নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি কিন্তু কেউ না। সময়ে অসময়ে পাওয়া কতগুলো মিসকল শুধু। যে মিসকল হয়তো আপনার কাছের কেউ দিয়েছিল, কিংবা আপনার অপরিচিত। ভালো থাকুক আমার শত্রুরা আর সুস্থ থাকুক আমার প্রিয়জনেরা। - একটি মিসকল

একটি মিসকল

আমি একটি মিসকল, যেখানে আমি আমার নিজঃস্ব স্বত্তাকে পুরোপুরি নিজের ভাষায় প্রকাশ করার চেষ্টা করেছি, তবে সবার দৃষ্টিকোণ এক নয়। মানুষের চিন্তা/ধারনা পরিবেশ, সময়, স্থান, কাল, পাত্র ভেদে ভিন্ন রকম হতেই পারে! সবাইকে আমন্ত্রন, বিশেষত যারা আমাকে পছন্দ করেন না তাদেরকে।

একটি মিসকল › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি ছোট ছেলের গল্প...

২৬ শে নভেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:৩৫

আমার অফিসের পিওন ছেলেটি, নাম জুনেদ। অফিসের এ্যাডমিন প্যানেলের আইটি সেকশনের ইন-চার্জ হওয়ায় মাঝে মধ্যেই অনেকেরই ইন্টারভিউ নিতে হয় আমাকে। স্পষ্ট মনে আছে, জুনেদের ইন্টারভিউের সময়টা। সামান্য ৪,৫০০/= টাকার চাকুরীর জন্য সদ্য এস.এস.সি পাশ করা একটা মাঝ বয়সী ছেলেকে এমন আকুতি-মিনতি করতে আমি আর কখনো দেখিনি কখনো, কাজের বিভিন্ন রকমের কষ্টের কথা জানানো হলেও তাকে দামিয়ে রাখা যায় নি। হাঁসি-মুখে নিজের চাকুরীর কনফারমেশন জেনে পরের দিনই চলে আসে কাজ করতে। ছেলেটা "শ্রীমঙ্গল আলিয়া মাদ্রাসা"য় এবার ইন্টারমিডিয়েটে ভর্তি হয়েছে। পড়াশুনা ছেড়ে দেয়নি, বরং আশায় আছে অফ-ডে এর জন্য। কারন, যদি কলেজে দু-একটা ক্লাস করতে পারে। আমি বরাবরই প্রথম থেকেই, চাকুরী ক্ষেত্র আমার জুনিয়ররা আমাকে "স্যার" বলবে সে বেপারখানা হজম করতে পারি না। আমি সবাইকেই বলি "ভাই" বলে ডাকতে, যাই হোক গত ৩/৪ মাস জুনেদ এখানে চাকুরী করলেও কখনো আমাকে ভাই বলে ডাকে নি। ওর ভিতরে খেয়াল করতাম চাকুরী হারাবার ভয় কাজ করে। সবাইকে অনেক বেশী ভয় পায়। মোটামোটি সবারই অনেক জুলুম হাসি মুখে সহ্য করে গেছে। আজ সকালে আমার কেবিন খানা পরিষ্কার করতে আসার পর কথা প্রসঙ্গে জানতে পারি যে, তারা ২ ভাই আর ১টি বোন। তার বাবা সৌদি ছিলেন কয়েক বছর। দেশে ফেরার পর ব্যবস্যায় ধরা খেয়ে পুরো পথে বসে গেছে। তার বড় ভাইটিও শিক্ষিত, কিন্তু চাকুরী নামক সোনার হরিণখানা ধরা দিচ্ছে না তার কাছে। বড় বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। জিঞ্জাসা করলাম বাসায় সবাই জানে না কি সে কি কাজ করে? উত্তরে সে বলে, "স্যার, বাসাত কইসি হারা দিন স্যার তারার লগে বই তাকি, আর আফনেরার কুনু কাগজ-ফাইল লাগলে ওতা আনিয়া দেই। কেউ ঘুরানিত আইলে চা নাস্তা আনিয়া দেই বার তাকি।" (স্যার বাসায় বলেছি, সারা দিন আপনাদের আশে পাশেই বসে থাকি, আপনাদের কোন কাগজ-ফাইল লাগলে সেগুলো এনে দেই। আর বাহিরের কোন গেস্ট আসলে চা নাস্তা এনে দেই) বাবা-মাকে দেয়া উত্তরখানা আংশিক সত্য ছিল, তবে তার দৈনন্দিন কাজের সিংহভাগই লুকিয়ে রেখেছিল সে, কষ্টের সেই কাজ গুলোর কথা বলে নি সে তার বাবা-মাকে। জিঞ্জাসা করলাম, "আর বাকি যে কাজ গুলো করো সেগুলো?" ওর উত্তর, "স্যার, হকলতা কইয়্যা দিলে আমারে ওনো আর কাম করাত আইতে দিবো নায়" (স্যার সব কিছু বললে বাসা থেকে এখানে কাজ করতে দিবে না) বাস্তবতাটা খুব ভালো ভাবেই বয়স বাড়িয়ে দিলো ছেলেটার... :( তার মুখের দিকে চেয়ে রইলাম শুধু, আর সে আপন মনে তার কাজ করে যাচ্ছে।

দেখতে দেখতে চোখের কোণে নিজের অজান্তেই কিছু একটা আটকে গেল, ঝাপসা হয়ে এলো সব কিছু। জুনেদ ছেলেটাকে কেন যেন বুকে জড়িয়ে ধরতে মন চাইলো, পরক্ষণেই আবার বাস্তবতার করুণ সেই হাসি আমার চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল আমার নিজেকে... আমি অমানুষ, আমি নিকৃষ্ট, আমি সেই "অবাক"... :( :(

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে নভেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:০৪

করুণাধারা বলেছেন: আহা! জুনেদের জন্য কষ্টি হল। এই বয়সেই তাকে একটা স্বপ্নহীন জীবন পার করতে হচ্ছে।

২৭ শে নভেম্বর, ২০১৭ সকাল ৮:১৫

একটি মিসকল বলেছেন: এভাবেই বাস্তবতার চাপে কত জুনেদ বড় হয়ে যাচ্ছে!

২| ২৬ শে নভেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:৩৯

সম্রাট ইজ বেস্ট বলেছেন: ছেলেটার জন্য সত্যি খারাপ লাগছে। খুব ভাল লিখেছেন।

২৭ শে নভেম্বর, ২০১৭ সকাল ৮:১৬

একটি মিসকল বলেছেন: :( কৃতজ্ঞতা

৩| ২৬ শে নভেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:৪৩

শামচুল হক বলেছেন: আহা! অভাবের তাড়নায় ছাত্র জীবনেই কষ্ট সহ্য করতে হচ্ছে।

৪| ২৬ শে নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১১:২৪

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: কিছুই বলার নেই। এই দেশ, এই সিস্টেম আমরা বদলাতে পারছি না...

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.