নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

In the three dead eyes to pass on the windows

শিকদার ওয়ািলউজ্জামান

ধর্মনিরপেক্ষতা ধর্মহীনতা নয়

শিকদার ওয়ািলউজ্জামান › বিস্তারিত পোস্টঃ

কবি খোন্দকার আশরাফ হোসেন এবং আমি...

২২ শে অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৫:০১

সব পাখিই ঘরে ফেরে, উড়ালটুকু স্মৃতির ডানায়

কি নিচ্ছ ঠোঁটের ফাঁকে, সুদুরের পাখি?/আমি নিচ্ছি দুটো খড়, এই মৃত্যু, আরেক জীবন

উত্তরাধুনিক সাহিত্যের পুরধা ব্যক্তিত্ব যিনি এমন উচ্চারণ করতে পেরেছেন, জন্মভূমির যে কাদা-মাটিতে হাঁটতে শিখেছেন, স্বচ্ছ জলের ধারায় অবগাহন করেছেন, সেই বৃহত্তর ময়মনসিংহের মাটি-বাতাস-জল-রোদ গায়ে মাখতে আবারো ফিরেছেন নিজ জেলায়। ফিরেছেন চিরকালের জন্য মৃত্যুকে সঙ্গে করে, আরেক জীবনের খোঁজে। সারাদিন যবের দানা আর শস্যবীজ খুঁজে খুঁজে তিনি যখন ফিরেছেন আমরা তখন তার হারানো যৌবন আর অতীতের শীতল সন্তাপ চিরজীবী পাথরের কাছে জমা রাখা বিস্মৃতির অন্তরালে জীবনের আস্বাদটুকু কিছুটা হলেও ধার পেতে চেয়েছি...

আষাঢ়ের পর আষাঢ় গত হবে। তার কাব্য-ইতিহাস উ™ভ্রান্ত দিগন্ত ছাড়িয়ে যাবে সুউচ্চতায়। তার কবিতা স্পর্শকাতর অনভূতি হয়ে জারিত হবে আমার মতো পাঠকচিত্তে। শুধু অতীত আর বর্তমানের মতো তিনি আর সমান্তরালে হাত ধরাধরি করে হাঁটবেন না কবি ও কবিতার পথে। কে জানত বড্ড অসময়ে অন্ধকারকে তাড়া করে তিনি বলবেনÑ‘পথ ছাড়ো অন্ধকার, পথ ছাড়ো দূরত্বের দূরগামী পথ/বাড়ি যাবো, বাড়ি..

এমন পীড়া আমি আগে কখনোই অনুভব করিনি। যখনই এক মৃতের স্বগতোক্তি কবিতাটি পাঠ করি তখন দু'চোখ আমার চরম অশ্র“কাতর হয়ে পড়ে। তিনি কি আগেই বুঝেছিলেন তাকে আষাঢ়েই একান্ত নিজস্ব ঘরে ফিরতে হবে? তাই যদি না হবে তাহলে তিনি কিভাবে লিখলেন?Ñ যখন তোমরা চলে গেলে আমাকে কবর দিয়ে/(হা ঈশ্বর, কে জানতো প্রবল বর্ষার দিনে এমন ঘটনা হবে!)/আমাকে নামানো হলো তিন হাত মাটির গভীরে, অন্ধকারে/বিস্ফারিত কাঠ কয়লার মতো জ্বলে উঠলো তৃতীয় নয়ন,/প্রচণ্ড বোমার ঘাতে নগর-কংক্রীট ভেঙে জেগে উঠলো চোখ/ত্রিকালদর্শী ক্ষোভে, জলীয় যন্ত্রণা আর ঘুঙুরের বোল।

তিনি আমার অগ্রজ, নমস্যজন। তিনি একাধারে কবি, সাহিত্যিক, অনুবাদক এবং বিভিন্ন পত্রিকার সম্পাদক। সম্পাদক হিসাবে তিনি বহু কবিপ্রতিভাকে উজ্জীবিত করেছেন, কয়েক প্রজন্মের কবিকে একসাথে মিলিয়েছেন। বিরল প্রতিভার এই কবি খোন্দকার আশরাফ হোসেন পৃথিবীর সর্বশেষ কবি আমি অহংকার আমার কবিতাÑ এমন সাহসী মন্ত্রের কবি খোন্দকার আশরাফ হোসেন-এর তিন রমনীর ক্বাসিদা, পার্থ তোমার তীব্র তীর, জীবনের সমান চুমুক ও সুন্দরী ও ঘৃণার ঘুঙুর কাব্যগ্রন্থের কবিতাপাঠে মুগ্ধতার মধু পান করেছি অনেকদিন। অসম্ভব মোহিতজন হয়ে পড়েছি তার কবিতার। লিটল ম্যাগ প্রাঙ্গনের টেবিলে শুয়ে থাকা তার সম্পাদিত ছোটকাগজ একবিংশ-এ চোখের তারা বুনেছি একুশে বইমেলায়। অনেকবার। কবির সাথে তখনও আমার পরিচয় হয় নি। তাকে লিটলম্যাগ প্রাঙ্গনের এক কোনে বসে থাকতে দেখেছি। ইংরেজির ছাত্র হিসাবে এবং একজন ছোটকাগজ কর্মী হওয়ার কারণে তার প্রতি শ্রদ্ধায় আমার মাথা নত হয়েছে যতবার তার দিকে তাকিয়েছি। তিনি কখোন বুঝতেও পারেন নি। তার সাথে কথা বলার সাহসও হয়ে ওঠে নি কখনো।

২০১২ সালের ২০ অক্টোবর। রাজশাহী কবিকুঞ্জ’ আয়োজিত দুদিন ব্যাপী জীবনানন্দ স্মরনোৎসব। উক্ত অনুষ্ঠানে অংশগ্রহনের মাধ্যমে এপার আর ওপার বাংলার শত কবি ও সাহিত্যিক-এর সান্যিধ্য পেলাম। অনুষ্ঠানের প্রথমদিনে জীবনানন্দকে নিয়ে লেখা খোন্দকার আশরাফ স্যারের প্রবন্ধ মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনলাম। প্রবন্ধ’র উপর আলোচনা করলেন কবি মাহবুব সাদিক ও কথা সাহিত্যিক জাকির তালুকদার। বেশ উপভোগ করলাম। মধ্যাহ্ন বিরতিতে চায়ের আড্ডায় কবি খোন্দকার আশরাফ হোসেন, প্রফেসর ফকরুল আলম এবং প্রফেসর মোহিত উল আলম, কবি মাহবুব সাদিক ও কবি মাকিদ হায়দারÑ এর সাথে জমিয়ে আড্ডা দিলাম। অগ্রজদের সাথে এই আড্ডাতে বেশির ভাগ সময় আমি ছিলাম মুগ্ধ শ্রোতা। কারণ আমি ফকরুল স্যার, মোহিত স্যার ও আশরাফ স্যারের ছাত্রদের ছাত্র। ওনাদেরকে শুধু রসিকতা করে বলতে পেরেছিলাম আমি আপনাদের পোতা ছাত্র। কিন্তু ভেতরে জমে থাকা আরো অনেক কথার একটিও বলতে পারি নি সেদিন প্রিয় কবি খোন্দকার আশরাফ হোসেনকে। এমন আড্ডায়ও আমি যেন জড়সড় হয়ে আসছিলাম। হয়তো ভয়ে অথবা ভালোবাসা আর শ্রদ্ধায়। ঐ চায়ের আড্ডায় কেটেছিল অনেকটা সময়। সুখকর এমন অনুভূতি আগে কখনোই স্পর্শ করেনি আমাকে।

কবিতার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আমি আশাবাদী এবং কবিতা বাদে আর যত কিছু আছে, সব কিছু সম্পর্কে নৈরাশ্যবাদী এমন ভাবনার কবিতা ঈশ্বর বছর ঘুরতে না ঘুরতেই সেই আষাঢ়ের হাতছানিতে আত্মসমর্পণ করলেন। দৃষ্টির সকল স্তর ছিন্ন করে কাদামাখা পা ধুয়ে স্নান সারার পাঠ চুকিয়ে তিনি চলে গেলেন অন্য আড়ালে। যেখানে একবারই পৌছানো যায় আর ফিরে আসা যায় না...

যখনই খোন্দকার আশরাফ হোসেনÑএর কবিতা পাঠে মনোনিবেশ করি, মনে পড়ে তার ভীষণ গাম্ভীর্যের চিন্তাশীল মুখাবয়ব, বনমহুয়ার আশ্রয় খোঁজা দুটি চোখ আর মনে পড়েÑ তুমি কোকিলের বুক চিরে তুলে নিতে চেয়েছিলে গান/আমি প্রস্তুত ছিলাম না।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.