নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি একটি পথ, আপনি চাইলে হেঁটে দেখতে পারেন....

জীয়ন আমাঞ্জা

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দর্শন হল হিসাব বিজ্ঞানের ডেবিট এবং ক্রেডিট । সবসময় যতখানি ডেবিট, ঠিক ততখানিই ক্রেডিট হয় । পরকালের হিসেব যা-ই হোক, এই ইহকালে আমরা ঠিক যেভাবে শূন্য হাতে পৃথিবীতে এসেছি, সেভাবে শূন্য হাতেই পৃথিবী ছেড়ে যাব । এটাই পৃথিবীর আবর্তনিক নিয়ম । অনেকে আমরা এটা বুঝতে ব্যর্থ হই ।আপনি কারো ক্ষতি করবেন তো আজ অথবা কাল আপনার ক্ষতি হবেই হবে । ভালো করলেও তার ফল আপনি জীবদ্দশাতেই পাবেন ।অনেকে দেখবেন রাস্তাঘাটে অযথা হোঁচট খায়, অসুখে ভোগে- এসব এমনি এমনি নয়, হয় এর অতীত, নয়তো ভবিষ্যৎ প্রসারী কোন কারণ আছে । যদি আপনি কারো ক্ষতি না করেন, তবে আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি, আপনার কোন ক্ষতি হবে না । কেউ চেষ্টা করলেও আপনার ক্ষতি করতে পারবে না ।শুদ্ধ থাকুন, শুদ্ধতার শুভ্রতাকে উপভোগ করুন । জীবন সুন্দর হবে ।আমি সবার মতের প্রতিই শ্রদ্ধাশীল।আশা করি আপনিও তাই।সৌজন্যবোধ ও মানবতার জয় হোক !

জীয়ন আমাঞ্জা › বিস্তারিত পোস্টঃ

The Bedroom Of Mr. & Mrs. Amanza

(ভালোবাসা দিবসের গল্প)

১১ ই মার্চ, ২০১৪ সকাল ৯:৪৫



বেডরুম শব্দটার সঙ্গেই কেমন যেন এডাল্ট পুষ্পের প্রস্ফুটিত ঘ্রাণের পসরা মৌ মৌ করে এসে নাকে সুড়সুড়ি দেবার একটা দ্ব্যর্থহীন চক্রান্ত প্রকটাকারে লিপ্ত আছে।

কঠিন ভাষা হয়ে যাচ্ছে কি?

আচ্ছা সহজ করেই বলি।



এডাল্ট উপাদান আছে উল্লেখ করে যখন কোন লেখায় শুরুতেই সতর্কতা প্রচার করা হয় তখন ওই লেখায় সতর্কতা তো দূর, নিষিদ্ধ বাতাসার লোভে বয়স্ক কি অপ্রাপ্ত বয়স্ক সবাই উল্টো ঝাঁপিয়ে পড়ে গোপন বাসনার লেখচিত্র অন্বেষণে।

তাই কাউকে নিষেধ করি না, যার ইচ্ছে হয় পড়ুক।



তবে অতি উতসাহেরও কিছু নেই। এই বুড়ো আর বুড়ির বেডরুমে হানিমুনের উষ্ণতা খোঁজা নিঃসন্দেহে শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ বোকামি হবে।



জোয়ান বয়সে বেডরুমে অনেক অভিযানের জিনিস থাকলেও বুড়ো বয়সে থাকে ওয়াজিফা আর বাতের মলম।

আমাদের বুড়ো বুড়ির শোবার ঘরে আছে বেশ কিছু বই, বড়ো আয়নার একটি মান্ধাতা আমলের ড্রেসিং টেবিল। তিন বালিশের একটি সেকেলে পালঙ্ক, যার মধ্য বালিশটি নাতনীর জন্য বরাদ্দ হয়ে গেছে। আর হ্যাঁ, এ ঘরে আর যেটি আছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, তা হল প্রেম। আমি এই বুড়ো বয়সে নিঃসন্দেহে প্রেমের গল্পই বলতে চলেছি।



বিয়ের পর হতে এই এতগুলো বছরে বাসা পাল্টাতে হয়েছে কয়েকবার, তবে গিন্নী তার এই বেডরুম কোন এক অদ্ভুত উপায়ে প্রত্যেকবারই অবিকল সেই চিরচেনা পূর্ববত করে সাজিয়ে ফেলে। আমরা দুজনেই এদিক দিয়ে প্রাচীনপন্থী। পুরনো জিনিসের প্রতি আমাদের প্রচণ্ড মায়া।



গিন্নী সম্পর্কে অনেকবারই অনেক জায়গায় লিখেছি এবং আপনাদের বলেছি আমাদের প্রেমের গল্প, মান অভিমানের গল্পও বলেছি, কিন্তু গিন্নী সম্পর্কে আজকের মতো সরাসরি করে আগে কখনও বলার উদ্যোগ নিইনি।



বেডরুম নিয়ে যখন কথা আরম্ভ হল তখন একটু দুষ্টুমির গল্প বলা যেতেই পারে। বিয়ের পরপরই যেতে হয়েছিল কুমিল্লায় চাকরির সুবাদে। মাসে এক আধবার আসার সুযোগ পেতাম বাড়িতে। তো এক বিকেরে লুঙ্গির গোছা মুঠোয় ধরে বেশ বাবুয়ানা ঢঙে রাস্তায় বের হলাম। দিন ছিল হাট বার। বাজার চত্বরে ঘুরেফিরে সদায়পাতি কিনেছি অল্প বিস্তর, আর অমুক তমুকের সঙ্গে হরদম কুশল বিনিময় তো আছেই। বাজার শেষে বাড়ি ফিরছি, নিজেদের গেইটের সামনা সামনি আসতেই দেখা হল বাল্যবন্ধু জুয়েলের সাথে।



শালা, শুরু করলি কী? দিন রাত কিচ্ছু মানিস না নাকি?



এমন সরাসরি আক্রমণে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বললাম, কী হয়েছে?



ও বলল, বিয়ে করেছিস, তা এভাবে সিঁদুর মেখে দেখিয়ে বেড়াচ্ছিস যে বড়ো? লাজলজ্জা নেই রে, শালা?



আমি বোকা বনে গেলাম একদম। আমি পুরুষ মানুষ, সিঁদুর মাখব কেন? অজান্তেই একবার কপাল ঘষে দেখতে চেষ্টা করলাম।



ও হো হো করে হাসতে হাসতে বলল, শালা পাঠারাম, তোর তো সারা মুখে লিপস্টিকের দাগ। জলদি বাড়ি ঢুকে মুখ ধো গে!

বাজারে বোধয় ঢোল পেটাতে আর বাকি নেই।





আমাদের জুটি হয়েছে সোনায় সোহাগা। আমরা পরস্পরকে ক্বদাচিতই "ভালোবাসি" বলেছি এই দীর্ঘ দাম্পত্য জীবনে। ভালো যে বাসি তা কখনও ইউরোপীয়ানদের মতো সকাল বিকাল চকাস টপাস শব্দ করে বলতে হয়নি, অথচ ভালোবাসার প্রমাণ রয়েছে অজস্র, সারা সংসারময় আর স্মৃতির পুরোটাই জুড়ে।



উদাহরণ দেই, বিয়ের আগে মেয়েরা ঘুমায় একেবারে মরার মতো। আর ছেলেরা বিয়ের আগে শুয়ে শুয়ে ভেড়া গোণে, চালের ফুটোয় তারাও গোণে, এবং "একটি বৌ পাইলে কী না কী করা যাইত" এই অভিসন্ধির প্রস্তুতি করতে করতে রাত ভোর করে।



অথচ বিয়ের পর সেই ছেলেরাই শোয়া মাত্র ওপাশ ফিরে মোষের মতো ঘুমায়। আর মেয়েদের বিয়ের পরেই সব ঘুম উবে যায়। তারা রাতের পর রাত কান পেতে শুয়ে থাকে। ঘুমোয় বলে মনেই হয় না।



এই নিয়মের ব্যতিক্রম আমরাও ছিলাম না।

এক রাতে হঠাত ঘুম ভেঙে দেখি আমার মাথাটা বালিশ থেকে তুলে বুকে চেপে ধরে বসে আছে বেচারী। আমাকে জাগতে দেখেই যেন হুঁশ ফিরে আসে ওর! লাজুক মুখে মাথা গোজে তখন আমার বুকে।

হ্যাঁ, ভালোবাসা। ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ।



আপনারা কেমন ভালোবাসা পেয়েছেন? কতটুকুই বা পেয়েছেন? আমার মতো কেউ কি আছেন এমন ভাগ্যবান?



ভালোবাসা আমি পেয়েছি। লোক দেখানো নয়, মন বোঝানো নয়, আমাকে দেখিয়ে খুশি করার প্রচেষ্টাতেও নয়, অজান্তে অগোচরে আপনা হতে যে প্রেম উদ্ভাসিত হয় সেই তো পরম প্রাপ্তি, অতুল্য ভালোবাসা।

বোঝেননি, তাই না ?



যখন আমি ঘুমিয়ে পড়তাম তখন শুরু হত তার প্রেম নিবেদন, একা একা জেগে থাকত ঘুমন্ত আমিকে নিয়ে, ড্যাবড্যাবে চোখে আমাকে দেখত রাত জেগে জেগে, খানিক পরপর আমার কপালে নিজের ঠোঁট আলতো করে বসিয়ে মৃদু চুম্বন দিত, যেন আমি টের না পাই, যেন আমার ঘুম না ছুটে যায়। অজান্তের এই যে মুখচোরা ভালোবাসা এমনটা আপনারা কজনে পেয়েছেন?

সে আমাকে এতই নিখাদ করে ভালোবাসে যে আমাকে কখনও বুঝতেও দিতে নারাজ তার এই অসীম প্রেম, তার হৃদয়ের একান্ত অনুকম্পা। অথচ ওপরে ওপরে সে সবসময় একটা কঠিন মুখোশ পরে থাকে। কেবল আমার শাসনকারিনীই যেন সে।



ঘুমের ভান করে এই স্বর্গ বিজয়ের অমিয় অনুভূতি আমি অসংখ্য রাত অসংখ্যবার বুক ভরে নিঃশ্বাস টেনে খান খান হয়ে যাওয়া আনন্দে উপভোগ করেছি। নিজেকে সত্যিই তখন মনে হয়েছে এই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুখী মানুষ।



রবীন্দ্রনাথ হৈমন্তীকে যেমন বলেছিলেন, আমারও তেমনি বলতে ইচ্ছে করে, সে আমার সম্পত্তি নয়, সে আমার অমূল্য সম্পদ।



সৌন্দর্যের মূল্য হচ্ছে তার স্বীকৃতি, উচ্চ প্রশংসা; দূর দূরান্তাবধি তার সুখ্যাতি আর সহস্র কোটি মুগ্ধ দৃষ্টি। সৌন্দর্য বণ্টনে অধিক আস্বাদ্য উপভোগ্য হয়। একটি অসম্ভব সুন্দর পাখি আপনার চোখে পড়লে আপনি চাইবেন মানুষ ডেকে অমনি সেটা দেখাতে। আর যদি সে সৌন্দর্য এভাবে অন্য কারো সাথে ভাগাভাগি না করতে পারেন তবে আনন্দের বদলে সেটা আপনার জন্য উল্টো আক্ষেপ হয়ে দাঁড়াবে।

আর সৃষ্টিকর্তা আমাদের একমাত্র, সম্পূর্ণ একান্ত, অবণ্টনযোগ্য এবং অনবদ্য এক সৌন্দর্যের মালিক করে পাঠান, সেই সৌন্দর্য হচ্ছে আমাদের স্ত্রী। একান্ত, একান্তই নিজের।



সে আমার। শুধুই আমার। শুধুই আমার।



বুড়ো বয়সের প্রেম সম্পর্কে আর কী বলব। সঙ্কোচ জাগে, পাছে আপনারা আবার বেহায়া বলে বসেন। তবে হ্যাঁ, শরীর মরেছে অনেক আগে। মন এখনও জেগে আছে সেই প্রথম রাত্তিরের মতো। ঘুমের ঘোরে বুড়িয়ে যাওয়া আমার সেই রাঙা বৌটি এখনও বুকের মধ্যে এসে মুখ লুকোয়।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ৮:৪৭

তানভীরএফওয়ান বলেছেন: Pray 4 u. shune khub valo laglo.
Ajkal friend ra bole office e gele tader wife ra onner sathe berate jai....

১৩ ই এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ১২:০৪

জীয়ন আমাঞ্জা বলেছেন: আপনি যে সমস্যাটি বলেছেন, তা নিয়ে দুবার লিখেছিলাম । ভাবছি আবার পূর্ণাঙ্গ করে লিখব ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.