![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
তখন বাসায় শুধু বিটিভির জয়জয়কার চলছিল। মাঝেমধ্যে একটি বিজ্ঞাপন দেখতাম নারী ও শিশু পাচাররোধে এগিয়ে আসুন। আশ্চর্যজনক হলেও সত্যেও দেশের ৩০ টিরও অধিক টিভি চ্যানেলে আজ এধরনের কোন বিজ্ঞাপন চোখে পড়ে না। আমিতো ধরেই নিয়েছিলাম যে দেশে মনে হয় মানুষ সচেতন হয়ে নারী পাচার রোধ করতে সক্ষম হয়েছে। যার কারণে কোথাও আর এধরনের সচেতনমামূলক বিজ্ঞাপন চোখে পড়ে না। কিন্তু গুগল মামা আমার চোখ আর লিখার বিষয়বস্তু দুটোর পর্দাই উন্মোচিত করল।
মানব পাচার-সংক্রান্ত যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাফিকিং ইন পার্সনস (টিআইপি)-এর ২০১৭ এর রিপোর্টে দেশের অবস্থান অবনম হয়েছে। এখনো নারী ও শিশু পাচারের উৎস দেশ হিসেবে রয়েছে বাংলাদেশে। সরকারের উন্নয়নের জোয়ারে ভেসে নারীরাও চলে ভিনদেশে অবৈধভাবে। জাতিসংঘ বলছে শুধুমাত্র ভারতেই গত ১০ বছরে বাংলাদেশ থেকে তিন লাখ নারী-শিশু পাচার হয়েছে। আর এনজিওরা বলছে এই সংখ্যা পাচঁ লাখেরও বেশি হবে। টাইমস অবস ইন্ডিয়া তাদের প্রতিবেদনে অনুমান করেছে ভারত, পাকিস্তান ও মধ্যপ্রাচ্যে পাচার হওয়া বাংলাদেশী নারী ও শিশুর সংখ্যা প্রতি বছর ৫০ হাজারের মতন হবে। ভারতের সমাজ কল্যাণ বোর্ড দেশের ১৮টি রুট চিহ্নিত করেছে যেসব জায়গা হতে প্রতি বছর ২০ হাজার নারী ও শিশু অবৈধভাবে ভারতে পাচার হয়। ভারতে এমন কোন পতিতালয় হয়তো পাওয়া যাবে না যেখানে বাংলাদেশী নারী নেই।
বৈধভাবে ক’টা ডলার রেমিটেন্সের আশায় আমরা নির্দিধাল নিজেদের মা-বোনদের অন্যের হাতে তুলে দিচ্ছি। আর তারা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়ে আবার দেশে ফিরে আসেন। তো এবার চিন্তা করুন যারা অবৈধভাবে যান তাদের অবস্থা কতটা মর্মন্তিক হতে পারে।দেশী- বিদেশী অসংখ্য ডকুমেন্টারী, নিউজ রিপোর্ট, স্ট্রিং অপারেশনে বারবার বলা হয়েছে নারী পাচারের র্যাকেট, রুট ও পদ্ধতি নিয়ে। শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে যুবকরা দিনে ১০-১২ ঘন্টা সপ্তাহে ৬দিন খেটে পান ১০-২০ হাজার টাকা। আর একজন নারী পাচারকারি কিছু স্বপ্ন দেখিয়ে বিশ্বাস করিয়ে নারী প্রতি ৪০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পান পাচারকার্য সম্পন্ন করলে। আর এখন তো প্রযুক্তি তাদের কাজটাকে আরো সহজ করে তুলেছে। একজন নারী পাচারকারী শাস্তিকে থোরাই কেয়ার করেন।মানব পাচারের সবোর্চ্চ শাস্তি যাই হোক না কেন এর প্রয়োগ শুনলে মনে হবে আইন নিয়ে যেন তামাশা করা হচ্ছে। ২০১৪ সালে ১৮ জনকে, ২০১৫ সালে ৭জনকেও ২০১৬ সালে শাস্তি দেয়া হয় মাত্র ৩ জনকে। অথচ শুধু সরকারই ২০১৬ সালে ১২২টি যৌন ও ১১৬টি শ্রম সংক্রান্ত মানব পাচারের ঘটনা তদন্ত করে।
স্বল্পঅর্থে বিদেশে যদি আপনি নারী কর্মী প্রেরণ করেন তবে শুধু চিন্তা করুণ অবৈধ পথে নিশ্চয়ই স্বল্পতম খরচ লাগবে এবং সেটিও নারী পাচারে সহায়ক। বুবু, আপা আর ম্যাডামরা ক্ষমতার মসনদ বসে নারী ক্ষমতায়নের পুরুষ্কারে শো-কেজ ভরতে পারলেও নারী পাচার রোধ করতে তারা পারেনি কখনও। আর রোহিঙ্গা নারী পাচারের অভিযোগ কক্সবাজার পুলিজ সুপার অস্বীকার করল্ওে দৈনিক ইত্তেফাকেরর রিপোর্টে দুজন শিশুর পাচার হ্ওয়ার কথা বলা হয় যারা পরে উদ্ধার্ও হয়। ঢাকা ট্রিবিউন তাদের এক রিপোর্টে বলছে তারা শুধ ক্যাম্প থেকেই ৪০টি সুনির্দিষ্ট পাচারের অভিযোগ পেয়েছে।
আসলে নারীকে যতোদিন পণ্য হিসেবে ব্যবহারের পদ্ধতি চালু থাকবে ততোদিন নারী পাচারের চাহিদা থাকবে। আপনি যতোই গোলটেবিলে গিয়ে নারী পাচার রোধে করণীয় নিয়ে টেবিল চাপড়ান না কেন ঘরে গিয়ে পর্ন মুভি দেখে সেই নারী পাচারের চাহিদা আপনিই সৃষ্টি করেন। চশমার ভেতরে চোখের রাঙ্গুনিতে নারী পাচারকারীদের বিরুদ্ধে যতোই সোচ্চার হন না কেন রঙিন হোটেলে গিয়ে নারী উপভোগ করে নারী পাচারের চাহিদা আপনিই সৃষ্টি করেন।
©somewhere in net ltd.