নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি একটি পথ, আপনি চাইলে হেঁটে দেখতে পারেন....

জীয়ন আমাঞ্জা

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দর্শন হল হিসাব বিজ্ঞানের ডেবিট এবং ক্রেডিট । সবসময় যতখানি ডেবিট, ঠিক ততখানিই ক্রেডিট হয় । পরকালের হিসেব যা-ই হোক, এই ইহকালে আমরা ঠিক যেভাবে শূন্য হাতে পৃথিবীতে এসেছি, সেভাবে শূন্য হাতেই পৃথিবী ছেড়ে যাব । এটাই পৃথিবীর আবর্তনিক নিয়ম । অনেকে আমরা এটা বুঝতে ব্যর্থ হই ।আপনি কারো ক্ষতি করবেন তো আজ অথবা কাল আপনার ক্ষতি হবেই হবে । ভালো করলেও তার ফল আপনি জীবদ্দশাতেই পাবেন ।অনেকে দেখবেন রাস্তাঘাটে অযথা হোঁচট খায়, অসুখে ভোগে- এসব এমনি এমনি নয়, হয় এর অতীত, নয়তো ভবিষ্যৎ প্রসারী কোন কারণ আছে । যদি আপনি কারো ক্ষতি না করেন, তবে আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি, আপনার কোন ক্ষতি হবে না । কেউ চেষ্টা করলেও আপনার ক্ষতি করতে পারবে না ।শুদ্ধ থাকুন, শুদ্ধতার শুভ্রতাকে উপভোগ করুন । জীবন সুন্দর হবে ।আমি সবার মতের প্রতিই শ্রদ্ধাশীল।আশা করি আপনিও তাই।সৌজন্যবোধ ও মানবতার জয় হোক !

জীয়ন আমাঞ্জা › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি অপ্রকাশিত চিঠি

২৯ শে নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:৪৪



¯¯¯¯¯¯¯¯¯¯¯¯¯¯¯¯¯¯¯¯¯¯¯¯¯

ফুটপাতে মাঝে মাঝে পুরনো বই বিক্রেতা দেখতে পাওয়া যায় । আমি আমার বিশাল বই সংগ্রহের অনেকটা ওখান থেকেই যোগাড় করেছি । ওখানে বই ছাড়াও পাওয়া যায় বাহারী রঙের লেখার প্যাড এবং পুরনো অব্যবহৃত ডায়েরি ।



একবার একটা পুরনো ডায়েরি হাতে নিয়ে ভেতরে কিছু লেখা দেখতে পেলাম । গোপন কিছু জানার আশায় মনটা চনমনিয়ে উঠল । বইয়ের সাথে দরদাম করে ডায়েরিটাও কিনে নিলাম ।



ডায়েরিটাতে বেশিরভাগই খরচের তালিকা । আজ অমুককে দেওয়া হল এত, কাল অমুককে এত, অমুকের জন্য কাপড় ক্রয়, দৈনিক বাজার খরচ ইত্যাদি ইত্যাদি । খরচের তালিকায় ঘুরে ফিরে একটি নাম বারবার আসছিল "মোহনা" । মোহনার জন্য থ্রি পিস ক্রয়, মোহনার জন্য বই খাতা ক্রয়, মোহনাকে কোচিংয়ে ভর্তি, মোহনাকে গাড়ি ভাড়া প্রদান ইত্যাদি । রূপম নামের আরেকটি ছেলেকেও দেখা যাচ্ছিল । আর দেখা যাচ্ছিল "বাবা" নামক একটি এন্ট্রি । বোঝা যাচ্ছিল বাবাই সকল খরচের যোগান দাতা ।



দুইদিন পরপরই দুই হাজার— পাঁচ হাজার টাকা দিচ্ছেন উনি । আর ছেলে তা থেকে সংসারের জন্য ব্যয় করছে ।

ভাবলাম, লোকতো ভালই পয়সাওয়ালা । দিনদিন এত টাকা পায় কই !

অবসর মানুষের যত অহেতুক ভাবনা আর কি ।



এন্ট্রিগুলো দেখতে দেখতে ওখানকার মানুষগুলো কেমন যেন পরিচিত হয়ে উঠছিল আমার কাছে । কেমন যেন আপন আপন লাগছিল ওদের । কোনদিন মোহনাকে কম টাকা দেওয়া হলে খারাপ লাগত । বেচারি মেয়ে মানুষ, রাস্তা ঘাটে চলাফেরা করে, ওর জন্য একটু বেশি টাকাই দেওয়া দরকার ।



যে ছেলেটা হিসেব লিখছিল তার হাতের লেখা খুব চমৎকার । আমার ইংরেজি লেখার আঙ্গিকের চেয়ে ওরটা ভালো । দেখতে সমীহ লাগে ।



এভাবে পৃষ্ঠা ওল্টাতে ওল্টাতে হঠাৎ দেখতে পেলাম ভিন্ন কিছু ! একটা চিঠি ! এই নীরস হিসাব টুকে যাওয়া ছেলে একটি আবেগময় চিঠি লিখে রেখেছে সেখানে ! চিঠিটি ২৯/১২/২০০৭ এ লেখা ।

এ চিঠি পোস্ট হয়েছে বলে মনে হয় না ।



আহা ! যে মেয়েটির কাছে এই চিঠি লেখা, তার কাছে এটি পৌঁছনো খুবই জরুরি ছিল । তাই ভাবলাম চিঠিটি আজ এখানে পোস্ট করি । আমার অসংখ্য বন্ধু এবং অনুসরণকারীর মধ্যে এমনও তো হতে পারে যে সে মেয়েটিও আছে !



মেয়েটির নাম পদ্ম । বোধয় ছদ্মনাম । ছেলেটি লিখেছে—



//পদ্ম,

তোমার সামনে দাঁড়িয়ে চোখে চোখ রেখে এই কথাগুলো যে বলব, সে সাহস বা বিবেকহীনতা আমার নেই । আমি বড়ো অপারগ পদ্ম । আমি যে ভালোবাসা বুঝি না— তা নয় । মন আমারও আছে । ভালো আমারও বাসতে ইচ্ছে হত একসময় । তবে সে ইচ্ছের কবর হয়ে গেছে অনেক আগেই ।



তুমি অমাদের ফ্যামেলির অনেক কিছুই জানো । আমার বাবা এলাকায় পরম পুজনীয় । অসংখ্য দুস্থ পরিবারের ছেলেমেয়েদর তিনি সম্পূর্ণ নিজের খরচে বিয়ে দিয়েছেন । আমরা পাঁচ ভাই । অথচ আমার ভাইদের একজনও পারিবারিক অনুমতি সাপেক্ষে বিয়ে করতে পারেনি । সবাই-ই বিয়ে করেছে নিজ নিজ পছন্দে । বড়ো ভাই, মেজো ভাই এবং পরে সেজো ভাইও যখন একইভাবে নিজের মর্জিতে বিয়ে করে, তখন বাবা আর সইতে পারলেন না । তাঁর হার্ট অ্যাটাক হল । অনেক দিন হাসপাতালে ছিলেন তিনি । যখন তিনি আক্ষেপ করে বলেন, "এত এত ছেলেমেয়ের বিয়ে আমি নিজের খরচে দিলাম, অথচ নিজের গোয়ালই আমার ছাড়া গরুতে ভরা !" —তখন বড়ো অপরাধবোধে ভুগি আমি । খুব আক্রোশ হয় ভাইদের প্রতি ।



আমার পরিবারে আমিই সবচেয়ে শান্ত-শিষ্ট- অনুগত । আমি জানি, আমিই এখন তাঁদের ভরসা । আমার মুখের দিকেই তাঁরা তাকিয়ে আছেন । এমনকি বাবাকে আমি মায়ের কাছে এও বলতে শুনেছি যে, "আর সব কটা কুলাঙ্গার আমার মুখে চুনকালি দিলেও আমার রুহান কখনও এটা করবে না ।"



এত কিছুর পরে আমি আর কাউকে ভালোবাসার কথা ভাবি কোন সাহসে— বলো ?



তোমার প্রতি আমার যথেষ্ট সহমর্মিতা আছে, মমতা আছে পদ্ম । মমতা মানে বোঝ ?

—মমত্ব বোধ । মম মানেই হল নিজের । মম মানেই হল আত্মার । তুমি আমার এতটাই আপন পদ্ম । আমি তোমার সব কথাই জানি । জানি, তোমার কত কষ্টের জীবন । জানি, তোমার কত মমতার জন্য হাহাকার । খুব মায়া হয় পদ্ম তোমার জন্য । তাই আমি সবসময় তোমাকে আগলে রাখতে চেষ্টা করেছি । কিন্তু দেখ, এই স্নেহ কখনই প্রেম নয় । আমার মত এক হতভাগা পিতার সন্তানের পক্ষে ভালোবাসার কথা কল্পনা করাও পাপ ।



আমি চেষ্টা করেছি তোমার ভাই হয়ে থাকতে । আচরণে সবসময় সচেতন থেকেছি যাতে প্রেমের মত কোন অনুকম্পার অবকাশ কখনও না ঘটে । আমি তোমাকে বারবার সতর্কও করে দিয়েছি এ বিষয়ে ।

তারপরেও কেন তুমি এভাবে ভাবতে গেলে বলো ?



আমি জানি, পদ্ম, তোমার মত একটি মেয়েকে জীবন সঙ্গী হিসেবে পাওয়া অনেক সৌভাগ্যের । তুমি বিচক্ষণ, বুদ্ধিমতী । আবেগ মায়া মমতা আর সম্পর্কের মূল্য তুমি বোঝ । কিন্তু কী করব বলো ? আমি যে পিতৃদায়ে আবদ্ধ । আমি আমার আবেগের কারণে আমার পিতার মৃত্যুর কারণ হতে পারব না ।

তাছাড়া আমি পূর্ব হতেই সচেতন ছিলাম বিধায় আমার মনে কখনও তোমার জন্য প্রেম জাগেনি । আমি তোমাকে কখনও ওভাবে দেখিনি ।



তুমি জীবনে অনেক কষ্ট সয়েছ পদ্ম । তার প্রতিদান আল্লাহ তোমাকে দেবেনই । ধৈর্য ধর । আল্লাহ পাক রাব্বুল- আল- আ'মীনের ওপর আস্থা রাখ । নিশ্চয়ই আল্লাহ পরম করুণাময় ।

আল্লাহ হাফেজ ।//



এই হল চিঠি ।

চিঠি পড়ে ভাবলাম, আহা যদি মেয়েটিকে চিনতাম, তবে একটি ভালো পাত্র দেখে ওর বিয়েটা দিয়ে দিতাম । কারণ, আমি বুঝতে পারছি, মেয়েটা বড়ো সৌভাগ্যবতী ।



Repost from, Sep 13



☀পুনশ্চঃ—

এই চিঠি ফেইসবুকে প্রকাশের পরে ভাবলাম, এমনও তো হতে পারে যে চিঠিতে না বলে রুহান সরাসরি কথাগুলো মেয়েটাকে বলেছে !

কিংবা এই এত বছর পরে কেমন আছে ছেলেটি আর মেয়েটি ?

মেয়েটি কি শেষে অন্য কোথাও বিয়ে করেছে ?

কেমন আছে মোহনা ?

সে কি এখন কোন ভার্সিটিতে চান্স পেয়েছে ?



আমি সবগুলো উত্তরই এতদিনে বের করেছি । ছেলেটি শেষে মেয়েটিকেই বিয়ে করেছে । তারা সুখে আছে ।

মোহনা এবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হতে অনার্স ফাইনাল দেবে ।

আর হ্যাঁ, ছেলেটির বাবা.. না থাক ।



সবাই ভালো আছে । ভালো থাকুক সবাই । ♥

দেয়ার শুড বি আ হ্যাপি এন্ডিং ।



♣ সূত্র:— ডায়েরির এক জায়গায় একটি টেলিফোন নম্বর ছিল । ছেলেটির কোন এক আত্মীয়ের ।

অনেক ঝক্কিঝামেলা আর কৈফিয়ত শেষে সব তথ্য পেয়েছি । :-)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.