![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
রবিন শাহের নির্বাচিত কবিতা ২০১৬
--স্রষ্টার ঘর--
স্রষ্টার ঘর- ঝক ঝকে , তক তকে , ফাকা
স্রষ্টার ঘর- স্নিগ্ধ শীতল ফুর ফুরে হাওয়া
স্রষ্টার ঘর- কৃত্রিমতামুক্ত , স্বচ্ছ সতেজ
স্রষ্টার ঘর- স্বার্থ শুন্য
স্রষ্টার ঘর- নীরব , নিস্তব্ধ , আনন্দময়
স্রষ্টার ঘর- একমাত্র আশ্রয়
একজন ভালো মানুষের হৃদয়- “স্রষ্টার ঘর”
শুধু ভালো মানুষের হৃদয়ে বসবাস করেন তিনি
তাই, ভালো মানুষের চেয়ে মূল্যবান কিছু নেই , কেউ নেই ।
--শুন্যের সাথে উড়াউড়ি--
আমরা ভেঙেছি কামনা-বাসনার সকল দেয়াল
তোমার আর আমার মাঝে আজ আর কোন দেয়াল নেই ,
এমন কি এক বিন্দু ঘৃনা কিংবা অবিশ্বাসের দেয়ালও আর নেই অবশিষ্ট
একটার পর একটা দেয়াল ভেঙে আজ তোমার-আমার সম্পর্ক সেরকম
পাখির সাথে শুন্যের সম্পর্ক যেরকম ।
--শেষ বিদায়--
এক পলকের এ জীবন
বাচতে দাও প্রান ভরে ।
এ গানই , জীবনের শেষ গান
গাইতে দাও প্রান খুলে ।
এ ভালোবাসাই , শেষ ভালোবাসা
ভুল-ত্রুটি সব ভুলতে দাও ।
এ আনন্দ , শেষ আনন্দ
প্রান আনন্দে মাততে দাও ।
এ খেলা , জীবনের শেষ খেলা
সেরা খেলাটা খেলতে দাও ।
এ বিদায়, শেষ বিদায়
আরেকটু কাছে থাকতে দাও ।
এ উচ্ছাস , জীবনের শেষ উচ্ছাস
হাসতে হাসতে অশ্রু নামে ।
এ শোক , জীবনের শেষ শোক
কান্নার জোয়ারে সব ভাসে ।
এ দেখাই শেষ দেখা
যেমন আকাশ দেখে- পাখি উৎসব ।
এ কথাই শেষ কথা
কথার মায়ায় জড়িয়ে ধরি ।
এ ভ্রমন , আমাদের শেষ ভ্রমন
ফুরফুরে হাওয়ায় উড়ি আর উড়ি ।
এ কাজই জীবনের শেষ কাজ
পরতে পরতে ছড়াই সুন্দর ।
এ বিশ্বাসই জীবনের শেষ বিশ্বাস
বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই ।
এ ঘুমই জীবনের শেষ ঘুম
নিশ্চিহ্ন আমি আধারে মিলাই ।
এই তো চায়ে শেষ চুমুক
প্রান ভরে নেই অমৃত স্বাদ ।
একটু পরেই আসবে মরন , উড়বে আমার পরান পাখি
ভাঙবে খাচা সকল বাধ ।
--মহা-মায়া--
মা-বাবার কাছে তার সন্তান মায়ার ঈশ্বর
সন্তানের কাছেও তার মা-বাবা মায়ার ঈশ্বর।
প্রেমিকের কাছে তার প্রেমিকা মায়ার ঈশ্বর
প্রেমিকার কাছেও তার প্রেমিক মায়ার ঈশ্বর।
রিকশাওয়ালার কাছে তার যাত্রী মায়ার ঈশ্বর
যাত্রীর কাছেও তার রিকশাওয়ালা মায়ার ঈশ্বর।
বহুরূপে এক ঈশ্বর মায়ার বাধনে সব বুকে আগলে রেখেছেন ,
ধন্য তিনি , পরম ধন্য , যিনি এ মায়ার সুরে একাত্ম হয়ে গেয়ে চলেছেন- ভালোবাসার গান ।
--“আমি”র ডাক--
সুখের করিনা তালাশ
আমিই সুখ
এসো আমার কাছে , পেতে সুখ ।
সৌন্দর্য্যের করিনা তালাশ
আমিই সৌন্দর্য্য
এসো আমার কাছে , দেখতে সৌন্দর্য্য ।
শক্তির করিনা তালাশ
আমিই শক্তি
এসো আমার কাছে , পেতে শক্তি ।
মায়ার করিনা তালাশ
আমিই মায়া
এসো আমার কাছে , পেতে মায়া ।
ধন-সম্পদের করিনা তালাশ
আমিই ঐশ্বর্য্য
এসো আমার কাছে , পেতে ঐশ্বর্য্য ।
মুক্তির করিনা তালাশ
আমি এক মুক্ত হাওয়া
এসো আমার কাছে , নিতে মুক্তির স্বাদ ।
সম্মানের করিনা তালাশ
আমিই সম্মান
এসো আমার কাছে , হতে সম্মানিত ।
সন্দেহের করিনা তালাশ
আমিই বিশ্বাস
এসো আমার কাছে , ফিরে পেতে আত্মবিশ্বাস ।
বিস্ময়ের করিনা তালাশ
আমিই বিস্ময়
এসো আমার কাছে , হতে বিস্মিত ।
রহস্যের করিনা তালাশ
আমি প্রকাশ্য
এসো আমার কাছে , হতে বিকশিত ।
ক্ষুদ্রতার করিনা তালাশ
আমি বিরাট
এসো আমার কাছে , পেতে আশ্রয় ।
জ্ঞানের করিনা তালাশ
আমিই জ্ঞান
এসো আমার কাছে , হতে জ্ঞানী ।
চিন্তার করিনা তালাশ
আমি চিন্তামুক্ত ফুর্তি
এসো আমার কাছে , পেতে ফূর্তি ।
জটিলের করিনা তালাশ
আমি সহজ
এসো আমার কাছে , পেতে সহজানন্দ ।
জীবনের করিনা তালাশ
আমিই জীবন
এসো আমার কাছে , ফিরে পেতে জীবন ।
বহুর করিনা তালাশ
আমিই এক
এসো আমার কাছে , হতে এক ।
শুদ্ধতার করিনা তালাশ
আমিই শুদ্ধ
এসো আমার কাছে , হতে শুদ্ধ ।
লাভ-ক্ষতির করিনা তালাশ
আমিই মহামূল্যবান
এসো আমার কাছে , হতে মূল্যবান ।
ভূত-ভবিষ্যতের করিনা তালাশ
আমি যে নিত্য নুতন
এসো আমার কাছে , পেতে টাটকা নূতন ।
--আমার স্বাদ—
বসন্তের আমি এক মাতাল হাওয়া
ফুরফুরে উড়ে বেড়ানোই আমার নিয়তি
এ জগত সংসার আমার ফুলের বাগান ।
পরশে আমার , ফুলেরা ঐ দোলে আর দোলে
ওদের সুখে হৃদয় আমার , ওড়ে শুধু ওড়ে ।
--প্রেম বাগানের ফুল--
প্রেমের এই বাগান- সমস্ত সৃষ্টি জগৎ
প্রতিটা মানুষ এই বাগানের সর্বোচ্চ সৌন্দর্য- ফুটন্ত ফুল
মানুষের দোষ ত্রুটি হচ্ছে সেই ফুলের কাটা
আমরা কাটা সামলিয়ে শুধু সেই ফুলের সৌরভ নিবো আর মাতাল হবো ।
--সহজিয়া ধর্ম--
না ভাবিও , না যাচাইয়ো
শুধু ভালোবাসিয়ো , সহজে……।
না চাইয়ো , না পাইয়ো
শুধু দিও , সহজে……।
না ফিরাইয়ো , না দিও বিদায়
শুধু কাছে টানিয়ো , সহজে……।
না “দুই” এ , না “তিন” এ
শুধু “এক” এ থাকিও , সহজে……।
না মরিয়ো , না ঝুলিয়ো
শুধু ভরপুর বাচিও , সহজে……।
না সিরিয়াস , না মান আর করিয়ো
শুধু প্রানখোলা হাসি হাসিয়ো , সহজে………।
না জাগরনে আর স্বপন দেখিও
নিশ্চিহ্ন ঘুমাইও , সহজে…।
না নিচে , না ওপরে
সদা সর্বদা থাকিও সহজে……।
--মন্ত্র--
বিশালে হাসি
এমনি ভালোবাসি....
--সুত্র--
হাসি এখন
কান্না পরে ।
--মধুর ভুল--
কাটা গুলো – এই ভুল গুলো সরিয়ে
শুধু ভালোবাসবে আর আমার সুবাস নিবে
মাতাল হবে , ধন্য হবে
--ধনী--
যে দেয় , সে পায়
যে চায় , সে হারায় ।
--“সমগ্রের ভেতরে”--
মনে সে করেছিল - আমি নেই , যেমন মাছেরা জানেনা সমুদ্র কি অগাধ !
অথচ ছোট্র পুতুল সে , আমার ভেতরেই- “হাত পা ছুড়ে নাচলো , কাদলো, হাসলো , ছুটে বেড়ালো
তারপর ঘুমিয়ে পরলো”
তার সমস্ত কান্ডকারখানা আমার ভালোই লাগছিলো
গর্বে পত পত করে উড়ছিলো , আমার ঢেউ এর পতাকা ।
--জপমালা--
প্রতিদিন ১০০ বার বলিঃ
আমিই মুক্ত আনন্দ
প্রতিদিন ১০০ বার বলিঃ
আমার কারনে সবাই সুন্দর
প্রতিদিন ১০০ বার বলিঃ
“কঠিন” আমার কাছে আসলে, “সহজ” হয়ে যায় ।
--শ্রবন--
নারী ও শিশুর কন্ঠ যেন পরমের কন্ঠস্বর
শুনলেই হৃদয়ে বয়ে যায় আনন্দ ধারা
যে ধারায় ভেসে যায় সব অসুন্দর ।
--সর্বোক্ষন--
শিশুর মুক্ত মনরে করো স্মরন
হাসো বিশালে অকারন
এই কথাটা মানিলে ও মন
হবে না আর তোমার মরন ।
--প্রেম ও ঘৃনা--
এক বুক ভালোবাসায়
এক চিমটি দোষ খুজলেই , হয়ে যায় তেতো।
অন্ধ প্রেমিক না হলে , হবে না বিরাট
আর বিরাট না হলে পাবেনা- আনন্দ।
--সত্যম--
সাদরে মৃত্যুরে করলে গ্রহন
জীবন ছোবে তোমার রাঙা চরন।
মন মাতানো হাসি হাসবে তখন
প্রান খোলা কান্না কাদবে যখন।
দোষ ধরা ভুলে যাবে যেদিন
প্রেমিক হবে সেদিন ।
ক্ষুদ্রতারে ছুরে ফেললে
বিশালতার দেখা পাবে।
দিয়ে দিলে
পেয়ে যাবে ।
--বিশ্বাস—
“পুকুর” , কখনো তৃষ্ণার্তের কাছে যায় না
বরং “তৃষ্ণার্ত” , পুকুরের কাছে আসে ।
হে পথিক!
আমি বিশ্বাসের এক মিঠা পুকুর
এসো আমার কাছে , আর পান করো যতো পারো “সুস্বাদু বিশ্বাস”
হারানো আত্মবিশ্বাস পাবে ফিরে
আর দূর হবে তোমার সন্দেহের জ্বালা ।
--আমি--
“মজার মানুষ খুব সাধারন”
আমি-
“সরলে সতেজ , অটলে সহজ একজন”
--মুক্তি--
ঘৃনার দাড়িপাল্লায় , আমায় রেখো না বন্দি
অদম্য প্রেমের উদ্দাম আনন্দে , আমায় মুক্তি দিও ।
--ইচ্ছা গুরু--
মানুষ নিজেই নিজের ইচ্ছাগুরু
এই ইচ্ছার বলেই সে অদম্য প্রেমের রাজা হয়
এই ইচ্চার ঘাটতিতেই সে ঘৃনার চোরাবালিতে ডুবে মরে ।
ইচ্ছার পূজায় সে মহাশক্তিধর
এই ইচ্ছার অপূর্নতায় সে দুর্বল ।
চরম ইচ্ছায় সে অসম্ভবকে সম্ভব করে
এই ইচ্ছার অভাবে সে সামান্য কাজেই ব্যর্থ হয় ।
তার নিজের ইচ্ছাতে সে সুখী
আর ইচ্ছা নেই বলে সে নিজেকেই নিজে করে রাখে দুখী ।
দ্বিধান্বিত ইচ্ছায়- সে থাকে সন্দেহের কারাগারে বন্দি
অথচ “অদম্য ইচ্ছা” , তারে বিশ্বাসের আকাশে মুক্তি দেয়।
--সাধনা--
প্রেম সাধনা বিনা
পাবি না মন কাম রসনা
কাম দেবী ধরবি যদি মন
প্রেম সাগরে আস না ।
--জয়ীতা--
নারীতে উন্নয়ন , নারী বিনা অধঃপতন
নারীতে জন্ম , নারী বিনা মৃত্যু
নারীতে বিকাশ , নারী বিনা বিনাশ
কমনীয়-নমনীয়তার প্রতীক- এক নারী , কত শত হাজারো রূপেই না বিরাজমান !
--জয়--
ভয়ের মরন যেখানে
জীবনের শুরু সেখানে ।
--হাওয়াই পাখি--
“ঘুরি” নিয়ে ফুরফুরে হাওয়া যেমন ওরে
শরীরকে নিয়ে আমিও তেমনি উড়ি
আমি এক হাওয়াই পাখি
যদিও পাখি আমি শুন্যে থাকি , অথচ শরীরের আশ্রয়- এই আমি
শরীরকে উড়িয়ে আনন্দ দিলে , আমারও লাগে ভালো ।
--সহজিয়ার আবর্তে--
বিশেষ চরম বা জটিলে শান্তি নেই
যত শান্তি সব সহজে
যে যত সাদা মাটা সে তত সুখী
যে যত সাধারন সে তত সুন্দর
যে যত সরল সে তত মহান
সব কিছু যে সহজভাবে দেখে
তাকেও সবাই সহজভাবে নেয়
জটিলতাকে যে খুজে বেড়ায় , সেও পরে যায় জটিলতার ঘুর্নিপাকে
গরু ঘাস খাচ্ছে , পাখি শীষ দিচ্ছে , ডলফিন সাতরে বেড়াচ্ছে , গাছ দেদোল দুচ্ছে - সবাই নির্ভাবনায়
শুধু মানুষ ছাড়া
--অন্ধত্ব--
অন্ধের মত মানুষরে ভালোবাসলে , তুমিই মনের মানুষ
অন্ধের মত মৃত্যুরে ভালোবাসলে , জীবন তোমার রাঙা চরনে
অন্ধের মত ভালোবাসলে “ফাকা”রে , পুর্ন তুমি পরমানন্দে
অন্ধের মত নিরাবতারে ভালোবাসলে , কোলাহল অনুসরন করবে তোমাকে
অন্ধের মত “বিনা স্বার্থরে” ভালোবাসলে , সবাই তোমার স্বার্থে
অন্ধের মত “কিছুই না” কে ভালোবাসলে , সব কিছু তোমার
অন্ধের মত ভালোবাসলে “সহজ” কে , তুমি বিরাট ।
--হাজিরা--
তোমার উপস্থিতি যদি হয় , অন্যের ভালোলাগার কারন
ধন্য তুমি , “প্রেমানন্দ” তুমিই কর ধারন
--নারী তুমি--
কখনো কোনদিন দেখিনি তোমায়
হইনি মাতাল , নেই নি স্নিগ্ধ কেশের ঘ্রান
ছুয়ে দেখিনি তন্বি তোমায়
আমিতো না দেখেও দেখে যাই তোমার সতেজ প্রান
অদম্য বন্যতায় নেই তোমার সুবাস
না শুনেও বাজাই প্রানে তোমার কোকিল কন্ঠ
না ছুয়েও জড়াই নিজেকে তোমার মায়াবি আলিঙ্গনে।
--আরাধনা--
মানুষ ভজো, মানুষ পূজো শোন বলিরে পাগল মন
মানুষের ভেতর মানুষ করিতেছেন বিরাজন
জীবনে কি মরনে, মানুষই মানুষের ঠাই
তার পাশে কোন দেবতা অসুর কেউ নাই
যে কোন মানুষকে নিচ দৃষ্টিতে দেখা মহা পাপ
“মানুষ” পরমের সর্বোচ্চ রূপ, তাই মানব সেবাই সর্ব শ্রেষ্ঠ আরাধনা
--মানুষ ধর্ম—
মানুষ নামের ফুল ফুটেছে
সে ফুলের ঘ্রানে , প্রান মাতাল হয়েছে
পরমেশ্বর , বিমূর্ত থেকে মূর্ত হয়েছে
মানুষের হাসিতে নূর ঝরেছে
মানুষ দেখে , নয়ন জুড়িয়েছে
মানষের বিশালতায় , জীবন ধন্য হয়েছে
জন সমুদ্রে , হৃদয় জেগেছে
মানুষের টানে , হৃদয় নেচেছে
মানুষের টানে মানুষ , মরনকেও পেছনে ফেলেছে
মানুষ নেই যেখানে , সেখানে আধার নেমেছে
মানুষ চলে গেলে , বুকের পাজড় ভেঙে নয়ন ভিজেছে
মানুষে ঘৃনায় , হৃদয় পুরেছে
“মানুষ”কে যে ভুলে গেছে , অমানুষ সে হয়েছে
“হাস্বোজ্জল নিজের রূপ”রে যে স্মরন করেছে
আনন্দ আকাশে সে উড়েছে
বহুরূপে সম্মুখে তোমা , ছাড়ি কোথা খুজিছো ঈস্বর? – বিবেকানন্দ বলেছে
সবার ওপরে মানুষ সত্য , তাহার ওপরে নাই
ভৃত্য চড়িল উটের পৃষ্ঠে , ওমর ধরিল রশি
মানুষে স্বর্গে তুলিয়া ধরিয়া , ধুলায় নামিল শশী
– কবি নজরুল বলেছে
মানুষ ভজো , মানুষ পূজো
শোন বলিরে পাগল মন
মানুষের ভেতরে মানুষ , করিতেছেন বিরাজন – সাইজি বলেছে
বাড়িতে আসিলে অথীতি নারায়ন তা থৈ নাচিয়া ওঠে আমার মন। - রবিন বলেছে
--শান্তির শর্ত—
এ “প্রকাশ্য” , এ “বাহির”, এ “সমগ্র” , এ “জগত”- এ যে আমার শরীর
আমার শরীরের যে কোন অংশের প্রতি সামান্য ঘৃনাতে , বেড়ে যায় আমার কষ্ট
আমার শরীরের যে কোন অংশের প্রতি সামান্য তুলনায় , বেড়ে যায় আমার যন্ত্রনা
সমুদ্রের ভেতরে যেমন ঢেউ এরা
আমার ভেতরেও তেমনি এই জগত- এই শরীরেরা
ঢেউ এর আঘাতে সমুদ্রের যেমন প্রতিক্রিয়া
আমার শরীরের আঘাতেও আমার তেমনি প্রতিক্রিয়া
আমার শরীর , আমার বিশালতা
আমার শরীর , আমার ভালোবাসা
আমার শরীর , আমার অকাতরে দান
আমার শরীর , আমার ঐশ্বর্য্য
আমার শরীর , আমার সৌন্দর্য
আমার শরীর , আমার আনন্দ অশ্রু
আমার শরীর , আমার স্বর্গ
আমার শরীরে- আমি নিত্য নতুন
আমার শরীরে- আমি স্নিগ্ধ ফাগুন
আমার শরীরে- আমি নির্ভার নিশ্চিন্ত
আমার শরীরে- আমি সহজিয়া আক্রান্ত
আমার শরীরে- আমি ভেতরের কারাগার থেকে মুক্ত
মন মুক্ত থাকলে , আমি শান্তিতে থাকি
আর আমার মন তখনই মুক্ত থাকে , যখন আমি আমার শরীরকে – এই সবাইরে নিঃর্স্বাথ ভালোবাসি ।
--বিশালতার আনন্দ--
সমুদ্র , তার বিশালতায় ঢেঊদের ঠাই দিয়েছিল বলেই
ঢেউদের হৃদয়- আনন্দ উত্তাল ।
--প্রেম কামনা--
শরীরকে ভালোবাসলে , কামনা জাগে
কামনা জাগলে , আনন্দ আসে
আনন্দ আসলে , মায়া ভাসে
মায়া ভাসলে , সুখ সাগরে ডোবে ।
--রাজনীতিবিদ--
আমার হৃদয় সাগরে
যত জনতা , তত ঢেউ
যত ঢেউ , তত বিশালতা
আমার বিশালতায় , বাধ ভাঙা আনন্দে- সব ভেসে যায় ।
--“এক” এর নেশা--
শিকারীর ওপর আক্রমনের সময় সিংহের মধ্যে কোনও মায়া কাজ করে না
ভোগের সময় ত্যাগকে যে গুলিয়ে ফেলে , তাকে না খেয়ে মরতে হয় ।
খাওয়ার সময় শুধু খাই প্রান ভরে , তুলি তৃপ্তি ঢেকুর
ঘুমানোর সময় শুধু ঘুমাই , হই নিশ্চিহ্ন
কাজের সময় হই বিরাট , থাকি বিশ্রামে
দেয়ার সময় বিনিময় না চেয়ে দিয়ে দেই , সব পেয়ে যাই ।
--মানুষ নীরঞ্জন--
বহু রূপে সন্মুখে তোমা ছাড়ি কোথা খুজিছো ঈশ্বর?- স্বামি বিবেকানন্দ
ধরো মানুষের চরন দুটি , নিত্য বস্তু হবে খাটি। - লালন সাইজি
সবার ওপরে মানুষ সত্য তাহার ওপরে নাই । - কবি
মানুষের মতো সৌন্দর্য বিশ্ব ভূবনে নাই
পরম স্বয়ং মানব মূর্তিতে নিলেন ঠাই
তাই মানুষকে ভালোবাসলে , পরমকে ভালোবাসা হয়
মানুষকে সম্মান দিলে , পরমকেই সম্মান দেয়া হয়
তোমার শরীর আমার শরীর – আসলে একজন মানুষ
এই মানুষের শরীরের গন্ধে আমি নেশাতুর
এই মানুষের রোম থেকে রোম কুপে করি আবগহন
এই মানুষের শরীরের স্পর্শে , মনে লাগে শিরোহন
আমার সারা দিনের কর্ম , এই মানুষেরে দিতে উজ্জীবন ।
মুক্ত হাওয়া ছাড়া যেমন বাচা যায় না
মানুষ ছাড়াও তেমনি দম বন্ধ হয়ে আসে
মানুষ ছাড়া মানুষের শান্তি আসে না।
মানুষ আমার আনন্দ প্রতিমা , রূপে তার “আনন্দ প্রদীপ” জ্বল জ্বল জ্বলে
পরাই আমি “আনন্দ মালা” মানুষের গলে ।
মানুষেরে নিয়েই আমার সারা দিনের পূজা অর্চনা
জনম কি মরন , সর্ব ব্যাপি মানুষ ছাড়া মানুষের আর নাই কোন সাধনা ।
মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব হয়
পাপ কে ঘৃনা কর , পাপীকে নয়
মানুষরে করলে অবিশ্বাস , হবে ক্ষয় তোমার , হবে নিশ্চয় ।
মানুষের মাঝে মানুষের মেলায় মনে শান্তি পাই
মানুষের সাথে মানুষ যতদিন , ততদিন আর চিন্তা নাই ।
মানুষের চেয়ে মূল্যবান কিছু নেই
মানুষের শরীরের চেয়ে পবিত্র আশ্রয় নেই
মানুষের শরীরের সেবার চেয়ে বড় কোন কাজ নেই ।
--আরাধনা--
হে আমার শরীরের অংশ , আমার জীবনের জীবন , আমার প্রজ্বলিত প্রতিমা , আমার অকাতরে দান ঐশ্বর্য্য !
আমি যে তুমি , তুমিই যে আমি
আমায় ভালোবাসো না বাসো , আমি আমায় ভালোবাসিয়া যাবো
আমায় মারো না বাচাও , আমি অফুরন্ত প্রানোবন্ত
আমায় সম্মান করো না করো , আমি সম্মানিত
৫০০ কোটি টাকা দামের প্রতিমা গড়ে দিয়েছি , যা তুমি “শরীর” নামে বয়ে বেড়াও
আমার অকাতর দানে কৃতজ্ঞ হও না হও
আমি শুধু দিয়েই যাবো , এই আমার সারাদিনের আরাধনা
তোমায় দিলে , সে যে আমায় দেয়া হয় , এ কি তুমি জানো না?
--নারী-পুরুষ—
সমগ্র নারী জাতি , আসলে একজন মানবী
নারী ! সে যে পরমের চরম সৌন্দর্য
নারী ছাড়া পুরুষ , বেসামাল কদাকার
নারী! সে যে পুরুষের পরম গুরু , সবচেয়ে আপন ।
সমগ্র পুরুষ জাতি আসলে একজন মানব
পুরুষ ! সে যে পরমের চরম শক্তি
পুরুষ ছাড়া নারী দুর্বল , অসহায়
পুরুষ! সে যে নারীর পরম গুরু , সবচেয়ে আপন ।
নারী-পুরুষের প্রেম থেকে জন্ম নেয়- ভালো পরিবার
ভালো পরিবারে জন্ম নেয় সঠিক নেতৃত্ব
সঠিক নেতৃত্ব জন্ম দেয়- সুস্থ সমাজ ।
--ঝর্না ধারার ব্যক্তিত্ব—
ও গোপন হৃদয় আমার,
তোমায় প্রথম যেদিন দেখলাম , মনে হলো তুমি যেন প্রানবন্ত এক ঝর্নাধারা ,
বিশালতার আনন্দে ফেটে পরছিলে সুন্দর ।
তোমার রিনিঝিনি রিনিঝিনি ব্যক্তিত্বের সামনে, আমার নিস্তেজ প্রান , একটু একটু করে জাগছিল
তোমারই অঝর ধারায়- আমার ধুলো পরা চেতনা , স্নানের জন্য ছিল উদগ্রীব
আমায় বিষন্ন দেখে , তুমি দুনিয়া কাপানো হাসি হাসলে
আর তোমার অবারিত দানে আমায় জড়িয়ে ধরে , আমায় ধন্য করলে , পূর্ন করলে
আমি মুগ্ধ হলাম , মাতাল হলাম
তোমার বিশালতার পরশে মৃত আমি ফিরে পেলাম প্রান আর উড়াল দিলাম তোমারই হৃদয়াকাশে ।
--নিশ্চিহ্নের স্বাদ--
একটা ক্লান্ত পাহাড়ের মত ধসে পরতে দাও
একটা মরা পাতার মত খসে পরতে দাও আমায়
মোমের শেষ বিন্দু আমি , দপ করে নিভে যেতে যাও
নিশ্চিহ্ন হতে দাও- এই নিঃঝুম আধারে ।
--ভেতর-বাহির--
“বাহির” , আমার স্বর্গ
আর “ভেতর” , সে স্বর্গের উৎস ধারা
এক একটা মানুষ , স্বর্গের এক একটা ফোটা, একটা আনন্দ
--মানুষের স্তর—
যে যত নিচে , সে তত একা
নিম্নস্তরের মানুষ , বেওয়ারিশ কুকুরের মত একা একা
যে একটু কম নিচে সে ২ / ৪ জন নিয়ে থাকে, সে পারিবারিক , পুরো পরিবারটি তার নিজের শরীর
যে একটু ওপরে , সে পরিবারের গন্ডি পেরিয়ে হয়ে যায় সামাজিক , তার সমাজ তার শরীর
যে আরেকটু ওপরে , সে তার পুরো এলাকাটি ধারন করে তার বুকে , সে আঞ্চলিক
যে আরো ওপরে , সে তার পুরো দেশটায় তার প্রান ঢেলে দেয় , সে দেশপ্রেমিক।
যে সবার ওপরে , সে ধর্ম বর্ন নির্বিশেষে সবাইরে ঠাই দেয়- তার আকাশের মত বিশাল হৃদয়ে
সে মানবতাবাদী , সারা দুনিয়াটারে সে নিজের শরীর জ্ঞান করে যত্ন নেয় ।
--সাধারন--
সামান্য একটা ঘাসের মত , আমায় বাচতে দাও সাধারন
বাশের মত , আমি বিশেষ কিছু হতে চাই না
জীবন-ঝরে সবার আগে “বিশেষ”রা উপড়ে যায় , সাধারনরা বেচে থাকে।
--চেতনা--
প্রান মাঝারে আছে এক ঘোড়ার গাড়ী
আকাশে গিয়ে ঠেকেছে সে গাড়ীর ছাদ
ছাদের ওপরে শুন্যে বসে আছি- চেতন গুরু
ঘোড়া-গাড়ীর ঘোড়া গুলো আসলে- “এই প্রকাশ্য – এই শরীরেরা”
জীবন গাড়ী তখনই উড়বে , যখন আমি শরীরদের ভালোবাসবো
আর ঘৃনা করলে ,জীবনের দড়ি ছিড়ে যাবে , আনন্দ চলে যাবে।
--শাসন--
“নিঃস্বার্থ প্রেমিক” আসলে “শাসক” , সবার ওপরে তার স্থান
অহংকারীর ভেতরে “ঘৃনাবোধ”-আসলে “মশা” , সীমা অতিক্রম করলেই শাসকের হাতে মারা পরে
অভিমানী দুর্বল , সে আসলে বিড়াল , সীমা অতিক্রম করলে তাকেও খেতে হয় দাবড়ানি ।
……০……
প্রিয় সাধকদের থেকে চয়নকৃত চুম্বক অংশঃ
ফূর্তির কবি ওমর খৈয়ামের নির্বাচিত কবিতা (অনুবাদঃ কাজী নজরুল ইসলাম)ঃ-
১
প্রেমের চোখে সুন্দর সেই হোক কালো কি গৌর-বরন
পরুক ওড়না রেশমি কিংবা পরুক জীর্ন দীন বসন
থাকুক শুয়ে ধুলায় সে কি থাকুক সোনার পালঙ্কে
নরকে সে গেলেও প্রেমিক করবে সেথায় অন্বেষন ।
২
নিদ্রা যেতে হবে গোরে অনন্তকাল, মদ পিও
থাকবে না কো সাথী সেথায় বন্ধু প্রিয় আত্মীয়
আবার বলতে আসবো না ভাই, বলছি যা তা রাখ শুনে-
ঝরেছে যে ফুলের মুকুল, ফুটতে পারে আর কি ও?
৩
মরুর বুকে বসাও মেলা, উপনিবেশ আনন্দের
একটি হৃদয় খুশি করা তাহার চেয়ে মহৎ ঢের
প্রেমের শিকল পরিয়ে যদি বাধতে পার একটি প্রান-
হাজার বন্দী মুক্ত করার চেয়েও অধিক পুন্য এর ।
৪
শারাব নিয়ে বসো, ইহাই মহমুদেরই সুলতানৎ
দাউদ নবীর শিরিন-স্বর ঐ বেনু বীণার মধুর গৎ
লুট করে নে আজের মধু, পূর্ন হবে মনস্কাম
আজকে পেয়ে ভুলে যা তুই অতীত আর ভবিষ্যৎ ।
৫
এক নিশ্বাস প্রশ্বাসের এই দুনিয়া, রে ভাই, মদ চালাও !
কালকে তুমি দেখবে না আর আজ যে জীবন দেখতে পাও
খাম খেয়ালির সৃষ্টি এ ভাই, কালের হাতে লুটের মাল
তুমিও তোমার আপনাকে এই মদের নামে লুটিয়ে দাও !
৬
নগদ যা পাও হাত পেতে নাও,
বাকির খাতা শূন্য থাক।
দুরের বাদ্য লাভ কি শুনে,
মাঝখানে যে বেজায় ফাঁক।
……………
বাবা জালালুদ্দিন রুমির কাব্য গ্রন্থ থেকে চয়নকৃত চুম্বক অংশঃ
হৃদয়ের কৃষক আমি
বুনে যাই “প্রেম বীজ” , আর তুলে নেই “আনন্দের ফসল”
*
প্রিয়তমাকে খুজে পাবে তখনি , যখন তুমিই প্রিয়তমা
*
যেখানেই তুমি থাকো , আর যাই করো না কেন , প্রেমেই থেকো ।
খুলে গেলাম আমি আর হলাম প্রেমে পূর্ন
*
তুমি একা নও
তুমি হাজারো
শুধু হৃদয়ের আলোটা জ্বালো
*
এমনকি সমস্ত পৃথিবীও যদি দুঃখ দিয়ে মুড়ে ফেলা হত
সে তেমন কষ্ট পেতনা , যদি শক্ত করে “প্রেম” কে ধরে থাকতো
এবং প্রেম যদি তাকে এতটুকুন নাচাতো
এমন হাজারো পৃথিবী তার ছোট্ট হাতে এসে পরতো
যখন আমি তাকে দেখি তখন আমি আমাকেই দেখি
আর যখন আমি আমাকে দেখি তখন তাকেই দেখি
*
তোমার আলোর ঝলকানিতে আমায় বিদ্ধ করো , যাতে আমার দৃষ্টি তোমার প্রেমে হয় উজ্জ্বল
*
বাইরে দৌড়িয়ো না , ভেতরে দৌড়াও , যেমনটি পাকা আঙ্গুর নিজের মিষ্টতার দিকেই দৌড়ায়
*
যত পারো তোমার আত্মাকে ভরিয়ে তোলো প্রেমে
সেটাই একদিন হয়ে যাবে পরম আত্মা
*
ও প্রেম , ও বিশুদ্ধ গভীর প্রেম , এইখানে , এখনে , সবাতে
*
নিস্তব্ধতা কে নিয়ে যেতে দাও তোমার জীবনের মর্মে
*
জিজ্ঞেস করো না – প্রেম কি করতে পারে ?
বরং তাকাও এই দুনিয়ার রঙে
*
যখন আত্মা জেগে ওঠবে- ঠোটে
তুমি সেই চুম্বন করবে অনুভব
যা তুমি চেয়েছিলে
*
যদি সারা জাহানো কাটায় ভরে যায় , তখনো প্রেমিকের হৃদয় গোলাপের বিছানা
*
যখন তুমি প্রেম কে খুজে পাবে , তুমি খুজে পাবে তোমার নিজেকে
ডানা নিয়েই তুমি জন্মেছিলে
পোকা মাকড়ের মতো হামাগুড়ি দেয়ার জন্যে তুমি না , হামাগুড়ি দিয়োনা
*
আমি চাই সেই প্রেম যে পাহাড় নাড়িয়ে দেয়
আমি চাই সেই প্রেম যে সমুদ্রকে পর্যন্ত আলাদা করে দেয়
আমি চাই সেই প্রেম যে হাওয়ায় ধরায় কাপন
আমি চাই সেই প্রেম যে বজ্রের মতো গর্জন করে ওঠে
আমি চাই সেই প্রেম যে মৃত্যুকেও জাগিয়ে তোলে
আমি চাই সেই প্রেম যে পরমানন্দে আমাদের উঠিয়ে নেয়
আমি চাই সেই প্রেম যে অসীমের স্তব্ধতা
*
এটা প্রেমঃ
গোপন আকাশে যায় উড়ে
*
জটিল সব ভাবনাকে ছাড়িয়ে যাও
আর খুজে পাও সেই বেহিসেবি বেহেস্ত
তোমার ছোট এই পৃথিবীটাকেও ছাড়িয়ে যাও
আর খুজে পাও প্রভুর রাজষিক সেই দুনিয়া
*
প্রেমের পরষে তীতা হয়ে যায় মিঠা
প্রেমের পরষে তামা হয়ে যায় সোনা
প্রেমের পরষে ময়লা হয়ে যায় পরিষ্কার
প্রেমের পরষে যন্ত্রনা হয়ে যায় আরোগ্য
প্রেমের পরষে মরনও বেচে যায়
প্রেমের পরষে বাদশা হয়ে যায় গোলাম
জ্ঞানে প্রেম বেড়ে ওঠে
বেহায়া হয়েও অন্ততঃ কেউ এমন রাজষিক শক্তিতে জায়গা করে নিতে পেরেছে ?
*
“প্রেম” আমাদের আত্মা কে ওপরে উঠিয়ে নেয়- কোন মই ছাড়াই
*
আমিতো তোমারি প্রেম সমুদ্রে বেচে থাকি
*
একবার যদি তোমার স্বার্থপর সত্তাকে বশীভূত করতে পারো
তোমার সমস্ত আধার হয়ে যাবে আলো
…………………………
বাবা লালন সাই এর গানঃ-
মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি /
মানুষ ছাড়া ক্ষ্যাপারে তুই মূল হারাবি ।
আল্লা আদম না হলে /
পাপ হত সেজদা দিলে /
শেরেক পাপ যারে বলে /
এ দীন দুনিয়ায়
যায় মর্ম সে না যদি কয় /
কার সাধ্য কে জানিতে পায় /
তাইতে আমার দীন দয়াময়/
মানুষ রূপে ঘোরে ফেরে ।
সহজ মানুষ ভজে দেখনারে মন দিব্যজ্ঞানে
পাবিরে অমূল্য নিধি বর্তমানে
ভজ মানুষের চরণ দুটি
নিত্য বস্তু হবে খাঁটি
মরিলে সব হবে মাটি
ত্বরায় এই ভেদ লও জেনে
শুনি ম’লে পাবো বেহেস্তখানা
তা শুনে তো মন মানে না
বাকির লোভে নগদ পাওনা
কে ছাড়ে এই ভুবনে
আচ্ছালাতুল মেরাজুল মোমেনীনা
জানতে হয় নামাজের বেনা
বিশ্বাসীদের দেখাশুনা
লালন কয় এই ভুবনে
আল্লাহ্ কে বোঝে তোমার অপার লীলা
কে বোঝে তোমার অপার লীলে।
তুমি আপনি আল্লাহ
ডাকো আল্লাহ বলে।
পড়ে রিপু ইন্দ্রিয় ভোলে
মন বেড়ায় রে ডালে আলে ।।
দুই মনে এক মন হইলে ।।
এড়াই শমন ।।
হয় না রে সে মনের মত মন ।
আমার হয় না রে সে মনের মত মন ।
রসিক ভক্ত যারা মনে মন মিশালো তারা ।।
শাসন করে তিনটি ধারা ।।
পেল রতন
তারা পেল রতন
হয় না রে সে মনের মত মন ।
…………..
প্রেম রতির গতি বুঝা
কামুকের ভীষন দ্বায়
কাম নদীতে প্রেমজল
উজান স্রোতে বয় |
_____রতি সাধন
…………
মানুষের মহিমাই ধরা পড়েছে জালাল খার গানের বিভিন্ন চরণে। কয়েকটি দৃষ্টান্ত এ-রকম,-
১. মানুষ থুইয়া খোদা ভজ, এই মন্ত্রণা কে দিয়াছে,
মানুষ ভজ কোরান খোঁজ পাতায় পাতায় সাক্ষী আছে
২. করিম রহিম রাধা কালী এ বোল সে বোল যতই বলি
শব্দ ভেদে ঠেলাঠেলি হইতেছে সংসারে।
মানবদেহে থেকে স্বয়ং একই শক্তি ধরে
প্রেমের মূর্তি লয়ে একজন বিরাজ করে প্রতি ঘরে।
৫. মানুষের ছুরত তার মধ্যে কুদরত
সেই জন্য ভজিতে হয় মানুষের চরণ।
৬. থাকতে ক্ষুধা প্রেম শুধা
পান করো রে পাগলা মন
হায়রে পান করো রে পাগলা মন
থাকতে ক্ষুধা প্রেম শুধা ।।
দিন গেলে দিন আর পাবেনা
ভাটা যদি লয় যৈবন ।
আসমানে জমিনে যে প্রেম অনন্তকাল ধরিয়া।
তাই তো তারে মেঘ বাদলে রাখে শান্ত করিয়া।
তা না হলে হলে হুলে। (হায়রে) শোভিত না (খোদার) এই ভুবন
থাকতে ক্ষুধা প্রেম শুধা
পান করো রে পাগলা মন ।
পাহাড়ে সাই ঘুরে যে প্রেম ফাটাইয়াছে এক সাথে।
তাই তো পানি বাস্প হইয়া উঠে গিয়া তার মাঝে।
দেখছ নি তাই মন ভাবিয়া। হইতেছে কত পরেশন
থাকতে ক্ষুধা প্রেম শুধা
পান করো রে পাগলা মন
খোদার প্রেমে জংগলবাসী মনি ঋষি আওলিয়া (আওলিয়া…)।
সারা জনম কাটায় তারা গাছতলাতে বসিয়া
পাইলো কী ধন কইলো না রে
পাইলো কী ধন কইলো না তাই (সদাই) কান্দেরে জালালের মন
থাকতে ক্ষুধা প্রেম শুধা
পান করো রে পাগলা মন।।
………………
দম'কে রুদ্ধ করে ব্রহ্মদ্বারে
সাধক ভাটির চন্দ্র উজান করে,
তখন শতবার নারী ভোগ করে
তবুও রতি তাহার অটল রয়।।
-পীরজাদা দেওয়ান রাহাত (DM Rahat)
……………
সহজমতে প্রত্যেক নর-নারীর দৈহিক রূপের মধ্যেই তাদের স্বরূপ বা সহজরূপ নিহিত, যেমন নররূপে নর, স্বরূপে কৃষ্ণ এবং নারীরূপে নারী, স্বরূপে রাধা। এই রূপের মিলনের মধ্য দিয়ে যখন প্রেম রূপের উন্মোচন ঘটে তখনই আসে অনাবিল আনন্দের অনুভুতি। এটাই মহাভাব বা সহজানন্দ।
……………
আমরা প্রথমে দেহকে বীণার মত নিখুঁত টান টান সংবেদনশীল করে গড়ে তুলব, কন্ঠকে সাধনার দ্বারা মধুর করে তুলব, তারপর দমের প্রয়োগে তাতে সুলোলিত সুর তুলে সেই সুরে শ্রবণকে স্থাপন করে পৌছানোর চেষ্টা করব সেই সূক্ষ অনুভুতি সম্পন্ন কোষে। আমাদের দেহে চক্রসমুহ না ফোঁটা পদ্মের মত অধোমুখ হয়ে অবিকশিত অবস্থায় থাকে। গভীর মনোযোগের সাথে শ্বাস প্রশ্বাসই এদের প্রস্ফুটিত
করে। আর এই মনযোগ সৃষ্টিকর্তার স্মরণ ব্যাতীত সম্ভব না। অতএব আমরা যে গভীর শ্বাস প্রশ্বাস নেব তা হচ্ছে জিকির। যে যে নাম পবিত্র মনে করে,যে নামে নিজেকে পুর্ণ সমর্পন করতে পারে সে সেই নামের স্মরণ যোগে গভীর ভাবে দম সাধনা করবে। তবেই চক্র সমুহ জাগ্রত হবে।
-রাঈ-বিনদিনী
…………………
সহজিয়া একটি বিশেষ ধর্মসম্প্রদায়, যারা সহজপথে সাধনা করে। ‘সহজ’ শব্দের অর্থ যা সঙ্গে সঙ্গেই জন্মায়। জীব বা জড়ের বাহ্য রূপের সঙ্গে সঙ্গে তার ভেতরেও একটি শাশ্বত স্বরূপ জন্মলাভ করে। এই শাশ্বত স্বরূপই ‘সহজ’। এর উপলব্ধির মধ্য দিয়েই যাবতীয় প্রাণী ও বস্ত্তর উপলব্ধি হয়। আর এই উপলব্ধির প্রণালীই হলো সহজপথ।
- [আজহারুল ইসলাম এবং সমবারু চন্দ্র মহন্ত]
প্রিয় কবি সাহিত্যিকদের থেকে চয়নকৃত চুম্বক অংশঃ
--পাতার মুকুটপরা নিঃস্ব মানুষ--
আমি প্রকৃত নিঃস্ব মানুষের মতো
মরতে চেয়েছি
পাহাড়ের ঘর অরণ্যে
একদল মানুষ ওদের স্নিগ্ধ মেয়েদের নিয়ে এলো
ওরা গাইলো
ঝরনাধারার মতো নাচলো
আমাকে ক্রীতদাসত্বের গ্লানি
বিষয়ে বললো
বিমানের তেল ফুরিয়ে যাওয়ার পর
তার প্রয়োজনীয়তার কথা বললো
একটা ফুটফুটে মেয়ে
তারা প্রকৃত নিঃস্ব ও সৎমানুষের মতো
বাঁচতে বলে
আমার মাথায়
পাতার মুকুট
পরিয়ে দিলো
সকালে ওই মুকুট দেখে যারা খুব হাসলো
ওদের আমার খারাপ মনে হলেও
একটি অদৃশ্য ভালোবাসা
আমাকে শান্ত রেখেছিল…
-হাফিয রশীদ খান
………
হিসেব
_____- তসলিমা নাসরিন
কত টুকু ভালোবাসা দিলে,
ক তোড়া গোলাপ দিলে,
কতটুকু সময়, কতটা সমুদ্র দিলে,
কটি নির্ঘুম রাত দিলে, কফোঁটা জল দিলে চোখের –
সব যেদিন ভীষণ আবেগে শোনাচ্ছিলে আমাকে,
বোঝাতে চাইছিলে আমাকে খুব ভালোবাসো,
আমি বুঝে নিলাম-
তুমি আমাকে এখন আর একটুও ভালোবাসোনা।
ভালোবাসা ফুরোলেই মানুষ হিসেব কষতে বসে, তুমিও বসেছো।
ভালোবাসা ততদিনই ভালোবাসা
যতদিন এটি অন্ধ থাকে, বধির থাকে,
যতদিন এটি বেহিসেবি থাকে।
কাল
___-তসলিমা নাসরিন
কী দেবে ,এক্ষুণি দাও
কালের জন্য তুলে রেখো না
প্রতিটি আগামী মুহূর্তে অতীত হয়ে যাচ্ছে
প্রতিটি ফুলই ঝরে যায়, প্রতিটি পাতাই
প্রতিটি মানুষ
একদিন আমি,একদিন তুমি।
হৃদয় দিতে চাইলে দাও,
না চাইলে সেও দাও, না চাওয়াটি দাও।
কালের জন্য আমি কিছু রেখে দিই না
আজ যদি ইচ্ছে করে দিতে আজই দিই
তুমি না চাইতেই যা কিছু আছে দিচ্ছি
না চাইতেই আমার যশবিত্ত
না চাইতেই আমার সুচারু শরীর
না চাইতেই হৃদয়।
কী নেবে নাও
কালের জন্য তুলে রেখো না
কাল হয়ত লুঠ হয়ে যাবে আমার সকল সম্পদ
কাল হয়ত নষ্ট হবে আমার শরীর
ঘুণে খাবে হৃদয়।
কাল হয়ত ঝরে যাবে তুমি,ঝরে যাবো আমি।
…………
মনে থাকবে?
____-আরণ্যক বসু
পরের জন্মে বয়স যখন ষোলোই সঠিক
আমরা তখন প্রেমে পড়বো
মনে থাকবে?
বুকের মধ্যে মস্তো বড় ছাদ থাকবে
শীতলপাটি বিছিয়ে দেব;
সন্ধে হলে বসবো দু'জন।
একটা দুটো খসবে তারা
হঠাৎ তোমার চোখের পাতায় তারার চোখের জল
গড়াবে,
কান্ত কবির গান গাইবে
তখন আমি চুপটি ক'রে দুচোখ ভ'রে থাকবো
চেয়ে...
মনে থাকবে?
এই জন্মের দূরত্বটা পরের জন্মে চুকিয়ে দেব
এই জন্মের চুলের গন্ধ পরের জন্মে থাকে যেন
এই জন্মের মাতাল চাওয়া পরের জন্মে থাকে
যেন
মনে থাকবে?
আমি হবো উড়নচন্ডি
এবং খানিক উস্কোখুস্কো
এই জন্মের পারিপাট্য সবার আগে ঘুচিয়ে দেব
তুমি কাঁদলে গভীর সুখে
এক নিমেষে সবটুকু জল শুষে নেব
মনে থাকবে?
পরের জন্মে কবি হবো
তোমায় নিয়ে হাজারখানেক গান বাঁধবো।
তোমার অমন ওষ্ঠ নিয়ে
নাকছাবি আর নূপুর নিয়ে
গান বানিয়ে__
মেলায় মেলায় বাউল হয়ে ঘুরে বেড়াবো...
মনে থাকবে?
আর যা কিছু হই বা না হই
পরের জন্মে তিতাস হবো
দোল মঞ্চের আবীর হবো
শিউলিতলার দুর্বো হবো
শরৎকালের আকাশ দেখার__
অনন্তনীল সকাল হবো;
এসব কিছু হই বা না হই
তোমার প্রথম পুরুষ হবো
মনে থাকবে?
পরের জন্মে তুমিও হবে
নীল পাহাড়ের পাগলা-ঝোরা
গাঁয়ের পোষাক ছুড়ে ফেলে
তৃপ্ত আমার অবগাহন।
সারা শরীর ভ'রে তোমার হীরকচূর্ণ ভালোবাসা।
তোমার জলধারা আমার অহংকারকে ছিনিয়ে নিল।
আমার অনেক কথা ছিল
এ জন্মে তা যায়না বলা
বুকে অনেক শব্দ ছিল__
সাজিয়ে গুছিয়ে তবুও ঠিক
কাব্য করে বলা গেল না!
এ জন্ম তো কেটেই গেল অসম্ভবের অসঙ্গতে
পরের জন্মে মানুষ হবো
তোমার ভালোবাসা পেলে
মানুষ হবোই__ মিলিয়ে নিও!
পরের জন্মে তোমায় নিয়ে...
বলতে ভীষণ লজ্জা করছে
ভীষণ ভীষণ লজ্জা করছে
পরের জন্মে তোমায় নিয়ে...
মনে থাকবে?
…………
ঈশ্বর বন্দনায় ব্যাস্ত মানুষগুলোর
ঈশ্বর থাকে সাত আসমানে;
আমার ঈশ্বর এইখানে
যেখানে তুমি আমি জড়িয়ে আছি
গভীর আলিঙ্গনে !
-আঞ্জুমান রোজী
©somewhere in net ltd.