ..

- ফালতু কথা বলছো কেন? হয় তুমি বাঙালি না হয় বাংলা শিখেছো ভাল করে।

- আমি যে পেত্নী তা তুমি বিশ্বাস করছো না ?আচ্ছা তোমাদের ধর্মে তো অশরীরি জিনদের কথা আছে, মানুষের আত্মার কথা আছে ... আমরা ভূতেরা ঐরকম এক প্রাণী। আমি ভূত কী না প্রমাণ চাইলে প্রমাণ দিতে পারি।

- কি প্রমাণ দেবে?

- এই যেমন ভূতেরা সব কিছু দেখতে পারে, দূর থেকেও .. এ মূহুর্তে তোমার পিঠের আঁচিল দেখতে পাচ্ছি, তোমার একটা তিল দেখছি তোমার বাম উরুতে। ঠিক না?

একটু অবাক হয় কৌশিক। উরুর তিলের কথা বাইরের কারোর তো জানার কথা নয়! তবে কি ঘনিষ্ট কেউ দুষ্টামি করছে ! তাই সে লিখে-

- তুমি যে সত্যি সত্যিই পেত্নী এটা কি তার কোন প্রমাণ হলো! আমার তিলের কথা তো অনেকেরই জানা। অন্য কোন প্রমাণ দাও।

- বিশ্বাস করলে না? ওকে, আমি যদি আলোর বেগে আয়ারল্যান্ড থেকে তোমার কাছে আসি তবে কেমন হয়?

- তুমি একটা ছাগল! আইনস্টাইনের সেই থিয়োরীটা জানো না! আলোের বেগে কোন কিছু চললে তার ভর শক্তিতে রূপান্তর হয়! সেই যে ফর্মূলা -- E = mc2

- হিঃ হিঃ হিঃ ... এবার তোমাকেই বলবো রামছাগল ... আমরা তো অশরীরি, আমাদের কি ভর আছ! আমরা নিজেরাই তো শক্তি।



কৌশিক এবার চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়, "ঠিক আছে, তাহলে এসো এবার ! না আসলে এটাই আমার শেষ মেসেজ।"



হঠাৎ করেই রুমের আলো নিভে গেল দপ করে। ল্যাপটপের আলো ছড়িয়ে পড়ছে রুমটিতে। 'হিঃ হিঃ হিঃ .. ' ইনবক্সের মেসেজ নয় এবার, সত্যিই হাসির শব্দ শুনতে পায় কৌশিক । ধাতব হাসি। কাঁধে কেউ হাত রাখলো নাকি! কেমন যেন শীতল স্পর্শ পাচ্ছে সে । সাহসী কৌশিক এবার ভীষণ ভয় পেয়ে যায়। ও কিা জ্ঞান হারিয়ে ফেলছে ....



পরদিন সকাল দশটা নাগাদ ওর আম্মু রুমে ঢুকলো ডেকে তোলতে। রুমে ঢুকে দেখে কৌশিক ঘুমাচ্ছে কম্পিউটার চেয়ারে হেলান দিয়ে ঘুমাচ্ছে। একনাগাড়ে, বক বক শুরু করলো ওর মা, " সারারাত বসে ছিলি কম্পিউটারে। নেশা হয়ে গেছে তোর। কাজ শেষ করে বিছানায় যেয়ে তো ঘুমাবি। ও মা, তোর ঘাড়ের নিচে ভিজা গামছা কেন? ঠান্ডা লেগে যাবে না? অ্যাতো অলস হয়েছিস যে তুই আজকাল! গামছাটিও যে একটু শুকাতে দিবি তা-ও না। কালরাতে যে ট্রান্সফর্মার ব্রাস্ট হয়ে কারেন্ট চলে গিয়েছিলে তা কি টের পেয়েছিলি?"



আম্মুর চেচামেচিতে ঘুম ভেঙ্গে যায় কৌশিকের। চোখ কচলে বলে, "চার্মন্ডি কোথায়?"

- চার্মন্ডি? কি আবোল তাবোল বকছিস।

- দাড়াও আম্মুৃ। এক মিনিট।



ফেইসবুক খোলাই ছিলো। ও ইনবক্সে ঢুকে। কিন্তু এ কী ! খুঁজে সে পাচ্ছে না কালরাতে চার্মন্ডির সাথে লম্বা চ্যাটের কোন হিস্ট্রি। চার্মন্ডি নাম দিয় এবার ও ফেইসবুকে সার্চ দিলো। এ নামে কোন আইডি খুঁজে পেল না সে।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে জুন, ২০১৪ দুপুর ১:৫০

মুদ্‌দাকির বলেছেন: হয় নাকি এই রকম ????????

২| ২৫ শে জুন, ২০১৪ দুপুর ১:৫৪

মিনুল বলেছেন: ভৌতিক গল্প।সুন্দর!

৩| ২৫ শে জুন, ২০১৪ দুপুর ১:৫৬

আমি দিহান বলেছেন: কল্পকাহিনী হয়ে গেলো তো ভাই।

৪| ২৫ শে জুন, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:১২

জল ঝড় বলেছেন: ভাল হয়েছে :-0

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.