![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
"আমি মৃতপ্রায় শহর,তুমি শেষ বিদায়ী রোদ"
...
একটা সময় একটা শহর ছিলো,বুঝলে?সে অনেক আগের কথা। শহরটার নাম ছিলো “পবিত্র শহর”। শহরটা এতো শুদ্ধ ছিলো যে তার আশেপাশে যেই আসতো,তারই এক ধরনের পবিত্রতা অনুভুত হতো। সন্দেহবাদীরা ভাবতো,এটা কি হয় নাকি?শহর মানেই তো পঙ্কিলতা থাকবে। এদিক-ওদিক লুকানো। হয়তো শহরের মুখে খুব শক্ত মুখোশ আঁটা,যার কারণে এটাকেই শহরের মুখ বলে ভ্রম হয়।
যাই হোক,সবাই ১টা ব্যাপার জানতো না,সেটা হলো...শহরটা শহরটাকে ইচ্ছেমত সাজিয়েছিলো। তাই সেই শহরটা ছিলো বিশাল এক বেদনার নীল আকাশে ঘেরা। সেই আকাশে ছিলো থোকা থোকা কাশফুল মেঘ। তারা অবুঝ বাচ্চাদের মত ছুটোছুটি করে বেড়াতো পুরো আকাশটা জুড়ে। যতই মন খারাপ থাকতো না কেনো,সেই আকাশের দিকে তাকিয়ে মন ভালো হতে বাধ্য। সেই আকাশের সব থেকে আকর্ষণীয় দিকটা ছিলো তার রোদ। প্রতিটা দিন রোদটা তার সময়ে আসতো,হাসতো। তার হাসি দেখে শহরের মানুষজন জীবন শুরু করতো। প্রতিটা দিন শহরটা রোদ আসবার সময়ের আগেই আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতো...কখন আসবে। রোদ আসবার লক্ষণ দেখা গেলেই নিজের অজান্তেই শহরের মুখে ১টা হাসি ফুটে উঠতো। রোদ আসবার আগেই তড়িঘড়ি করে লুকিয়ে যেতো শহরটা। রোদ আসবার পর বের হতো। যে কারণে প্রতি ভোরেই রোদের কড়া চোখের শাসানী সহ্য করতে হতো তার। মুখ লুকিয়ে কত কষ্ট করে যে হাসি চাপতে হতো তার। সব জায়গায় জিততে চাওয়া শহরটা কেনো যে রোদের কাছে এসে ইচ্ছে করেই প্রতিদিন হেরে যেতো,তা শুধু শহরটাই জানে। এই রোদই ছিলো শহরটার একমাত্র বাঁচার সম্বল। প্রতি বিকাল শেষে রোদটা যখন চলে যেতো,শহরটা অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে রাখতো,যেনো তার অশ্রুধারা রোদটার চোখে না পড়ে। রোদটাকে প্রতিদিন দেখে দেখেই প্রতিবার শহরটা নিতো প্রতিমুহূর্তে আগের থেকে শুদ্ধ হবার শপথ।
এরপর একদিন হঠাৎ...রোদটা আর আসলো না...
পরদিনও না...
পরদিনও না...
পরদিনও না...
শহরে আর রোদই আসলো না...
শহরের অবস্থাটা ভাষায় বর্ণনা করার উপায় ছিলো না। ঐ শহরের আকাশে প্রথম হলো নোনা জলের বৃষ্টি। পুরো শহর ভেসে গেলো। এতদিন দাঁতে দাঁত চেপে নিজেকে অনেক শক্ত বলে প্রমাণ করতে চেষ্টা করা শহরটার সব সীমানাপ্রাচীর ভেঙে গেলো। বৃষ্টিতে,বন্যায়,শহরের সব মূল্যবান,দুষ্প্রাপ্য সম্পদ তলিয়ে গেলো,নষ্ট হয়ে গেলো,ভেসে গেলো অনেক দূরে। বাইরে ওত পেতে থাকা পঙ্কিলতাগুলোও এই সুযোগে হুড়মুড় করে ঢুকে মিলে-মিশে লেপ্টে গেলো পুরো শহরটায়...
শহরটা ধীরে ধীরে ধ্বংস হতে থাকলো...
মানুষজন দীর্ঘশ্বাস ফেলে শহর ছাড়তে শুরু করলো...
সন্দেহবাদীরা খুশী হলো...এতোদিনে শহরের মুখোশ উন্মোচন হয়েছে...
শহরটা ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগোতে লাগলো...
এরপর একদিন...
হুট করে আকাশে রোদের ঝলক...
শহরটা অন্যদিনের মত পালাতে পারলো না...
রোদটা এসেই পঙ্কিলতা মাখানো শহরের মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, “আমি কয়দিন না থাকাতেই এই হাল?তার মানে এটাই তোমার আসল চেহারা। ছিঃ। তোমাকে আমি এতদিন ধরে নিঃস্বার্থভাবে আলো দিয়ে এসেছি,জেনে এসেছি,তুমি শুধু আমার শহর। একমাত্র শহর। আর তুমি কিনা?ছিঃ। তোমার মুখোশটা খুব ভালো ছিলো। বুঝিইনি যে,মুখোশ। শেষ পর্যন্ত সত্যের জয় হয়। আমি তোমাকে চিনে ফেললাম। এই চেনার জন্যই এতোদিন আসি নি। আমি দেখতে চেয়েছিলাম,তুমি আমার সামনে যেমন,আড়ালেও কি ঠিক সেই শহরটাই?আমি ভুল ছিলাম। আমি ভুল ছিলাম।“
শহরটা বলতে নিলো,”যে তুমি না থাকাতেই আমার এই হাল...”
রোদ কিচ্ছু শুনলো না...রোদটা শহরের যে পঙ্কিলতার জন্য শহরকে ছেড়ে চলে যেতে চলে লাগলো,রোদটা কোনোদিনও জানলো না যে,এই পঙ্কিলতাটা রোদের অভাবেই এসে জায়গা করে নিয়েছে। রোদটা কখনো বুঝতে চাইলো না,সে থাকলে শহরটা আবার ধীরে ধীরে হয়ে উঠতো,শুদ্ধ...পবিত্র...
কেনো,রোদ?কেনো?রোদকে দোষ দিয়েই বা কি লাভ?এই জীবনে যার যেটা বুঝলে ভালো হতো,শুধুমাত্র সে ছাড়া সবাইই সেটা বুঝে।
রোদটা চলে যেতে লাগলো...শেষবারের মত...আর আসবে না রোদটা এখানে...যাবার আগে বলে গেলো,”দুঃখটা কি জানো?এতো কিছুর পরও আমার মনে তুমি রয়ে যাবে। তবে ভালোবাসা হিসাবে নয়,ঘৃণার নিদর্শন হিসাবে...তুমি এখন এইসব পঙ্কিলতা নিয়েই আরাম আয়েশ করো”
মৃত্যুর জন্য ধুঁকতে থাকা শহর বলল,”ভুলতে চাও?”
রোদ বলল,”হ্যাঁ”
শহর হেসে বলল,”তবে,ঘৃণা নয়,ভালোবাসো। তবেই ধীরে ধীরে আর তোমার মনে আর আমি থাকবো না।“
রোদ বলল,”কেনো?”
শহর বলল,”কারণ আমি মৃতপ্রায় শহর,তুমি শেষ বিদায়ী রোদ”
.........
......
...
জুলাই ৭, ২০১৮, ১৪:৫০
"মৃতপ্রায় শহর"
©মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান উচ্ছ্বাস