নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভীরু, লোভী, বর্বর, অসভ্য, নির্গুণ, কৃপণ, অশ্লীল, রগচটা, স্বার্থপর, বেআদব, প্রতারক, দুরাচারী, অকৃতজ্ঞ,স্বার্থাণ্বেষী,পরনিন্দুক, মিথ্যাবাদী, উচ্চাভিলাষী, ইঁচড়ে পাকা, অসামাজিক, অবমূল্যায়নকারী ও ভাল মানুষের ভান ধরা আদ্যোপান্ত একটি খারাপ ছেলে...

মিহাল রাহওয়ান

মাঝে মাঝে কিছু কিছু অনুভূতি অব্যক্ত থাকে। কারন এই অনুভূতিগুলো প্রকাশের ভঙ্গি আমাদের জানা নেই। এই অনুভূতিগুলো সারাজীবন অপ্রকাশিতই থেকে যায়!!!

মিহাল রাহওয়ান › বিস্তারিত পোস্টঃ

সে এবং ও

২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:২১

ঢাকা থেকে ট্রেন ছেড়েছে প্রায় ঘন্টা দুয়েক হবে। শহর ছেড়ে বেরিয়ে এসেছে অনেকক্ষণ হলো। বাইরে হালকা বৃষ্টি হচ্ছে। পুরোনো ঝরঝরে ট্রেনের ছয় সিটের কামরায় ওরা চার জন। একদিকে বয়স্ক ভদ্রলোক আর তার স্ত্রী বসেছে। অন্যদিকে নিহাল আর জানালার পাশে ওর সমবয়সী একটা মেয়ে। মেয়েটা একদৃষ্টিতে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে বৃষ্টি দেখছে।

সত্যজিৎ রায়ের একটা গল্পের বই ব্যাগে নিয়ে এসেছে। আপাতত সেটা বের করে পড়ার চেষ্টা করছে নিহাল। চুইংগাম চাবাতে চাবাতে গল্পের বই পড়তে অসম্ভব ভালো লাগে তার। বিশেষ করে গোয়েন্দা গল্পের বই...

-আচ্ছা আপনার কাছে কি পানির বোতল হবে?? আমি না নিয়ে উঠতে ভুলে গেছি। খুব
তেষ্টা পেয়েছে।

মেয়ের কথায় বইটা রেখে নিহাল ব্যাকপ্যাকের সাইড পকেট থেকে পানির বোতল বের করে এগিয়ে দেয় মেয়েটার দিকে। মুচকি হাসি দিয়ে হাত
বাড়িয়ে নিয়ে এক ঢোকে অনেকটা পানি খেয়ে ছোট্ট একটা ধন্যবাদ দিয়ে ফিরিয়ে দিলো।

ঘন্টাতিনেক পর নিহাল তার কানে হেডফোনটা গুঁজে মোবাইলে গান শুনছে। প্রিয় গানের প্লে-লিস্টটা চলছে নোকিয়া সেটটায়। হঠাত হাতে খোঁচা খেয়ে 'আউউউচ' করে অস্ফুট স্বরে চেঁচিয়ে উঠলো। মেয়েটা হাসছে, মানে মেয়েটাই খোঁচা মেরেছে। কি রাক্ষুসে রে বাবা!!

-একি করছেন!!
-স্যরি! আপনাকে কয়েকবার ডাকছিলাম কিন্তু আপনি তো হেডফোন কানে দিয়ে কিছুই শুনছিলেন না তাই.... ব্যাথা পেয়েছেন?

- থাক... হয়েছে। কিছু বলবেন??
-গান শুনছেন??

-হেডফোন কানে দিয়ে কি কেউ গান গায়?
-কার গান?

-অর্থহীন। আমার প্রিয় ব্যান্ড।
-তাই! অর্থহীনের গান আমারো পছন্দের। একটা হেডফোন শেয়ার করা যাবে আমার সাথে??? আমার ফোনের চার্জ শেষ হয়ে গেছে...

-হুম যাবে।

'মেঘের দেশে কি এখনো তুমি
হারাও আনমনে?
কবিতা কি লেখো
এখনো আমায় ভেবে?

বৃষ্টি নামে যখন
তোমার ওই শরীরে,
আমার ছোঁয়া কি পাও
বৃষ্টির সাথে আনমনে?....'

-সুন্দর গানটা,এদের আর কোন কোন গান
আছে??
-অনেকগুলোই আছে, কোনটা শুনবেন?

-হুম,যদি আপনার সমস্যা না হয় আর কি।

এরপর প্লে-লিস্টে একে একে চলতে থাকে আনমনে ২ ,আলো ও আঁধার, অদ্ভুত সেই ছেলেটি,আবার, তুমি, অসমাপ্তের মতো সারা জাগানো গান।

মেয়েটা মুগ্ধ হয়ে গান শুনতে থাকে। প্লে-লিস্টটা শেষ হয়ে যেতেই খেয়াল হয় তখন মধ্যরাত। কামরার অন্য দুজন ঘুমিয়ে পরেছে। টিমটিমে লাইটে অদ্ভুত একটা পরিবেশ চলে এসেছে কামরার ভেতর। খোলা প্রান্তর দিয়ে ছুটছে ট্রেন।একঘেয়ে শব্দ...
ঝিক ঝিক ঝিক...

নিরবতা ভেঙ্গে আবারো মেয়েটাই কথা বলে উঠলো
-আচ্ছা জীবনটা ট্রেনের মত তাই না??
সারাদিন এখান থেকে ওখানে ছুটে চলে! আর আয়ু ফুরিয়ে এলে স্টেশনে ফিরে জাঙ্ক ইয়ার্ডে পরে থাকা।
-হুম,জীবনটা নদীর মতো। যার মোহনা একসময় না একসময় ঠিকই সাগরে গিয়ে মিশবেই।

-বাহ! আপনি তো বেশ বলতে পারেন
-হা হা হা। মুখে যা এসেছে তাই বলে দিলাম, এই আর কি...

-আচ্ছা সেই সন্ধ্যা থেকে আপনার সাথে বক বক করে যাচ্ছি।আপনাকে ডিস্টার্ব হচ্ছে না তো??
-আইনস্টাইনের সূত্র পড়েন কি?

-না..  আমি মানবিকের ছাত্রী ছিলাম।
-ও আচ্ছা। সূত্রটা এমন যে পাশে সুন্দরী মেয়ে বসে থাকলে পাঁচ ঘন্টাকেও পাঁচ মিনিট বলে মনে হয়...

-হা হা হা।আপনি খুব মজার।আপনার
সাথে পরিচিত হয়ে ভাল হইছে নয়তো সারা পথ মুখটা হপ করে বসে থাকতে হতো।
-আপনার নামই তো জানা হলো না! ওহ আমি নিহাল।

-আমি আনিলা
-বাহ! আমাদের নামের মধ্যে কেমন একটা মিল আছে দেখেছেন?  নিহাল-আনিলা...

-ওয়াও!  তাই তো। আপনার নামটা কিন্তু কিউট।
-আপনিও কিন্তু কিউট!

-ধুউর। বাদ দেন ওসব...
-কোথায় নামবেন?

-আমি খুলনা যাবো বাবার কাছে। আপনি??
-আমিও। মায়ের কাছে।

-আপনার বাবা নেই??
-হুম আছে তো! কেন?

-জানেন আমার না মা নেই!
-আমার তো মা আছে। কিন্তু জানেন তার
না একমাত্র ছেলেটার কোনো বউ নেই।

-ফাজলামো না!! কথা কি মুখে সবসময় রেডিই থাকে?
-স্যরি।আর করবো না।

-আরে সিরিয়াসলি নিচ্ছেন কেন? ফাজলামি  আমারো ভালো লাগে।
-ও ব্যাপারটা ভেবে দেখবেন!

জানালা দিয়ে বাইরে তাকালো আনিলা। স্টেশন প্রায় চলে এসেছে।বৃষ্টিও থেমে গেছে। হাতের ব্যাগটা গুছিয়ে বড় ট্রলিটা কাছে টেনে নেয়।

-আমি কি আপনার ফোন নম্বর
পেতে পারি??
-হুম।০১৬৮*******.... ফেইসবুকে কি?

-আছে। আনিলা মেহজাবিন। আপনি তো নিহাল রহমান তাই না??
-আরে! আপনি কেমন করে জানলেন??

-একটু আগে যে আপনি ফেসবুক অন রেখে বাথরুমে গেলেন তখন একটা গান চেঞ্জ করতে গিয়ে দেখলাম আপনার একাউন্টটা।
তখনই নামটা দেখে নিয়েছি।
-চুন্নি!!!

-হি হি হি
-লুকিয়ে কারো জিনিস দেখা কিন্তু ঠিক
না!!

-আচ্ছা দেখেই তো ফেলেছি কি আর
করা যাবে এখন। আসি তাহলে। ভাল
থাকবেন।
-আদিওস...সিনোরিতা

মেয়েটা ট্রেন থেকে নেমে যেতেই অদ্ভুত শূন্যতা কাজ করে ছয় সিটের কামরাটায়। ভাবে,ইশশ মেয়েটা চলে যাচ্ছে। তার সাথে হয়ত আর দেখা হবে না। বোকামি হয়ে গেছে!  ওর ফোন নাম্বার নিয়ে গেছে কিন্তু মেয়েটার ফোন নাম্বারটা রাখা হয়নি।

দু স্টেশন বাদে নিহালও নেমে পরলো। ভোর হয়ে এসেছে। সকালের ব্যস্ততা শুরু জয়ে গেছে। হঠাতই মনে পরলো অনেকক্ষণ হলো সিগারেট ধরানো হয় নি। ফস করে একটা সিগারেট ধরিয়ে ব্যাকপ্যাকটা নিয়ে হাঁটতে শুরু করলো।

হেডফোনে বাজছে শিরোনামহীনের গান...
'তুমি যে আছো তাই
আমি পথে হেঁটে যাই
হেঁটে হেঁটে বহুদূর, বহুদূর যেতে চাই....'


ক্রিংক্রিং শব্দে নিহালের মোবাইলটা বেজে ওঠে। অপরিচিত একটা নাম্বার থেকে ফোন এসেছে।
-হ্যালো!
-বাসায় পৌঁছেছেন?

-কে বলছেন?
-আনিলা....


--বিশ্বাসঘাতক

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:৩০

চাঁদগাজী বলেছেন:


খুচরা

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.