নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি একটি পথ, আপনি চাইলে হেঁটে দেখতে পারেন....

জীয়ন আমাঞ্জা

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দর্শন হল হিসাব বিজ্ঞানের ডেবিট এবং ক্রেডিট । সবসময় যতখানি ডেবিট, ঠিক ততখানিই ক্রেডিট হয় । পরকালের হিসেব যা-ই হোক, এই ইহকালে আমরা ঠিক যেভাবে শূন্য হাতে পৃথিবীতে এসেছি, সেভাবে শূন্য হাতেই পৃথিবী ছেড়ে যাব । এটাই পৃথিবীর আবর্তনিক নিয়ম । অনেকে আমরা এটা বুঝতে ব্যর্থ হই ।আপনি কারো ক্ষতি করবেন তো আজ অথবা কাল আপনার ক্ষতি হবেই হবে । ভালো করলেও তার ফল আপনি জীবদ্দশাতেই পাবেন ।অনেকে দেখবেন রাস্তাঘাটে অযথা হোঁচট খায়, অসুখে ভোগে- এসব এমনি এমনি নয়, হয় এর অতীত, নয়তো ভবিষ্যৎ প্রসারী কোন কারণ আছে । যদি আপনি কারো ক্ষতি না করেন, তবে আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি, আপনার কোন ক্ষতি হবে না । কেউ চেষ্টা করলেও আপনার ক্ষতি করতে পারবে না ।শুদ্ধ থাকুন, শুদ্ধতার শুভ্রতাকে উপভোগ করুন । জীবন সুন্দর হবে ।আমি সবার মতের প্রতিই শ্রদ্ধাশীল।আশা করি আপনিও তাই।সৌজন্যবোধ ও মানবতার জয় হোক !

জীয়ন আমাঞ্জা › বিস্তারিত পোস্টঃ

আদ্যিকালের কথা

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১:১০

মার বয়স কত— এ নিয়ে আমার বন্ধু তালিকার সবার মাঝে বিভিন্ন জল্পনা আছে । আমি অবশ্য সে বিষয়ে কোন স্পষ্ট ধারণা দেই না কাউকে । যে যেমন ভেবে সন্তুষ্ট হয়, হোক । আমি ধ্রুবক হয়ে থাকতে চাই যতদিন বেঁচে আছি । কোন বয়সের গঁতে আমি বাঁধা পড়তে চাই না ।

উল্লেখ্য যে, আমার প্রোফাইলে উল্লিখিত সালটি সঠিক নয়, তবে তারিখ এবং মাস সঠিকটাই বলা হয়েছে । আমার জন্ম পহেলা ফাল্গুন, বসন্তের প্রথম দিনে, যা আপনাদের ভ্যালেন্টাইন'স ডে'র আগের দিন । সেসব বিবেচনায় আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি । কী রকম ভাগ্যবান— তা অন্য কোন অধ্যায়ে বলব ।

আগে একবার আমার স্মৃতিশক্তির অতলস্পর্শিতার একটি ধারণা আমি দিয়েছিলাম এখানে । এবার আমি বলব আমার সেইসব আদিকালের স্মরনীয় এবং উল্লেখযোগ্য ঘটনার কথা । যা যা মনে পড়ে বলব, যা যা ফস্কে যাবে তা অন্য কখনও মনে পড়লে বলে দেব ।

ණ হাতে খড়ি:→
¯¯¯¯¯¯¯¯¯¯¯¯¯
আমার হাতে খড়ির ঘটনাটিকে আমি উল্লেখযোগ্য মনে করি । এর আগেরও কয়েকটি স্মৃতি জীবিত রয়েছে, তবে তা এ অধ্যায়ে আলোচ্য হবে না ।

আমার হাতে খড়ি হয়েছিল তাল পাতায় । তখনকার প্রচলিত বাঁশের কঞ্চি কেটে বানানো কলম দিয়ে পোড়া তুষের ভেজানো কালিতে কলম ভর্তি করে (অনেকটা ফাউন্টেইন পেন— এর মত) —তা দিয়ে তাল পাতায় লিখেছিলাম 'স্বরে— অ'।

এ যুগের ছেলেরা আবার তাল পাতাও চেনে না! যারা চেনে না তাদের চিনে নিতে অনুরোধ করি।

তাল পাতার চ্যাপ্টা অংশগুলো কেটে কেটে তা দিয়ে শ্লেট বা পত্র বানানো হত। প্রথম হাতে খড়ি দেন দাদা এবং দাদী । অনেক আত্মীয়- স্বজন সেদিন উপস্থিত ছিলেন । বাবা সেখানে ছিলেন না, তিনি ছিলেন শহরে। মা ছিলেন, তবে তার উপস্থিতি আর অবদান কোথায় কী ছিল— তা আজ আর স্পষ্ট মনে পড়ে না।

বিপুল উত্সাহে আমাকে দেখানো হচ্ছিল গোল মত গোল্লা খেঁড়ে তার পাশে ঢেঁকির মত ধর্না দিয়ে হয় 'স্বরে— অ'।

আমি অনায়াসে রপ্ত করে নিয়েছিলাম । দ্রুত রপ্ত করার এ গুণটি আমার ছিল এবং এখনও আছে।
তার পরে শিখে নিয়েছিলাম 'স্বরে— আ'।

☀ আমার মনে পড়ে, অনেকগুলো তাল পত্র ঢিপ দিয়ে রাখা থাকত বাম পাশে । আর থাকত একটা কালি ভর্তি কাঁসার বাটি । আমি একেকটি পত্র নিতাম, আর তাতে স্বর- ব্যঞ্জন বর্ণগুলো ডাগর ডাগর করে লিখে হেলান দিয়ে রাখতাম ঘরের দাওয়ায়, অপেক্ষা করতাম কালি শুকোনোর । চিক চিক করত ঢামিস ঢামিস বর্ণগুলো । আমার এখনও চোখে ভাসে !

© কয়েকদিন এটাই ছিল আমার কাছে বড় আমোদের খেলা, যেখানে আমার আর সকল চাচাত ভাইয়েরা ন্যাংটা পাছায় কাদা শুকিয়ে তা বয়ে বেড়াত আর খেলত । আমার বয়স ছিল তখন তিন এর কম । বলা বাহুল্য, আমি ছোটবেলা থেকেই অনেক ব্যতিক্রম ছিলাম ।

মাসখানেক না পেরুতেই বাবা এলেন । সাথে বিলিতি চক আর শ্লেট । পত্র মারফত তিনি খবর পেয়ে গেছেন যে, তাঁর ছেলের হাতে খড়ি হয়েছে; আর ছেলেটা এখন দিব্যি লিখতে পারে !

চক শ্লেট আনার পড়ে অবশ্য আমার লেখার উত্সাহ কমে গিয়েছিল, মন যে মজেছিল ঐ সনাতনী কায়দাতে ! আমার মনে হয়, সেই থেকেই আমার মানসে এই সনাতনকে আকড়ে ধরার প্রবৃত্তি বপ্ত হয় । ☺

যাইহোক, শ্লেট আনতে আনতে আমার লেখার হাত পেকে গিয়েছিল । ওতে তাই আর বেশি লিখতে হয়নি ।

♣ বিদ্যালয় গমন নিয়ে আরেকবার লিখব । এখন তা আরম্ভ করলে এ পোস্টে সংকুলান হবে না ।
এবারে সে সময়কার ছোট্ট আর দুইটি ঘটনা উল্লেখ করি—

☀ শ্রাদ্ধ ভোজ: →
¯¯¯¯¯¯¯¯¯¯¯
আমাদের বাড়ির পাশেই ছিল খাল । তার ওপারে থাকত মোশা'র মা । তার শ্বশুরের নাম ছিল 'আরোপ আলী' । থুত্থুড়ে বুড়ো । কুঁজো হয়ে লাঠিতে ভর দিয়ে হাঁটত ।

বয়স আমার তখন বড়জোর চার হবে । বেশী হবার জো নেই । আমরা ছোট ছোট ন্যাংটো ছেলেমেয়েরা ঐ খালে নাকের সর্দি পানি হয়ে ঝরা পর্যন্ত ডুবোতাম, আর লাঁফিয়ে পড়ার সময় চেঁচিয়ে বুড়োকে ভেঙাতাম,

"আরোফ আলি—
ডিম পাড়ে বারো হালি,
একটা ডিম নষ্ট—
আরোফালির কষ্ট !"

বুড়ো বেজায় রেগে যেত । লাঠি নিয়ে তেড়ে আসত মারতে । অবশ্য কখনও বাগে পেয়েও মারেনি, কিংবা পাছে গায়ে লাগে, বোধকরি এই বিবেচনায়, একটি ঢিলও ছোঁড়েনি কোনদিন । এত ভাল ছিল নিরীহ বেচারা !

সেই আরোপ আলী একদিন ঠুস করে মারা গেল ! আমরা ছেলেপেলেরা হতভম্ব । কাফন পড়ানোর আয়োজন দেখেছিলাম খালের এপার হতে । তার কয়দিন পরে জানি না, অনুষ্ঠিত হল আরোপ আলীর শ্রাদ্ধ । মুসলমানেরা সেকালে জেয়াফত, কুলখানি ইত্যাদি মুসলমানি শব্দের আমদানি করে উঠতে পারেনি হয়ত । গেলাম সেই শ্রাদ্ধে, বড় হালাদার বাড়িতে, উল্টা পাল্টা, কিংবা হয়ত ছেঁড়া বোতাম লাগানো কালো হলুদে ভাসা চেক জামা গায়ে ।

শ্রাদ্ধ বাড়িতে দেখি— সে কী ধুন্ধুমার কাণ্ড ! ও রে মানুষ ! অনেকে দক্ষিণ দিকটায় কেন জানি ভীড় করে দাঁড়িয়ে আছে । হয়ত কিছু একটা দেখার চেষ্টা করছে । সেদিকে আমাদের আগ্রহ ছিল না । শ্রাদ্ধ খেতে এসেছি শ্রাদ্ধ খাব, দেখাদেখির কাজ কী ?

সারি সারি মানুষ মাটিতে লেটকে বসা । আমরাও সে কাতারে জায়গা করে পাছা লেপ্টালাম । পালা করে সামনে দেয়া হল কলা পাতা । ওটাই ব্যবহৃত হচ্ছিল থালা হিসেবে । তখন তো আর আজকালের মত 'আল্লার দান' কিংবা 'মায়ের দোয়া' টাইপ ডেকোরেটর্স ছিল না । এতগুলো মানুষের থালা যোগাড় করার চিন্তাও কেউ করত না বোধকরি । সহজ রেওয়াজেই ব্যবহার করা হত গণহারে চতুর্ভুজ আকৃতিতে কাটা কলা পাতা ।

আমি জীবনে কলা পাতায় খাইনি । খুব আগ্রহ করেই সে পাতার থালাটি টেনে নিয়ে আত্মস্থঃ করলাম । এর পর সামনে দিয়ে খাদিমদারেরা হেঁটে যেতে যেতে পাতে ফেলতে লাগল ভাত, গাছআলুর ঝোল- শোল মাছ কি না মনে নেই । তবে, বোধকরি সেদিনের খাদ্য তালিকায় গোশত ছিল না । আবার থাকলেও থাকতে পারে । স্পষ্ট মনে নেই ।

পাতা গড়িয়ে সে ঝোল মাটিতে নেমে যেতে ব্যস্ত । তাই আমরা ঘপাত্ ঘপাত্ সে খাবার গলায় পুরতে শুরু করলাম ।

আরো মনে পড়ে, খাবারের শেষে শির্নী বাতাসাও দেয়া হয়েছিল । আমরা বুক পকেটে বাতাসা ভরে বাড়ি ফিরেছিলাম ।

☀ এই যা ! মাকাল ফল নিয়ে লিখব ঠিক করেছিলাম, কিন্তু জায়গা তো মরে গেল । ধুর, অন্য একদিন লিখব । আচ্ছা আপনারা সবাই চেনেন তো মাকাল ফল ?? অন্তত নামটা কি শুনেছেন— প্রবাদ বা বই পুস্তকে ??

প্রবাদটি হল,
"দেখিতে সুন্দর ফল,
আসলে মাকাল !"

আমার বিশ্বাস, এরচেয়ে সুন্দর ফল পৃথিবীতে আর একটিও নেই ।

Posted on Mar 20, 2013মার বয়স কত— এ নিয়ে আমার বন্ধু তালিকার সবার মাঝে বিভিন্ন জল্পনা আছে । আমি অবশ্য সে বিষয়ে কোন স্পষ্ট ধারণা দেই না কাউকে । যে যেমন ভেবে সন্তুষ্ট হয়, হোক । আমি ধ্রুবক হয়ে থাকতে চাই যতদিন বেঁচে আছি । কোন বয়সের গঁতে আমি বাঁধা পড়তে চাই না ।

উল্লেখ্য যে, আমার প্রোফাইলে উল্লিখিত সালটি সঠিক নয়, তবে তারিখ এবং মাস সঠিকটাই বলা হয়েছে । আমার জন্ম পহেলা ফাল্গুন, বসন্তের প্রথম দিনে, যা আপনাদের ভ্যালেন্টাইন'স ডে'র আগের দিন । সেসব বিবেচনায় আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি । কী রকম ভাগ্যবান— তা অন্য কোন অধ্যায়ে বলব ।

আগে একবার আমার স্মৃতিশক্তির অতলস্পর্শিতার একটি ধারণা আমি দিয়েছিলাম এখানে । এবার আমি বলব আমার সেইসব আদিকালের স্মরনীয় এবং উল্লেখযোগ্য ঘটনার কথা । যা যা মনে পড়ে বলব, যা যা ফস্কে যাবে তা অন্য কখনও মনে পড়লে বলে দেব ।

ණ হাতে খড়ি:→
¯¯¯¯¯¯¯¯¯¯¯¯¯
আমার হাতে খড়ির ঘটনাটিকে আমি উল্লেখযোগ্য মনে করি । এর আগেরও কয়েকটি স্মৃতি জীবিত রয়েছে, তবে তা এ অধ্যায়ে আলোচ্য হবে না ।

আমার হাতে খড়ি হয়েছিল তাল পাতায় । তখনকার প্রচলিত বাঁশের কঞ্চি কেটে বানানো কলম দিয়ে পোড়া তুষের ভেজানো কালিতে কলম ভর্তি করে (অনেকটা ফাউন্টেইন পেন— এর মত) —তা দিয়ে তাল পাতায় লিখেছিলাম 'স্বরে— অ'।

এ যুগের ছেলেরা আবার তাল পাতাও চেনে না! যারা চেনে না তাদের চিনে নিতে অনুরোধ করি।

তাল পাতার চ্যাপ্টা অংশগুলো কেটে কেটে তা দিয়ে শ্লেট বা পত্র বানানো হত। প্রথম হাতে খড়ি দেন দাদা এবং দাদী । অনেক আত্মীয়- স্বজন সেদিন উপস্থিত ছিলেন । বাবা সেখানে ছিলেন না, তিনি ছিলেন শহরে। মা ছিলেন, তবে তার উপস্থিতি আর অবদান কোথায় কী ছিল— তা আজ আর স্পষ্ট মনে পড়ে না।

বিপুল উত্সাহে আমাকে দেখানো হচ্ছিল গোল মত গোল্লা খেঁড়ে তার পাশে ঢেঁকির মত ধর্না দিয়ে হয় 'স্বরে— অ'।

আমি অনায়াসে রপ্ত করে নিয়েছিলাম । দ্রুত রপ্ত করার এ গুণটি আমার ছিল এবং এখনও আছে।
তার পরে শিখে নিয়েছিলাম 'স্বরে— আ'।

☀ আমার মনে পড়ে, অনেকগুলো তাল পত্র ঢিপ দিয়ে রাখা থাকত বাম পাশে । আর থাকত একটা কালি ভর্তি কাঁসার বাটি । আমি একেকটি পত্র নিতাম, আর তাতে স্বর- ব্যঞ্জন বর্ণগুলো ডাগর ডাগর করে লিখে হেলান দিয়ে রাখতাম ঘরের দাওয়ায়, অপেক্ষা করতাম কালি শুকোনোর । চিক চিক করত ঢামিস ঢামিস বর্ণগুলো । আমার এখনও চোখে ভাসে !

© কয়েকদিন এটাই ছিল আমার কাছে বড় আমোদের খেলা, যেখানে আমার আর সকল চাচাত ভাইয়েরা ন্যাংটা পাছায় কাদা শুকিয়ে তা বয়ে বেড়াত আর খেলত । আমার বয়স ছিল তখন তিন এর কম । বলা বাহুল্য, আমি ছোটবেলা থেকেই অনেক ব্যতিক্রম ছিলাম ।

মাসখানেক না পেরুতেই বাবা এলেন । সাথে বিলিতি চক আর শ্লেট । পত্র মারফত তিনি খবর পেয়ে গেছেন যে, তাঁর ছেলের হাতে খড়ি হয়েছে; আর ছেলেটা এখন দিব্যি লিখতে পারে !

চক শ্লেট আনার পড়ে অবশ্য আমার লেখার উত্সাহ কমে গিয়েছিল, মন যে মজেছিল ঐ সনাতনী কায়দাতে ! আমার মনে হয়, সেই থেকেই আমার মানসে এই সনাতনকে আকড়ে ধরার প্রবৃত্তি বপ্ত হয় । ☺

যাইহোক, শ্লেট আনতে আনতে আমার লেখার হাত পেকে গিয়েছিল । ওতে তাই আর বেশি লিখতে হয়নি ।

♣ বিদ্যালয় গমন নিয়ে আরেকবার লিখব । এখন তা আরম্ভ করলে এ পোস্টে সংকুলান হবে না ।
এবারে সে সময়কার ছোট্ট আর দুইটি ঘটনা উল্লেখ করি—

☀ শ্রাদ্ধ ভোজ: →
¯¯¯¯¯¯¯¯¯¯¯
আমাদের বাড়ির পাশেই ছিল খাল । তার ওপারে থাকত মোশা'র মা । তার শ্বশুরের নাম ছিল 'আরোপ আলী' । থুত্থুড়ে বুড়ো । কুঁজো হয়ে লাঠিতে ভর দিয়ে হাঁটত ।

বয়স আমার তখন বড়জোর চার হবে । বেশী হবার জো নেই । আমরা ছোট ছোট ন্যাংটো ছেলেমেয়েরা ঐ খালে নাকের সর্দি পানি হয়ে ঝরা পর্যন্ত ডুবোতাম, আর লাঁফিয়ে পড়ার সময় চেঁচিয়ে বুড়োকে ভেঙাতাম,

"আরোফ আলি—
ডিম পাড়ে বারো হালি,
একটা ডিম নষ্ট—
আরোফালির কষ্ট !"

বুড়ো বেজায় রেগে যেত । লাঠি নিয়ে তেড়ে আসত মারতে । অবশ্য কখনও বাগে পেয়েও মারেনি, কিংবা পাছে গায়ে লাগে, বোধকরি এই বিবেচনায়, একটি ঢিলও ছোঁড়েনি কোনদিন । এত ভাল ছিল নিরীহ বেচারা !

সেই আরোপ আলী একদিন ঠুস করে মারা গেল ! আমরা ছেলেপেলেরা হতভম্ব । কাফন পড়ানোর আয়োজন দেখেছিলাম খালের এপার হতে । তার কয়দিন পরে জানি না, অনুষ্ঠিত হল আরোপ আলীর শ্রাদ্ধ । মুসলমানেরা সেকালে জেয়াফত, কুলখানি ইত্যাদি মুসলমানি শব্দের আমদানি করে উঠতে পারেনি হয়ত । গেলাম সেই শ্রাদ্ধে, বড় হালাদার বাড়িতে, উল্টা পাল্টা, কিংবা হয়ত ছেঁড়া বোতাম লাগানো কালো হলুদে ভাসা চেক জামা গায়ে ।

শ্রাদ্ধ বাড়িতে দেখি— সে কী ধুন্ধুমার কাণ্ড ! ও রে মানুষ ! অনেকে দক্ষিণ দিকটায় কেন জানি ভীড় করে দাঁড়িয়ে আছে । হয়ত কিছু একটা দেখার চেষ্টা করছে । সেদিকে আমাদের আগ্রহ ছিল না । শ্রাদ্ধ খেতে এসেছি শ্রাদ্ধ খাব, দেখাদেখির কাজ কী ?

সারি সারি মানুষ মাটিতে লেটকে বসা । আমরাও সে কাতারে জায়গা করে পাছা লেপ্টালাম । পালা করে সামনে দেয়া হল কলা পাতা । ওটাই ব্যবহৃত হচ্ছিল থালা হিসেবে । তখন তো আর আজকালের মত 'আল্লার দান' কিংবা 'মায়ের দোয়া' টাইপ ডেকোরেটর্স ছিল না । এতগুলো মানুষের থালা যোগাড় করার চিন্তাও কেউ করত না বোধকরি । সহজ রেওয়াজেই ব্যবহার করা হত গণহারে চতুর্ভুজ আকৃতিতে কাটা কলা পাতা ।

আমি জীবনে কলা পাতায় খাইনি । খুব আগ্রহ করেই সে পাতার থালাটি টেনে নিয়ে আত্মস্থঃ করলাম । এর পর সামনে দিয়ে খাদিমদারেরা হেঁটে যেতে যেতে পাতে ফেলতে লাগল ভাত, গাছআলুর ঝোল- শোল মাছ কি না মনে নেই । তবে, বোধকরি সেদিনের খাদ্য তালিকায় গোশত ছিল না । আবার থাকলেও থাকতে পারে । স্পষ্ট মনে নেই ।

পাতা গড়িয়ে সে ঝোল মাটিতে নেমে যেতে ব্যস্ত । তাই আমরা ঘপাত্ ঘপাত্ সে খাবার গলায় পুরতে শুরু করলাম ।

আরো মনে পড়ে, খাবারের শেষে শির্নী বাতাসাও দেয়া হয়েছিল । আমরা বুক পকেটে বাতাসা ভরে বাড়ি ফিরেছিলাম ।

☀ এই যা ! মাকাল ফল নিয়ে লিখব ঠিক করেছিলাম, কিন্তু জায়গা তো মরে গেল । ধুর, অন্য একদিন লিখব । আচ্ছা আপনারা সবাই চেনেন তো মাকাল ফল ?? অন্তত নামটা কি শুনেছেন— প্রবাদ বা বই পুস্তকে ??

প্রবাদটি হল,
"দেখিতে সুন্দর ফল,
আসলে মাকাল !"

আমার বিশ্বাস, এরচেয়ে সুন্দর ফল পৃথিবীতে আর একটিও নেই ।

Posted on Mar 20, 2013

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৪:০২

করুণাধারা বলেছেন: টেবিল সাজিয়ে আপনাকে খেতে বসানো হল। দু তিনটি আইটেম প্লেটে দিয়েই আপ্যায়নকারী যদি সব খাবার পোটলা করে নিয়ে বিদায় হন তখন কেমন লাগে জানেন? ঠিক এখন আপনার এই পোস্ট পড়ে আমার যেমন লাগছে। পড়তে খুব ভাল লাগছিল, এভাবে শেয করলেন কেন?

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৩:৩১

জীয়ন আমাঞ্জা বলেছেন: এর পরের খণ্ড অবশ্য লিখিনি। উৎসাহ জাগানিয়া মন্তব্যের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.