আমি কি ভুল করতে পারি ?

০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ২:১৩

আমি কি ভুল করতে পারি ? অবশ্যই পারি । ভুলতো মানুষ মাত্রই করে । কথায় আছেনা –to err is human ? সবাই একথা বলবে । সব মানুষই বলবে । তবে এটিই মুখের কথা । শতকরা একশত ভাগ মুখের কথা । মনের ভেতরের কথা কিন্তু ভিন্ন । সেখানে ‘আমিই বড় , আমিই নির্ভু্ল’ খোদাই করা আছে- সব মানুষের অন্তরে তা in-built জারি আছে । এটি মানুষের স্বাভাবিক বৈশিষ্ট । কেউ এ থেকে মুক্ত নয় । তবে এর থেকে মুক্তি অর্জন মানুষের জীবনের অন্যতম প্রধান মিশন ।



দুদিন আগে দেশের একজন প্রথম সারির বুদ্ধিজীবি ও শিক্ষাবিদ পত্রিকায় লিখেছেন , জীবন পরিক্রমার একপর্যায়ে তিনি বুঝতে পেরেছেন তিনিই সব ক্ষেত্রে সঠিক নন , ভুল তাঁরও হয় এবং অন্যরাও সঠিক হতে পারে । মনে হতে পারে কথাটি খুব সাধারন , তা হতে পারে , কিন্তু তাঁর মত একজন বুদ্ধিজীবির লেখায় এটি প্রকাশ পাওয়া নিঃসন্দেহে অসাধারন । কারন আমরা সাধারন মানুষরাই প্রায় ভুলের উর্ধ্বে ! পথে ঘাটে দেখুন না , রিক্সাওয়ালা-রিক্সাওয়ালা, দোকানদার-দোকানদার , ছাত্র-ছাত্র, শিক্ষক-শিক্ষক ইত্যাদি তুমুল মতবিরোধ ঝগড়াঝাটি মারামারি । আমিই ঠিক , তুই শালা ভুল । বিচার মানি তালগাছ আমার । এইতো অবস্থা ! তো আমরাই ভুল করিনা ! বুদ্ধিজীবি মহলতো করতেই পারেনা ।



অহম বা অহংকার হচ্ছে আমাদের সবচেয়ে প্রিয় অনুভব । সারা জীবন নানাবিধ প্রচেষ্টা ও কসরতে আমরা তা অতি যত্নে নির্মান করি । অথচ তা সর্বাধিক পরিত্যাজ্য । মানুষের ইহকাল ও পরকাল ধ্বংসের জন্য প্রধান দায়ী ।



আগুনের তৈরী জীন । আযাযিলও জীন । কিন্তু আযাযিলের জ্ঞান , আমল ও পূণ্যের কারনে মহান আল্লাহ তাকে নুরের তৈরী ফেরেশ্তাদের সর্দার বানিয়েছিলেন । তার ভেতরে দানা বেঁধেছিল অহংকার, তীব্র আত্মমর্যাদা বোধ । মাটির তৈরী ইনসানকে সে তাই রব্বুল আলামিনের হুকুম স্বত্তেও সেজদাহ করতে অস্বীকার করল । পরিণামে সে রুপান্তরিত হল ইবলিসে , বহিস্কৃত হল জান্নাত থেকে ।



আল্লাহ মানুষকে তেরী করেছেন মাটি দিয়ে । কিছু করতে চাইলে আল্লাহপাক শুধু বলেন ‘কুন’ অর্থাৎ ‘হও’ , আর তা হয়ে যায় । কিন্তু মাটি দিয়ে তৈরী করলেও মানুষকে তিনি শুধু ‘কুন’ বলে তৈরী করেননি । মানুষকে তিনি অত্যন্ত ভালবেসে কুদরতি হাতে তৈরী করেছেন । মানুষ স্বভাবে হবে মাটির মত নম্র বিনয়ী আর মরযাদায় সৃষ্টর সেরা জীব ।

পাক কোরআনে সুরা আলে ইমরানের ২৬ নং আয়াতে আল্লাহ রব্বুল আলামিন বলেছেন, যার মোটামুটি ভাবার্থ এমন, হে নবী আপনি বলে দিন, আমি যাকে ইচ্ছা রাজত্ব দান করি, যার কাছ থেকে ইচ্ছা রাজত্ব ছিনিয়ে নেই ; যাকে ইচ্ছা ইজ্জত দান করি , যাকে ইচ্ছা বেইজ্জত করি- আমি সকল বিষয়ে ক্ষমতাবান ।



সুতরাং রিজিক , রাজত্ব , ধন , জ্ঞান , ইজ্জত সব আল্লাহর দান । সকল প্রশংসা একমাত্র তাঁরই প্রাপ্য । অহংকারের একমাত্র এবং শুধুমাত্র হকদার তিনিই । আল্লাহু আকবার- তিনিই বড় আর বাকী সব ছোট । তাই যিনি বুদ্ধিজীবি এতে তাঁর নিজস্ব কোন কৃতিত্ব নেই ; যিনি বড় শিল্পপতি বা ব্যবসায়ী তাঁদেরও নিজস্ব কোন কৃতিত্ব নেই- বিন্দুমাত্র প্রশংসার হকদার নন তাঁরা ; তেমনি দিনমজুরের আর্থিক দুর্গতির জন্যও নিজস্ব ব্যর্থতা বা নিন্দার ভাগীদার সে নয় ।



এই সত্যানুভূতি হৃদয়ে ধারন ও লালনের মাধ্যমে অর্জিত হবে পার্থিব ও পারলৌকিক শান্তি ও কল্যাণ ।

০ টি +০/-০