![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
রাত আটটা। গাবতলী বাস ষ্ট্যান্ড। আমি আর জান্নাত বসে অপেক্ষা করছি। সিলেট যাবো। মেয়েটার চেহারা এমনিতেই অনেক মায়াবী, তার উপর আজ গায়ে হলুদের সাজ! অদ্ভুত সুন্দর লাগছে ওকে, যেন পৃথিবীর সব সৌন্দর্য ওর উপর ভর করেছে। আর আমি সেই সৌন্দর্যের মায়ায় হারিয়ে ফেলেছি নিজেকে...
২ বছর আগে...
কলেজের প্রথম দিন। ভর্তির জন্য সবাই লম্বা লাইনে দাড়ানো। কিন্তু কলেজে আগে থেকেই পরিচিত হওয়াতে কোন লাইনের তোয়াক্কা না করে যেই সামনে যাবো, ওমনি লাইনের মাঝখান থেকে একটা মেয়ে বেরিয়ে এসে বলা শুরু
"এই যে মিষ্টার, কোথা থেকে এসেছেন? আমরা ১ ঘন্টা ধরে লাইনে দাড়ানো! আর আপনি উড়ে এসে জুড়ে বসলেন? কোন স্কুল থেকে এসেছেন? নিয়ম কানুন কিছ শেখায় নি?"
এর দুইদিন পর...
প্রথম ক্লাশের দিন দেখলাম ঐ মেয়েটা আমাদের ক্লাশেই, একেবারে প্রথম বেঞ্চে বসা। আমাকে দেখেই মেয়েটা হাসছে। আমি কিছুটা লজ্জা পেয়ে একেবার পিছনের বেঞ্চে গিয়ে বসলাম। ক্লাশ চলার সময় মেয়েটা বারবার পিছে ফিরে তাকাচ্ছিল আর হাসছিল মিটিমিটি। আর লজ্জায় আমার মাথা নিচু! ক্লাশ শেষে যখন সবাই বের হয়ে যাচ্ছিল, মেয়েটা তখনও বসেই ছিল। সবার শেষে যখন আমি বের হচ্ছিলাম, পেছন থেকে মেয়েটা ডাকল।
: এই যে শুনছেন, দাড়ান। কথা আছে আপনার সাথে।
: জ্বি, বলুন।
: সেদিনের ব্যবহারের জন্য দুঃখিত। অনেকক্ষণ ধরে লাইনে দাড়ানো ছিলাম তো, রাগের মাথায় অনেক কিছু বলে ফেলেছি।
: ঠিক আছে, আমি কিছু মনে করিনি।
: ধন্যবাদ। আচ্ছা আপানার নাম কি?
: তানু। আপনার?
: জান্নাত।
এরপর থেকেই আমাদের কথাবর্তা শুরু। দেখা হলেই কেমন আছো, লেখাপড়ার কি খবর এসব বলতে বলতে দুজন অনেক ভালো বন্ধু হয়ে গেলাম। সকাল-বিকাল বারবার ফোন দিয়ে দুজন দুজনের খোঁজ খবর নিতাম, খেয়েছি কি না, কি করছি আরো অনেক কিছু। এভাবে চলতে চলতে একটা সময় আমাদের বন্ধুত্বটা আরও গভীরে চলে গেল। ক্লাশের মধ্যে দুজন একসাথে বসতাম। মারামারি করতাম আবার সরি বলে মিলে যেতাম। মাঝেমাঝে ঘুড়তে যেতাম দুজনে। বিকেলে পার্কে বসে আড্ডা দিতাম। গান করতাম, মাঝে মাঝে ওদের বাসায় গেলে চুপি চুপি নাচতামও।
কিছুদিন আগে...
কিছুদিন আগেই আমাদের এসএসসি পরীক্ষা শেষ হয়েছে। আর তার সাথে সাথেই ওর বিয়েও ঠিক। ছেলে বিদেশ থাকে, টাকাকড়ি আছে, পরিবারও নাকি ভালো। ওর আরও পড়ার কথা থাকলেও ভালো পাত্র বলে ওর পরিবার রাজি হয়ে গিয়েছে। ও রাজি কি না ঠিক বুঝতে পারিনি। আমাকে যখন দাওয়াত দিতে এসেছিল, জিজ্ঞেস করেছিলাম তুমি রাজি এই বিয়েতে? অনেক কষ্টাচ্ছন্ন মুখে উত্তর দিল " রাজি না থাকলে কি আর বিয়ে করছি? কিছু বলিনি, শুধু নিঁচু গলায় বলেছিলাম আসবো তোর বিয়েতে!
আজ সন্ধ্যায়...
কালো পান্জাবী পরে জান্নাতদের বাসায় গেলাম, আজ যে ওর গায়ে হলুদ! মনটা স্বভাবতই ভীষন খারাপ। তবুও চেষ্টা করছি যথাসম্ভব একটু হাসি খুশি থাকতে। জান্নাত ঘরে, সাজগোজ করছে, গায়ে হলুদের সাজ। আমি এসেছি শুনেই ঘর থেকে বেড়িয়ে এল। তারপর সেই চিরায়ত হাসি, কেমন আছো? তবে, আজকের হাসিটা যে ওর মন থেকে আসেনি, সেটা ওকে দেখেই বোঝা যাচ্ছিল। ওর চোখ গুলো কিছু একটা বলতে চাচ্ছিল, আর আমি চেষ্টা করছিলাম সেই কথাগুলো পড়তে। তারপর হঠাৎ করেও ও আমার হাত ধরে আড়ালে নিয়ে গেলো।
: আমি চলে গেলে তুমি বাঁচতে পারবে?
: না!!
: আমার একটু হাতটা ধরো।
: হুম।
: এভাবে ধরে রাখতে পারবে আজীবন?
: হুম।
: নিয়ে যেতে পারবে তোমার স্বপ্নের রাজ্যে?
: হুম।
: তাহলে নিয়ে চলো এখনি...
©somewhere in net ltd.