নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Trying to be simple and honest man. :)

তানজিল মিঠুন

Work like a worker, Think like a thinker.

তানজিল মিঠুন › বিস্তারিত পোস্টঃ

জীবনের চেয়ে মূল্যবান কিছু নাই

১২ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৫৭

ধরো নির্জন একটা পথ ধরে সন্ধ্যার কিছুক্ষণ পর, হেঁটে হেঁটে তুমি ফিরতেছো। হঠাৎ টের পাইলা কেউ একজন তোমার পিছু নিয়েছে। তুমি হাঁটার গতি বাড়িয়ে দিলা। আগন্তুকও তাই করলো। তুমি মেয়ে মানুষ, প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের সাথে হণ্টন প্রতিযোগিতায় বেশিরভাগ সময়ই হারবা; এইটাই স্বাভাবিক। সুতরাং তোমার আর লোকটার দূরত্ব ক্রমান্বয়ে কমে আসলো। এখন তুমি অপেক্ষাকৃত অরক্ষিত এবং নির্জনতর জায়গায়। উল্টা ঘোরার উপায় নাই। ডাইনে বামে কোন গলি নাই। নাক বরাবর যাওয়াই বাধ্যতামূলক। ইতোমধ্যে তুমি পেছনে তাকিয়ে আবছা আলোয় আগন্তুকের আপাদমস্তক ও তার অবস্থান দেখে নিয়েছো;— সে তোমার থেকে মাত্র তিন ফুট দূরে। এমতাবস্থায় গভীর উদ্বেগে কেঁপে ওঠে তোমার বুক। আসলে চায় কী লোকটা?
বারবার নিজের গাল চুলকাচ্ছে কেন?
নিশ্চই নেশাখোর।
তবে কি নেশাদ্রব্য ক্রয়ের টাকা যোগাইতে সে ছিনতাই করতে চায়? কিন্তু চেহারা তো ছিনতাইকারীদের মতো লাগে না!
গলায় গোল্ডের নেকলেস, হাতে ঘড়ি, পার্সের ভেতর চারশত চৌদ্দ টাকা আর মাঝারি মানের একটা নতুন স্মার্টফোন...
তোমার কাছে মূল্যবান কী কী আছে, তুমি তার হিসাব কষতে থাকো। স্মার্টফোনের সুবাদে বাবাকে মনে পড়ে তোমার। অনেক ঘ্যানঘ্যান প্যানপ্যানের পর; কিছুদিন আগে তোমার বার্থডেতে তিঁনি ফোনটা কিনে দিয়েছেন। তুমি মোবাইল বের করে দ্রুত বাবার নাম্বারে ডায়ালিংয়ের সময় বুঝতে পারো —পুঁজি শেষ। জরুরী মুহূর্তে পুরো জগৎ সংসার, এমন কি নিজস্ব অঙ্গপ্রত্যঙ্গও তোমার সাথে শত্রুতা করবে, এইটাই নিয়ম। হ্যান্ডসেট হুদাই হ্যাং হবে। মস্তিষ্ক ভুলে যাবে টাকা ছাড়া কল দেওয়ার কোড। হাতের আঙুলগুলো আড়ষ্ট হয়ে আসবে। পা দুটো দৌড়োনোর জন্যে তোমাকে বিন্দুমাত্র সহযোগিতা করবে না। ঠোঁট যুগল চিৎকার দিতে ভুলে, জোড়া লেগে থাকবে...
যাই হোক।
অকস্মাৎ অনন্ত জলিলের বিজ্ঞাপনটা তোমার মাথায় আসে। কিন্তু ইমার্জেন্সি ব্যালান্সের জন্য আবেদন করতে না করতেই ছেলেটা তোমার পাশে এসে দাঁড়ায়। টান দিয়ে ফোনটা কেড়ে নিতে পারে এই ভয়ে ওটা আবার যথাস্থানে রেখে তুমি জোর কদমে চলতে থাকো। এরই মধ্যে তোমরা উঁচা একটা ব্রিজের ওপর উঠে পড়েছো। এখান থেকে টানা দশ মিনিট মাঝারি গতিতে হেঁটে গেলেই তোমাদের বাড়ি। রওনা হওয়ার সময় রিকশা পেলে এতক্ষণে তুমি নিজের শয়নকক্ষে থাকতা—এটা ভাবতেই ছোট ভাইবোনকে মনে পড়ে তোমার। ভ্যানিটি ব্যাগের ভেতরে ওদের জন্যে কেনা চকলেটগুলো খচমচিয়ে ওঠে; মায়ের মায়াময় মুখ আর বারান্দাতে থাকা গাছগুলো চোখে ভাসে। তুমি না থাকলে মা কি গাছগুলোতে পানি আর বেড়ালটাকে ঠিকমতো খেতে দেয়? বাসায় ফিরে তক্ষুণি প্রশ্নটা করতে ইচ্ছে করে তোমার। ইচ্ছে করে, প্রাণপণে ছুটে গিয়ে বাবার বুকে মুখ লুকিয়ে কেঁদে ফেলতে। কিন্তু পা দুটো তো তোমার পক্ষে নেই। যেন তারা ছুট দেবে কি দেবে না তা নিয়ে মস্ত দ্বিধিদ্বন্দ্বে ভুগছে। এবার আগন্তুক আরও নিকটে এসে তোমার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে, ‘হাই সেক্সি!’ তুমি চমকে ওঠো। সোনার চেইন, স্মার্টফোন রিস্টওয়াচ এবং টাকার মূল্য ছাপিয়ে তোমার মনে পড়ে তোমারই সাথে থাকা সবচেয়ে মূল্যবান জিনিসের কথা। লোকটা আবার ফিসফিস করে বলে, ‘চলো না পক্ষী, পুলের তলে আধমড়া নদীটার পাড়ে বসে জোছনা দেখি। অনেক মজা হবে। কাম অন! কেউ জানবে না...’
ভয়ে তোমার কণ্ঠনালী সাঁকোর নিচে অবস্থিত কার্তিক মাসের শুকনো নদীটার মতোই শুকিয়ে কাঠ হয়ে আসে। তুমি কিছু বলতে পারো না। বরং আচমকা দৌড় দিতে গিয়ে ধরা পড়ে যাও লোকটার হাতে। তুমি সেই হাতে কামড় বসিয়ে আবার দৌড় শুরু করো। এবারও সামান্য মেহেনতেই সে তোমাকে ধরে ফেলে। তুমি বুঝে গেছো, ছুটোছুটিতে লাভ নাই। সে তোমাকে ধরে ফেলবে। নিজেকে নিশ্চিত ধর্ষণের হাত থেকে বাঁচাতে তুমি তখন ব্রিজ হতে লাফিয়ে আত্মহত্যার পরিকল্পনা আঁটছো।
কিন্তু কেন?
তোমার কী মনে হয়?
একটা মেয়ের জীবনের চাইতে তাঁর যৌনাঙ্গের দাম বেশি? যদি তাই মনে করো তবে লাফাও। তোমার মতো কুসংস্কারাচ্ছন্ন তরুণীর মরে যাওয়াই উচিৎ। পড়ে মড়ার আগে জেনে যাও মেয়ে—এ সমাজ আবহমান কাল থেকে তোমার মগজের কোষে কোষে পুঁতে দিয়েছে প্রগাঢ়হ্ অন্ধকার। তোমাকে আত্মরক্ষার কৌশল না শিখিয়ে আত্মহত্যায় উৎসাহিত করা হয়েছে।
তোমাকে জানানো হয়নি, অন্তিম মুহূর্তে ছলে বলে কলে কৌশলে যেভাবেই হোক জীবন বাঁচানোই তোমার প্রধান কর্তব্য।
ধর্মগ্রন্থগুলোর তেমনই নির্দেশ।
কারণ জীবনের চেয়ে মূল্যবান কিছু নাই।
কিছু হইতে পারে না।
একদম না।
ধন্যবাদ

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.