নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি মানুষের কথা বলি। মানবতার কথা বলি। স্বপ্ন দেখি সমৃদ্ধ বাংলাদেশের। নিরাপদ একটি ভূখন্ডের।
দয়া করে এখনি ঘরে ফিরে যাবেন না। কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে দেয়া অপর্যাপ্ত রায়কে কেন্দ্র করে ৫ ফেব্রুয়ারি যে আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল আজ তা পরিণতির দ্বারপ্রান্তে এটা ঠিক। তবে এই আন্দোলনের যে বিপুল জনসমর্থন তা শুধুমাত্র কাদের মোল্লার সুষ্ঠু বিচারের দাবীতেই সীমাবদ্ধ ছিল না। মুল দাবির সাথে যুক্ত ছিল এ দেশের সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান রোধ করা সহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সফল বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা। যার সাথে যুক্ত হতে পারত দুর্নীতি রোধ সহ আরও অনেক দাবী। আর এক্ষণে যে দাবীটি হয়ত এক দফায় রূপ নিত তা হল রাজনৈতিক সন্ত্রাস বন্ধ করতে হবে।
এটাই তো হওয়ার কথা। সময়ের প্রয়োজনে নিত্য নতুন দাবী উত্তাপিত হবে। সে দাবী আদায়ে সংগ্রামে লিপ্ত হতে হবে। বেয়াল্লিশ বছরের জঞ্জাল নিমিষেই দূর হয়ে যাবে। সরকার চাইলেই তা দূর করে ফেলতে সক্ষম হবে এটা ভাবার কোন কারণ নেই।
আমরা প্রতি পাঁচ বছর অন্তর কোন দলকে সমর্থন যুগিয়ে সরকার গঠনে সাহায্য করেই আমাদের দায়িত্ব শেষ করি। এটা মাথায় রাখি না সরকার যারা গঠন করলেন তারা ফেরেশতা নন তারাও ভুল করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে সমাজের বিবেকবান মানুষগুলি বিশেষত যারা তাদের সমর্থন যুগিয়েছেন তাদেরই প্রধান দায়িত্ব সে ভুল ধরিয়ে দেয়া। নয়ত সে ভ্রান্তি বিলাস কাটবে কি করে?
আর তাছাড়া সরকার যখন একটি ভাল উদ্যোগ গ্রহণ করেন তখন তাকে যে প্রতিকুল অবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে হয় সে অবস্থায় জনসাধারণের কাছ থেকে একটি নৈতিক সমর্থন পাওয়া অনেক বেশি জরুরী। যা কখনো কখনো দৃশ্যমান করেও তুলতে হয়। যার প্রকৃষ্ট উদাহরণ মানবতা বিরোধীদের বিচারের সমর্থনে এবং সুষ্ঠু বিচারের নিশ্চয়তায় জনসাধারণের রাস্তায় নেমে আসা। গণজাগরণ মঞ্চের বিপুল উত্থান। কাদের মোল্লা, সাঈদিদের বিচারকে কেন্দ্র করে দেশে যে ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি করা হয়েছিল তাকে থামিয়ে দিতে এবং বাড়তে না দেয়ার পেছনে গণজাগরণ মঞ্চের কোন ভূমিকা ছিল না এটা যদি বলা হয় তা হবে বাস্তবতা বিবর্জিত। সত্যের অপলাপ মাত্র।
গণজাগরণ মঞ্চে সাধারণ মানুষের যে ঢল নেমেছিল তাকে যারা টাকার খেলা বলে বিদ্রূপ করেছিল তারা কিন্তু এও বলেছিল অমন হাজারটা মঞ্চ তৈরি করে দেখিয়ে দেবেন। সেদিন লিখেছিলাম জনগণের মঞ্চ করতে হলে জনগণকে নিয়েই করতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে গিয়ে নয়। তারা সেদিন হাজারটা তো দূরের কথা একটি মঞ্চ তৈরিতেও সক্ষম হননি। কারণ আর কিছু নয়। ভাড়ায় খাটা লোক দিয়ে হত্যাযজ্ঞ চালানো যেতে পারে। অহিংস আন্দোলন অসম্ভব। জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়া যেমন গন আন্দোলন সৃষ্টি হয় না তেমনি জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় ব্যতীত ব্যক্তি স্বার্থ চরিতার্থ করতে যে আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করা হয় তাতে জন সম্পৃক্ততা খুঁজে পাওয়া যায়না। যেটা বর্তমানে এ দেশে চালানো হচ্ছে।
যদিও বিরোধী দল থেকেই বলা হচ্ছে এটা যুদ্ধ। এটা যুদ্ধ বৈ কি? কিন্তু বোঝা গেল না এই যুদ্ধে তাদের প্রতিপক্ষ কে? কারণ তথাকথিত এই যুদ্ধে কোন দলেরই কোন নেতা মারা পড়ছে না (তাদের মৃত্যু কাম্যও নয়। এমনকি তারা ময়দানেও নেই। মারা পড়ছে সাধারণ মানুষ। ধ্বংস হচ্ছে দেশের সম্পদ। যেন এটা তাদের দেশ নয়। অনেকটা স্বাধীনতা পূর্ব বাংলাদেশের মত; পূর্ব পাকিস্তানিরা যেমন এক সময় অখণ্ড পাকিস্তানকে নিজেদের দেশ বলেই মানতে পারত না। কারণ তারা তখন দেখেছে পূর্ব পাকিস্তানের সম্পদ কিভাবে পশ্চিমে পাচার করা হচ্ছে। তারা দেখেছে শাসক গোষ্ঠী পূর্ব পাকিস্তানকে পাকিস্তানের অঙ্গ না ভেবে একটি উপনিবেশ জ্ঞান করছে। কাজেই প্রয়োজন ছিল স্বায়ত্তশাসন এমনকি স্বাধীনতাও। আর তা রক্ষার্থে অসহযোগ, শসস্র যুদ্ধ, ধ্বংস অনিবার্য হয়ে পড়েছিল। যার ফলাফল ছিল আজকের বাংলাদেশ।
সে যুদ্ধে বাঙ্গালীর প্রতিপক্ষ ছিল পাকিস্তান। সেদিন বাঙ্গালী যুদ্ধ করেছিল একটি ভিন জাতীর সাথে। কিন্তু আজ বিএনপির যুদ্ধ কার সাথে? যদি বলেন আওয়ামী লীগের সাথে। তাহলে বলব, দলের সাথে দলের যে যুদ্ধ তা তো নিষ্পত্তি হবে নির্বাচনের মাধ্যমে। সাধারণ মানুষকে কেন প্রতিপক্ষ করা হবে? তবে কি তারা ধরেই নিয়েছেন এই সাধারণ মানুষ মানেই আওয়ামীলীগ? অতএব এরা শত্রুপক্ষ, এদের মারা উচিৎ? আর যদি তাই হয় তাহলে তো এর বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকেই সোচ্চার হতে হবে। শুধু শাহবাগ নয় গণজাগরণ মঞ্চ তৈরি করতে হবে সারা দেশ ব্যাপী। আজ জামায়াতকে নিয়ে বিএনপি যে অরাজক অবস্থা সৃষ্টি করছে তার বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষেরই জেগে উঠতে হবে। কেননা এটা এখন আর প্রিয় অপ্রিয়’র খেলা নয় এটা অস্তিত্বের লড়াই।
একটি দেশের মানুষ কখনোই কোন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর কাছে জিম্মি হয়ে থাকতে পারে না। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কাছেও নয়। আমরা যারা সাধারণ মানুষ আমাদের একটাই দাবী আমরা সন্তাসমুক্ত রাজনীতি চাই। বিএনপির সাথে আমাদের কোন বিরোধ নেই। বিরোধ তাদের সাথে যারা এসব কর্মকাণ্ড করছে এবং যারা তাদের আশ্রয় প্রশ্রয় দিচ্ছে। আজ যদি বিএনপি অসহযোগ, অনশন বা এমন কোন অহিংস আন্দোলনের পথ বেছে নিত আমাদের প্রতিবাদি হয়ে উঠতে হত না। হয়ত সমর্থকও বনে যেতাম। তারা তা করেনি। উলটো নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের ক্রমাগত সুযোগ করে দিচ্ছে। সাভাবিকভাবেই আমরা এর প্রতিবাদ জানাই। আমরা শান্তিপ্রিয় মানুষ।
আমরা একদিকে যেমন দেশ গড়ার অংশীদার হতে চাই তেমনি অন্যদিকে দেশকে যারা ধ্বংসের পথে নিয়ে যেতে চাইছে তাদের প্রতিহত করার সংগ্রামেরও অংশীদার হতে চাই। এ যুদ্ধ একদিনের নয়। এটা চলমান সংগ্রাম। যেখানে প্রতিনিয়ত যোগ হবে নতুন দাবী। একটি সফলতার পিঠে থাকবে আরেকটি আকাঙ্ক্ষার প্রতিচ্ছবি।
শুধু শাহবাগ নয় গণজাগরণ মঞ্চ গড়ে উঠুক প্রতিটি পাড়ায় মহল্লায়। সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ুক একই চেতনার আগুন। তবে শাহবাগ আন্দোলনের সূচনাকারীদের অপরিপক্বতার সুযোগে আওয়ামী লীগ যেভাবে প্রভাব বিস্তার করে এর গ্রহণ যোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে সেই সুযোগটি যেন তারা না পায় সেটাও লক্ষ রাখা জরুরী। শেষ কথা বলব জেগে থাকুন ঐক্যবদ্ধ থাকুন আদর্শে স্থির থাকুন অন্যথায় এ যুদ্ধে জয়ী হওয়া কঠিন হয়ে যাবে। এবার যেন আর কোন হারের স্বাদ গ্রহণ করতে না হয়।
সঞ্চালক, আপন ভুবন.কম
[email protected]
©somewhere in net ltd.