নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ওয়াসীম সোবাহানের ভাবনা

ওয়াসীম সোবাহান চৌধুরী

ওয়াসীম সোবাহান চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

মেজর জেনারেল মঞ্জুরকে হত্যার আগের ঘটনাবলী ও প্রেসিডেন্ট জিয়ার মৃত্যুর কারন

০১ লা জুন, ২০১৭ রাত ৯:১২

.. ১৯৮১ সালের ১লা জুন দুপুরে সরকারের অনুগত সেনাসদস্যরা রাঙ্গুনিয়ায় ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের কাছের একটি পাহাড়ে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কবর খুজে পায়। এই কবর থেকে মৃতদেহটি তুলে একজন বিএনপি নেতার ( কোন কোন সুত্র অনুযায়ী সালাহউদ্দীন কাদের চৌধুরী) উপস্থিতিতে সনাক্ত করে চট্টগ্রাম সিএমএইচে নিয়ে যায় তারা। সেখান থেকে হেলিকপ্টারে করে তা ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। ১লা জুনই সংসদ ভবনে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়, প্রধানমন্ত্রী শাহ আজিজুর রহমান এর ইমামতি করেন। সার্কিট হাউসে হামলাকারী ১৬ জন আর্মি অফিসারই প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের উপর ক্ষিপ্ত ছিল কারন তিনি স্বাধীনতা বিরোধী শাহ আজিজুর রহমানকে প্রধানমন্ত্রী করেছেন এবং সালাহউদ্দীন কাদের চৌধুরীর মতো স্বীকৃত রাজাকারদের দলে নিয়েছেন। নির্মম পরিহাসের সাথে এই দুইজনই প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মৃত্যু পরবর্তী প্রধান দুইটি আবশ্যক কর্ম সম্পাদন করেন।

এর আগে ১৯৮১ সালের ৩১ শে মে রাতেই এটা পরিস্কার হয়ে যায় যে লেফটেন্যান্ট কর্নেল মতিউর রহমান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাহবুব, লেফটেন্যান্ট কর্নেল দেলাওয়ার ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফজলের অভ্যুত্থান ব্যর্থ হয়েছে। এটা বাস্তবে কোন অভ্যুত্থান ছিল না। এটা ছিল স্রেফ হত্যাকাণ্ড যার দায় মেজর জেনারেল আবুল মঞ্জুরকে নিতে হয়েছিলো কারন তিনি ছিলেন ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি।

এর সপ্তাহ খানিক আগে, ১৯৮১ সালের ২০শে মে, সেনা সদরে ফর্মেশন কমান্ডারস কনফারেন্সে ২৪ পদাতিক ডিভিশনের কম্যান্ডার মেজর জেনারেল আবুল মঞ্জুর অন্যান্য সিনিয়ার জেনারেলদের সামনেই প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সাথে তর্ক জুড়ে দিয়েছিলেন। উত্তেজিত মঞ্জুর বিএনপির কিছু নেতা, কর্মী ও কিছু সেনা কর্মকর্তার দুর্নীতির ফিরিস্তি তুলে ধরে প্রেসিডেন্টের কাছে জানতে চাইলেন কেন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। উপস্থিত সিনিয়ার জেনারেলরা কোন পক্ষেই জাননি সেদিন, তারা নীরব থেকেছিলেন। প্রেসিডেন্ট এতে হয়তো ভাবলেন অন্য কোন জেনারেল দেশের রাজনীতি নিয়ে মঞ্জুরের মতন এতো চিন্তিত নন। মঞ্জুর হয়তো ভাবলেন অন্য জেনারেলরা তাকেই নীরব সমর্থন দিলেন এবং প্রেসিডেন্টের উপর তারাও সন্তুষ্ট নন। পরদিন মেজর জেনারেল মঞ্জুর চট্টগ্রাম সেনানিবাসে ফিরে গেলেন এবং তার অধিনস্তদের মিটিং এর ব্যাপারে জানালেন। তার অধিনস্তরা বুঝে নিলো প্রেসিডেন্ট কোন প্রতিকার করবেন না। তারা হয়তো এটাও বুঝে নিলো যে তাদের এবার হার্ড লাইনে যেতে হবে।

এরও আগে ১৯৮১ সালের ২৫শে মার্চ সেনাবাহিনী দিবসে ( তখন আলাদা আলাদা ভাবে পালিত হতো ) ঢাকা অফিসার্স ক্লাবে এক অনুষ্ঠানে এসেছিলেন প্রেসিডেন্ট জিয়া। তিনি লনে হেটে হেটে কথা বলছিলেন সিনিয়র জুনিয়র অফিসারদের সাথে। দশবারো জন অফিসারের সাথে কথা বলার সময় একজন জুনিয়র অফিসার হঠাৎ করে প্রেসিডেন্ট জিয়াকে প্রশ্ন করে বসে “Sir, how could you make rajakar Shah Aziz the Prime Minister of our country?” জেনারেল জিয়া চটপট উত্তর দেন “Politics make strange bed fellows!” ভীড়ের মধ্যে থেকে অন্যএকজন বলে বসে “Sir you have to pay for it.”

এরও কিছু আগে ১৯৮০ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রেসিডেন্ট জিয়া ভাটিয়ারীতে অবস্থিত মিলিটারি একাডেমীকে এসেছিলেন পাসিং আউট প্যারেডে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন মেজর জেনারেল মঞ্জুর। প্যারেড শেষ হলে মঞ্জুর প্রেসিডেন্টকে অনুরোধ করেন সেনানিবাসে আসতে। তিনি বলেন “স্যার,উই নিড তো ডিসকাস সামথিং ইম্পরট্যান্ট”। প্রেসিডেন্ট রাজী হননা। বরং তিনি তার সামরিক সচিবকে নির্দেশ দেন হেলিকপ্টার মিলিটারি একাডেমীর ভেতরে আনতে। মেইক শিফট হেলি প্যাড বানানো হয় দ্রুতটার সাথে। প্রেসিডেন্ট ভাটিয়ারী থেকে সরাসরি ঢাকায় উড়ে যান। প্রেসিডেন্ট জিয়া ও মেজর জেনারেল মঞ্জুর একসময় খুব কাছের বন্ধু ছিলেন। একজন আরেকজন কে চিনতেন ভালো করে। প্রেসিডেন্ট জিয়ার হয়তো ক্ষীণ সন্দেহ ছিল যে সেনানিবাসে গেলে মঞ্জুর তার উপর চাপ প্রয়োগ করতে পারেন।

সেনাপ্রধান হিসাবে জিয়াউর রহমান নিরাপত্তার ব্যপারে যতটুকু সতর্কতা অবলম্বন করতেন, প্রেসিডেন্ট হবার পর তার ঠিক বিপরীতমুখি শিথিলতা চর্চা শুরু করেন তিনি। বিএনপি নেতারা, সাংবাদিকরা, সরকারী কর্মকর্তারা এবং সমাজের গন্যমান্য ব্যক্তিরা সহজেই তার কাছে পৌছতে পারতেন। হয়তো এটা তার সামরিক কর্মকর্তা থেকে বেসামরিক রাজনীতিবিদে পরিবর্তন হবার প্রচেস্টার অংশ ছিল। কিন্তু মারা যাবার দিন রকেট লাঞ্ছার আর মেশিনগানের আওয়াজে তার বুঝে যাওয়ার কথা যে সার্কিট হাউস আক্রান্ত হয়েছে। তিনি নিজেই কক্ষ থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন। কেন বেরিয়ে আসলেন? বারান্দা দিয়ে নিচে লাফিয়ে পরলেন না কেন? অথবা ঘরেই লুকিয়ে থাকলেন না কেন? হয়তো ভেবেছিলেন হামলাকারীরা তখনো সার্কিট হাউজের ভেতরে ঢুকেনি এবং গার্ড রেজিমেন্টের সদস্যদের নিয়ে তিনি এই হামলা সামলে নিতে পারবেন। হয়তো সদ্য ঘুম থেকে উঠে রিফ্লেক্ট রি-আকশনে তিনি বেরিয়ে এসেছিলেন।

৩১ মে চিটাগাং সার্কিট হাউসে ঢুকে লেফটেন্যান্ট কর্নেল মতিউর রহমান প্রথম সুযোগেই গুলি করে প্রেসিডেণ্ট জিয়াউর রহমানের মুখ ও শরীরের ডান পাশ ঝাজরা করে দেয়। প্রেসিডেণ্টের ঝাজরা দেহ মুখ-থুবড়ে পরে দরজার কাছে। চট্রগ্রামে বিএনপির উপদলীয় কোন্দল মিটাতে এসে জিয়াউর রহমান জাতীয় কোন্দল মিটিয়ে দেন ৩০ মে ১৯৮১ সালের ভোরে।

তথ্য সূত্রঃ
বাংলাদেশ: দি আনফিনিশড রেভল্যুশন, হিরোশিমা'জ শ্যাডো ও হোয়াই বসনিয়া?
লরেন্স লিফশুলৎজ

রহস্যময় অভ্যুত্থান ও গণফাঁসি
জায়েদুল আহসান, চর্চা প্রকাশন

বাংলাদেশ: রক্তাক্ত অধ্যায় (১৯৭৫-৮১)
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম. সাখাওয়াত হোসেন, পালক পাবলিশার্স

জিয়া-মঞ্জুর হত্যাকান্ড- এবং তারপর
এএসএম সামসুল আরেফিন

তিনটি সেনা অভ্যুথান ও কিছু না বলা কথা
লেঃ কর্নেল এম এ হামিদ, মোহনা প্রকাশনী

ক জেনারেলের নীরব স্বাক্ষ্য: স্বাধীনতার প্রথম দশক
মেজর জেনারেল (অব.) মঈনুল হোসেন চৌধুরী, বীর বিক্রম; মাওলা ব্রাদার্স

স্বাধীন বাংলার অভ্যুদয় এবং অতঃপর
কামরুদ্দীন আহমদ, নওরোজ কিতাবিস্তান

মঞ্জুরকে তড়িঘড়ি ‘হত্যাকারী’ হিসেবে প্রচার

জিয়া হত্যাকাণ্ড: কাফনে মোড়া নিষিদ্ধ অশ্র“বিন্দু জেনারেল মঞ্জুরকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছিল

মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আবুল মঞ্জুর বীর উত্তম হত্যাকান্ড

জিয়া হত্যাকাণ্ডে এরশাদের হাত রয়েছে: ফখরুল

মেজর মো. আবুল মঞ্জুর হত্যাকান্ড : প্রথম আলো প্রতিবেদ

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা জুন, ২০১৭ রাত ১১:২৪

চাঁদগাজী বলেছেন:


জেনারেল জিয়ার থেকে জেনে নিতে হবে, এসব লোকদের লেখার দাম আছে নাকি!

২| ০২ রা জুন, ২০১৭ সকাল ১০:৩৪

আততায়ী আলতাইয়ার বলেছেন: ১৯৮১ সাল, বন্দর নগর চট্রগ্রাম মহানগর বিএনপি তখন দুই ভাগে বিভক্ত। এক অংশের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন উপ-প্রধান মন্ত্রী জামাল উদ্দিন আহাম্মেদ , অন্য অংশের নেতৃত্বে ছিলেন ডেপুটি স্পিকার ব্যারিস্টার সুলতান আহাম্মেদ চৌধুরী।

২৬ মে ১৯৮১
রাষ্ট্রপতির ব্যাক্তিগত সচিব লেঃ কর্নেল মাহাফুজের পরামর্শে প্রেসিডেন্ট জিয়া নির্ধারিত রাজশাহী সফর বাতিল করে ২৯ মে ১৯৮১ তে চট্টগ্রাম সফরের সিডিউল করলেন।
এই দিন বিকালে জেনারেল এরশাদ অনির্ধারিত সফরে চট্টগ্রাম পৌঁছেন জেনারেল আবুল মঞ্জুরের সাথে মিটিং করার জন্য। তবে সেনাবাহিনীর পরিদর্শন বিভাগকে জানানো হয় Bangladesh Military Academy / বাংলাদেশ মিলিটারি এ্যকাডেমি পরির্দর্শনে যাচ্ছেন সেনা প্রধান, যদিও এই সফরে এরশাদ "বাংলাদেশ মিলিটারি এ্যকাডেমি"র ধারেকাছেও যান নি।
লেঃ কর্নেল শাজাহান( AA & QMG) উক্ত পরিদর্শন কর্মসূচী প্রচার করেন।
বাংলাদেশ মিলিটারি এ্যকাডেমি তে কমাড্যান্ট আ স ম ব্রিগেডিয়ার হান্নান শাহ্‌ সারাদিন অপেক্ষা করেন সেনা প্রধানকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য।

অন্যদিকে জেনারেল এরশাদ সকালে চট্টগ্রামে পৌঁছে, জেনারেল মঞ্জুরের অফিসে বেলা ১.৩০ মিনিট পর্যন্ত এক টানা বৈঠক করেন। এরপরে লাঞ্চ ব্রেকে অফিসার্স মেসে লেঃ কর্নেল মতির সাথে লাঞ্চ সারেন। সেখানে লেঃ মতি ব্যাতীত আর কেউ উপস্থিত ছিল না।
উল্লেখ্য লেঃ কর্নেল মতি ৩য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে এরশাদের অধীনে কাজ করেছিল।
লাঞ্চের পর এরশাদ পুনরাই জেনারেল মঞ্জুরের সাথে মিটিং এ বসেন। টানা ৫টা পর্যন্ত গোপন মিটিং সেরে এরশাদ সরাসরি পতেঙ্গা বিমান বন্দরের পথ ধরেন।
মুক্তিযোদ্ধা জেঃ মঞ্জুর এরশাদকে তাঁর লাম্পট্য এবং
রি-প্যাট্রিয়ট হবার কারণে বরাবরই অপছন্দ করতেন। অথছ সবাইকে অবাক করে এরশাদের সাথে একই স্টাফ কারে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত জেনারেল এরশাদকে পৌঁছে দেন মঞ্জুর।
তাদের এই মিটিং এ দ্বিতীয় কেও উপস্থিত না থাকার কারণে আলোচনার বিষয় বস্তু অপ্রকাশিত থেকে যায়। তবে অভিজ্ঞ জনেরা বলেন জিয়ার ওপর জেনারেল মঞ্জুরকে ক্ষুদ্ধ করার মূল কাজটি এইদিন এরশাদ করেছিলেন।

২৯ মে ১৯৮১
এই দিন প্রেসিডেন্ট জিয়া রাজনৈতিক বহর নিয়ে চট্টগ্রাম পৌঁছান । সেনা প্রধান এরশাদের নাম ছিল সফর সঙ্গী তালিকাতে।
এই দিন আরো একটি উল্লেখ যোগ্য ঘটনা ছিল , প্রেসিডেন্ট জিয়া চট্টগ্রাম পৌঁছানোর আগেই জেনারেল মঞ্জুরকে তাঁর কর্মস্থল ২৪ পদাতিক ডিভিশনের কামান্ড থেকে সরিয়ে ডিফেন্স সার্ভিসেস এন্ড স্টাফ কলেজে নিয়োগ দেওয়া হয়।
এই বদলি জেনারেল মঞ্জুরের ক্ষমতা ও প্রভাব হ্রাস করে দেবার জন্য যথেষ্ট ছিল।
এই বদলী আদেশের দুই বছর আগে, মঞ্জুর ছিলেন চিফ অব জেনারেল স্টাফস, এবং ডিফেন্স সার্ভিসেস এন্ড স্টাফ কলেজ টি, চিফ অব জেনারেল স্টাফস অফিসের অধিনে।
এবং এই বদলী আদেশের সময় চিফ অব জেনারেল স্টাফ ছিলেন মেজর জেনারেল নুরুদ্দিন যিনি জেনারেল মঞ্জুরের ৩ বছরের জুনিয়র।
অর্থাৎ, ডিফেন্স সার্ভিসেস এন্ড স্টাফ কলেজের কমান্ড্যান্ট হিসাবে জয়েন করলে জেনারেল আবুল মঞ্জুরকে তাঁর তিন বছরের জুনিয়র চিফ অব জেনারেল স্টাফ মেজর জেনারেল নুরুদ্দিনের অধীনস্থ হতে হতো।
খুব স্বভাবিক ভাবে জেনারেল মঞ্জুর এই বদলী আদেশে চরম অপমান বোধ করেন এবং ক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠেন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ওপর।
ধুর্ত জেনারেল এরশাদ চাচ্ছিলেনই , যেন জেনারেল মঞ্জুরকে প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলা যায়।
প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান যখন বিমানে , তখন কাটা ঘায়ে নুনের শেষ ছিটা দেন জেনারেল এরশাদ। ধুর্ত এরশাদ , জেনারেল মঞ্জুরকে ফোন করে বলেন যে প্রেসিডেন্ট চাচ্ছেন , জেনারেল মঞ্জুর প্রেসিডেন্টকে অভ্যর্থনা জানাতে এয়ারপোর্টে বা সার্কিট হাউজে না আসুক।
বদলী আদেশের অপমানের সাথে সাক্ষাৎ না করার আদেশ । চূড়ান্ত ভাবে জেনারেল আবুল মঞ্জুর দিকবিদ্বিক জ্ঞান শূন্য হয়ে পরেন।
তিনি সাথে সাথে ফোন দেন প্রেসিডেন্টের সামরিক সচিবকে এবং প্রেসিডেন্টের সাথে কথা বলতে চান। কিন্তু সামরিক সচিব মঞ্জুরকে জানান যে তিনি ভিন্ন কাজে ব্যাস্ত থাকার কারণে রাষ্ট্রপতির সাথে চট্টগ্রাম যাচ্ছেন না , মঞ্জুরকে প্রেসিডেন্টের অভ্যর্থনাতে উপস্থিত না হতে প্রেসিডেন্টের আদেশ সম্পর্কে তিনি কিছু শোনেন নি বলে জানান।

জেনারেল মঞ্জুর তখন সামরিক সচিবের কাছে পরামর্শ চাইলে সচিব বলেন প্রেসিডেন্ট যদি তাঁকে যেতে নিষেধ করেই থাকেন তবে তাঁর না যাওয়াই শ্রেয়।
প্রটোকল অনুযায়ী তিন বাহিনীর প্রধান , সিনিয়র সরকারি আমলা ও জিওসি বিমান বন্দরের রাষ্ট্রপতিকে স্বাগত জানাবার নিয়ম।
অন্যান্য সকলে প্রেসিডেন্টকে অভ্যর্থনা জানাতে এয়ারপোর্টে এ উপস্থিত থাকলেও জেনারেল মঞ্জুর দূর সেনানীবাসে রয়ে গেলেন। এক সময়ের সহযোদ্ধা ও অত্যান্ত শ্নেহভাজন জেনারেল আবুল মঞ্জুর যার সাথে জিয়ার কিছুটা মান অভিমান শুরু হয়েছে মাত্র, তাঁর দৃষ্টিকটু অনুপস্থিতি প্রেসিডেন্ট জিয়াকে স্বাভাবিক ভাবেই রুষ্ঠ করে তোলে। অন্য দিকে জেনারেল মঞ্জুর তীব্র অপমান ও কষ্টে তাঁরই প্রিয় প্রেসিডেন্ট জিয়ার কাছ থেকে থাকলেন প্রায় ১৪ কিলো মিটার দূরত্বে। দুজন মহান দেশ প্রেমিক সৈনিকের কেউ জানলো না কি কারণ , একে অন্যের প্রতি শুধু তীব্র ক্ষোভ ছুঁড়ে দিলেন। দু জনার কেউ বুঝলো না একজন কুটিল মন্ত্রের জেনারেল এরশাদ দুই মহান মুক্তিযোদ্ধার তীব্র ক্ষোভের আগুনে বারুদ ঠুকে দিলো। তাঁরা কেউ জানলেন না কি সীমাহীন ভূলে দুজনে ভোগ করতে যাচ্ছেন এক নিষ্ঠুর পরিণতি। যেখান থেকে আর কোনদিন ফিরে আসা যাবে না।
একদিকে মিথ্যা তথ্যে জিয়ার স্নেহ ভাজন জেনারেল মঞ্জুরের তীব্র অপমানবোধ অন্যদিকে ঘুণাক্ষরে কিছু না জেনে মঞ্জুরের অধিনায়ক প্রেসিডেন্ট জিয়ার অসন্তুষ্টি ...
আর কিছুক্ষণ পরেই ঘটে যাবে ইতিহাসের দুই মহান জানবাজ যোদ্ধার জীবনাবসান। যেখান থেকে ৬৮,০০০ গ্রামের বাংলাদেশকে বাঁচানোর জন্য তাঁরা কেউ আর ফিরে আসতে পারবেন না।।
বাংলাদেশের ইতিহাসে জেনারেল হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদ একজন জঘন্য কীটের বিষাক্ত বর্জ ব্যাতীত আর কিচ্ছু না। ইতিহাসের তামাটে মলাটে চরম ঘৃণিত মানুষের তালিকাতে প্রথম দিকেই থাকবে হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদ।

Zia: The Patriot - দ্যা প্যাট্রিয়ট Josip Broze Tito

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.