নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

গৃহত্যাগী যাযাবর

তারেক আহমেদ০০৭

সাধারনত যখন বাসায় থাকি তখন চুপচাপ থাকতে পছন্দ করি।আর যখন বন্ধুদের আড্ডায় যোগ দেই, তখন সম্পূর্ন অন্য আমি-যে অনেক কথা বলে।কখনো কখনো উপন্যাস পড়তে পড়তে নিজেকে কোন উপন্যাসের নায়ক ভাবতে শুরু করি।এই হয়ত গর্ভধারিণীর সুদীপ্ত হয়ে দেশ ও সমাজ ব্যাবস্থা কে বদলে দেবার কথা চিন্তা করি, আবার কখনো কষ্ট পেলে দেবদাসকেই আদর্শ ভাবা শুরু করি।তবে সবথেকে বেশী ইচ্ছে করে হিমু হয়ে ঘুরে বেড়াতে

তারেক আহমেদ০০৭ › বিস্তারিত পোস্টঃ

মায়াবী চোখ

২০ শে অক্টোবর, ২০১০ রাত ১০:৫৯

আমার বিয়ের আজ্ এক সপ্তাহ পূর্ন হল। সাত দিন যে কিভাবে চলেগেল বুঝতেই পারলাম না। এ কয়েকটা দিন খুব ব্যাস্ততার মাঝে কেটেছে, ঠান্ডা মাথায় কিছু ভাবার সুযোগ পাইনি।এখন ঠান্ডা মাথায় সব প্ল্যান করতে হবে, হঠাৎ করে কিছু করে আমার মাস্টার প্ল্যান কিছুতেই মাঠে মারা যেতে দিতে পারি না; কিছুতেই না। প্রথমে……।!

-‘এই কি চিন্তা কর?’ আমার স্ত্রী সেগুফতার প্রশ্নে সংবৃত ফিরে পাই।

-না কিছু চিন্তা করছি নাতো! কিছু বলবে?

-‘আজ বিকেলে মা কে দেখতে যেতে চাচ্ছি; তোমার কি সময় হবে?’

-হু সময় হবে। আমি আবার আমার চিন্তায় ডুবে যাই; কিছুতেই হিসেব মিলছে না। মাথা গরম হয়ে আসে।



রাত আটটা বাজে। এই মাত্র সেগুফতার মা, মানে আমার শাশুড়ীর বাসা থেকে বাসায় ফিরলাম। ওদের বাসা মালিবাগ। পুরানো দোতলা দালান, সামনে অনেক খালি জায়গা। অনেক গাছ লাগানো তাই জায়গাটা পার্ক পার্ক লাগে। একটি আম গাছের সাথে দোলনা লাগানো। দোলনায় দোল খেতে খেতে বিষয়টি নেয়ে অনেক ভাবলাম, নতুন কিছু যোগ করতে পারি নি। তবে এইটুকু বুঝতে পারছি যে, আমার হাতে সময় বেশী নেই।যা করার দু একদিনের মাঝেই করতে হবে।যত দিন যাচ্ছে আমি ওর প্রতি ততই দুর্বল হয়ে পড়ছি।ওর উচ্ছলতা,যৌবন,মিষ্টি হাসি আর মায়াবি চোখ দুটো আমাকে পাগল করে তুলছে।পাঁচ বছরের প্রেমের সময় ওকে যতটা না ভালো লেগেছে,এই সাত দিনে তার থেকে হাজার গুন বেশী ভালো লেগেছে।সেগুফতার সাথে আমার আকাশপাঁতাল ব্যাবধান।সে আমার ধনবান শ্বশুরের একমাত্র সন্তান।আমার শ্বশুর মারা যাবার পূর্বে তার মেয়ের নামে ব্যাংকে বার কোটি টাকা আর ঢাকায় নয়টি বাড়ি রেখে গেছেন।অপর দিকে আমি দরিদ্র বাবার লোভী সন্তান।

-‘ঘুমাবে না?’ সেগুফতার প্রশ্নে বর্তমানে ফিরে আসি।

-তুমি ঘুমাও, আমার ঘুম পাচ্ছে না।বারান্দায় বসে থাকতে ভালো লাগছে আর শরীরটাও একটু খারাপ।

-কি সর্বনাশ!কি হয়েছে?দেখিতো জ্বর এসেছে কি না,তুমি তো আবার দুদিন পরপরই জ্বর বাধাও।এই বলে ও আমার কপালে হাত রাখে।ওর হাতের ছোয়ায় আমার সারা গাঁ কাপূনি দিয়ে উঠে।আগে তো কখনো এমন হয়নি!ওর মায়াবি চোখের নিষ্পাপ চাহনি আমার হৃদয়এ ব্যাথার মত বাজে।বুঝতে পারি আর দু একদিন গেলে আমি আর ওকে খুন করতে পারব না!

হ্যা,আমি আমার পাঁচ বছরের প্রেমের ফল সেগুফতাকে খুন করব।আমার টাকা দরকার,অনেক অনেক টাকা।এই টাকার জন্যই গত পাঁচ বছর ধরে জাল বুনে বুনে আজ এখানে এসে দাঁড়িয়ে।এখন শুধু একটি কাজই বাকী;ওকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিলেই সব আমার হবে।হা হা হা…………





আমি কি পাগল হয়ে যাচ্ছি! না, কখনো না।আমি ঠান্ডা মাথায় খুন করব ওকে।সব পরিকল্পনা করা হয়েছে।প্রথমে গলাচেঁপে হত্যা করব তারপর ডেড বডি কয়েক টুকরো করে বস্তায় ভরে ফেলে দিব বুড়ীগঙ্গায়।ও হ্যা, খুন করার পূর্বে ওর চোখ দুটো কাপড় দিয়ে বেধে নিতে হবে,ওর চোখের দিকে তাকালে আমি কখনোই কাজ শেষ করতে পারব না।এর পর ওর মা এবং পুলিশকে জানানো হবে ও রাগ করে বাসা থেকে চলে গেছে,আর এটা নতুন নয় এর আগেও ও অনেকবার ওর মার সাথে রাগ করে বাসা থেকে চলে গেছে তাই বিষয়টি বিস্যাশ্বযোগ্য।ওর হাতে লেখা একটি চিরকুটও যোগাড় করা হয়েছে।এটা অনেক কষ্টে যোগাড় করেছি,পুরান ঢাকার এক লোক হুবহু অন্যের হাতের লেখা কপি করতে পারে তাকে দিয়ে লেখিয়েছি।আর পুলিশ যাতে ঝামেলা না করে সে জন্যও লোক আছে।যদিও অনেক টাকাই এসবে চলে যাবে, তার পরও য থাকবে তাই বা কম কি!

প্রথম কাজ ঠিক মতই শেষ করেছি।দ্বিতীয় কাজটি করার সময় মাথা ফ্রেস রাখা একান্ত প্রয়োযন।পরপর আটটা সিগারেট খেয়ে মাথা ঠান্ডা করে ঘরে ডুকলাম।ডোকার সাথে সাথে আমার সারা গা বে একটি বরফ শীতল শিহরন বয়ে গেল।সেগুফতার চোখ থেকে কাপড়টা সরে গেছে।ওর মায়াবি চোখদুটো ঘৃনা মিশ্রিত ভালোবাসা নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।যেন আমাকে বলছে ‘তুমি এমনটি করতে পারলে!’ মনের অজান্তেই টেলিফোন তুলে নিই… হ্যালো, রমনা থানা!

***

আমি কাশিমপুর কারাগারের একটি নির্জন সেলে বসে আছি।তিন সপ্তাহের মাঝে আমার ফাঁসি।রাষ্ট্রপতির কাছে জীবন ভিক্ষা চেয়েছিল আমার বাবা।আমার মত খুনিকে জীবন ভিক্ষা দেয় নি।ভালই হল সেগুফতার সাথে শিঘ্রই দেখা হবে।





মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.