নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি একটি পথ, আপনি চাইলে হেঁটে দেখতে পারেন....

জীয়ন আমাঞ্জা

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দর্শন হল হিসাব বিজ্ঞানের ডেবিট এবং ক্রেডিট । সবসময় যতখানি ডেবিট, ঠিক ততখানিই ক্রেডিট হয় । পরকালের হিসেব যা-ই হোক, এই ইহকালে আমরা ঠিক যেভাবে শূন্য হাতে পৃথিবীতে এসেছি, সেভাবে শূন্য হাতেই পৃথিবী ছেড়ে যাব । এটাই পৃথিবীর আবর্তনিক নিয়ম । অনেকে আমরা এটা বুঝতে ব্যর্থ হই ।আপনি কারো ক্ষতি করবেন তো আজ অথবা কাল আপনার ক্ষতি হবেই হবে । ভালো করলেও তার ফল আপনি জীবদ্দশাতেই পাবেন ।অনেকে দেখবেন রাস্তাঘাটে অযথা হোঁচট খায়, অসুখে ভোগে- এসব এমনি এমনি নয়, হয় এর অতীত, নয়তো ভবিষ্যৎ প্রসারী কোন কারণ আছে । যদি আপনি কারো ক্ষতি না করেন, তবে আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি, আপনার কোন ক্ষতি হবে না । কেউ চেষ্টা করলেও আপনার ক্ষতি করতে পারবে না ।শুদ্ধ থাকুন, শুদ্ধতার শুভ্রতাকে উপভোগ করুন । জীবন সুন্দর হবে ।আমি সবার মতের প্রতিই শ্রদ্ধাশীল।আশা করি আপনিও তাই।সৌজন্যবোধ ও মানবতার জয় হোক !

জীয়ন আমাঞ্জা › বিস্তারিত পোস্টঃ

মুখোমুখি বসিবার বনলতা সেন

১০ ই মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৫:১৪



রবীন্দ্রনাথের লেখার সংখ্যা মোট যতগুলো তার সবটা কি আমরা জানি ?

শরৎচন্দ্রের দেবদাস, পল্লীসমাজ, দেনাপাওনা, শেষের পরিচয় ইত্যাদি আট দশটি রচনা ছাড়া আরগুলোর নাম কি আমরা মনে রেখেছি ?

হুমায়ূন আহমেদের কয়টি বইয়ের নাম আমরা জানি আসলে ?



আসলে, লেখকের সব লেখা যুগ যুগ ধরে টেকে না । দুয়েকটি মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে মাত্র, আর বাকিগুলো হারিয়ে যায় কালের গর্ভে । এটা অবশ্যম্ভাবী ।



আমাদের অনবদ্য কবি জীবনানন্দ অন্য সব কবিতার আভা হারাতে হারাতে এখন কেবল বনলতা সেনকে সম্বল করে দাঁড়িয়ে আছেন ! নিঃসন্দেহে এটা অবিচার, এরকম কথা বলাটাও কষ্টের । জীবনানন্দের সাহিত্যকর্মের প্রত্যেকটিই ব্যাপক গুরুত্ববহ এবং হৃদয়স্পর্শী মশলাদার । তাঁর একটি রচনাকেও বাদ দেয়া চলে না । তবুও আমি বলছিলাম বর্তমান পরিস্থিতির কথা ।



যাইহোক, বাংলা ভাষার কবিতার ইতিহাসে সর্বাধিক উজ্জ্বল এই বনলতা সেন কবিতা নিয়ে আজ মজার কিছু বলব । কবিতাপ্রেমী এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর যে বনলতা পড়েনি । কিন্তু এই বনলতাকে চেনেন কি ? →





শেষ হল জীবনের সব লেনদেন

বনলতা সেন ।

কোথায় গিয়েছ তুমি আজ এই বেলা

মাছরাঙা ভোলেনি তো দুপুরের খেলা

শালিখ করে না তার নীড় অবহেলা

উচ্ছ্বাসে নদীর ঢেউ হয়েছে সফেন

তুমি নাই বনলতা সেন ।



তোমার মতন কেউ ছিল কি কোথাও ?

কেন যে সবের আগে তুমি চলে যাও ।

কেন যে সবের আগে তুমি

পৃথিবীকে করে গেলে শূন্য মরুভূমি

(কেন যে সবার আগে তুমি)

ছিঁড়ে গেলে কুহকের ঝিলমিল টানা ও পোড়েন

কবেকার বনলতা সেন ।

কত যে আসবে সন্ধ্যা প্রান্তরের অকাশে

কত যে ঘুমিয়ে রবো বস্তির পাশে

কত যে চমকে জেগে উঠব বাতাসে,

হিজল জামের বনে থেমেছে স্টেশনে বুঝি রাত্রির ট্রেন,

নিশুতির বনলতা সেন ।♣



কেমন লাগল এই কবিতা ? উদ্ভট, অদ্ভুত, বানোয়াট আর কেমন যেন অপূর্ণ আনাড়ী তাই না ?



আচ্ছা, তবে আরেকটি লিখে দেখাই,





আমরা মৃত্যুর থেকে জেগে উঠে দেখি

চারিদিকে ছায়াভরা ভিড়

কুলোর বাতাসে উড়ে ক্ষুদের মতন

পেয়ে যায়— পেয়ে যায়— অণুপরমাণুর শরীর



একটি কি দুটো মুখ— তাদের ভিতরে

যদিও দেখিনি আমি কোনোদিন— তবুও বাতাসে

প্রথম গার্গীর মতো— জানকীর মতো হয়ে ক্রমে

অবশেষে বনলতা সেন হয়ে আসে ।♣



বেশি প্যাঁচানো তাই না ? বেশি উপমার ঢঙ মনে হয় ?

আচ্ছা, তবে এইটি দেখুন—





বনলতা সেন, তুমি যখন নদীর ঘাটে স্নান করে ফিরে এলে

মাথার উপরে জ্বলন্ত সূর্য তোমার,

অসংখ্য চিল, বেগুনের ফুলের মতো রঙিন আকাশের পর আকাশ

তখন থেকেই বুঝেছি আমরা মরি না কোনোদিন

কোনো প্রেম কোনো স্বপ্ন কোনোদিন মৃত হয় না

আমরা পথ থেকে পথে চলি শুধু— ধূসর বছর থেকে ধূসর বছরে—

আমরা পাশাপাশি হাঁটতে থাকি শুধু, মুখোমুখি দাঁড়াই :

তুমি আর আমি

কখনও বা বেবিলনের সিংহের মূর্তির কাছে

কখনও বা পিরামিডের নিস্তব্ধতায়

কাঁপে তোমার মাদকতাময় মিশরীয় কলসী

নীল জলের গহন রহস্যে ভয়াবহ

মাথার উপর সকালের জ্বলন্ত সূর্য তোমার, অসংখ্য চিল,

বেগুনফুলের মতো রঙিন আকাশের পর আকাশ ।♣



আরো আছে, এটি দেখুন—





হাজার বছর শুধু খেলা করে অন্ধকারে জোনাকির মতো ।

চারিদিকে পিরামিড— কাফনের ঘ্রাণ :

বালির উপরে জ্যোৎস্না— খেজুর ছায়ারা ইতস্তত

বিচূর্ণ থামের মতো এশিরিয় দাঁড়ায়ে রয়েছে মৃত ম্লান ।

শরীরে মমির ঘ্রাণ আমাদের— ঘুচে গেছে জীবনের সব লেনদেন ।

'মনে আছে ?' শুধালো সে— শুধালাম আমি শুধু 'বনলতা সেন !'♣



ওপরে এই কবিতার অনুকৃতিগুলোর একটিও আমার নয়, প্রত্যেকটিই জীবনানন্দের লেখা । এরকম অসংখ্য খসড়া আর অজস্র সচেতন উপমা নিংড়ে অবশেষে নিতান্ত সহজ সরল করে সাদামাটা বঙ্গললনার মতো এতোদিন কোথায় ছিলেন ?— প্রাত্যহিক এই কথাটি বসিয়ে দিয়ে কবিতাটিকে বাঙালি প্রেমিক সমাজের আদর্শ প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে দিয়েছেন ।



জীবনান্দ ছিলেন বেজায় চাপা স্বভাবের । তাই কে এই বনলতা সেটা কখনও জানা যায়নি । তাঁর অজস্র খসড়া কবিতায় এবং করুবাসনা নামের একটি উপন্যাসে বনলতা সেনের উল্লেখ পাওয়া যায় । ধারণা করা হয়, বরিশালে প্রথম যৌবনে হয়তো কোনো নারীর প্রতি মুগ্ধ হয়েছিলেন কবি, যার নাম ছিলো 'বনলতা' অথবা খুবসম্ভব কবি নিজেই সেই প্রেয়সীর নামকরণ করেছিলেন বনলতা, আসল নামটি লুকিয়ে । আবার এমনও হতে পারে বনলতা কেবলই কল্পনাপ্রসূত মানসকন্যা— যার বাস্তব কোন অস্তিত্ব নেই । পরে 'সেন' উপাধি দিয়ে, নাটোর জেলার ঠিকানা জুড়ে কবি তাকে বিশেষ ও সুনির্দিষ্ট করেছিলেন । ইন্দ্রজাল বটে !



এ কবিতা নিয়ে ব্যঙ্গও করার দুঃসাহস করেছেন কেউ কেউ, এবং বলা হয়ে থাকে, এডগর এলান পো (১৮০৯-৪৯)'র To Helen কবিতাটির সুস্পষ্ট প্রভাব বিদ্যমান আছে এই বনলতা সেনে । সেখানেও কবি একইরকম সাগরে নগরে হেঁটে হেঁটে ক্লান্ত হয়েছেন । তবে বনলতা সেন কবিতায় জীবনানন্দ প্রেয়সীর প্রতি যে কল্পনা আর স্বাভাবিকতা দেখিয়েছেন, সেজন্য বিদেশী কবিতার আশ্রয় নিতে হবে এও আমার মানতে ইচ্ছে হয় না ।

Great men think alike! অনেক কিছুই তো এমন কাকতালীয়ভাবে মিলে যায়, যেতে পারে না ??



ধন্যবাদান্তে— Click This Link

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.