নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আর্ফ জামান সুজন

আর্ফ জামান সুজন

আর্ফ জামান সুজন › বিস্তারিত পোস্টঃ

সিনেমাও নয় বাস্তবও নয়-১

১৪ ই অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৩:১৯


যতোদূর মনে পড়ে ৫/৬ বছর বয়সে ফারসিন প্রথম ছায়াছবি দেখে কান্না করেছিলাম। ছায়াছবিটির নাম ছিল “মাসুম”। উদিত নারায়ণ-এর ছেলে আদিত্য নারায়ণ এর ছোটবেলার সেই অভিনয় দেখে প্রথম কেদেছিলাম। সেই থেকে চলচিত্রের প্রভাব আসা শুরু স্বাভাবিক জীবনে। শিশু চলচিত্রের Gnre ছেড়ে এ্যাকশন, ড্রামা, রোমান্টিক, ফিকশন ইত্যাদি Gnre এর মুভি দেখা শুরু করলাম। আশ্চর্যজন হলেও সত্য যে যুবক বয়যে এসে সে বুঝতে পারে যে প্রাত্যহিক ভঙ্গিতেও এসব চলচিত্রের প্রভাব পড়া শুরু করে ধীরে ধীরে। যেমন কোন মোড় আসলেই মাথাটা হালকা বাকা করে এ্যাকশন হিরোর ভঙ্গিতে হাটা, কিংবা লাথি মেরে দরজা খোলা, কিংবা জামার হাতা ভাজ করতে করতে শ্রেণীকক্ষে প্রবেশ করা।
বয়স বাড়তে থাকল আর সিনেমার প্রভাবও বাড়তে থাকল। অভিভাবকের ঘরের বাইরে কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে পা রাখা ফারসিনের সিনেমা দেখা শুরু। জি সিনেমা, স্টার সিনেমা, এইচবিও, স্টার সিনেমা, সেট ম্যাক্স একের পর ভিনদেশী সিনেমা। একই সাথে চলতে থাকল সিনেমা দেখা। দুপুরে ক্লাস শেষ করে সিনেমা, রাতে পড়া শেষ করে সিনেমা, খাবার সময়ও চলে সিনেমা। শুধু বাবা টিভিরুমে আসলেই টিভি দেখা বন্ধ থাকে।
Baby’s day out থেকে শুরু করে Titanic, শাবানা আজমীর Makhi থেকে শুরু করে Ai Dil Ashikana, দিপু নাম্বার ২ থেকে শুরু করে বিয়ের ফুল-কোন ধরনের মুভিই বাদ গেল না। বয়স বাড়ার সাথে পারিবারিকভাবেই পড়াশুনার প্রতি চাপটা বেড়ে যায়। কিন্তু ঘরে কম্পিউটার কিনে দেবার কারণে কাঙ্খিত মুভি দেখা থেকে তাকে আর কেউ দূরে রাখতে পারল নাহ। যে মুভি টিভি দেখাত ও সে ওই সময় বের করতে পারলে ডাউনলোড করে পরে দেখত।
বয়সটা তখন ১৪। এবার ফারসিন ভর্তি হল জেলার সবচেয়ে ভাল বিদ্যাপিঠে। এই প্রথম একা একা অনেক দূর যেতে হচ্ছে তাকে। এতো দিনে জীবনে কিছুটা রোমান্ঞ পেল। বাস জার্নি, বয়েজ স্কুল, বিশাল মাঠ, ব্যাচে পড়তে যাওয়া। চুপচাপ থাকার কারণে খুব একটা সঙ্গী জুটল নাহ কপালে। ওর চুপচাপ থাকার কারণ ছিল মন খারাপ বা স্বাভাবিক Introvertness নয়। সে তো কল্পনায় থাকত অধিকাংশ সময়। সবসময় খুজে পেত বাস্তব জীবনের সাথে কখন কোন দৃশ্য মিলে যায়। দূরের বিদ্যালয়ে ভর্তি হবার পরই শুরু হয় আসল এ্যাকশন, রোমন্ঞ, রোমান্স, উত্তেজনা।
স্কুল এ্যাকশন: মোটামুটি ৫ ফুট ১০ ইঞ্চি হবে ছেলেটি উচ্চতায়। বাবার তৃতীয় সন্তান ফারসিন আজাজ মাত্র ৫ ফুট। সেই লম্বা সহপাঠী ফারসিনকে বলল “কিরে বাটুল তুই সামনের সিটে বস, আমি পিছরের বেঞ্চে বসব।“ ব্যস ফারসিনের মাথায় তখন ব্রুসলির এ্যাকশন ঘুরপাক খাচ্ছে। একবারও খেয়াল নেই যে উচ্চতায় সে কতো ছোট আর শক্তিতে কত দূর্বল। পা পিছের দিকে নিয়ে একটু ঘুরে সামনা সামনি হয়ে লম্বুটার পেটে জোড়ে এক লাথি। তারপর এক পা পিছে নিয়ে হাত দুটো মুষ্টি করে অপেক্ষা পরবর্তী এ্যাকশনের। কিন্তু লম্বুটার সাঙ্গপাঙ্গরা আক্রমণ করল পিছ থেকে , ডান থেকে, বাম থেকে উপর্যুপরি থাপ্পর আর কিল আর ঘুষি।
সিনেমার পরের দৃশ্যে দেখা যায় বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের কক্ষে দুজনের বাবাকেই ডাকা হলো। চলল তুমুল ভৎর্সনা। কিন্তু ফারসিনে মাথায় শুধু তার লাথি মারার দৃশ্যটিই ঘুরছে। সে বারবার ফিরে যাচ্ছে সেই দৃশ্যে আর মিল খুজছে। কার মতো হলে লাথিটা? অক্ষয় কুমার, ব্রুসলি নাকি জ্যাকি চ্যান। এরপর থেকে আর কেউ ফারসিনকে কটাক্ষ করে কথা বলে নাহ। তবে লম্বা ছেলেটার ঐ গ্রুপটার সামনে সে কখন পড়ে নাহ। কারণ জানে যে এরপর তার বাবাকে আবার ডাকা হবে আর সেটা হলে কম্পিউটার চালানো বন্ধ করে দিবে বাবা। তার ইচ্ছা পরে এক সময় মাথা খাটিয়ে কোন এক গোয়েন্দা মুভির মতো ওদের উপর প্রতিষোধ নিবে।

স্কুল রোমান্স: Rehna Hain Tere Dil Mein” ছবির মতো বৃষ্টি হলে ফারসিন রাস্তার দিকে তাকিয়ে থাকত। ভাবত এই বুঝি কোন কিশোরী গাড়ি থেকে নামবে আর রাস্তার বাচ্চাদের সাথে বৃষ্টিতে লাফালাফি করবে। কিন্তু নাহ তা আর হয় নাহ। বাংলা সিনেমার মতো বিদ্যালয়ের বারান্দায় ধাক্কা খাবারও কোন সম্ভাবনা নাই। কেননা ও পড়ে বয়েজ স্কুলে। তাহলে চোখ চোখ পড়বে কিংবা কোন মেয়ের দিকে হঠাৎ তাকাবে আর ঘন্টা বেজে উঠবে। নাহ এরও কোন সম্ভাবনা নেই। কেননা অনেক আগে থেকেই রাস্তায় হাটার সময় তার ভিতর গোয়েন্দা মুভির কাহিনী কাজ করে। যাকে তাকে সন্দেহ করে আর ফেলুদা বা শার্লকের মতো চিন্তা করা এই লোকটির পেশা কি হতে পারে কোথায় গিয়েছিল, সন্দেহজন কিছু করছে কিনা। বিয়ের অনুষ্ঠান কিংবা গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানেও কিছু একটা হবার সম্ভাবনা নাকচ। কেননা শুক্রবার বা শনিবার তার হিন্দী চ্যানেল গুলো ভাল সিনেমা থাকে বিধায় সে অনুষ্ঠানের চেয়ে ওগুলোই বেশি আকর্ষণীয় মনে করে। বুঝা গেল যে এক Rehna Hain Tere Dil Mein সিনেমার উপর ভর করে তার আর মেয়ে পছন্দ হবে নাহ। কিন্তু একদিন হঠাৎ.....।(চলবে)



মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.