![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মাঝে মাঝে কিছু কিছু অনুভূতি অব্যক্ত থাকে। কারন এই অনুভূতিগুলো প্রকাশের ভঙ্গি আমাদের জানা নেই। এই অনুভূতিগুলো সারাজীবন অপ্রকাশিতই থেকে যায়!!!
দুপুরে খাবার পর মোড়ের দোকান থেকে একটা সিগারেট ধরিয়ে রওয়ানা দিলাম মাহিনের ফ্ল্যাটের দিকে। সকালে ও ফোন দিয়ে বলেছিলো বিকেলে সময় থাকলে একবার ওদিকে ঢুঁ মেরে আসতে। কি না কি কাজ আছে ওর বাসায়...
দুইবার কলিংবেল চাপার পর মাহিন যখন খালি গায়ে দরজা খুলে দিলো তখনই কেমন যেন সন্দেহ উঁকি দিলো...
-আজকেও তুই বাসায় মেয়ে নিয়ে এসেছিস?
জবাবে মাহিনের হে হে টাইপ হাসি দেখেই বুঝে নিলাম উত্তরটা। এমনিতে ছেলে হিসেবে মাহিন বেশ ভালো কিন্তু সারাক্ষণই মেয়ে নিয়েই মেতে থাকে। আর এই ব্যাপারটাই আমার কাছে অস্বস্তিকর। নিজের গার্লফ্রেন্ড নিয়ে আসলে অন্য কথা ছিল। কিন্তু একেবারে প্রস্টিটিউট!!
-আমি যাই।
-আরে শোন না!! তোর সাথে ফারিয়ার যে প্রবলেম হচ্ছে সে তো জানিই। ওর ঝাল এর ওপর ঝেড়ে নে...আরে একবার দেখ । যদি ভালো না লাগে বাদ। আর এই মেয়েটা অন্য গুলার মত না। মেয়েটা একটা ভার্সিটিতে পড়ে। পেশাদার না, কেবল খরচ চালানোর জন্য এসব করে। দেখ মজা লাগবে।
কথা বলতে বলতেই মাহিন ঠেলে প্রায় জোর করেই ঘরে ঢুকিয়ে দিল। আমি ঘরে ঢুকেই যেন পাঁচশ ভোল্টের শক খেলাম।
মেয়েটা খাটের উপর শুয়ে আছে। প্রায় নগ্ন অবস্থায়। আমাকে ঘরে ঢুকতে দেখে একটু চমকে উঠে নিজেকে একটু ঢাকার চেষ্টা করলো।
হঠাৎ মেয়েটর চোখের সাথে চোখ পড়ল । আমি আবার চমকে উঠলাম। মেয়েটার চোখটা হালকা নীল। মায়াবী চোখদুটো ঠিক কলগার্লদের মতো না ।
মাহিনের সাথে থেকে থেকে আমাকে বেশ কিছু কলগার্ল দেখার সৌভাগ্য হয়েছে । ঐসব মেয়ে গুলোর চোখ একটুও সুন্দর হয় না । কেমন একটা কুৎসিত ভাব থাকে । দেখলেই গা ঘিনঘিনিয়ে ওঠে। কিন্তু এই মেয়েটার চোখ একদম এরকম না। কেমন একটা বিষন্ন ভাবের সাথে একটা মোলায়েম ভাবও আছে ।
চিন্তায় ছেদ পরলো মেয়েটার কথায়
-আমি একটু ক্লান্ত । আপনি কি একটু পরে......
চকিতে ঘুরে আমি ঘর থেকে বের হয়ে গেলাম ।
ছিঃ কি কাজ করতে যাচ্ছিলাম আমি ???
রুম থেকে বের হতেই মাহিন সামনে এসে দাড়ালো
-কি রে মামা? পছন্দ হয় নাই ?
-তুই না আর বদলাবি না । নিজে তো পাপ করবি আামকে দিয়েও পাপ করাবি । এসব কাজ আমাকে দিয়ে হবে না ।
বাসা থেকে বেরিয়ে এসে আরেকটা সিগারেট ধরালাম। কিন্তু ঘুরেফিরে বার বার কেবল ঐ মেয়েটার বিষন্ন চোখ আমার চোখে পড়ছিলো। হায় বেচারী ।
নীল চোখা মেয়েটার কথা আমি হয়তো ভুলেই যেতাম কিন্তু সেদিন হঠাত মেয়েটার সাথে আমার আবার দেখা হয়ে গেল।
মেজাজটা খানিকটা খারাপ। একটু আগে আমাকে জ্বালানোর জন্য ফারিয়া নাবিলের সাথে কোথায় যেন গেলো। ভার্সিটির ক্যান্টিনে বসে বসে কফিতে সবে চুমুক দিয়েছি এমন সময় পেছন থেকে মিষ্টি একটা কন্ঠ বলল...
-ভাইয়্যা, ভালো আছেন ?
আমি তাকিয়ে দেখি সেই মেয়েটা দাড়িয়ে আছে। আজ মেয়েটাকে অদ্ভুত সুন্দর লাগছে। বলতে গেলে অন্য রকম। হালকা সবুজ রংয়ের সেলোয়ার কামিজে ফর্সা মেয়েটাকে সুন্দরই লাগছে। আমি কি বলবো ঠিক বুঝতে পাছিলাম মেয়েটি আবার বলল
-ভালো আছেন?
মেয়েটা আমাকেই জিজ্ঞাসা করছে! একটু সামলে নিয়ে অনেকটা যন্ত্রের সুরে বললাম
-বসো এখানে?
-এই এক বন্ধুর সাথে দেখা করতে এসেছিলাম। যাওয়ার সময় আপনাকে দেখলাম । মনে হল একটু কথা বলে যাই ! আপনি রাগ করেন নি তো?
-না রাগ করার কি আছে ?
-না, অনেকে আবার রাগ করে । তারা ঠিক আমাকে মানুষ বলে ভাবে না তো । কেবল ভোগ পন্য মনে করে ।
আমি কি বলবো ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলাম না। মেয়েটি বলে চললো
-আপনি ঐদিন চলে যাওয়ায় আমি বেশ অবাক হয়েছিলাম। প্রথমে ভাবলাম .......
মেয়েটা একটু চুপ করলো। বোধহয় নোংরা কথা গুলো হয়তো বলতে চাইছিল না । তার পর বলল
-তারপর আপনার বন্ধুর কাছ থেকে আপনার কথা শুনলাম ।
-কি শুনলে?
-শুনলাম যে আপনি খুব ভাল ছেলে। কখনও খারাপ কাজ করেন না।
মেয়েটা চুপ করে গেল। আমিও কোন কথা খুঁজে পেলাম না। বেশ খানিকক্ষণ অস্বস্তিকর নীরবতা। মেয়েটা হাত দিয়ে ওড়নার কোন পেঁচাচ্ছে আবার খুলছে। মেয়েটাও বোধহয় অস্বস্তি বোধ করছে। তাই একটু কাটাবার চেষ্টা করলাম
-আরে তোমার নামটাই তো জানা হল না ? কি নাম তোমার?
মেয়েটা কেমন যেন হাসল । বলল
-আজকাল কেউ আর আমার নাম জিজ্ঞেস করে না। অনেকদিন পর আপনি জিজ্ঞেস করলেন। ভাল লাগলো... আমি নীলা, আপনি?
-আমি মিশু..
-ভালো থাকবেন মিশু ভাইয়্যা
মেয়েটি উঠে পড়ল। যেতে গিয়ে আামর ঘুরে তাকিয়ে বলল
-আপনার মত মানুষ ঢাকা শহরে আছে আামর জানা ছিল না। জেনে ভাল লাগছে যে এই শহরে অন্তত একটা মানুষ আছে, যার কাছে আমি পন্য না। একজন মানুষ !
নীলার চলে যাওয়া দেখছিলাম। অদ্ভুত একটা
অনুভূতি হচ্ছিলো। ক্যান্টিনের দরজার গিয়ে ঘুরে হাত নাড়লো মেয়েটা, আমিও মুচকি হেসে জবাব দিলাম।
মাসখানেক ধরে বেশ ঘনঘনই দেখা হচ্ছে মেয়েটার সাথে। প্রথম প্রথম ভাবতাম হয়তো এমনিতেই দেখা হয়ে যাচ্ছে । কিন্তু পরে বুঝলাম যে মেয়েটা চাচ্ছে যে আমার সাথে তার দেখা হোক। আমি সরাসরি একদিন
জানতে চাইতেই নীলা কিছুক্ষন চুপ করে থেকে মাথা নেড়ে আমার কথার সম্মতি জানালো।
-কারন টা বলবে?
-না ।
-কেন?
-কারনটা আমি বলতে পারবো না । তবে আপনি যদি না চান তাহলে আমি আর আসবো না ।
-আমি তো এমন কথা বলি নি । কেবল কারনটা জানতে চাইছি ।
নীলা ঝাপছা চোখে আামর দিকে তাকালো ।
ওর চোখের দিকে তাকিয়ে আমার বুকের মধ্যে কেমন করে উঠলো। আবারো সেই অদ্ভুত মোহ!
আমি কেবল অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম নীলার দিকে !
মেয়েটা তো .......!!
এসব আমি কি ভাবছি !! এটা হতে পারে না । এটাকে প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না । কঠিন কিছু বলতে হবে । কিন্তু আমার কিছু বলতে হল না । ফারিয়াকে এদিকে আসতে দেখলাম ।
ফারিয়ার সাথে সমস্যা মিটে গেছে । আমাদের টেবিলের সামনে এসে বলল
-তুমি এখানে?? আর তোমাকে কতো জায়গায় খুঁজলাম। চল আমার সাথে। শপিংয়ে যাবো...
নীলাকে দেখিয়ে ফারিয়াকে বললাম
-ফারিয়া এ হচ্ছে নীলা।
নীলা ফারিয়ার দিকে তাকিয়ে হাসলো ।
তারপর নীলাকে বললাম
-এ হচ্ছে ফারিয়া, আমার গার্লফ্রেন্ড...
নীলা একটু যেন চমকালো। তারপর জরুরি কাজ হঠাত মনে পরে গেছে এমনভাবে তড়িঘড়ি করে উঠে বললো
-আচ্ছা মিশু ভাই আমি তাহলে যাই ।
আামকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে নীলা উঠে গেলো। দরজার কাছে গিয়ে আবার ফিরে তাকাল আমার দিকে। সেই ঘোর লাগানো ঝাপসা দৃষ্টি চোখ। আমার কেন জানি ঐ দৃষ্টিটা বুকে বিধেই রইল। ভুলতে পারলাম না কিছুতেই ।
তারপর বেশ কিছুদিন নীলার কোন দেখা নাই । মাহিনের কাছে খোজ নিলাম। মাহিনও ঠিকভাবে কিছু বলতে পারলো না।
দেখা হল গতকাল বিকেলে...
বিকেলে খুব বৃষ্টি হচ্ছিল । আমি রিক্সা নিয়ে মেসের দিকে যাচ্ছি এমন সময় দেখি একটা মেয়ে ক্যান্টিনের গেটের সামনে গাছটার নিচে দাড়িয়ে। কেমন যেন পরিচিত মনে হল। আরেকটু কাছে যেতেই চিনতে পারলাম যে ও নীলা। এই বৃষ্টিতে এখানে কি করছে মেয়েটা! আমি ওকে রিক্সার তুলে নিলাম
-এখানে কি করছো?
-আপনার জন্য অপেক্ষা করছিলাম ।
-মানে?
-মানে, আপনাকে কেন জানি খুব দেখতে ইচ্ছা...
কথাবার্তার লাইন অন্য দিকে চলে যাচ্ছিল দেখে আমি বললাম
-তোমার কি খবর ?
জবাবে নীলা স্মিত হাসলো। তারপর দুজনেই যেন কেমন চুপ হয়ে গেলাম। অনেকক্ষন পর
নীলাই নীরবতা ভাঙলো...
-আপনাকে কাছে একটা জিনিস চাইবো ?
-কি?
-আমার হাতটা একটু ধরবেন ? মাত্র একটাবার!
সেদিনের মতো চমকে উঠলাম। মেয়েটার কন্ঠে কি ছিল জানি না । কিন্তু আমি ওর হাতটা ধরলাম। অনেকটা ঘোরের মধ্যেই ধরলাম।
নীলা হু হু করে কেঁদে দিল । কাঁদতে কাঁদতেই বলল
-আমার জীবনে কেবল এই একটি স্বপ্নই ছিল । একটা মানুষ থাকবে যে আমাকে ভালোবাসবে, প্রান দিয়ে ভালোবাসবে। কিন্তু এমন কেউ আমার জন্য তৈরি হয় নি ।
আমার মতো মানুষ দের জন্য এমন কেউ থাকে না...
নীলা কি বলতে চাইল আমি ঠিক বুঝতে পারলাম। কিন্তু সব কিছু প্রশ্রয় দেওয়ার কোনো মানে হয় না।
মেয়েটি একটি প্রস্টিটিউট, সোজা বাংলায়.......।
কথাটা মনে আসতেই মনে হলো
আমি কি করছি ? কেন করছি ?
একটা পতিতার সাথে বসে আছি। একই রিক্সায় চড়েছি !!
আমি আমার হাত নীলার হাত থেকে ছাড়িয়ে নিলাম ।
চারিদিকে বৃষ্টিতে ভেসে যাচ্ছে। পাতলা নীল পলিথিন দিয়েও পানি আটকানো যাচ্ছে না । দুজনেই ভিজে গিয়েছি। নীলার পুরো মুখ দিয়ে পানি ঝরছে। নোনতা পানিগুলো হারিয়ে যাচ্ছিলো কিন্তু তবুও আমি ওর চোখে পানি ঠিকই চিনতে পারলাম ।
নীলা আর থাকলো না । বৃষ্টির মধ্যেই নেমে গেল। আমার কেন জানি কষ্ট হতে লাগল মেয়েটার জন্য। একজন কলগার্লের জন্য আমার কষ্ট হতে লাগল .....।
আশ্চর্য......
-বিশ্বাসঘাতক
২| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:০৮
Tanvir Ahmed Suddique বলেছেন: অদ্ভুত অনুভূতির জালে মানুষ আবদ্ধ হয়ে যায়
৩| ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১:১১
কালীদাস বলেছেন: লেখাটা সুন্দর হয়েছে।
৪| ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:০৭
রানা আমান বলেছেন: লেখাটা আমার ভালো লেগেছে ।
©somewhere in net ltd.
১|
২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৫১
তিমিরবিলাসী বলেছেন: প্রথম দিকে বললেন ছেলেটা ভাল, খালি মেয়ে নিয়ে আসে। এইটা ভালোর সংজ্ঞা?
একটু মায়া …আবার ঘৃণাও …এটা অবশ্য ঠিক মনে হয়েছে।