নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যে মানুষ টার আশা ছিল কবি হবার, তাইতো আজও স্বপ্ন দেখে শিকল ভাঙ্গার, বাকি জীবন বাউল হয়ে পথে হাটার ।

তানভীর আহমেদ সম্রাট

যদিও এখন শীতকাল, তাই বলে কি বসন্ত খুব বেশী দূরে!

তানভীর আহমেদ সম্রাট › বিস্তারিত পোস্টঃ

"অনলাইন ভালবাসা যত্রতত্র কাছে আশা"

৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:৫৪

তূর্য আর নিশি, তারা দুজনেই দুজনকে ভালবাসে। নিশি দেখতে বেশ সুন্দরী, তাই সে যখন গুড মর্নিং বা গুড নাইট লিখে ফেসবুকে কোন ছবি আপলোড দেয় তখন তাতে ৭০০/৮০০ লাইক পড়ে। এদিকে তূর্য যত ভালো কথা লিখেই স্ট্যাটাস দিকনা কেন তার পোস্টে লাইক পড়ে ১৫/১৬ টা। এটা নিয়ে নিশি সবসময়ই গর্ব করে। ইদানিং তার ফলয়ার ২১ হাজার ছাড়িয়ে যাওয়াতে সে বেশ অহংকারীও হয়ে উঠেছে। তূর্যর পোস্টে লাইক কমেন্ট না পড়াতে সে তাকে এখন অনেকটা আম জনতার কাতারেই ফেলে দিয়েছে। ব্যাচেরাকে এখন উঠতে বসতে সবসময়ই নিশির কথা শুনে থাকতে হয়।
এদিকে আর দশটা সুন্দরী মেয়েদের মতো নিশিরও একটা ( ! ) ভাইয়া আছে যার আবার একটা ডি,এস,এল,আর ক্যামেরা আছে। সেই ভাইয়ার নাম আশিক। নিশি তুর্যর সাথে ডেটিং–এ গেলে যত গুলি কথা বলে তার অর্ধেক থাকে আশিক ভাইয়ার কথা। তূর্য সবই মুখ বুজে সহ্য করে কারন আশিক ভাইয়ার তোলা সেই সব ছবিতে নিশি হাজার হাজার লাইক পায়। নিশি প্রতিদিনই ঘ্যাঙ ঘ্যাঙ করে তুর্যর সাথে আশিকের পরিচয় করিয়ে দেবার জন্য। অবশেষে অনিচ্ছা সত্ত্বেও রাজি হয় তূর্য। এদিকে নিশির কাছে তূর্য সম্পর্কে শুনে শুনে আশিক নিজেও ব্যাকুল হয়ে ছিল তূর্য কে দেখার জন্য। তাই নির্দিষ্ট দিনে পিঙ্ক কালারের একটা সিল্কের শার্ট, বেগুনী রঙের জেগিংস আর সাদা রুমাল হাতে নিয়ে, আশিক নিশির সাথে কফি শপে আসে তুর্যর সাথে দেখা করার জন্য। তুর্যর সুন্দর চেহারা আর বুদ্ধিদিপ্ত কথা শুনে আশিক চমৎকৃত হয়। সে বার বার কথা বলতে বলতে তুর্যর গায়ে হাত দেয়। তূর্য ব্যাপারটাতে বিরক্ত ও বিব্রত হলেও মনে মনে খুশি হয়, যাক নিশিকে নিয়ে আর টেনশনে থাকা লাগবেনা, কারন এই টাইপের পলাপাইন আর যাই হোক অন্তত মেয়েদের দিকে চোখ দেয়না ! এদিকে আসিফ তুর্যকে তার ফেসবুক, হোয়াটস অ্যাপ, উইচ্যাট, ভাইবার, স্কাইপ সব কিছুতেই এড করে নেয়। সেই সোনালী বিকেলটা আশিকের জীবনে নতুন রংধনু নিয়ে ধরা দেয়। তুর্যকে প্রথম দেখাতেই ভালবেসে ফেলেছে সে ! আর তারপরেই এই ত্রিভুজ প্রেমে দেখা দেয় নতুন সমস্যা...

“ফারিজা”, ৭৫ হাজার ফলয়ার নিয়ে আইডি চালান দেশের এই নামকরা মডেল, অভিনেত্রী । তার হাসিতে মুক্তা ঝড়ে, ছবি পোস্ট করলেই ৪/৫ হাজার লাইক ! মেসেঞ্জারে চ্যাট করতে করতে প্রেমে পড়েছেন এক তরুন কবির। এখনো কোন বই ছাপা হয়নি এই কবির, কিন্তু ফারিজা তার কবিতায় মুগ্ধ, সারারাত দিন ধরে চলে কাজের ফাকে উই চ্যাট–এ শব্দের কাটাকুটি, আর রাতে ভাইবারে কথার ফুলঝুরি। কবির কলমে আর কবিতা ভর করেনা, রক্ত মাংশের কবিতা তার কাছে এখন অনেক বেশি জীবন্ত মনে হয় !!! উইচ্যাট আর ভাইবার থেকে বের হয়ে দুজনেই একদিন দেখা করার দিন ঠিক করে, আর এরপরেই তাদের সামনে এসে দাড়ায় কল্পনা আর বাস্তবতার মাঝে বাস করা বিশাল পার্থক্য গুলো...

বাংলা ব্লগে ঝড় তোলা এক লেখক আলম, অন্যায় আর অবিচারের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর, জাতীয় যে কোন সমস্যা বা মানবিক সাহায্যের আবেদনে নিয়মিত পোস্ট দেন ফেসবুকে। বহু তরুন তরুণী তার লেখার ভক্ত। তাদের মধ্যে একজন নরওয়ে প্রবাসী সাগুফতা। কিছুদিন পরেই দেশে আসবেন বেড়াতে, খুব ইচ্ছা অনলাইনের এই প্রিয় মানুষটিকে একবার বাস্তবে দেখার। এই ভেবে ইনবক্সে মেসেজ পাঠায়, দুইদিন পর রিপ্লাই আসে, আস্তে আস্তে চ্যাট নিয়মিত হতে থাকে। এর মধ্যে একদিন আলম জানায় এক বাচ্চা মেয়ের ক্যান্সার, চিকিৎসার জন্য সাহায্যের প্রয়োজন, সাগুফতা কোন হেল্প করতে পাড়বে কি না ? সাগুফতা জিজ্ঞেস করে কত ? উত্তরে বলে, ৩ লাখ । সাগুফতা টাকা পাঠিয়ে দিয়ে আলমকে ফোন করে জানায় আগামি সাপ্তাহে দেশে আসছে সে, আরও জানায় আলমের সাথে সে দেখা করতে আগ্রহী ! এতদিনে আলমকে মনে মনে ভালোও বেসে ফেলেছে সে। কিন্তু যেদিন নরওয়ে থেকে রওনা দিবে তখন থেকেই আলমের আইডি বন্ধ দেখতে পায়, দেশে এসে পাগলের মতো সে আলমকে খুজে বেড়াচ্ছে কিন্তু আলম হারিয়ে গেছে ! এরপর...

স্কুল শিক্ষক পিতা-মাতার সন্তান সুশান্ত। সারাজীবন ধরে বাম রাজনীতি করা পিতার কাছ থেকে পেয়েছে দেশ প্রেম আর মানবতার শিক্ষা। কিছুদিন আগে ভালবেসে বিয়ে করেছে এক মুসলমান মেয়েকে। বাবার কাছ থেকে পাওয়া আদর্শ আর চিন্তা গুলিকে যুক্তি দিয়ে প্রকাশ করতো লেখার মাধ্যমে। বাংলা ব্লগের জনপ্রিয় লেখক সে, ইচ্ছা আছে সামনে বোনাস পেলে স্ত্রী কে নিয়ে ভুটানে বেড়াতে যাবে, কিন্তু তার অজান্তেই মৃত্যুর পরয়ানা জারি হয়ে গেছে তার নামে, নিশব্দে চাপাতিতে শান দিয়ে যাচ্ছে ধর্মান্ধ এজিদের বাহিনী...

মফঃস্বলের হতোদরিদ্র পরিবার থেকে ঢাকায় পড়তে আসে মোসাম্মৎ মাজেদা, পারিবারিক অবস্থা যাই হোক সৌন্দর্যের কারনে এলাকায় বেশ পরিচিতি ছিল তার। ঢাকায় এসে লক্ষ করলো তার নামটা এখানে কিছুতেই মানাচ্ছেনা। তাই নামটাকে নিজের জামার মতই একটু ঘষে মেজে ছোট করে ফেসবুক আইডিতে নাম দিলেন “মিফিলা”। মডেলিঙের শখ ছিল ছোটবেলা থেকেই, কিন্তু মডেল শব্দটার শাব্দিক বা আভিধানিক অর্থ না জেনেই শুরু করলেন ফেসবুকে নিজেকে প্রদর্শন আর বাজারে বিক্রির দৃষ্টিকটু বিপনন ! বা-মার শাসনে থাকা স্কুল-কলেজের ছেলেদের হাজার হাজার লাইক-কমেন্টে পাওয়া প্রাপ্তিটাকেই মিফিলা তার সবকিছু ভেবে নিলো, এই শহরে একটা মেয়ের যদি হারানোর কিছু না থাকে তাহলে তার চারপাশে বখাটেদের অভাব হয়না, তাই ইয়াভা, হেরইন, ফাইভ স্টারে ডিনার, দামী মোবাইল, ড্রেস আর হাই হিল তার জীবনকে রঙিন করলেও নিয়ে যেতে থাকে এক অন্ধকার জগতে, এরপর একদিন...

মাঝবয়সি বেঙ্কার রফিক সাহেব, শান্ত নিরীহ গোবেচারা টাইপের মানুষ, সাধারনত অফিস, টিভি দেখা, বাচ্চাদের পড়ানো আর বাসায় ভিডিও গেমস খেলেই সময় পার করেন। কিন্তু ইদানিং তাকে খুব ফেসবুকে পড়ে থাকতে দেখা যায় ! “নিবেদিতা” নামের একটি মেয়ের সাথে চ্যাট করেন তিনি। গোপন এই ব্যাপারটার কথা কাউকে জানাননি তিনি, সব বিষয়েই নিবেদিতা এতো ভালো জানে যে অবাক হতে হয় ! ধীরে ধীরে নিবেদিতার প্রতি প্রবলভাবে আসক্ত হয়ে পড়েন তিনি। নিবেদিতা তাকে বাসায় দাওয়াত দেয়... নির্দিষ্ট দিনে এই গরমের মধ্যে থ্রী পিস স্যুট পড়ে, টাঙ্গাইলের চমচম, কুমিল্লার রসমালাই আর এক গুচ্ছ লাল গোলাপ কিনে উপস্থিত হন নিবেদিতার ফ্লাটে। ঘরে ঢুকতেই চার পাঁচ জন ছেলে ঘিরে ধরে তাকে, এর মধ্যে একজন তার নাকে-মুখে রুমাল চেপে ধরে, মাথাটা ঘুরে উঠে তার, এরপর...

জামালপুর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়ে পড়তে এসেছে মুনির। সূর্য সেন হলে থাকে। তাদের ক্লাসের সবচেয়ে সুন্দরী মেয়ে অরিন। যেমন সুন্দরী তেমন স্মার্ট। ঢাকাতেই নিজের বাসায় থাকে অরিন, একটা কালো রঙের নিশান ব্লু বার্ড গাড়িতে প্রতিদিন আসা যাওয়া করে সে। ক্লাসের সব ছেলেরাই তার সাথে ভাব জমাতে চায়, অরিন সবার সাথে কথা বল্লেও কাউকেই তেমন পাত্তা দেয়না। মুনির নিজে কখনও কথা বলতে যাওয়ার চেষ্টা করেনি, সে তার সিমাবদ্ধতার কথা জানতো। তার পোশাক, কথাবার্তা, চুলের স্টাইল সবকিছুর মধ্যেই মফঃস্বলই ভাবটা রয়ে গেছে। তার একটাই নেশা বই পড়া। পরাশুনার বাইরে যেটুকো সময় পায় পাব্লিক লাইব্রেরীতে বই পরেই সেটা পার করে। একদিন ফেসবুকে বসে ঘাটাঘাটি করার সময় অরিনের আইডি খুজে পায়। দেখে অনেক গুলি মিউচুয়াল ফ্রেন্ড। ভয়ে ভয়ে রিকোয়েস্ট পাঠায় সে। সঙ্গে সঙ্গেই রিকোয়েস্ট একসেপ্ট হয়। ইনবক্সে ম্যাসেজ আসে, “কেমন আছ ?”
মুনির রিপ্লাই দেয়, “এইত ভালো”
-তুমি ক্লাসে আমার সাথে কথা বলনা কেন ?
-এমনেই ! তাছাড়া কিছুটা সঙ্কোচও কাজ করে।
-ক্লাসমেটের সাথে কথা বলতে আবার সঙ্কোচের কি আছে ?
-লাজুক হাসির ইমো !!! এখন থেকে বলবো...
এরপর থেকে মুনির আর অরিন প্রতি রাতেই নিয়মিত চ্যাট করে, মুনিরের পোশাক বা কথা কিছুটা সেকেলে হলেও সে জানে খুব ভালো, সে জীবনটাকে দেখে একটু অন্য ভাবে। তার সাথে কথা বলে অরিনের খুব ভালো লাগে, সে প্রায়ই মুনিরকে দামি দামি শার্ট, প্যান্ট, টি-শার্ট কিনে দেয়। সিনেপ্লেক্সে মুভি দেখাতে নিয়ে যায়। কে-এফসি, পিজ্জা হাট আর নেনদোসেও যায়। মুনিরের জীবনটাই পুরো পালটে দেয় অরিন। তার জীবনে এখন একটাই লক্ষ, ভালভাবে পাশ করে তারাতারি একটা চাকরি যোগার করা। তাহলেই বাকি ইচ্ছাটা পুরন করা যাবে। অরিন নিজেও ভালো ছাত্রী, তারা দুজনেই দুজনের জন্য মন দিয়ে পড়ে, আর ভালবাসার স্বপ্নের বাড়িতে একটি একটি করে ইট সাজাতে থাকে। এরপর...


আগামী ভ্যালেন্টাইনের জন্য এই টিভি নাটকটা লিখেছি, আর এই “এর পর” গুলির উত্তর নাটক দেখার সময় জানা যাবে...

সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা ...

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:০৩

৭১৫০ বলেছেন: একসাথে এতগুলা-কাহিনী, ৪-৫ টা থাকলেও মনে থাকে। নাটক হলে তো শেষে মনে হারায় যাবে।

৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:০৮

তানভীর আহমেদ সম্রাট বলেছেন: আপনার কথাটা ভালো লেগেছে। আসলে এটা টেলিফিল্ম হবে। কোন চরিত্রই যাতে হারিয়ে না যায় সেই বেবস্থা করেছি ভাই।

২| ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৪৪

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: খালি খারাপ দিকটাই তুলে ধরলে হবে|
তাছাড়া কাছে আসা ভালবাসা জিনিসটা তো খারাপ না| আপনিও মজা নেন| মজার দুনিয়ার বসে থাকবেন ক্যান?
হ্যাপি নিউ ইয়ার

০২ রা জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১০:৪৯

তানভীর আহমেদ সম্রাট বলেছেন: ভাই, আমি কিন্তু খারাপ ভালো দুটাই তুলে ধরার চেষ্টা করেছি... আপনার মতামতের জন্য ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.