নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দর্শন হল হিসাব বিজ্ঞানের ডেবিট এবং ক্রেডিট । সবসময় যতখানি ডেবিট, ঠিক ততখানিই ক্রেডিট হয় । পরকালের হিসেব যা-ই হোক, এই ইহকালে আমরা ঠিক যেভাবে শূন্য হাতে পৃথিবীতে এসেছি, সেভাবে শূন্য হাতেই পৃথিবী ছেড়ে যাব । এটাই পৃথিবীর আবর্তনিক নিয়ম । অনেকে আমরা এটা বুঝতে ব্যর্থ হই ।আপনি কারো ক্ষতি করবেন তো আজ অথবা কাল আপনার ক্ষতি হবেই হবে । ভালো করলেও তার ফল আপনি জীবদ্দশাতেই পাবেন ।অনেকে দেখবেন রাস্তাঘাটে অযথা হোঁচট খায়, অসুখে ভোগে- এসব এমনি এমনি নয়, হয় এর অতীত, নয়তো ভবিষ্যৎ প্রসারী কোন কারণ আছে । যদি আপনি কারো ক্ষতি না করেন, তবে আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি, আপনার কোন ক্ষতি হবে না । কেউ চেষ্টা করলেও আপনার ক্ষতি করতে পারবে না ।শুদ্ধ থাকুন, শুদ্ধতার শুভ্রতাকে উপভোগ করুন । জীবন সুন্দর হবে ।আমি সবার মতের প্রতিই শ্রদ্ধাশীল।আশা করি আপনিও তাই।সৌজন্যবোধ ও মানবতার জয় হোক !
আপনি একটা গ্রামে ঢুকলেন, ঢোকার পর যে জমিতেই পা রাখবেন, সেই জমিটাই মল্লিকের৷ ওই গ্রামের খুব কম জায়গাই অন্য বাসিন্দাদের৷ এতখানি প্রতিপত্তি যে মল্লিকের, তিনি কম বুদ্ধিমান মানুষ নন তা নিশ্চয়ই বলার অপেক্ষা রাখে না! এই মল্লিক মহাশয়ের পুরো নাম সুলতান মল্লিক৷ তিনি আমার মায়ের মামা৷ এটুকু পরিচয় দিলাম বিষয়টা বিশ্বাসযোগ্য করাতে৷
যাহোক, মল্লিক নানার বারান্দায় গ্রামের যাবতীয় সালিশ বিচার হয়৷ ছেলেবেলা হতে আমরা দেখে এসেছি, দুই পক্ষের শুনানি হয়, বারান্দার দেয়ালে চার কি ছয় ইঞ্চি সাইজের ছোট্ট জানালার মত আছে, সেই জানালার ফাঁক হতে ঘরের ভেতর থেকে আরো এক জোড়া চোখ পুরো সালিশ বৈঠকটা মন দিয়ে দেখেন৷ এই মানুষটি মল্লিক নানার স্ত্রী! শুনানি শেষে রায় দেবার পূর্বে মল্লিক নানা গলা খাঁকারি দেবেন, তারপর উঠে দাঁড়িয়ে বলবেন, আমি একটু ভেতর থেকে আসি!
এরপর নানা এসে নানীর সাথে ফুসুরফাসুর শুরু করেন, সে ফিসফাস বারান্দা থেকেও আঁচ করা যায়! নানীর সঙ্গে পরামর্শ শেষে তারপর নানা এসে সালিশের রায় দেন! এটা নিয়ে কাউকেই কখনও পরিহাস করতে দেখিনি!
এটুকু পড়ার পর আপনাদের কারো কি মনে হচ্ছে, লোকটা স্ত্রৈণ, বৌয়ের কথায় চলে, বা খাস বাংলায় যেটাকে বলে মাইগ্যা?
আপনাদের অনেকের মনে হতেই পারে৷ কিন্তু আমি এখানে একটা চরম সত্য দেখতে পাই, সত্যটা হল মেধার মূল্যায়ন৷ এখানেই বিষয়টা আর নারী পুরুষের ব্যাপার থাকছে না, এটা যোগ্যতার বিষয়, মেধার বিষয়! নানীর পরামর্শের যদি ওই বিচক্ষণতা না থাকত তাহলে নানা নিশ্চয়ই তাঁর পরামর্শ শুনতে ঘরের ভেতর প্রত্যেকবার আসতেন না৷
আপনি আরো অনেক পুরুষই দেখবেন আপনার চারপাশে, যারা বৌয়ের কথায় ওঠে বসে! বৌ শাশুড়ির প্রসঙ্গে যাব না, যেসব পুরুষ বৌকে মানেন, তাঁদেরকে আমি হাসির পাত্র করি না, আমি তাঁদের স্ত্রীদের সম্মান করছি এই কারণে যে, তাঁরা অবলা স্ত্রী বা সংসারের কেবল দাসী না হয়ে তাঁদেরও যে বোধজ্ঞান মেধা আছে সেটা সংসারে প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছেন৷ তাঁরা চাকরি করুন বা না করুন, তাঁরাও যে সহধর্মিণী হিসেবে স্বামীর সঙ্গে তাল মিলিয়ে চিন্তায় চেতনায় স্বামীকে সাপোর্ট দিতে পারছেন সেটাও কম জরুরি নয়! এখানেই সংসারটা দুজনার হয়! অন্যথায় সব সিদ্ধান্ত স্বামীর, সব দায় স্বামীর, সব বুঝ ব্যবস্থা স্বামীর— এমনটা হলে ওই স্ত্রী দাসী বা পুতুল বলে বিবেচিত হবেনই৷ এটা কোনো আন্দোলন দিয়ে পরিবর্তন করার উপায় দেখি না৷
একজন স্বামী তার স্ত্রীকে অবজ্ঞা করার সাহস পায়, যখন সে তার স্ত্রীকে অবলা পেয়ে বসে, যখন সে তার স্ত্রীকে দুর্বল, বুদ্ধিহীন ভাবতে সুযোগ পায়! বেগম রোকেয়া যে স্বামী স্ত্রী নামক দুই চাকাকে সমান হতে বলেছিলেন, সেটা এই সমান হওয়াকেই বুঝিয়েছেন৷ আমরা স্বামী স্ত্রী প্রতিযোগিতায় নামি, নারী পুরুষ প্রতিযোগিতায় নামি, আমরা পরস্পরকে সাপোর্ট দেবার কথা ভাবি না৷ এক স্ত্রী বারগেইন করছেন, তাঁর স্বামী পাশে দাঁড়িয়ে আছেন, কিছু বলছেন না৷ তখন স্ত্রীটি তাঁর স্বামীকে কাপুরুষ বললেন দেখলাম! স্বামীটি ঠাণ্ডা গলায় বললেন, তুমি তো তর্কে জিতছই, তোমাকে আমি এতটা দুর্বল বুদ্ধিহীন মনে করি না যে তোমার পক্ষে দাঁড়িয়ে জোর দিতে হবে, তুমি জিতছিলে বলেই তো চুপ ছিলাম! তুমি আটকালে আমার কথা বলার প্রয়োজন পড়ত৷
কিন্তু না, এই ইস্যুতেই তাঁদের আর সংসার টিকল না৷ স্ত্রীটি এই ভীতু দুর্বল স্বামীকে মানতেই পারলেন না আর! সমঅধিকারের এরকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও দেখা গেছে!
আমার বক্তব্য হয়ত এমন শোনাচ্ছে যে আমি কেবল নারীদেরকেই পুরুষকে সাপোর্ট দেবার কথা বলছি, যেটাও প্রচ্ছন্নভাবে পুরুষতান্ত্রিকতারই নিদর্শন! না, বোধ এতটাও হারাইনি৷ আপনার ছুটির দিন, আপনি সারা সপ্তাহ কাজ করে টায়ার্ড, তাই আপনি ছুটির দিনটা বিছানা থেকে নামতেই চাইছেন না! এমন দিনে আপনার যদি শোয়া থেকে এক ঘণ্টার মধ্যে দশবার উঠতে হয়, তখন খেয়াল করবেন আপনার কোমর ব্যথা করছে৷ আপনাকে যদি এক ঘণ্টায় আপনার দুই রুমে বিশবার আসা যাওয়া করতে হয় তখন টের পাবেন কতটা কাহিল লাগে আপনার! এই কাজটাই আপনার ঘরের মা অথবা স্ত্রীকে সারাদিনই করতে হয়! আমরা অযথাই মনে করি যে আমরাই শুধু পরিশ্রম করে দুনিয়া উল্টে ফেলছি! আপনার স্ত্রীকে একটা স্মার্টওয়াচ পরিয়ে দিয়ে দিনশেষে দেখবেন সারাদিনে তার কত স্টেপ হাঁটা হয়েছে আপনার এই দুই রুমের ঘরটুকুর মধ্যেই! উত্তর পেয়ে যাবেন৷ আর যাঁরা ছুটির দিনে ঘরের কাজে অংশ নেন, তাঁরা ইতোমধ্যেই জানেন যে ঘরের কাজেও কতটা ক্লান্তি, কতটা পরিশ্রম! অতএব, কে কত বেশি যোগ্য, কে কত বেশি অবদান রাখছে এসব প্রতিযোগিতায় না গিয়ে আপনারা একে অন্যের সহযোদ্ধা হন, একে অন্যকে আমরা পরিমাপ করতে যাই বলেই কে কার চেয়ে খাটো, কে বড়, কে বেশি যোগ্য এইসব চিন্তা আসে, পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা ফুরিয়ে যায়, সম্পর্কে ভাঙন আসে!
আমাদের চারপাশের ভাঙন এই প্রতিযোগিতার কারণেই৷ নারী দিবস পার হল, নারী আর পুরুষের মধ্যকার প্রতিযোগিতাটাও এখন বন্ধ হোক, নতুন সকাল শুরু হোক সংসার সমৃদ্ধ করার যোদ্ধাদের প্রতিজ্ঞা দিয়ে৷
শুভরাত্রি৷
২১ শে জুন, ২০২৪ বিকাল ৪:৫১
জীয়ন আমাঞ্জা বলেছেন: আমি যেটুকু বুঝি, আমার আপনার সিটের সামনে এসে কোন মহিলা যাত্রী দাঁড়ালে আপনি আমি সৌজন্যবশত সিট ছেড়ে দেই, আর সেখানেমহিলা সিটে গিয়ে বসছ তো বসছ, ডেকে তুলে দিতে হচ্ছে— এখানেই আমরা সভ্য চেতনার প্রশ্নে পিছিয়ে আছি৷
২| ১১ ই মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪
রাজীব নুর বলেছেন: ক্ষমতাবান মামা চাচা আর টাকা থাকলে মেধা লাগে না।
©somewhere in net ltd.
১| ১০ ই মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০
ধুলো মেঘ বলেছেন: সেদিন বাসে উঠে বসেছি। দেখলাম দুজন মহিলা উঠলো। তাদেরকে বসানোর জন্য হেলপার সামনের সীট থেকে দুজন পুরুষকে উঠিয়ে দিল। সাথে সাথে পেছন থেকে একজন খেঁকিয়ে উঠল, ঐ ব্যাটা, পুরুষ সীটে যখন মহিলারা বসে, তখন উঠাস না ক্যান? এইটা কেমন সমান অধিকার? তখন সীটে বসা একজন মহিলা বলে উঠল, এই বাসে পুরুষ সীট কোনটা আমারে দেখান। আমি সেইখানে বসবো। আপনে আইসাএখানে বসেন। ব্যস, লেগে গেল গন্ডগোল।