![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
২০০১ এ বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর র্যাট এর ব্যর্থতার পরিপ্রেক্ষিতে র্যাব গঠন করা হয়। গঠনের পর বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের জন্য কিছু মানবতাবাদী নামমাত্র বিরোধিতা করেছে কিন্তু কঠোরভাবে বিরোধিতা হয়নি। র্যাব মূলত শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নিধনে কাজ করেছিল তাই জনগণের পক্ষ থেকে কোন বিরোধিতা প্রত্যক্ষ করা যায় নি। একই সাথে বিএনপির নেতাকর্মীদের উদ্যোগে প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের পর মিষ্টি বিতরণ করা হত যা মিডিয়ায় "এলাকাবাসী আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করেছে" শিরোনামে রিপোর্ট করা হত। তর্ক-বিতর্ক-সমালোচনা যাই হোক, এলাকাবাসী মিষ্টি বিতরণ করুক না করুক তারা যে খুশি হতো এটা বুঝতে পারতাম। কিছুদিন যাবত র্যাব নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে, র্যাব থাকা প্রয়োজন কিনা সেটা নিয়েও লেখালেখি হচ্ছে। র্যাব নিয়ে আলোচনায় মুম্বাই আন্ডারওয়ার্ল্ড প্রাসঙ্গিক-ভাবে না আনলে এ লেখা সম্পূর্ণ হবেনা।
আমাদের সন্ত্রাসীরা
=) মনিরুজ্জামান বাদল হত্যায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কৃত গ্রুপ নিয়ন্ত্রিত জহুরুল হক হলে একটি বহিরাগত ছেলে থাকতো, ভাল ব্যাডমিন্টন খেলত। চেহারায় ভদ্রতার মাঝে আড়চোখের চাহনিতে কিছুটা বর্বরতা প্রকাশ পেত। ২০০১ এর নির্বাচনে মিরপুর এলাকায় দুদিনের জন্য আওয়ামী লীগের সকল নির্বাচনী ক্যাম্প বন্ধ রাখা হয়েছিল। কার নির্দেশে? তখন জেনেছিলাম জাহাঙ্গীর নামের সেই ভদ্র ছেলেটির নির্দেশে যাকে কালা জাহাঙ্গীর নামে চিনেছি। (অনেককেই কালা জাহাঙ্গীরের সাথে সম্পর্কের আছে বলে শুনেছি; দেখতে কেমন জানতে চাইলে বলতো, গায়ের রঙটা কালো তা না হলে রাজপুত্র। আসলে সে কাল ছিলনা, কানে কম শুনত সে কারণে কালা নামকরণ।) কালা জাহাঙ্গীরের নির্দেশ অমান্য করে ঐ এলাকার নেতা-কর্মীরা প্রচারণা চালাবে এটা কি সম্ভব?
=) এক সময় শীর্ষ সন্ত্রাসীদের উল্লেখযোগ্য অংশ ছিল ফ্রিডম পার্টির। জর্জ-মামুন ছিল আতঙ্কের মতো। তার প্রতিপক্ষ মানিকরাও একই পার্টির। অবাক হয়ে দেখেছি শাহজাহানপুরে ৯১ সালে তারা নির্বাচন করল জামাতের দাঁড়িপাল্লার পক্ষে। তাদের খালেদ এখন আওয়ামী লীগের সমর্থক, খিলগাঁও বাজারের সভাপতি।
=) মেয়র নির্বাচনে ঢাবি থেকে শাহজাহানপুর রেলওয়ে কলোনি কেন্দ্রে গেলে দেখি এরাই বিএনপির পক্ষ হয়ে আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল আহমেদকে পিস্তল ধরতে আসে; পরে মির্জা আব্বাস পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
=) গোপীবাগের এক ভদ্র ছেলের বোনকে মাদক ব্যবসায়ী খোকন ধরে নিয়ে অপমান করে। সেই ভদ্র ছেলেটি হয়ে যায় সন্ত্রাসী আসিফ। খোকনকে হত্যার পাশাপাশি শান্তিনগরে তুচ্ছ এক ঘটনায়ও একজনকে সে খুন করে বসে।
=) আসলাম একটি করে খুন করে সুইডেন চলে যেত; সুইডেন আসলাম। ছোটখাটো ছিনতাই করতো হান্নান। আসলাম বিচারের জন্য তাকে ধরে আনতে পাঠালে তার বাসার করুন অবস্থা দেখে আসলামের বন্ধু গ্রুপের সেবা করার জন্য তাকে রাখে। আসলাম জেলে যাবার পর তার গ্রুপের হাল ধরতে আশীর্বাদ পেয়ে বিএনপি কমিশনার আনোয়ারের সহায়তায় মাদক ব্যবসাসহ চাঁদাবাজি করে রাতারাতি হয়ে যায় কোটিপতি; এই সেই পিচ্চি হান্নান ।
=) বাংলা ভাইয়ের গাছে ঝুলানো নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার অটবির ব্রাঞ্চ ম্যানেজার (সাবেক ছাত্রলীগ) এর চাচাত ভাই।
এই উদাহরণগুলো দিলাম কয়েকটি কারণে:
১) কেউ স্বেচ্ছায় সন্ত্রাসী হয়।
২) কেউ পরিস্থিতির শিকার হয়।
৩) কেউ রাজনীতির শিকার হয়।
৪) কেউ রাজনীতিকে আধিপত্যের জন্য ব্যবহার করে।
৪) সন্ত্রাসীদের প্রকৃতপক্ষে কোন দল নেই।
এরা কত কতজনকে নির্মমভাবে মেরেছে, কতজনকে ধর্ষণ করেছে (লজ্জা ঢাকতে পরিবার উচ্চবাচ্য করেনি), কতটি খুনের সাথে সে সম্পৃক্ত, কতজনের কাছ থেকে কত কোটি কোটি টাকা নিয়েছে, তাদের নিয়ন্ত্রিত মাদক স্পট থেকে কত টাকা আসতো, কত নেতা এদের দিয়ে আধিপত্য বিস্তার করত এগুলোর কোন পরিসংখ্যান নেই।
আমাদের বিচার ব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রিতা, খুব সহজে জামিন পাওয়া ছাড়াও মুষ্টিমেয় সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সাক্ষী দেয়ার মতো কাউকে পাওয়া যেত না।
মুম্বাই আন্ডারওয়ার্ল্ড:
মুম্বাই আন্ডারওয়ার্ল্ডে যখন দাউদ ইব্রাহিমের একচ্ছত্র দাপট তখন কিছু আইসিএস ও মহারাষ্ট্র পুলিশ এর কিছু কর্মকর্তা মুম্বাই পুলিশ নিয়ে দুটি পরীক্ষামূলক কৌশল প্রয়োগের তত্ত্ব দেয়; কর্মকর্তাদের মধ্যে ইন্সপেক্টর লোহার এবং ডিসিপি খানের নাম উল্লেখযোগ্য।
১। সন্ত্রাসী গ্রুপের একটি অংশকে প্রশাসনিক সহায়তা দিয়ে প্রতিপক্ষ তৈরি। দুই গ্রুপের সংঘর্ষে একটি গ্রুপের উচ্ছেদ হলে সমর্থিত গ্রুপের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ।
এর ফলশ্রুতিতে দাউদ ইব্রাহিম গ্রুপ বিভক্ত হয়ে একদিকে ছোটা শাকিল অন্যদিকে পুলিশ সমর্থিত ছোটা রাজন গ্রুপের সৃষ্টি হয়। বাংলা ভাই গ্রুপ ভিন্নভাবে গঠন হয় কিন্তু উদ্দেশ্য ছিল এরকম। চরমপন্থি/সর্বহারা দমন। কিন্তু চরমপন্থি দমন করতে যেয়ে তারা নিজেরা আরও বেশী চরমপন্থি হয়ে উঠে।
২। শুট এট সাইট। বিচারের কাঠগড়ায় দাড় করানো মানেই ছাড়া পেয়ে যাবে। সুতরাং এনকাউন্টার।
সন্ত্রাসী উত্থানের বর্তমান প্রেক্ষাপট
মোহাম্মদপুরে আমার এক বন্ধুর ল্যাপটপ ও মোবাইল চুরি হয়। থানায় একটি রিপোর্ট লিখে বিদায় দেয়। আমি র্যাব এ যোগাযোগ করলে মেজর মালেক দুজনকে দায়িত্ব দেয়। কয়েকজন সন্দেহভাজনের একজনের বাসায় তল্লাসির সময় আমি ছিলাম। সন্দেহভাজনের ঘনিষ্ঠ একজন খবর দেয় গতকাল দুটি ল্যাপটপ চুরির ভাগ সে পায়নি তাই ক্ষুব্ধ হয়ে তার বাসায় নিয়ে যায়। তাদের বয়স ১৪/১৫। বাসা তল্লাসিতে কয়েকটি মোবাইল সেট, মাদক ইয়াবা, ইয়াবা সেবনের সরঞ্জাম এবং কয়েক প্যাকেট কনডম পাওয়া যায়। জানা যায় তারা প্রতিদিন একেকজন ৬/৭টি ইয়াবা সেবন করে, প্রতিদিনের আয় ন্যূনতম পাঁচ হাজার টাকা। ছিনতাই এবং চুরি প্রধান কাজ। কেউ কাউকে ধোলাই দিতে চাইলে মানুষ-ভেদে পাঁচ থেকে বিশ হাজার টাকা ফি নেয়। বোঝা গেল সে জড়িত নয়। কান্নাকাটি শুরু করলে এসআই বলে, বলেন কি করবো? অফিসে নিয়ে গেলে উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা পায়ে গুলি করে দিবে আর ছেড়ে দিলে এই কাজ চলতে থাকবে।
র্যাব গঠন: র্যাব নিয়ে কিছু অভিযোগ:
জানা যায়, ইন্ডিয়ান পুলিশের প্রথম ধারণা নিয়ে র্যাব গঠনের উদ্যোগ নেয়া হলেও কর্মকর্তাদের জীবনের ঝুঁকির কথা মাথায় রেখে দ্বিতীয় ধারণা চূড়ান্ত হয়। প্রথমটি পরিবর্তিত হয়ে সন্ত্রাসী গ্রুপ থেকে বা সাবেক সন্ত্রাসীদের মধ্য থেকে সোর্স নিয়োগের পরিকল্পনা কার্যকর হয়। যুক্তরাজ্য এ ব্যাপারে সহযোগিতা করে। সন্ত্রাসীদের হত্যার মাধ্যমে তাদের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা আড়ালে ঢেকে গেছে।
র্যাবকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহারের অভিযোগ আছে, ব্যক্তি-স্বার্থে ব্যবহারের অভিযোগ আছে। সন্ত্রাসী নয় এমন লোককে র্যাব চোখ বেধে নিয়ে গেছে, হাইকমান্ডের কাউকে জানালে এনকাউন্টারের হুমকি দেয়া হয়েছে। এরকম অনেক অভিযোগ আছে। হত্যা বা গুলি করা ছাড়াও র্যাবের শাস্তি প্রক্রিয়ার মধ্যে হাত বেধে দাড় করিয়ে রাখা, ভেজা গামছা দিয়ে মুখ বেধে রাখা, নখ তুলে ফেলা, পানিতে মুখ ডুবিয়ে রাখা, উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন বাতির সামনে রাখা, ইলেকট্রিক শক দেয়া এবং সেকেন্ডে আটবার ঘুরে এমন ঘূর্ণায়মান চেয়ারে বসানো অন্যতম। ১/১১ এর পর অনেকেই এসব অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। শোনা যায় আবদুল জলিল সাহেব এক মিনিট চেয়ারে ঘুরেই বলেছে : যাহা বলিবেন তাহা করিব। চিত্তাকর্ষক বিষয় হল: তারেক রহমান তাদের তৈরি করা শাস্তি প্রক্রিয়া নিজেই উপভোগ করেছেন। র্যাব এর মতো বহু বাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত সংস্থা প্রতিটি হত্যাকাণ্ডে মুখস্থ বুলি প্রেস রিলিজ দিবে এটা খুব হাস্যকর লাগে। সব হত্যাকাণ্ড "অস্ত্র উদ্ধার করিতে গেলে ওতপাতা সন্ত্রাসীরা আক্রমণ করে" এর প্রেক্ষিতে মারা যায়।
সন্ত্রাসীদের কি হবে?
মোহাম্মদপুরের এস.আই যখন বলেছিল অফিসে নিলে পায়ে গুলি করে দিবে এটি অমানবিক মনে হয়েছে আবার যৌক্তিকও মনে হয়েছে। আমাদের দেশে কত শ্রেণীর এনজিও আছে। কিছু এনজিও কি কিশোর অপরাধীদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে কাজ করতে পারে না? পেশী শক্তি দিয়ে রাজনৈতিক আধিপত্য, টেন্ডার-বাজি, চাঁদাবাজি, বাস-স্ট্যান্ড দখল, ভূমি দখল হচ্ছে। সুস্থ রাজনৈতিক পরিবেশ অসুস্থ করে তুলতে কখনও সন্ত্রাসীকে ব্যবহার করা হয়, কখনও সন্ত্রাসী দলকে ব্যবহার করে। এ সকল সন্ত্রাসীদের দমনে আমাদের প্রচলিত বিচার ব্যবস্থা কি যথেষ্ট? কত অপরাধ নীরবে নিভৃতে ঘটে তার খবর কজন জানে?
র্যাব কি প্রয়োজন আছে?
র্যাব এর গঠন কাঠামোটা আমার ভাল লাগে। সকল নিরাপত্তা বাহিনী এবং সিভিল সার্ভেন্টদের সম্পৃক্ত করে এটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিটি সদস্যদের মেয়াদ দুই বছর। পুলিশ আর র্যাব এর সাফল্যের তুলনা করলে বলার অপেক্ষা রাখে না র্যাবের পাল্লা ভারী হবে। নীতিমালা অনুসারে র্যাব শুধুমাত্র সন্ত্রাসী ও মাদক সংশ্লিষ্ট কর্মকাণ্ড করবে। পুলিশ নিয়ে জনগণের হতাশা আছে। সাধারণ একজন মানুষ যখন কোন অপরাধের প্রতিকার চাইতে থানায় যায় একটি রিপোর্ট পর্যন্তই মূলত সীমাবদ্ধ থাকে। শুধুমাত্র পুলিশ নির্ভর হলে সন্ত্রাস/অপরাধ অবশ্যই বৃদ্ধি পাবে। র্যাব সহযোগী সংস্থা হিসাবে কাজ করছে কারণ অপরাধীদের থানাতে হস্তান্তর করতে হয়। র্যাব কর্তৃক শীর্ষ সন্ত্রাসীদের হত্যায় হয়তো অনেকে নেপথ্য ব্যক্তি আড়ালেই রয়ে গেছে কিন্তু সেই সব সন্ত্রাসীর মৃত্যুতে মানুষ মৌন সম্মতিও দিয়েছে।
বর্তমানে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড তুলনামূলক-ভাবে কম কিন্তু কিশোর অপরাধীদের তালিকা তৈরি করার সরকারী নির্দেশের পরও অনেক থানাই কিশোর অপরাধীদের তালিকা করতে পারেনি। এই কিশোর অপরাধীরা যৌবনে কি হবে? এ ধাপ অতিক্রম করে যারা অভিজ্ঞ অপরাধী তাদের নিয়ন্ত্রণে কি পুলিশ যথেষ্ট? একটি চৌকস বাহিনী হিসাবে র্যাব অবশ্যই থাকা প্রয়োজন কিন্তু এর কর্মকাণ্ড সুনির্দিষ্ট করে দেয়া প্রয়োজন। ক্ষমতার অপব্যবহার করলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও রাখা প্রয়োজন। মানবাধিকারের প্রসঙ্গ আনলে একজন সন্ত্রাসী কতজন সাধারণ মানুষের মানবাধিকারে হস্তক্ষেপ করে সেটাও বিবেচনা প্রয়োজন। সন্ত্রাসীদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে এদেশে কিছু এনজিও এবং সামাজিক প্রতিষ্ঠান প্রয়োজন। বিচারের দীর্ঘসূত্রিতা রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন।
©somewhere in net ltd.
১|
৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ১:৪৪
লিন্কিন পার্ক বলেছেন:
মন্তব্যহীন পোস্ট !!!
প্লাস দিয়ে গেলাম