নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মানুষ যেখানে ঠেকে সেখান থেকেই শিখতে পারে

যদি তোর ডাক শোনে কেও না আসে তবে একলা চলোরে

ইয়ািসর অাহেমদ

জীবন মাএই যোদ্ধ

ইয়ািসর অাহেমদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি অসমাপ্ত গল্পের সমাপ্তি ( সত্য ঘটনা অবলম্বনে)

১১ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ৩:০০

ছোট বেলা থেকেই সবগুলো বোনই পড়াশুনায় খুবই ভাল। তিন বোনের মধ্যে সবার বড় লাকী ওর ছোট পাখি আর সবার ছোট জুঁই। লাকি সবার বড় তাই ছোটবেলা থেকেই সবার প্রতি ওর একটু বেশিই খেয়াল। মা কিছুটা মানসিক ব্যাধিগ্রস্ত, তাই মাঝে মাঝে তাকে সামলাতে হয়, লাকীকেই। বাবা সরকারি চাকরিজীবী ।

ক্লাস ফাইফ ও এইটে ট্যালেন্টপুল বৃত্তি পায় লাকি। ওর থেকে ৩ বছরের ছোট পাখি। সেও সমানে সমান। ইন্টারের শেষের দিক থেকে মামাতো ভাই দিপুর সাথে লাকির খুব ভাল সুসম্পর্কের শুরু হয়। ফ্যামিলির সবাই এটাকে খুব ভাল ভাবেই দেখত। দেখবে নাই বা কেন? দিপু ভারতের মাদ্রাস থেকে কম্পিঊটার সাইন্স এ মাস্টারস করে এসেছে। এখন সে কাকার ব্যবসা দেখাশোনা করছে ও বিভিন্ন সমাজ সেবামুলক কাজে নিয়োজিত রয়েছে।

এভাবেই চলছিল ওদের দিনগূলো। কিন্তু ২০০৩ সালের ১০ জুলাই সব কিছু যেন এলোমেলো করে দিয়ে গেল। লাকি তখন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ত। প্রায় দিনের মতো দিপু তার বাইকে করে যাচ্ছিল লাকীকে ক্লাস শেষে নিয়ে আসতে, পথি মাঝে তার একটা ফোন আশে একটা সময় কথা বলতে বলে সে রাস্তার মাঝে চলে আশে, আর ঠিক তখনই একটা সাদা মাইক্রো তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় রাস্তার ঠিক মাঝখানে এমন সময় একটা ট্রাক এসে তার একটা সাইডের ঊপর দিয়ে অতিক্রম করে......। ফলস্রতিঃ স্পট ডেড ।

লাকিসহ পরিবারের সবাই এ ঘটনায় স্তব্দ হয়ে যায়, কিভাবে সহ্য করবে দিপুর মা-বাবা । সবাইকে কাদিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেল ২৫ বছরের দিপু। তবে বাবাই হয়ত সব থেকে বেশি কস্ট পায় আর তাই তো এর ৫ মাস পরই বাবা চলে যায় সেই না ফেরার দেশে। লাকির এঙ্গেজমেন্ট হয়েছিল দিপুর সাথেই।

সময় চলে যায় তার নিজ গতিতেই, থেকে যায় শুধু সৃতি। লাকি ওর পড়াশোনা শেষ করে , এরই মাঝে ডিপার্টমেন্টের এর সব থেকে ক্লোজ ফ্রেন্ড বাপ্পির সাথে ভাল understanding হয়ে যায়। বাপ্পি লাকির পরিবারে সবার সাথেই সখ্য গড়ে তুলতে সক্ষম হয়। দিপুর ব্যাপারে সব কিছু ও আগে থেকেই জানত। আল্লাহ্‌র কি রহমত, বাপ্পি এত ভালো মনের একটা মানুষ, যে চেয়েছিল তার সব টুকু ভালবাসা দিয়ে দিপুর কস্ট ভুলিয়ে রাখতে। হয়ত সে ১০০ % সফল হয়েছিল এ ক্ষেত্রে। আর তাই তো কিছুদিন পরই পরিবারের সবার ও লাকির সম্মতিতে তারা বিবাহ সম্পন করে ।

এদিকে পাখির (লাকির ছোট বোন) বিয়ে হয়। দিপুর ছোট ভাইয়ের সাথেই। কিন্তু কিছু সমস্যা থেকেই যায়। পাখি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স শেষ করে একটি ভাল স্যাটেলাইট চ্যানেল এ নিউজ রিডারের চাকরি পায়। এভাবেই চলছিল দিনগোল ।

এবার ২০১৩। কি হবে? কি হবার ছিল? কেউ কি জানত? কেউ কি বুঝতে পেরেছিল?

২০১৩ মে মাসের প্রথম সপ্তাহে লাকির হটাত করেই টনসিলের সমস্যা দেখা দিল। আর তাৎক্ষনিক তার অপারেশন ও হল। কিন্তু সে ভাল হয়ে উঠলনা। তার জটলতা দিন দিন বেড়েই চলল। অবস্থা এতটাই খারাপ হতে লাগল যে, তাকে ভারতে নিতে বাধ্য পরিবার। সাথে গেল লাকির স্বামী বাপ্পি ও পাখির স্বামী । সেখানে গিয়ে ধরা পরল ডেঙ্গু, ৩ মাস চিকিৎসার পর সে খুব একটা ভাল হলনা। কিছুতেই কিছু হচ্ছিল না। এরপর নিয়ে আসা হল ঢাকার, নাম করা একটি প্রাইভেট হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা হল। দেখতে গেল, আত্মীয় স্বজন সহ সবাই। কতই বা বয়স এই মেয়েটির, সদ্য বিবাহ একটি মেয়ে। চোখ জুড়ে স্বপ্ন, নতুন জীবনের আহবান। সেখানে এই স্তব্দতা ও জড়তা কারো কাম্য নয়।

কিছুদিন পর তাকে আবারো নিয়ে যাওয়া হল ভারতে। সাথে গেল ছোট বোন পাখি ও স্বামী বাপ্পি। বাপ্পি এখন তার স্ত্রীর পাশে দাড়ানোর শক্তি টুকুও হারিয়ে ফেলল , লাকির কষ্ট দেখে সে পাগল প্রায় হয়ে গেল, সারাদিন সে মসজিদেই পরে থাকে । রমজান মাসে সে শুধু পানি আর খেজুর খেয়ে রোযা রাখল। অবশেষে লাকির ধরা পরল ব্লাড ক্যান্সার। রক্তের উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেল। লাঞ্চে ইনফেকশন ধরা পরল তার। মে ২০১৩ থেকে আগস্ট ২০১৩ এই ৪ মাসে একজন মানুষ কিভাবে নিঃশেষ হতে পারে কারো জানা ছিল না। হাসপাতালে যখন তার অন্তিম কাল ঘনিয়ে এলো সে মুহুর্তে তার পাশে থাকলো বোন ও স্বামী আর ডাক্তাররা সবাই পাশে নিরপায় হয়ে দাড়িয়ে থাকলো, কিছুই করার নেই তাদের। ওর একটা, একটা করে অঙ্গ অকেজো হতে লাগল। পাশে যন্ত্রে, সেসব নিশ্চুপ দর্শকের মতো দেখতে থাকলো সবাই। মৃত্যুর কাছে মানুষ কত অসহায় সেটার প্রমানই হচ্ছিল তখন। তবে আল্লাহ্‌ পাখিকে শক্তি দিয়েছিল সেখানে থেকে দেশের মানুষদের কাছে শেষ মুহূর্তের অবস্থা জানাতে ও দোয়া চাইতে ।

অবশেষে চলে গেল লাকি দিপুর দেশে আর দিনটি ঈদ উল ফিতরের দিন, অ্থাৎ ৯ আগস্ট ২০১৩। ঈদের আনন্দ বলে আর কিছু থাকলো না কারোর। চোখের পানি ফেলা ছাড়া আর কিছুই করার নেই আমাদের। গেল সবাইকে কাঁদিয়ে, বিদায় আর দেখা হবে না এ জীবনে। ২৭ বছরের ছোট্ট এ জীবন ছিল তার কেউ তা জানতে পারে নি, শেষ দিনের আগ পর্যন্ত।

কি হল জানলে ?

কিছুই না শুধু এক বুক কষ্ট আর কষ্ট ভরা এ পৃথিবী দেখা ছাড়া।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ৩:৪২

গ্রীনলাভার বলেছেন: :( :(

১১ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ৩:৫১

ইয়ািসর অাহেমদ বলেছেন: :(

২| ১১ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ৩:৫৭

দিকভ্রান্ত*পথিক বলেছেন: +++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++

১১ ই আগস্ট, ২০১৩ ভোর ৬:০৫

ইয়ািসর অাহেমদ বলেছেন: ধন্যবাদ

৩| ১১ ই আগস্ট, ২০১৩ সকাল ১১:৫২

ইরফান আহমেদ বর্ষণ বলেছেন: ++++++++


:( :( :(

২০ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ২:০৩

ইয়ািসর অাহেমদ বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.