নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি কিন্তু কেউ না। সময়ে অসময়ে পাওয়া কতগুলো মিসকল শুধু। যে মিসকল হয়তো আপনার কাছের কেউ দিয়েছিল, কিংবা আপনার অপরিচিত। ভালো থাকুক আমার শত্রুরা আর সুস্থ থাকুক আমার প্রিয়জনেরা। - একটি মিসকল

একটি মিসকল

আমি একটি মিসকল, যেখানে আমি আমার নিজঃস্ব স্বত্তাকে পুরোপুরি নিজের ভাষায় প্রকাশ করার চেষ্টা করেছি, তবে সবার দৃষ্টিকোণ এক নয়। মানুষের চিন্তা/ধারনা পরিবেশ, সময়, স্থান, কাল, পাত্র ভেদে ভিন্ন রকম হতেই পারে! সবাইকে আমন্ত্রন, বিশেষত যারা আমাকে পছন্দ করেন না তাদেরকে।

একটি মিসকল › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি ঘটিতব্য গল্প

১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১:২২

রাত ১:৩০মিনিট। ঘুম আসছে না অবাকের, খুবই একা একা লাগছে। পরপর অনেকগুলো নিকোটিন চুষেছে তার আঙ্গুল। নীরাকে ফোন করবে করবে ভাবছিল, কিন্তু নীরা যদি ঘুমিয়ে থাকে? বা ফোনটা না ধরে? ফোন পিক না করলে অবাকের রাগ হয় খুব। তাই এতো ভাবা-ভাবি তার। নীরার উপর এই ব্যাপারটটা নিয়ে কোন রাগা-রাগি করতে চাচ্ছে না অবাক। অবাকের পুরো চিন্তা জুড়ে এখন শুধুই নীরা, নীরা কি করছে? ঠিক মত পড়া শেষ করেছিলতো? নাকি অন্য কিছু করছে? ঘুমিয়ে গেল নাতো আবার? নাকি শুভ্রর সাথে কথা বলছে? এতশত চিন্তা করে শেষ-মেশ ফোন করেই বসলো। কিন্তু অপর প্রান্ত থেকে ভেসে উঠলো রোবোটিক গলা, "ইউর কল ইজ নাউ ইন ওয়ে..." শুনতে না শুনতেই কেটে দিল অবাক। না আর ফোন দিবে না। নীরার খুব বাজে একটা স্বভাব ওয়েটিংয়ে থাকা অবস্হায় ফোন ধরে কনফারেন্স করে বসে। শুভ্র ছেলেটাকে অবাক একদমই দেখতে পারে না। যদিও নীরা শভ্রর সাথে প্রেম করে। নীরা অবাককে কিছু না জানিয়েই শুভ্রকে "হ্যাঁ" বলে দিয়েছিল। যা অবাক কখনো মেনে নিতে পারেনি। অবাক নীরার প্রতি যে দূর্বল তা বুঝতে পারে ঠিক সেই সময় যখন নীরা একটু বেশীই ওয়েটিংয়ে থাকতো। কিন্তু অবাক সে কথা নীরাকে আজও বলতে পারেনি। সেই সব পুরোনো কথা মনে করতে করতে অবাক একটু বেশী মন খারাপ করে বসে। আরেকটা সিগারেট ধরিয়ে বারন্দায় বসে থাকে কণকণে শীতের মাঝে। সিগারেটটা শেষ হতেই চুপচাপ রুমে ঢুকে টেবিলের ড্রয়ার খুলে পাঁচটা স্লিপিং পিল খুলে মুখে পুড়ে নিল। উদ্দেশ্য যেভাবেই হোক এখনই ঘুমাতে হবে। বেডে শুয়ে গানস্ এ্য্যন রোজেসের "নভেম্বর রেইন" গানটা শুনতে শুনতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লো টের পেল না।

সকালে ঘুম ভাঙ্গলো তার ১০:৩০ মিনিটে। এগারোটায় ক্লাস, কিন্তু মাথা ভনভন করছে, ঘুমের ঘোর এখনো একটু আছে। তারপরও উঠে বসে পড়লো, ফোনটাতে হাত দিতেই দেখে ২:১৫ থেকে ৩:০০ টা পর্যন্ত নীরার পুরো ৬৫টা মিসকল। আর দুইটা এস.এম.এসে মিলালে ম্যাসেজটা এরকম, "প্লিজ পিক আপ দ্যা কল। ইটস্ আর্জেন্ট। ৯টায় প্লিজ ক্যাম্পাসে থাকিস, অনেক জরুরী কথা আছে।" কিছু না বুঝে অবাক ফোন করলো নীরাকে কি হয়েছে জানতে। কিন্তু নীরার ফোন অফ। আনেক চিন্তায় পড়ে গেল। ফ্রেস না হয়েই ক্যাম্পাসে চলে গেল বেড থেকে উঠেই। পুরো ক্যাম্পাস খুঁজে নীরাকে পেল একটা গাছের নিচে শুভ্র তাকে শাসাচ্ছে। অবাককে দেখেই শুভ্র চুপ করে উঠে কোন কিছু না বলেই চলে গেল।
নীরা চোখ মুছছে। চোখগুলো ফুলে গেছে, গলার দিকটায় লাল হয়ে আছে বোঝাই যাচ্ছে শুভ্র হয়তো গলা টিপে ধরতে গিয়েছিল। ঘাড়ে আবছা রকমের আঁচড়ের দাগ, বোঝা যাচ্ছিল। অবাক এমন ভাব করলো যে সে কিছুই বুঝতে পারেনি এমন ভাব ধরেই বলে উঠলো,
:কিরে এ্যাতো জরুরী তলব কি হয়েছে রে?
:কিচ্ছু না এমনিতেই, দরকার নেই এ্যাতো লেট? নয়টায় আসার কথা ছিলনা তোর? (ভাঙ্গা গলায় বলে উঠলো নীরা)
:ঘুমিয়ে ছিলাম। কিছু বলবি? কেন ডাকলি? ফোনইবা অফ কেন তোর?
:চার্জ নাই মে বি।
:দেখি না তোর ফোনটা?
:কেন কি করবি? চার্জইতো নেই।
:কিছু না এমনিতেই।
:না দেখা লাগবে না।
:দিবি নাকি বল!!!
:এই নে।(ব্যাগ থেকে বের করে ফোনটা বাড়িয়ে দিল অবাকের দিকে)
:কি ব্যাপার তোর ফোনেতো চার্জ আছে আর ফোন ফ্লাইট মোডে কেন?
:ভালো লাগছিলো না তাই।
:ভালো লাগছিল না? নাকি লাগতে দেয়নি কেউ?
:মানে? কি বলতে চাচ্ছিস তুই?
:কিছু না। বলতে না চাইলে বলিস না, বাট লুকাতে পারোস না ভালো কথা। লুকানোর চেষ্টা করে কোন লাভ আছে?
:কি বলতে চাস তুই?
:কিছু না, বললাম মুখটা ভালো করে পানি দিয়ে ধুয়ে নে। আর ওড়নাটা ঠিক কর। আই মিন ভালো করে গলাটাতে পেঁচিয়ে নে। আর গলার সাইডের সেলাইটা একটু চেক কর। মনে হয় কিছু একটা বেজে গেছে। ( নীরার শরীরে শুভ্র হাত তোলার সময় নীরার লাল রঙ্গের আন্ডার গার্মেন্টস টা ভিতর থেকে দৃষ্টির সীমায় চলে আসে। তবে এই বলেই অবাক মাথা নামিয়ে নেয়।)
:ওহ ওটা তেমন কিছু না, সরি। মনে হয় বাসা থেকে বের হবার সময়...
:আর গলার লাল দাগ গুলো?
:ও ওটা? আর বলিস না, একটু এলার্জি হয়ে গেছে।
:পাঁচ আঙ্গুলের দাগের এলার্জি? থাক বাদ দে আমি যাচ্ছি। তোকে একটা রিক্সা ডেকে দিব?
:অবাক মিথ্যা গুলোর জন্য আমি সরি। হুম দে।
অবাক শুনেও না শুনার ভান করে নীরাকে নিয়ে হেঁটে যেতে লাগলো। একটা রিক্সা পেয়ে থামিয়ে তাতে নীরাকে তুলরে দিয়ে ভাড়া দিয়ে দিল অবাক। তারপর একটা সিগারেট ধরিয়ে হেঁটে যেতে থাকলো।
সন্ধ্যায় নীরাকে ফোন করবে ভেবেও ফোন করলো না। রাত দশটায় অবাকের ফোন বেজজে উঠলো,
:হ্যালো!
ওপাশ থেকে কোন কথা নেই শুধুই নিঃস্তব্ধতা। অবাক মোবাইলের স্ক্রিনে দেখলো নীরার নাম্বার। তাই আবার বললো..
:হ্যালো, কিরে কথা বলিস না কেন? কি হয়েছে?
:না এমনিতেই। কি করিস তুই?
:কিছু না বসেছিলাম, সিগারেট টানছিলাম।
:ও, আজ আর ফোন দিলি না যে?
:এমনিতেই, আর আমি ওয়েটিংয়ে থাকা মানুষদের ফোন করে বিব্রত হতে চাই না।
:শোন, শুভ্রর সাথে আমার ব্রেক আপ হয়ে গেছে আজ।
:কি বলিস এতো ভালো, কেয়ারিং ছেলের সাথে তোর ব্রেক আপ!!!
:শোন শুভ্রর গুন আমার সামনে গাইবি না। আমি জানি তুই আমাকে খোটা দিতে এই কথা বলছিস।
:এ্যাতো কিছু জানিস?? ও মাই গড!!
:তাকে বিশ্বাস করাটাই ভুল ছিল আমার।
:কি হয়েছে খুলে বলবি?
:না তেমন কিছু না।
:না বলতে চাইলে বলিস না।
:আসলে ওর সাথে আমার সম্পর্কটা বেশী গভীরে চলে গিয়েছিল রে..
:মানে কি?
:মানে ও আমাকে ইউজ করে এখন আর আমাকে তার ভালো লাগে না। নিজের প্রতি ঘেন্যা করছে রে অবাক। তুইও কি আমাকে এখন এ্যাভোয়েড করবি?
:মানে কি? তোকে ইউজ করার মানে কি?
:মানে উই হ্যাড ফিজিক্যাল রিলেশনশিপস্ মেনি টাইমস্। এ্যান্ড নাউ হি চিট্যাড মি। আমাকে ছেড়ে আরেক মেয়ের সাথে গেছে।
:এখন তুই কিছু করতে চাস? (ঠান্ডা মাথায় বললো অবাক যদিও খুব খারাপ লাগছে নীরার জন্য, শুভ্রকে খুন করতে ইচ্ছা হচ্ছে তার।)
:না কিছু করবো না। ওর চরিত্রইতো ভালো না।
:হুম। ভাত খেয়েছিস?
:না, খাবো না। ক্ষুধা নেই।
:ওকে খাওয়ার দরকার নেই। একটা কথা বলবো তোকে?
:হুম বল।
:দেখিস আবার মন খারাপ করবি নাতো? আমি অনেক আগেই এই কথাটা বলতে চাচ্ছিলাম তোকে...
:হুম বল না! কি বলবি বল... আমার কাছে অনুমতি নেয়া লাগে কবে থেকে তোর?
:না আসলে কথা গুলো খুব সিরিয়াস। অন্তত আমার জন্য...
:হুম বলে ফেল...
:উইল ইউ ম্যারি মি নীরা? কথাটা কাল বলার ইচ্ছা ছিল। বাট কাল অনেক দেরী হয়ে যাবে রে... আই লাভ ইউ এ্যালট নীরা, আজই মার সাথে কথা বলেছিলাম তোকে বিয়ে করে ঘরে তুলতে চাই আমি। মা রাজি আছে। নীরা তোর পাস্ট, প্রেজেন্ট আমি জানতে চাই না। শুধু বারান্দায় বসে এই শীতের রাতে একটা চাদরে মুড়ে দুজন মিলে একটা কাপেই কফি খেতে চাই। তোর সাথে বুড়ো হতে চাই, তুুই ঘুমিয়ে গেলে তোর মুখের সামনে পড়া চুলগুলো সরিয়ে দিতে চাই, তোকে সারা রাত ভরে দেখতে চাই, তোকে নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে চাই। তোর সাথে সূর্যের আলো দেখতে চাই, তোর হাত ধরে অজানা রাস্তায় হেঁটে যেতে চাই। তোর চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতে চাই, তোকে জড়িয়ে ধরতে চাই। তোর সাথে সকাল দেখতে চাই, তোর সাথে আমার জীবনটাকে জড়িয়ে ফেলতে চাই। তোকে কতটা ভালোবাসি মরার আগ পর্যন্ত বলতে চাই। তোর কোলে মাথা রেখেই নিজের সকল ক্লান্তি ভুলে যেতে চাই... তোকে অনেক অনেক অনেক অনেক বেশী ভালোবাসতে চাই নীরা...
এতো গুলো কথা প্রায় এক নিঃশ্বসে বলে দিয়ে অবাক চুপ হয়ে গেছে, নীরা ফোনের ওপাশ থেকে নিঃশব্দে কাঁদছে। অবাক শুধু নীরার দীর্ঘশ্বাস শুনছে। নীরা কিছুই বলছে না আর...

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ২:০৬

ইমরাজ কবির মুন বলেছেন:
কনভারসেশান গুলা আরো স্ট্রং হতে পারতো ||

১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ২:১২

একটি মিসকল বলেছেন: ভাই ইচ্ছা করেই একটু সবলীল করার চেষ্টা। ধন্যবাদ আপনার মূল্যবান মন্তব্যের জন্য...

২| ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:২৪

দিগন্ত জর্জ বলেছেন: চমৎকার কাহিনী, লেখাটাও ভালো।লেগেছে। আরেকটু ডিটেইলে হলে, শরীরের লোম দাঁড়িয়ে যেত।

১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:০৬

একটি মিসকল বলেছেন: বেশী ডিটেইল করে লেখাটাকে আরো বেশী বড় করতে চাইনি আসলে, বাস্তব জীবনের ঘটনার সাথে তাল মিলিয়ে লেখার ক্ষুদ্র প্রচেষ্টাটা আপনার ভালো লাগায় আমি আন্তরিক ভাবে আনন্দিত ভাই....

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.