নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

--“সুহে থাকতে ভূতে কিলায়” মেন্টাল হসপিটাল--

রবিনের প্রান "বাংলাদেশ"

E-mail : [email protected]

রবিনের প্রান "বাংলাদেশ" › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভজিতে হয় মানুষের চরণ।

২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:২৭

মালজোড়া গানে কবিরা স্রষ্টা বা ঈশ্বরের স্বরূপ সম্পর্কে নানামতের বিচার করেন, এমনকি ঈশ্বরের অস্তিত্ব সম্পর্কে প্রশ্ন উত্থাপন করতে দ্বিধা করেন না। ১৯৪৯ সালে নেত্রকোনা জেলার আটপাড়া উপজেলার বাসাটি গ্রামে এক মালজোড়া গানের আসরে জালাল উদ্দীন খাঁ ‘ধরাট’ বা প্রশ্ন রেখেছিলেন-

আল্লা বলতে কেউ নাই এ সংসারে।

মিশে গেছে আলো হাওয়ায়

বিশ্বজুড়ে তালাশ কর কারে?

জালালের প্রতিপক্ষ বাউল ইদ্রিস এই ধরাটের উত্তর দিয়েছিলেন নেত্রকোনার আরেক প্রখ্যাত বাউল কবি রশিদ উদ্দিনের একটি গানের সাহায্য নিয়ে-

জালাল তুমি ভাবের দেশে চল

আল্লাকে দেখবে যদি

চর্মচক্ষের পর্দা খোল।

গিয়া তুমি ভাবনগরে

চেয়ে থাকো রূপ নেহারে

সজল নয়নে ফটোগ্রাফ তোল-

মনরঙে প্রেমতরঙ্গে তোমার দিলের কপাট খোল।

দেখবে তোমার মাবুদ আল্লা

সামনে করে ঝলমল ।।

দেখবে আল্লার রঙ ছুরত

অবিকল তুই জালালের মত

তোর সঙ্গে অবিরত

করে চলাচল।

তোমার রঙে রঙ ধরেছে

হয়েছে এক মিল

তোরে দেখলে তারে মিলে

আর কারে তুই দেখবে বল ।।

এখানে যে ধরনের যুক্তির অবতারণা করা হয়েছে, সে ধরনের যুক্তি প্রয়োগের মধ্য দিয়েই লোকসমাজের কবি গীতিকাররা তাঁদের স্বাধীন চিন্তার উৎসারণ ঘটিয়েছেন। জালাল রচিত গীতিগুলোতেও এ রকমই স্বাধীন চিন্তা ও বিদ্রোহী চেতনার স্পষ্ট ও সার্থক অভিব্যক্তি ঘটেছে। লৌকিক ধর্মের ঈশ্বর বিশ্বাস শাস্ত্রীয় ঈশ্বর-বিশ্বাস থেকে পৃথক। ঈশ্বরকে ও বিশ্বব্রহ্মাণ্ডকে লৌকিক ধর্মের অনুসারীরা মানব দেহের মধ্যেই উপলব্ধি করেন। যা নাই ভাণ্ডে, তা নাই ব্রহ্মাণ্ডে’- অর্থাৎ সারা ব্রহ্মাণ্ডে যা আছে তার সবই আছে মানব দেহের ভেতরে- এটিই তাদের ধর্মবোধ ও জীবনবোধের ভিত্তি। এ বোধ থেকেই তারা ‘সোহংবাদী’ বা ‘আনাল হফবাদী’ অর্থাৎ ‘আমিই ঈশ্বর’ বা ‘আমিই সত্য’- এ রকম ভাবনার অনুসারী। আবার সেই ভাবনা থেকেই তারা ‘মানুষভজন’কারীও, মানুষগুরুকেও তারা ঈশ্বর রূপে মান্য করেন। এ সব কারণেই শাস্ত্র ব্যবসায়ী ধর্মযাজক বা মোল্লা-পুরোহিতের সঙ্গে তাদের বিরোধ উত্তুঙ্গ হয়ে ওঠে। শাস্ত্রের পুঁথিপত্র না ঘেঁটে তারা নিজেদের মতো করে ‘সত্যসিন্ধু জলে’ ডুব দিতে চান।

এরকম সত্যসিন্ধু জলে ডুব দিয়েই জালাল খাঁ তার আত্মতত্ত্বের গানগুলো রচনা করেছেন। ‘জালালগীতিকা ও গ্রন্থের প্রথম খণ্ডের প্রথম গানটিতেই জালাল বলেছেন,

আমার আমার, কে কয় কারে ভাবতে গেল চিরকাল,

আমি আদি আমি অন্ত-আমার নামটি রুহুজ্জামাল।।

আমারি এশকের তুফান, আমার লাগি হয় পেরেশান,

আবাদ করলাম সারে জাহান, আবুল বাশার বিন্দু জালাল।।

আমি ময় অনন্ত বিশ্ব- আমি বাতিন আমি দৃশ্য,

আমি আমার গুরুশিষ্য, ইহকাল কি পরকাল ।।

আমার লাগি আমি খাড়া, আমার স্বভাব হয় অধরা,

আমি জিতা, আমি মরা- আমার নাহি তাল-বেতাল।।

আমি লায়লা আমি মজনু, আমার ভাবনায় কাষ্ঠ তনু,

আমি ইউসুফ, মুই জোলেখা, শিরি-ফরহাদ কেঁদে বেহাল ।।

আমি রোমের মৌলানা, শামছ তাবরেজ দেওয়ানা,

‘জুমলে আলম’ মোর শাহানা, খাজা, সুলতান, শাহ-জালাল।।

আমার বান্দা কারাগারে আমিই বদ্ধ অন্ধকারে,

মনের কথা বলবনারে, কেঁদে কহে দীন জালাল।

জালালের সঙ্গীত ভাবনা তথা জীবনদর্শনে দ্বৈতবাদের কোনো স্থান নেই। সে কারণেই প্রচলিত অর্থে যাঁকে ‘দয়াময়’ খোদা বা ঈশ্বর বলা হয়, তাকে লক্ষ্য করেই জালাল বলেন-

আমি বিনে কে-বা তুমি দয়াল সাঁই

যদি আমি নাহি থাকি, তোমার জায়গা ভবে নাই।

‘সীমার মাঝে অসীম’ এর বোধটিও এবং ‘বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য’ এর ধারণাটিও, জালালের গানে অভিব্যক্তি পেয়েছে। খোদার উদ্দেশ্যে তার বক্তব্য-

বিশ্ব প্রাণের স্বরূপ ছায়া, আমাতে তোমারি মায়া,

ছেড়ে দিলে এ সব কায়া, তুমি বলতে কিছুই নাই ।।

তুমি যে অনন্ত অসীম, আমাতে হয়েছ সসীম;

কালী-কৃষ্ণ, করিম-রহিম কত নামে ডাকছি তাই ।।

এই অদ্বৈতবোধ থেকেই জালাল আত্মস্বরূপের সন্ধান করেন-

মন বেহুদা খোদা বলে ডাকছ কারে?

খোদ ছেড়ে খোদা রয় না-ফুলে হয় ফল যে প্রকারে।

ফল শাখা পত্র ফুল চারযোগে এই তরুকুল

যার তার জাতি প্রকৃতি মূল নিজেকে নিজে চিনবেন নারে।

নিজেকে নিজে চিনে দিয়েই জালাল খোদা বা ভগবানকেও চিনে নিতে পেরেছেন এবং একান্ত প্রত্যয়ের সঙ্গে বলে ফেলেছেন-

দরবেশ তুমি আল্লা খোঁজ ঋষি খোঁজে ভগবান

হয় না দেখি কারো সাধ্য করতে তার অনুসন্ধান।।



ভগবান নয় জানোয়ার কিসে দেখা পাবি তাহার

পাইলে পাবে স্বরূপ সাকার যে রূপ আজ বর্তমান।।

‘স্বরূপ সাকার’ ও ‘বর্তমান’ যে মানুষ, সেই মানুষকেই তো ফেরেশ্তারা সেজদা দেয়। যে-ফেরেশ্তা মানুষকে সেজদা দিতে অস্বীকার করেছিল, সেই তো হয়ে গেল শয়তান। সে-কথা স্মরণ করেই জালালের অনুজ্ঞা-

আদমকে করতে এতেকাদ, শয়তান হয়ে যাবে তফাত

থাকে যদি দিরের সাধ, সেজদা দেও মানুষের পায়।

মানুষের মহিমাই ধরা পড়েছে জালালের গানের বিভিন্ন চরণে। কয়েকটি দৃষ্টান্ত এ-রকম,-

১. মানুষ থুইয়া খোদা ভজ, এই মন্ত্রণা কে দিয়াছে,

মানুষ ভজ কোরান খোঁজ পাতায় পাতায় সাক্ষী আছে

২. করিম রহিম রাধা কালী এ বোল সে বোল যতই বলি

শব্দ ভেদে ঠেলাঠেলি হইতেছে সংসারে।

মানবদেহে থেকে স্বয়ং একই শক্তি ধরে

প্রেমের মূর্তি লয়ে একজন বিরাজ করে প্রতি ঘরে।

৩. প্রতি ঘটেই খোদা আছে এ বিশ্বব্রাহ্মণ্ডময়

সে তো পাখির মতো খাঁচায় পুরে

এক স্থানেতে রাখার নয়।

৪. বিচার করলে নাইরে বিভেদ কে হিন্দু কে মুসলমান

রক্তমাংসে একই বটে সবার ঘটে একই প্রাণ।

৫. মানুষের ছুরত তার মধ্যে কুদরত

সেই জন্য ভজিতে হয় মানুষের চরণ।

৬. মানুষের ছবি আঁকো, পায়ের ধূলি গায়ে মাখো

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:০৯

কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: ইন্টারেস্টিং! এই ধরনের পোষ্ট এখন ব্লগে প্রায় আসেই না। ভালো লাগল আপনার লেখা। আবারও ফিরে আসব। :)

২| ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:০৩

রবিনের প্রান "বাংলাদেশ" বলেছেন: ধন্যবাদ

৩| ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৪২

সুমন কর বলেছেন: ভাল পোস্ট।

১১ ই জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১২:২৫

রবিনের প্রান "বাংলাদেশ" বলেছেন: ভাল

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.