রক্তের গল্প

১৬ ই মার্চ, ২০১৭ সকাল ৯:৩২

মায়ের সামনে যেতে আজ নিজের কাছে কেমন জানি লাগছে।
কাল রাতে মা আমার পকেটে লাইটার পেয়েছে।
সিগারেট খাইনা তেমন। খারাপ জিনিস থেকে দূরেই ছিলাম।
অনেক বন্ধু অনেক জোরাজোরি করলেও সিগারেট খাওয়াতে
পারেনি।
কাল নিজেই অনেকগুলো সিগারেট খেয়েছি। কেও বলেনি
খেতে,কেউ খেতে দেখে বারণ ও করেনি। মানুষ কষ্ট পেলে
নিজেকে ধ্বংস করতে ভালোবাসে।
আমি কষ্ট পেয়েছি অদ্ভুত কারণে।
কাল সন্ধ্যায় একজন মহিলা রাস্তার পাশে 'রক্ত রক্ত' বলে
চিৎকার করছিল। গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,রক্ত দিয়ে কি
করবেন? বললো,আমার মেয়েটার সিজার করাবে,রক্ত পাচ্ছিনা
কোথাও। আমার মেয়েটা রক্তের অভাবে মরে যাবে।
জিজ্ঞেস করলাম,কোন গ্রুপ? যখন বললো, 'ও নেগেটিভ' আমার
মাথায় যেন বাজ পড়লো!
আমার রক্তের গ্রুপ ও 'ও নেগেটিভ'। আমি মাত্র ছয়দিন আগে এক
মা'কে রক্ত দিয়ে ফেলেছি। তবুও মহিলাকে আশা দিয়ে
বললাম,কোথায় আপনার মেয়ে? চলেন...
গিয়ে দেখি প্রসব ব্যাথা উঠে গেছে। ডাক্তারকে বললাম,রক্ত
আমি দেবো।
ডাক্তারের কাছে গোপন রাখলাম,আমি অল্প কয়েকদিন আগে
রক্ত দিয়েছিলাম।
রক্ত দেয়ার পর মাথা ঘুরছিল খুব। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পর
বাচ্চার কান্নার আওয়াজ শুনতে পেয়ে ভালোলাগছিল।
জীবনে মাত্র এই একটা সময়ই কারো কান্নার আওয়াজ শুনলে
আমাদের মাঝে ভালোলাগা কাজ করে।
আমি মনে মনে বাচ্চাটার নাম ও ঠিক করে ফেলেছি। যাওয়ার
সময় বাচ্চার নানীর কাছে নাম লিঙ্গ অনুযায়ী বলে যাবো।
ছেলে হলে বলবো,আরিয়ান ইফতিশাম। আর মেয়ে হলে,ফাইমা
জান্নাত আরোরা।
আমার সকল ভালোলাগা কিছুক্ষণের মধ্যেই উবে গেলো। নার্স
এসে বললো, বাচ্চাকে বাঁচানো গেলেও,মাকে বাঁচানো
যায়নি।
আমার রক্তেরা একটা জীবন বাঁচাতে পারেনি। আমার কষ্টটা
কেউ বুঝবেনা।
মা যখন জিজ্ঞেস করেছিল,কিরে বাবা লাইটার দিয়ে কি
করিস?
বললাম,সামান্য কিছু কষ্ট পোড়াই আর আমি অন্যগ্রহে হারাই।
আমার মা ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকলো। কিছু বুঝলোনা।
তিনবার রক্ত দিয়েছি। দুইবার সফল আমি,একবার ব্যর্থ।
রক্তের মূল্য সবাই বোঝেনা। কেউ কেউ রক্ত দিয়ে সতীত্বহীন
হয়।
কেউ রক্ত নষ্ট করে। আমার মতো রক্তের জন্য কারো মায়া
লাগেনা।

০ টি +০/-০