মানবশিশু এবং ভবিষ্যৎ পৃথিবী

১২ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৫৮

সমাজের ইতিবাচক পরিবর্তন দেখতে চান?
আপনি কেন পরিবর্তন দেখতে চান?
.
আপনি যদি সমাজের এই ইতিবাচক পরিবর্তনের পক্ষে মত পোষণ করেন, তাহলে ধরে নিতে পারি আপনার নৈতিক মূল্যবোধের মানদন্ড স্ট্যান্ডার্ড।
.
কিন্তু সমাজের এই ইতিবাচক পরিবর্তনটি কিভাবে আসতে পারে?
.
এই পৃথিবীতে একজন মানুষ যখন প্রথম ভূমিষ্ঠ হয় তখন সে থাকে নিতান্তই অসহায়, দূর্বল,অভিজ্ঞতাশূন্য ও একধরণের চিন্তাহীন।
পরবর্তীতে জাতিগত অভ্যাসের কারণে হোক বা জীনগত বৈশিষ্ট্যের কারণে হোক, সে মস্তিস্কের কিছু জায়গায় খুব দ্রুত উন্নতি করতে সক্ষম হয়। তার ফলে সে হয়ে উঠে একটু একটু করে কৌতূহলী, অনুকরণপ্রিয় এবং বুদ্ধিমান। কৌতূহলী হওয়ার কারণে সে আপনাকে অজস্ত্র প্রশ্নবাণে জর্জরিত
করবে।
.
এখন আপনি তার প্রশ্নগুলোর উত্তর দেবেন?
আপনি যদি তার প্রশ্নগুলোর উত্তর না দেন, তার কৌতূহল না মেটান তাহলে এই অনভিজ্ঞ, চিন্তাহীন, মূর্খ একজন মানবশিশু সামাজিক আচরণ, দায়িত্ববোধ, চৈতন্যের উন্নয়ন সম্পর্কে কিভাবে শিখবে?
.
অনুগ্রহপূর্বক আপনার সন্তানের প্রশ্নগুলোর গঠনমূলক জবাব দিন।
কয়েকটা প্রশ্নের উত্তর দিয়ে চরম বিরক্তবোধ করবেন?
আমরা প্রতিনিয়ত চরম বিরক্তিকর কাজেও তৃপ্তিবোধ করি। অথচ ক্ষুদ্র মানুষটির কয়েকটি উত্তর দিতে বিরক্ত লাগে। একবার
ভেবে দেখেছেন, এই ক্ষুদ্র মানুষটি আপনার দেয়া অভিজ্ঞতা থেকে, শেখানো জ্ঞান থেকে ভবিষ্যৎ পৃথিবীর প্রতিনিধিত্ব করবে।
আপনি তাকে ভবিষ্যৎ পৃথিবীর জন্য কতটা প্রস্তুত করতে পেরেছেন তাও ভেবে দেখবেন।
তার সব প্রশ্নগুলোর উত্তরগুলো আপনার জানা নেই?
নিজের অভিজ্ঞতার ঝুলি সমৃদ্ধ করুন, অন্তত তার প্রশ্নের গঠনমূলক জবাব দেয়ার মত।
.
হ্যা, আপনার হয়তো সব বিষয়ে ধারণা নাও থাকতে পারে। প্রয়োজনে আপনি সেজন্য সময় নিন। জেনে সঠিক উত্তর দেয়ার চেষ্টা করুন। ভুল উত্তর হতে সাবধান। যদি তাকে আপনি ভুল উত্তর দেন, পরে যখন জানবে তাকে ভুল শেখানো হয়েছিল, তখন সে আপনার প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলবে। এই শিশুটি হয়তো আপনার সব কথা অবিশ্বাস করা শুরু করবে। আদর্শের প্রতি আস্থা হারানোর পরিণতি কখনো ভাল হয়না। এই
জায়গাটায় উন্নতি করা সম্ভব হলে হয়তো বৃদ্ধাশ্রমের সংখ্যা হ্রাস পেতে শুরু করবে।
তার প্রশ্নগুলোর উত্তর দেয়ার মত পর্যাপ্ত সময় আপনার নেই?
তাই যদি হয়ে থাকে, আপনি একজন নীতিবান মানুষ হয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ভিত্তি রচনায় আপনার ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ।
.
আপনি কেমন নীতিবান মানুষ, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুপথ প্রদর্শনের জন্য এটুকু সময় ব্যয় করতে পারছেননা।
আপনি বাস্তবতার পরিমাপে সত্যকে সত্য এবং মিথ্যাকে মিথ্যা বলতে শেখান।
.
এই পোস্টে যা বললাম তাতে হয়তো তর্ক করার
প্রয়োজন অনুভব করতে পারেন। কিন্তু তার আগে একটা জিনিস ভেবে নেবেন, আমাদের উদ্দেশ্য কখনো অসুন্দরের পক্ষে নয়, অনৈতিকতার পক্ষে নয়। আপনার সন্তান যখন কোন অপরাধের সম্মুখীন হবে, তখন শুধুমাত্র আপনার প্রদত্ত শিক্ষার কারণে
আপনার সম্মান বিবেচনা করে সে অপরাধ
থেকে সরে আসবে। আমরা যখন দেখবো কোন সন্তান দুর্নীতি করতে পারছেনা, ইভটিজিং কিংবা ধর্ষণ থেকে বিরত থাকছে, মাদক গ্রহণ করছেনা, সুন্দর সমাজ গঠনের উপাদান হিসেবে সহায়ক ভূমিকা রাখছে -, কোন ধরণের চাপের জন্য নয়
শুধুমাত্র আপনার গড়ে দেয়া বিবেকের কারণে।
.
আমাদের সন্তানের এতটুকু চৈতন্যের পরিচর্যার কারণে প্রতিটি ঘরে ঘরে হয়তো একদল নিষ্পাপ, প্রাণবন্ত, প্রতিবাদী একেকটা মানুষের আবির্ভাব দৃশ্যমান হবে।
.
মনে রাখা উচিৎ ফুলের সৌন্দর্য মালির চেহারা কিংবা সক্ষমতার উপর নির্ভর করেনা, নির্ভর করে পরিচর্যার উপর।
তাহলেই সমাজ সুরভিত হবে।
আপনি, আমি, সকলে আমাদের সন্তানের প্রতি এই নৈতিক দায়িত্বকে অস্বীকার করতে পারিনা।
এখনি পারিবারিক শিক্ষার প্রতি অত্যাধিক গুরুত্ব দিতে হবে।
তাহলেই কেবল আমরা স্বপ্ন দেখতে পারি, সুন্দর বাসযোগ্য ভবিষ্যৎ পৃথিবীর।

০ টি +০/-০