![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মধ্যবিত্ত পরিবারের ব্যাচেলর ছেলে!!! ফেসবুকঃ https://www.facebook.com/rajshahjahan
প্রেক্ষাপট ১-
সেদিন রাত্রে চক বাজার থেকে নীলক্ষেত আসার জন্য লেগুনার জন্য দাঁড়িয়ে আছি।বেশ খানিক টা সময় লাগলো লেগুনা পাইতে।রাত্রি বেশী হওয়ায় লেগুনার সংখ্যাও কম যাত্রী সংখ্যাও কম।উঠে বসে আছি।একজন মুরুব্বি বয়সের লোক মুখে সাদা দাঁড়ি মাথায় টুপি বেশ মায়াবী দৃষ্টি নিয়ে আমার সামনের সিটে মুখোমুখি বসা তার সাথে আরো একজন আছে একটু কম বয়সী একজন ছেলে।দুজনের কথা গিলা ছাড়া আমার আর তেমন কিছু করার ছিলনা।লেগুনার ওইটুকু যায়গা কারো কথা গিলার জন্য একেবারে ঢেলে সাজানো।
তাদের কথায় আমার মন বসতেছিলনা।এর দুইটা কারন তাহাদের একেবারেই পারিবারিক ব্যাবসা নিয়ে কথা বলতেছিল আর দ্বিতীয়ত তাহার উর্ধু অথবা হিন্দি ভাষায় কথা বলছিল।কারো পারিবারিক বিষয় নিয়ে মাথা গামানোর মতো সময় বা ইচ্ছা কোনটাই আমার ছিলনা আর দ্বিতীয়ত হিন্দি বা উর্ধুতে আমার দখল এতোটা ভালো নাহ।
তাহাদের কথা হা করে গিললাম।তারা মাঝে মাঝে বাংলা ভাষা ব্যাবহার করছে।মনে সাহস হইলো এইবার কিছু বলা যায়।
-কাকা কিছু মনে না করলে একটা কথা জিজ্ঞেস করার ছিল!!
-জ্বী বলিয়ে।
-আপনারা দুজন কি বাঙ্গালী?
-নাহ আমরা নবাব গঞ্জের।
(আমার জানামতে বাংলাদেশে একটা নবাবগঞ্জ আছে।কেরানীগঞ্জের কাছে যতদুর জানি)
-তা সেটা কি বাংলাদেশের বাইরে?
-হ্যাঁ আমার ভারত থেকে এসেছি। (পাশ কাটানো জবাব)
(আমি জানি নাহ ভারতে নবাবগঞ্জ নামে কোন জায়গা আছে কিনা।গুগল ম্যাপের কল্যানেও খুজে পাইনাই।)
উনাদের কথা যতটুকু বুঝেছিলাম তাতে মনে হয় নাই উনারা ওপার বাংলার।
প্রেক্ষাপট ২-
বেশ কিছুদিন আগের কথা আমি তখন প্রতিদিন ভিআইপি ২৭ বাসের প্রতিদিনের ভুক্তভোগী।এ এক দারুন অভিজ্ঞতার নাম বাস নাম্বার ২৭।দুইটা করুন জ্যামের ইতিহাস পার করতাম প্রতিদিন।আসার পথে মহাখালী উড়াল সেতুতে আর যাওয়ার সময় আড়ং এর সামনে।
যাওয়ার পথে কলাবাগান থেকে দুইজন ভদ্রলোক উঠলেন।বেশ জোরাজুরি করেই উঠতে হয় সবাইকে।সন্ধ্যার সময় ঢাকা শহর তার পূর্ণ রূপ পায়।একদিকে অসহনীয় যানজট অন্যদিকে ভ্যাপসা গরম।সহ্যের সীমা একেবারে অফুরন্ত আছে বলেই আমরা প্রতিদিন এভাবেই চলাচল করি।এই গরমেও ওই দুই ভদ্রলোক বেশ সতেজভাবে ফর্মাল ড্রেস পরে আছেন।অফিসের চাপ না থাকলে কি আর কেউ সাধ করে এমন চাপ নেয়।
উনাদের দেখে মায়া লাগছিলো। মনে মনে ভাবছিলাম জীবনে আর যাই করি না কেনো কোন মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে না।উনারা দুইজন হঠাত করে কথা বলা শুরু করলেন।
-ডু ইউ থিংক টুডে উই কেন রিচ ইন দা মিটিং ইন ডিউ টাইম?
-(তাচ্ছিল্যের হাসি সমেত) হেই ব্রো আর ইউ কিডিং মি?ইটস বাংলাদেশ।
আমার আর শুনার ইচ্ছা জাগে নাই।এরপর ভাসাভাসা যে শব্দগুলো কানে আসছিল তাতে আমার ছোটবেলায় পড়া ট্র্যাফিক জ্যাম নামক প্যারাগ্যারাপ অথবা কম্পজিশান কে খুব মনে করিয়ে দিতেছিল।
ইউ নো হ্যাফ্যাজার্ড পার্কিং,সিগন্যাল ক্রসিং,চেঞ্জিং রুট এক্সেক্ট্রা এক্সেক্ট্রা আমার মাথার উপর তালগাছ তোর নানীরে পাঠায় দিস।
বলি কি দাদা ইংরেজী প্র্যাকটিস করেন আর ওইটা আপনার প্রথম ভাষা বানান তাতে আমার কোন সমস্যা নাই।আমার সমস্যাটা হইল ওইগুলা পাবলিকলি না করলে আপনাদের চলে না। নাকি আপনারা দু চার অক্ষর ইংরেজী বলে নিজেদেরকে তথাকথিত আধুনিক হিসেবে জাহির করেন।
প্রথমে ভেবেছিলাম উনাদেরকে বলি, আপনারা কি লন্ডনের?? তা উনাদের প্যারাগ্যারাপ এর স্মৃতিচারণে আমি সেই অষ্টম শ্রেনীতে ফিরে যাওয়াতে তা আর বলা হয় নাই।তবে এরকম লোক থাকা দরকার যাদের কল্যানে মাঝে মাঝে একটু অতীতে ভ্রমণ করা যায়।
প্রেক্ষাপট ৩-
হিন্দি সিরিয়ালের এক ভয়াবহ দিকে এগিয়ে যাচ্ছি আমরা।আমাদের আশেপাশের বাচ্চাগুলো এখন ঠিক্টহাক মতো বাংলাটা বলতে না পারলেও হিন্দিতে বেশ পারদর্শী।
সেদিন এক আত্নীয়ের বাসায় গিয়েছি।শহুরে আত্নীয়।খুব বেশী যাতায়াত নাই বললেই চলে।সম্পর্কে উনি আমার ভাই হন।উনার একটা মেয়ে আছেন আমি জানতাম,তবে তাহার ২য় মেয়ের ব্যাপারে আমি একেবারেই জানতাম নাহ।অনেক দিন যোগাযোগ না থাকলে যা হয় আরকি।আমি কলিংবেল দিলে ছোট একটা মেয়ে দরজা খুলেই আমাকে জিজ্ঞেস করিয়া বসিল,
-আপ কন হে?
-(ধারনা করে নিলাম এই এঞ্জেলটা আমার সেই ভাইয়ের ২য় কন্যা)আমি তোমার কাক্কু হই, আব্বু বাসায় আছেন?
-নেহি পাপাতো নেহিহে লেকিন মাম্মিহে।
-(চটর চটর হিন্দিতে কথা শুইনা নিজেকে লজ্জিত মনে হচ্ছিল।সামলে নিয়ে বললাম) তোমার মাম্মিকে একটু ডাকো।
অনেক কথা হইল তাহার সহিত।বাংলায় কম হিন্দিতেই বেশী স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন এই ৫ বছরের ছোট বাচ্চাটি।তার বাবা মায়ের অবশ্যি তেমন দোশ নাই।মা আর বড় বোনটি একসাথে হিন্দি সিরিয়াল দেখেন ছোট বেলা থেকে সেগুলো গিলতে গিলতেই হিন্দি ভাষাটাও বেশ রপ্ত করে নিয়েছে এই বাচ্চা।
একবার ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করিতে চাহিয়াছিলাম যে, আপনারাতো সারাদিন দেশের সীমান্ত রক্ষায় নিজের জীবন বাজি রেখে চলেছেন তবে আপনাদের সন্তানেরা বা আমাদের প্রজন্ম মনে হয় আপনাদের কাছ থেইকা দেশ রক্ষা তো দূরে থাক দেশের ভাষা রক্ষা করার ট্রেনিংটিও পায় না? (আমার সেই সম্পর্কের আত্নীয়টি আমার ভাই হয়)সাহসের অভাবে আর তা বলা হয় নাই।
প্রেক্ষাপট ৪-
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক।আমাদের ভাষা যেখানে সব থেকে বেশী লাঞ্ছিত।বেশী অপমানিত।আমি নিজেও সারাদিন বাংলায় লিখতে পারি নাহ।ইংরেজী অক্ষরে বাংলা লিখি যাকে আমরা বাংলিশ বলি।অনেক সংক্ষেপে কথা সেরে নেই।অপরজন বুঝলেই মামলা খতম।এর থেকে বেশী আর কিছু লাগে নাহ।বা যাকে লিখছি সে বুঝলেই চলে।
বছর দুই আগের কথা।তখন মুরাদ টাকলা নামের পেইজটা এতো বেশী জনপ্রিয় হয় নাই বা আমার কাছে তখনও মুরাদ টাকলার পেজটা অপরিচিত।বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া আমার এক বান্ধবী একদিন রাত্রে তাহার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিল।আমি হোমপেইজে ঘুরতে ঘুরতে সেটি নজরে আসতেই কেমুন জানি লাগলো।একজন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া মেয়ে সে ঠিক মতো না লিখতে পারছে বাংলা না ইংরেজী।সব মিলিয়ে এক জগাখিচুরি অবস্থা।ইংরেজী ফ্রন্টে লেখা বাংলা শব্দগুলো তার অর্থ পরিবর্তন করিয়া কারো শুভেচ্ছা বার্তা না হইয়া শোক বার্তা হঊয়ার উপক্রম।
আমি ওইডার একটা স্ক্রিনশট নিলাম।বাংলায় এই মাইয়ারে নোবেল দেয়া যায় কিনা? এইরকম একটা ক্যাপশান দিয়া ছবিটা আপ দিলাম।এরপর বাকিটা ইতিহাস।(আমার পোস্ট ডিলেট করে দেয় লাগছিল )
না আমার কোন ইচ্ছে ছিলনা তাকে হেয় করার।কারন আমি নিজেও এতো বেশী ভালো বাংলা পারি নাহ বা ওইরকম একটা পোস্ট কে কুন ভাষায় লিখবে সেটা একান্তই তার ব্যাক্তিগত ব্যাপার।
না আমার বাংলা বাদে অন্য কোন ভাষার প্রতি অসুন্তষ্টি নাই তবে বাংলা ভাষার থেকে বেশী সম্মানও আমার ওইসব ভাষার প্রতি নাই।একেতো বাংলা আমাদের মাতৃভাষা আর এর থেকেও বড় কথা এ ভাষা আমাদের হয়েছে রক্তের দাগে।পৃথিবীর বুকে আমাদের গর্ভের কিছু না থাকলেও আমাদের ভাষা আছে যে ভাষার জন্যই আমরা একমাত্র জাতি যারা রক্ত দিতে পারি।আবেগটা একটু আমাদের বেশীই কাজ করে এই ভাষার প্রতি।
হ্যাঁ আপনি তাই বলে অন্য ভাষা শিখবেননা তা কি হয়?আপনার প্রয়োজন হইলে আপনে আরো দশ-বিশটা ভাষা শিখেন সেইসব ভাষাভাষী লোকদের সাথে কথা বলার সময় আমাদের ইতিহাস তাদের সহজে বুঝাইতে পারবেন, আপনার কাজ সহজ হব, আপনে এগিয়ে যাবেন এতে করে আমার কোন আপত্যি নাই।কিন্তূ আমার আপত্যি সে জায়গায় যে, আপনি আমার ভাষাকে একেবারে অবহেলা করিয়া নিজেতো ভাষা থেকে দূরে চলে গেছেনই আবার সাথে করে আপনার পরবর্তী প্রজন্মকেও এই ভাষা থেকে দূরে সরিয়ে ফেলছেন সেইখানে।
আপনার সন্তান চট চট করে ইংরেজী বলতে পারে, হিন্দি লিখতেও পারে এ আপনার গর্ভের বিষয়।এ নিয়ে আপনে গর্ভ করেন আর সেদিকটা বেমালুম ভুলে জান আর কটা দিন বাদে আপনার ছেলের কথা আপনে বুঝতে পারবেন নাহ।প্রশ্ন শুধু আপনার না বুঝারই না প্রশ্ন তাহলে লাভ টা কি হইলো যদি আমি আমার মাতৃ ভাষার মাধুর্যতা হারিয়ে ফেলি।হারিয়ে ফেলি এ ভাষা বহন করার মানুষকে।
আমাদের ভাষা নিয়ে দুইটা সমস্যা প্রথম টা আমরা নিজেদের ভাষাটাকে এতো বেশী অগ্রাধিকার দেই না আর দ্বিতীয়ত আমরা ইহার যাথা সাধ্য পরিবর্তন করিয়া ফেলছি সে যেখানেই হোক।এই সমস্যা দুইটা বহুদনের চেষ্টায় আমাদের মাঝে আসিয়াছে আবার তাহা যাইতেও সময় লাগিবে।একদিনে এ সমস্যা দুর হবার নয়।আমি আর আপনি চাইলেই কেবল এই সমস্যার সমাধান হবে।তো শুরু করা যাক।
(না এইডা ফেব্রুয়ারি মাস নাহ আর ২১শে ফেব্রুয়ারিও নাহ।তবুও কেনো এমুন লেখা?হুদাই লিখছি)
অনুরোধঃভাষার প্রতি আপনার ভালোবাসা টপকে যাক মাসের গন্ডি,কোন বিশেষ দিনের গন্ডি।ভাষা হোক সবসময়ের,বাংলা ভাষা।
(ভুলগুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন,ধরিয়ে দিবেন(তথ্যের ভুলগুলো ))
০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:৫০
শুন্য বাইট বলেছেন: রাত এখনও অনেক বাকী হিমু জেগে উঠতে সময় লাগবে যে
©somewhere in net ltd.
১|
০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:০৫
কবি এবং হিমু বলেছেন: লেখাটা পড়ে ভাল লাগলো।জানি আমাদের দৌড় এই ভাল লাগা পর্যন্তই আর না হয় একটা মন্তব্য।কিন্তু কাজের কাজ কিছু করবো না।আসলে আমিসহ আমরা কেবল পরিবর্তনের কথা বলি কিন্তু নিজ থেকে এগিয়ে আসার সাহসটা করতে পারি না।কবে আমাদের শুভবুদ্ধি উদয় হবে?