![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যাকাত বিষয়ে লিখার কোন শেষ নাই। বিভিন্ন ইসলামী চিন্তাবিদ ছাড়াও অনেক চিন্তাশীল লেখক, গবেষকগণ যাকাত নিয়ে অনেক লিখেছেন। কিন্তু তবুও নব্বই শতাংশ মুসলিমের দেশে যখন সরকারী হিসাবে দেখা যায় ৩২ শতাংশ মানুষ দরিদ্র আর অর্থনীতিবিদদের মতে ৮৩ ভাগ মানুষই দরিদ্র (দৈনিক যুগান্তর রিপোর্ট, ২৩/০৩/২০১৪) তখন বুঝা যায় যাকাত ভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে আমরা কি পরিমাণ পিছিয়ে আছি। যাকাতের আধ্যাত্নিক প্রয়োগ নিয়ে অনলাইনে পাওয়া যায় অসংখ্য লিখা যেখানে যাকাত প্রদানকে উৎসাহিত করা হয় কুরআন এবং হাদিসের আলোকে কিন্তু যে বিষয়টি নিয়ে লিখা হয় না তা হল বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে যাকাত ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি প্রসঙ্গে।
যাকাতের সংক্ষিপ্ত পরিচিতিঃ
ইসলামের অন্যতম একটি স্তম্ভ হল যাকাত। এটি এতই গুরুত্বপূর্ণ যে পবিত্র কুরআনে যাকাত শব্দের উল্লেখ এসেছে বত্রিশ বার, অনেকবার সালাত এবং যাকাতকে একই আয়াতে প্রকাশ করা হয়েছে। সূরা আল বাক্কারার ১১০ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ্ (সুবঃ) বলছেন, “ তোমরা নামাজ প্রতিষ্ঠা কর এবং যাকাত দাও। তোমরা নিজের জন্য পূর্বে যে সৎকর্ম পেরণ করবে তা আল্লাহ্র কাছে পাবে। তোমরা যা কিছু কর নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা প্রত্যক্ষ করেন”। এছাড়াও যাকাত প্রদানকারী সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, “তারা এমন লোক যাদেরকে আমি পৃথিবীতে শক্তি-সামর্থ দান করলে তারা নামায কায়েম করবে, যাকাত দেবে এবং সৎকাজে আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ করবে। প্রত্যেক কর্মের পরিণাম আল্লাহর এখতিয়ারভূক্ত” [সূরা আল-হাজ্জঃ ৪১]।
যাকাতের শাব্দিক অর্থ হল বৃদ্ধি পাওয়া বা পরিশুদ্ধ হওয়া। আর আভিধানিক অর্থ হল ইসলাম নির্ধারিত সীমার অতিরিক্ত (সোনা ৭.৫ তোলা এবং রূপা ৫২.৫ তোলা মুল্যমানের সমান সম্পদের মালিক হলেই যাকাত ফরজ) সম্পদের মালিক প্রত্যেক পূর্ণবয়স্ক মুসলিম নরনারী তার সম্পদের ২.৫ শতাংশ প্রতি বছর ইসলাম নির্দেশিত পন্থায় অসহায়, দরিদ্র মানুষের কল্যাণে ব্যয় করবেন।
সমাজে প্রচলিত যাকাত ব্যবস্থাঃ
যাকাত কোন দয়া দাক্ষিণ্যের নাম নয়। আল্লাহ্ (সুবঃ) পবিত্র কুরআনে সূরা আয- যায়িরাতের ১৯ নাম্বার আয়াতে এই বিষয়ে বলছেন “এবং তাদের ধন সম্পদে প্রার্থী ও বঞ্চিতের হক আছে”। সুতরাং যাকাত এমনই এক ব্যবস্থার নাম যার মাধ্যমে মুসলিমগণ সুযোগ পেয়ে থাকেন হকদারদের হক বুঝিয়ে দিতে। এই আয়াতের ভিত্তিতে বর্তমান প্রেক্ষাপটে যাকাত নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে।
আমাদের সমাজে অনেকে যাকাত দিচ্ছেন আবার অনেকে দিচ্ছেন না। আর যারা দিচ্ছেন তারা এমন এলোমেলোভাবে দিচ্ছেন যাকাতের প্রকৃত সুফল জনগণ লাভ করছে না, বিশেষ করে দরিদ্র জনগোস্টির কোন পরিবর্তন পরিলক্ষিত হচ্ছে না। প্রতি বছর এক শ্রেণীর লোক যাকাত দেওয়ার নামে লোক দেখানো শাড়ি, লুঙ্গি বিতরণ করেন যেখানে হাজার হাজার মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকেন আর ভীড়ের চাপে মারা যান অনেকে। এইরকম অনৈসলামিক প্রক্রিয়ায় ৯০শতাংশ মুসলিমের দেশে যাকাত ব্যবস্থাপনা হয়ে থাকে। আবার অনেকে যাকাতের অর্থকে এত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে বিভক্ত করেন যা দিয়ে যাকাতের প্রকৃত উদ্দেশ্য সাধন সম্ভব নয়। এমনকি যারা যাকাত নিতে আসেন তাদের আত্ন সম্মানবোধ বিসর্জন দিতে হয় যা হওয়ার কথা ছিল না, এটি তাদের হক।
একটি সুষ্ঠু যাকাত ব্যবস্থাপনা কি করে আমরা করতে পারি? যেখানে রাষ্ট্রব্যবস্থা সততার উপর নয়, সেখানে রাষ্ট্রের উপর নির্ভর করা যায় না, যেনতেন সংগঠনের উপরও নির্ভর করা যায় না। অনেক গবেষকের লিখা পর্যালোচনা করে আমার মনে হয়েছে ইসলামী সমাজ কাঠামো যেখানে প্রতিষ্ঠিত নয় সেখানেও অতি সফল যাকাত ব্যবস্থাপনা দাঁড় করানো সম্ভব। আজ সেই রকমই একটি যাকাত ব্যবাস্থাপনার বিষয়ে আলোকপাত করব।
বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে যাকাত ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি কেমন হওয়া উচিত?
ইসলামী ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে মসজীদের সংখ্যা ২,৫০,০০০ এর অধিক, প্রতিটি মসজীদকে ঘিরে গড় মুসলিমের সংখ্যা ৬০০ বা পঞ্চাশটি পরিবার। সুতরাং এটি এমন জঠিল বিষয় নয় যে খুঁজে বের করা বা জানা এই ৫০টি পরিবারের মধ্যে কতটি পরিবার সমস্যায় রয়েছে কিংবা যাকাত প্রাপ্তির যোগ্য, অথবা কতটি পরিবার যাকাত প্রদানের যোগ্য? মসজীদের ঈমাম, মোয়াজ্জিন এবং এলাকার সৎ, ফরহেজগার ইসলামের অনুসারী ব্যক্তিদের সমন্ময়ে পাঁচ হতে সাত সদস্যের একটি মসজীদ ভিত্তিক যাকাত কমিটি থাকতে হবে। এই কমিটিই যাকাত আদায় করবে এবং বিতরণ করবে। এতে সময়ের সাথে সাথে এলাকার দরিদ্র জনগোস্টির হার প্রকাশ্যে নিম্নগামী হতে বাধ্য।
অধিকন্তু প্রশ্ন জাগে উমর আঃ এর গল্প বলা হুজুরগুলোর জানা থাকা উচিত নয় কি তাদের পিছনে নামাজ পড়া এই পঞ্চাশটি পরিবারের মধ্যে কোন পরিবারের মানুষ কি ধরণের সমস্যায় আছে? আজ যদি প্রতি ওয়াক্ত নামাজের পর উক্ত কমিটি সত্যি সত্যি পঞ্চাশটি পরিবারের খবর রাখতেন তাহলে কি জানা সম্ভব হতো না কারা না খেয়ে আছেন? কিংবা কারা ছেলে মেয়ের স্কুলের বেতন দিতে পারছে না? কিংবা কারা মেয়ে বিয়ে দিতে পারছে না? কিংবা কারা ঋণে জর্জরিত? দোষ কিন্তু ইসলামের ধজাধারীদের ঘাড়ে গিয়েই পড়বে। প্রকৃত ইসলামী ব্যবস্থাপনায় মসজীদ ভিত্তিক যাকাত সংগ্রহ ও বিতরণ নিশ্চিতে মসজীদের ঈমাম, মোয়াজ্জিন, সৎ ও পরহেজগার ইসলামী অনুশাসন মানা লোকগুলো এগিয়ে আসলে এই দেশে দরিদ্র জনগোস্ঠি থাকার কথা নয়। আর এই ব্যবস্থাপনার সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করতে পারে একটি সুখি, সমৃদ্ধশালী ইসলামী সমাজ। যে সমাজ যাকাত সংগ্রহ ও বিতরণে এগিয়ে থাকবে সে সমাজ জনকল্যাণে তত বেশী সম্পৃক্ত হতে পারবে।
লেখক এইখানে শুধুমাত্র একটি মডেল উপস্থাপনের চেষ্টা করেছেন যার মাধ্যমে ইসলামী সমাজ বিনির্মাণে যাকাত ভুমিকা রাখতে পারবে, সাথে সাথে সংখ্যা তত্ত্বের মাধ্যমে এটি দেখানোর চেষ্টা করেছেন একটি মসজীদ কি করে ইসলামী সমাজ বিনির্মাণে যাকাত ভিত্তিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় ভুমিকা রাখতে পারে। পরিশেষে আলাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে শেষ করছি।
©somewhere in net ltd.
১|
১৪ ই মে, ২০১৪ রাত ১১:১৮
বাংলার ঈগল বলেছেন: কেউ একজন যেন বলে গেছেন! ;
আমরা যা বলি তা করি না!