![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একটি মিসকল, যেখানে আমি আমার নিজঃস্ব স্বত্তাকে পুরোপুরি নিজের ভাষায় প্রকাশ করার চেষ্টা করেছি, তবে সবার দৃষ্টিকোণ এক নয়। মানুষের চিন্তা/ধারনা পরিবেশ, সময়, স্থান, কাল, পাত্র ভেদে ভিন্ন রকম হতেই পারে! সবাইকে আমন্ত্রন, বিশেষত যারা আমাকে পছন্দ করেন না তাদেরকে।
পৌষের একটি শীতের সকাল। ঘুম থেকে উঠেই জীবনের তাগিদে অফিসের পানে ছুটে চলতে হয়। অন্যান্য মিডেল ক্লাস মানুষদের মতো আমারও দৌড়োনো লাগে বাস কিংবা সি.এন.জির পিছনে। আমি অবাক, মধ্যবিত্ত একটি পরিবারের বড় ছেলে। আজ ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে গেছে। তাই নাস্তা না করেই বের হতে হলো বাসা থেকে। বাসায় তালা দিয়ে বের হতে হতে একটা সিগারেট ধরিয়ে ঠান্ডায় কাঁপতে কাঁপতে বের হলাম রাস্তায়। একটা সি.এন.জি পেয়ে চড়ে বসলাম তাতে... জ্যামে পড়ে গেলাম। শহরের জ্যাম আর যাই হোক ছাড়তে সময় লাগে, আমি বাহির দিয়ে দেখতে লাগলাম জন-জীবন। একটা ময়লা সুতি কাপড়ের ফ্রক পড়া ছোট্ট বাচ্চা ক্লাস টু কিংবা থ্রিতে পড়ার বয়স এই ঠান্ডায় রাস্তার পাশে দাড়িয়ে দাড়িয়ে পিঠা বিক্রি করছে। পিঠ সমান চুল, শ্যামলা রঙ্গের মুখ, তার সাথে চোখের একটা অন্য রকম মায়াবীভাব। ওকে প্রথম দেখে খুবই মায়া হল, ড্রাইভারকে বলে গাড়ি থেকে নেমে ওর কাছে গেলাম।
:এই তোমার নাম কি?
:আমার নাম সুরভী। ক্যান স্যার কিসু লাগবো? স্যার দুইড্যা পিড্যা খাইবেন?
:কি পিঠা এগুলো?
:স্যার এইডা পুয়া পিড্যা, আর এইডা ভাপা পিডা। কুনডা খাইবেন?
:দাও একটা ভাপা পিঠা দাও। স্কুলে পড়ো না?
:স্যার, ইসকুলে পড়ত্যা গেলে খামু কি? ছুড বাইডারে কি খাওয়ামু?
:তোমার বাবা নেই?
:আসে, তয় তার কুন খুঁজ খবর নাই। মায়ে ওনেক খুইজ্যাও পাইসে না। এ্যাকদিন যাইয়্যা বুজতে পারসে বাপে মায়রে থুইয়্যা ভাইগ্যা গেসে। নয়া কুনু বেডিরে বিয়্যা করসে মনে লয়।
:ওহ, তোমার ঠান্ডা লাগে না? এই শীতে এইভাবে পাতলা একটা কাপড় পড়ে পিঠা বিক্রি করছো?
:স্যার গরিবের আর শীত! ছুড বাইডারেই কিসু দিবার পাইলাম না, দুই ব্যালা ভাত দিতেই কষ্ট অয়, তার উপরে আমার লাইগ্যা শীতের কাপড়?
:বিকালেও কি এইখানেই থাকো?
:হ, স্যার এইন্নে না থাকলে খামু কি?
:আচ্ছা তুমি অবস্যই থেকো, আমি কিন্তু আসবো। কত হলো?
:স্যার খাইসেন তো একডা পিডা। পাঁচ ট্যাকা দ্যান।
:এই নেও টাকা।
:ঠিক আসে স্যার।
জ্যাম শোষ হয়ে যাওয়ায় আমার চলে আশা। না হয় আরো কতটুকু সময় সুরভীর সাথে কথা বলতাম। ভালো আর কষ্ট লাগা কাজ করছিল একই সাথে। এক অন্য রকম অনুভুতি ছিল এটা। দেখি সন্ধ্যায় ওর আর ওর ছোট ভাইটার জন্য শীতের কিছু কাপড় আর খাবার নিয়ে যাবো। ওর সাথে রক্তের সম্পর্কটা না থাকলেও ওকে নিয়ে গর্ব হচ্ছে আমার। নিজের জন্য আর নিজের ফ্যামিলির জন্য কিছু করতে শিখে গেছে সুরভী এতটুকুন বয়সেই। বাস্তবতা মানুষকে অনেক বড় করে তোলে। বুড়ো বানিয়ে ফেলে কঁচি জীনটাকে। আমরা যারা মধ্যবিত্ত হয়তো তারাই বুঝবো সেই বড় হওয়ার যন্ত্রনাটাকে...
©somewhere in net ltd.