নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলোকের অভিযাত্রী

স্বপ্নিল রোদ্দুর

আমরা কেউ মাষ্টার হতে চেয়েছিলাম, কেউ ডাক্তার, কেউ উকিল।অমলকান্তি সে-সব কিছু হতে চায়নি।সে রোদ্দুর হতে চেয়েছিল!ক্ষান্তবর্ষণ কাক-ডাকা বিকেলের সেই লাজুক রোদ্দুর,জাম আর জামরুলের পাতায়যা নাকি অল্প-একটু হাসির মতন লেগে থাকে।-অমলকান্তি, নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী

স্বপ্নিল রোদ্দুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

মেঘ পাহাড়ের দেশেঃ সমর্পণ

২৩ শে মে, ২০২০ রাত ৮:১১

শংকর দা গাড়ি পাঠিয়েছিলেন আমাদের জন্য, স্টেশন থেকে বের হয়ে সে গাড়িতে উঠে বসলাম। মোটামুটি ২.৫ ঘন্টা লাগে সরাসরি দার্জিলিং পৌছতে। কিন্তু আমরা ঠিক করলাম হোটেলে যাবার পথে যতগুলো স্পট পড়বে সব দেখে যাব যেহেতু হাতে সময় একদম কম (পরের দিন রাতেই কলকাতার উদ্দেশ্যে ফিরতি ট্রেন)। শিলিগুড়ি শহরের হিল কার্ট রোড পেরিয়ে গাড়ি চলতে থাকলো পাহাড়কে সাক্ষী রেখে। ৩০ মিনিটের মতো চলার পর গাড়ি থামলো রাস্তার পাশের এক ধাবায়, সকালের নাস্তা করার জন্য। চারপাশে পাহাড়ের উচ্চতা বেড়ে গেছে ততক্ষণে, সেই সাথে বেড়েছে পাহাড়ের বুনো গন্ধ। লাল আটার রুটি, ডিম ভাজি, ডাল আর চা দিয়ে নাস্তা সেরে কিছু ছবি তুলে নিলাম। বেশ উপরে খাড়া পাহাড়ের পাদদেশে দেখা যাচ্ছে কালিম্পং শহর। এটুকু পাহাড়ি পথ পাড়ি দিতেই আমি আনন্দে একেবারে উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠেছিলাম কারণ আমার বড় পাহাড় দেখা সেই প্রথমবার। দার্জিলিং এর আগে আমি কোন পাহাড়ি অঞ্চল ভ্রমণ করিনি যদিও এর পরবর্তী দুই বছরে আমি ঘুরেছি সিকিম, শিলং আর বান্দরবান (দার্জিলিং আমাকে পাহাড়ের প্রেমে পড়িয়েছে ভালোভাবেই)। গাড়িতে বেজে চলা অজানা পাহাড়ি গান শুনতে শুনতে রডোডেনড্রন গাছের সারি পেরিয়ে আস্তে আস্তে উপরের দিকে এগোতে লাগলাম। পাহাড়ি আঁকাবাঁকা রাস্তা, মাঝে মাঝে গাড়ি উপরে উঠছে তো উঠছেই, আবার হঠাৎ বাঁক নিচ্ছে। সে এক রোমাঞ্চকর যাত্রা - রাস্তার একপাশে খাদ, অন্য পাশে সুবিশাল পাহাড়। গাড়ি যতই উপরে উঠছে, ততই ঠাণ্ডা অনুভব করছিলাম। এভাবে কিছুক্ষণ চলার পর থামলাম কার্শিয়াং ভিউ পয়েন্টে। রাস্তার ধারে বসার জায়গা রয়েছে আর সেখান থেকে পেছনে পাহাড়ের উপর দেখা যায় প্রায় পুরো কার্শিয়াং যা দার্জিলিং জেলার একটি শৈল শহর ও মহকুমা। অসুস্থদের স্বাস্থ্য ফেরানোর জায়গা এবং বেশ কিছু বোর্ডিং স্কুল ও মিশনারি স্কুলের জন্য এটি প্রসিদ্ধ। কার্শিয়াং পার হওয়ার পর দেখলাম পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচুতে অবস্থিত রেলওয়ে স্টেশন ‘ঘুম’, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে যার উচ্চতা ৭৪০৭ ফুট। এখানে বৌদ্ধদের একটি বিখ্যাত প্রার্থনাস্থল বা মনেস্ট্রি আছে, নাম ঘুম মনেস্ট্রি - সেটিও দেখে নিলাম। ঘুম পার হবার পর দেখা মিললো ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ খ্যাত টয় ট্রেনের, উপরের পাহাড় থেকে স্লো মোশনে নামছিলো একেবারে খেলনার মত দেখতে ছোট এই ট্রেন (পাহাড়ে নরমাল ট্রেন চলা সম্ভব না, এই টয় ট্রেনই ভরসা)। টয় ট্রেন মানেই 'মেরে স্বপ্ন কি রানি কাব আয়েগি তু’- সেই বিখ্যাত গান, শর্মিলা ঠাকুর টয় ট্রেনে আর হুডখোলা জিপে রাজেশ খান্না। দু চোখে মুগ্ধতার রেশ নিয়ে সামনে এগুতে লাগলাম, গাড়ি এখান থেকে আর উপরে উঠলোনা কারণ দার্জিলিং এর উচ্চতা (৬৮১২ ফুট) ঘুম থেকে কম।

ধীরে ধীরে চোখের সামনে, হাতের নাগালে ধরা দিতে লাগলো দার্জিলিং শহর। ইংরেজদের হাতে অতি যত্ন সহকারে গড়া 'কুইন অফ হিলস' দার্জিলিং আজও বাঙালির কাছে সেরা হিল স্টেশন যা টি এস্টেট, লাল রোডোড্যানড্রন, সাদা ম্যাগনোলিয়া, বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, ঔপনিবেশিক যুগের বিল্ডিং, টয় ট্রেন, বোর্ডিং স্কুল আর অবশ্যই কাঞ্চনজঙ্ঘা পর্বতশৃঙ্গের জন্য বিখ্যাত। গাড়িতে বাজতে থাকা অঞ্জন দত্তের চেনা গানের সুর হঠাৎ বেশ প্রাসংগিক হয়ে উঠলো।

“খাদের ধারের রেলিংটা
সেই দুষ্টু দো দস্যি রিংটা
আমার শৈশবের দার্জিলিংটা
জানলার কাছে টপকে পেয়ে
ছবি এঁকেছি নিঃশ্বাসে 
পাহাড় আঁকা কত সোজা
হারিয়ে গেছে সেই ড্রয়িং খাতা…"

দার্জিলিং পাহাড়ি শহর হলেও এতো গাড়ি চলে যে এখানেও ট্রাফিক জ্যাম লেগে যায়। এখানকার বেশির ভাগ লোকজন নেপালি এবং নেপালি ভাষাভাষি এই জনগোষ্ঠী অনেক দিন থেকেই স্বাধীন গোর্খাল্যান্ড এর দাবিতে আন্দোলন করে আসছে; যার ফলে পাহাড় বেশ অশান্ত হয়ে উঠেছিল সাম্প্রতিক বছরগুলোতে। এখন পরিস্থিতি শান্ত, কিন্তু পশ্চিম বাংলা কখনো দার্জিলিংকে নিজের মানচিত্র থেকে বিচ্ছিন্ন হতে হবেনা এটাও বুঝলাম গাড়িচালকের সাথে কথোপকথনে। আমরা চলে এলাম ছবির মতো অপূর্ব সুন্দর বাতাসিয়া লুপ এ যা ভারতীয় সেনাবাহিনীতে বিভিন্ন যুদ্ধে মারা যাওয়া গোর্খা সেনাদের স্ম্রতির উদ্দেশ্যে একটি সৌধ হিসাবে তৈরি করা হয়েছে। বাতাসিয়া লুপের বিশেষত্ব হলো এটি একটি পাহাড়ের মাথায় অবস্থিত ও অনেকটা মালভূমির মতো, উপর থেকে নিচে ক্রমশ সুষম ঢালু। বাতাসিয়া লুপের বিশাল চত্বর যা পরিকল্পিতভাবে সাজানো হয়েছে ফুলের বাগান, সবুজে ছাওয়া ঘাস, পাতাবাহার ইত্যাদি দিয়ে। এখানে গোর্খাদের ড্রেস পরে ছবি তোলার ব্যবস্থা আছে, আমিও কিছু ছবি তুলে নিলাম। সেদিন যতগুলো স্পট ঘুরেছি বাতাসিয়া লুপ সবচেয়ে সুন্দর, খুব ভালো লেগে গিয়েছিল। এরপর দার্জিলিং শহরের একেবারে ভেতরে চলে গেলাম শাহরুখ খানের 'ম্যায় হূ না' মুভির শুটিং স্পট বিখ্যাত 'সেইন্ট পলস স্কুল' দেখতে। স্কুল গেইট এ বড় করে লেখা 'ভিজিটর নট এলাউড', নেপালী দারোয়ানকে অনুরোধ করেও লাভ হলোনা কোন, অগত্যা বাইরে থেকেই ছবি তুলতে হলো। এরপরের গন্তব্য হ্যাপি ভ্যালি টি গার্ডেন। চারদিকে উঁচু পাহাড় ঘেরা অনিন্দ্য সুন্দর এই চা বাগানে নিঃশ্বাস নিয়ে আর পৃথিবী বিখ্যাত দার্জিলিং টি পান করে সব ভ্রমণ ক্লান্তি যেন নিমিষেই দূর হয়ে গেল। এখান থেকে চা কিনে পাশেই তেনজিং রক নামক একটি বিরাট টিলায় গেলাম যেখানে রশি দিয়ে পাহাড়ে উঠার স্বাদ নেয়া যায়। এরপর ইচ্ছা ছিল ক্যাবল কারে উঠার যা অনেক উঁচুতে দুই পাহাড়ের মাঝে যাতায়াত করে কিন্তু শুনলাম কিছুদিন আগে ঘটা এক দূর্ঘটনার জন্য ক্যাবল কার সাময়িক বন্ধ রয়েছে। অগত্যা হোটেলের দিকে রওনা দিলাম যা দার্জিলিং এর প্রাণকেন্দ্র ম্যাল এর খুব কাছেই। ততক্ষণে দুপুর গড়িয়ে গেছে, তাড়াতাড়ি গোসল সেরে লাঞ্চ করে ডাবল কম্বলের ভেতরে ঢুকে ঘুম দিলাম। সন্ধ্যায় ম্যাল এ গেলাম, হোটেল থেকে মাত্র ৫ মিনিটের হাটা পথ। হাটার সময় বুঝলাম, দার্জিলিং এর কোন রাস্তাই সমতল নয় - সারাক্ষণ হয় উপরের দিকে উঠছি না হয় নিচের দিকে নামছি। ম্যাল খুবই সুন্দর একটি জায়গা যা দুই দিকে পাহাড় ঘেরা বিরাট খোলা মাঠের মত, বেঞ্চে বসে সবাই আড্ডা দিচ্ছে, গান গাচ্ছে। ম্যালকে ঘিরেই দার্জিলিং এর বেশিরভাগ শপিং সেন্টার কিংবা নামকরা রেস্টুরেন্ট। এখানে বসে চা মোমো খেয়ে কাছের মার্কেট এ একরাউন্ড শপিং করে নিলাম, শীত পোশাক বেশ সস্তা মনে হলো। রাত আট টার মত বাজে - সব দোকান বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, হোটেলের রাস্তায় অকস্মাৎ নেমে এল মেঘ - কুয়াশা। সেই মেঘ কুয়াশার চাদর ভেদ করে শীতের কাপুনি সাথে নিয়ে নিচে নামতে নামতে অনুধাবন করলাম 'দার্জিলিং জমজমাট'।

(ক্রমশ প্রকাশ্য)

আগের পর্বঃ Click This Link




মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে মে, ২০২০ রাত ৮:৩২

নেওয়াজ আলি বলেছেন: চমৎকার লেখা এবং ছবি

২৩ শে মে, ২০২০ রাত ৮:৪৬

স্বপ্নিল রোদ্দুর বলেছেন: ধন্যবাদ

২| ২৩ শে মে, ২০২০ রাত ৯:৫৮

রাজীব নুর বলেছেন: ভালো ভালো ছবি দেন। যে ছবি দেখলে ভালো লাগবে।

২৬ শে মে, ২০২০ বিকাল ৩:৫১

স্বপ্নিল রোদ্দুর বলেছেন: পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় থাকুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.