নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পৃথিবী আমার আবাস। মানুষ আমার পরিচয়।

আবীর চৌধুরী

ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ার

আবীর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

বৈশ্বিক জলবায়ু বিপর্যয়ঃ পৃথিবীবাসী হিসেবে প্রত্যেকের ন্যুনতম করণীয়

০৮ ই নভেম্বর, ২০২১ রাত ৯:০৮

কোন পরিসংখ্যান, প্রেডিকশন, সায়েন্টিফিক ডেটা, জটিল কথাবার্তা, ইত্যাদিতে না গিয়ে, সোজাসুজি কিছু সাদামাটা কথা বলি আপনাদের সাথে।

আগামীকাল কিংবা পরে যেদিন কাঁচাবাজারে যাবেন, সেখান থেকে আনা সবজি/ফল ইত্যাদি রান্নার আগে-পরে যে অবশিষ্টাংশ থাকে, সেগুলো আলাদা করে রেখে দিবেন। ঘরের পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের যেকোন পাত্রে বাইরে থেকে উপযুক্ত মাটি ভরে এনে সবজি/শাক/ফলের চাষ শুরু করুন বারান্দায়, ছাদে বা ঘরেই! সেই গাছগুলোর জন্য বিষমুক্ত জৈব কম্পোস্ট সার তৈরি করে নিন নিজের দৈনন্দিন পচনশীল আবর্জনাগুলো থেকেই (যেমনঃ চা রান্নার পরের চাপাতা, ডিমের খোসা, কলার খোসা, ইত্যাদি)।

ফেসবুক, ইউটিউব, টিকটক, এবং পুরো ইন্টারনেটে অসংখ্য রিসোর্স পাবেন এসব ব্যাপারে। একই সাথে আশেপাশে যারা এসব শখের বশে বা পেশাগতভাবে করেন, তাদের কাছেও উপযুক্ত সাহায্য পাবেন।

এর ফলে কি লাভ হবে? অগণিত লাভ হবে! সবজি/ফল ইত্যাদি কেনার টাকা বেঁচে যাবে, যাতায়াতের খরচসহ; এবং অনেক ক্ষেত্রে ভেজাল বা খারাপ খাবার খেয়ে চিকিৎসার খরচ সহ!

চারা কেনার খরচও লাগবে না অনেক ক্ষেত্রে; নিজের খাবারের অবশিষ্টাংশ দিয়েই নতুন খাবার চাষ করতে পারবেন। ক্ষতিকর রাসায়নিক সার অথবা কমার্শিয়াল জৈব সারের খরচও অনেকাংশে কমে যাবে যদি নিজের ঘরের জৈব আবর্জনা দিয়ে নিজেই সারের কাজ সেরে নেন।

স্বল্প স্থানে, স্বল্প খরচে, স্বল্প পানিতে, স্বল্প পুঁজিতে, স্বল্প মাটিতে, স্বল্প লোকবল দিয়ে- যা কিছু উৎপাদন ও পুনর্ব্যবহার করবেন- তার সবটাই ডাবলের উপর ডাবল লাভ। অর্থনৈতিক লাভ সবাই বেশি বুঝে, স্বাস্থ্যগত লাভ কম বুঝে; তাও দুইটার ব্যাপারেই বললাম। এইবার আসল লাভের কথা বলি।

আমরা সবাই জানি- বিভিন্ন কারণে চাহিদার তুলনায় খাবারের উৎপাদন, সরবরাহ, বাজারজাতকরণ, পরিবহন, সংরক্ষণ, ইত্যাদি অপ্রতুল বা প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়ে আসছে। ভোক্তারা নিজ নিজ উদ্যোগে সামান্য পরিমাণ খাবার উৎপাদন করলেও সেটা পুরো সিস্টেমে ভারসাম্য নিয়ে আসবে। অনেকে হয়তো এটাকেই পেশা হিসেবে বেছে নিতে পারে।

খাদ্যদ্রব্য পরিবহনে যে অধিক পরিমাণ জ্বালানি, অর্থ ও সময় লাগতো, সেটাও অনেক লাঘব হবে। বিশ্বের অনেক দেশই লোকাল প্রোডাকশনকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। এক স্থানের জিনিস অন্য জায়গায় উৎপাদন করে পরবর্তীতে পরিবহনের ফলে জ্বালানির অতিরিক্ত খরচ করার বিলাসিতা দেখানোর মত অবস্থা এখন এই পৃথিবীর নেই। জীবাশ্ম জ্বালানির পরিমাণ যে শুধু কমে আসছেই তা নয়। জীবাশ্ম জ্বালানি (কয়লা, তেল, গ্যাস) ও এদের বাইপ্রোডাক্ট (পলিথিন, প্লাস্টিক) উত্তোলন, উৎপাদন, ব্যবহার ও নিক্ষেপণের ফলে পৃথিবী ও মানবজাতির অস্তিত্ব এখন রীতিমতো হুমকির সম্মুখীন। এসব কোন রূপকথা বা গাঁজাখুরি সন্দেহ না, সবই পরীক্ষিত, অভিজ্ঞতালব্ধ, বৈজ্ঞানিক সত্য। এবং এসবের সমাধান থাকা সত্ত্বেও বিশ্বের অধিকাংশ মানুষই এসব ব্যাপারে অজ্ঞ, উদাসিন কিংবা বিরুদ্ধাচরণকারী।



যেহেতু বিশ্বের প্রায় সব দেশেই ভূগর্ভস্থ পানির তীব্র সংকট ধীরে ধীরে ঘনীভূত হচ্ছে ও ভূত্বকের উপরিস্থিত পানিও দখল-দূষণের কারণে অস্তিত্বের সংকটে, সেহেতু কম পানি খরচ করে কিভাবে খাদ্য ও অন্য যেকোন পণ্য উৎপাদন করা যায়, সেটার দিকেও অধিক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। বৃষ্টির পানিকে আমরা কখনোই তাদের প্রাপ্য মর্যাদা দিতে পারিনি, অথচ প্রতিটা ঘরে ঘরে রেইনওয়াটার হার্ভেস্টিং প্ল্যান্ট ও স্টোরেজ ট্যাংক বানিয়ে আমরা আমাদের ব্যবহার্য পানির একটা উল্লেখযোগ্য অংশ বিনামূল্যে, বিদ্যুত/জ্বালানি খরচ ছাড়াই- পেতে পারতাম! নিরাপদ সুপেয় পানির দুষ্প্রাপ্যতা ও বন্যা/জলাবদ্ধতা যে কি ভয়াবহ পরিমাণে পৌঁছতে যাচ্ছে, তা হয়তো বাংলাদেশের মানুষ অনুমান করতে পারছে না; সেজন্য কেউ শংকিতও না, তৎপরও না। প্রতিটা আবাসিক এলাকায় পানির উৎস (পুকুর, হ্রদ) থাকা, জলাশয়গুলোকে দূষণমুক্ত ও প্লাস্টিকমুক্ত রাখা, এমনকি গ্রে-ওয়াটার ও ডার্ক-ওয়াটারের প্রাকৃতিক পরিশোধন ও পুনর্ব্যবহার যে আমাদের জন্য কতটা জরুরি ও কতটা উপকারী, সেটা আমাদেরকে কেউ বুঝায়নি, জানায়নি, পড়ায়নি।



প্রাকৃতিক বা মানবসৃষ্ট দুর্যোগের কারণে আবাদী জমির পরিমাণ কমছে, জমির উর্বরতা কমছে, চাষাবাদে আগ্রহী মানুষের সংখ্যা কমছে। এরকম অবস্থায় শহরের বা দেশের অন্যান্য পেশাজীবি বাসিন্দারা যখন নিজ নিজ আবাসস্থল বা কাজের জায়গায় (যেমনঃ স্কুল-কলেজ-ভার্সিটির ছাদ/বারান্দা/মাঠ/বাগান) সমবায় সংগঠনের মত বাগান ও ক্ষেতখামার করবে, তখন খাদ্য নিরাপত্তা যেমন নিশ্চিত হবে, তেমনি সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবেও দেশের মানুষ নিরাপদ ও সুসংগঠিত হবে। মাটি ও স্থানের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার হবে। এছাড়া ল্যান্ডফিল বা ময়লার ভাগাড়ের জন্য, নির্দিষ্ট বা অনির্দিষ্ট ময়লা ফেলার স্থানের জন্য- যেই বিশাল পরিমাণ জায়গার অপচয় হতো, সেটাও কমবে।

রান্নাঘরের উচ্ছিষ্ট থেকে সবজি চাষের উদাহরণ

এই পুরো লেখার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশে চলে এসেছি। আমরা যদি আমাদের দৈনন্দিন জৈব ও পচনশীল আবর্জনাগুলো নিজেরাই যথাসম্ভব পুনর্ব্যবহার করি (কম্পোস্ট সার, বায়োগ্যাস, গবাদিপশুর খাদ্য, নতুন চারা, ইত্যাদি), তবে সেগুলো আমাদের নিজেদের দ্বারা কিংবা পৌরসভা/সিটি কর্পোরেশন দ্বারা যেখানে সেখানে নিক্ষেপিত বা সংরক্ষিত হবে না, বছরের পর বছর ল্যান্ডফিল/ভাগাড়ে পরে থেকে ভয়ানক বায়ুদূষণ করবে না! শহরের ভেতরে/বাইরে ময়লার ভাগাড় দেখেনি, এমন মানুষ বাংলাদেশে আছে কিনা আমি জানি না। মানুষের স্বাস্থ্য, মানুষের খাবার উৎপাদনের মাটি, মানুষের পানযোগ্য/ব্যবহারের পানি, মানুষের নিঃশ্বাসের বিশুদ্ধ বাতাস, এসবের জন্য "আবর্জনার এরকম অবৈজ্ঞানিক অব্যবস্থাপনা" যে কি ভয়ানক ক্ষতিকর, সেটা কাওকে বুঝাতে বেগ পেতে হয় না। কিন্তু যেটা চোখে দেখা যায় না, সেটাই তিলে তিলে শেষ করে দিচ্ছে গোটা দুনিয়াকে। অপরিকল্পিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, অত্যাধিক ভোগ, অত্যাধিক উৎপাদন, এসবের দুষ্টচক্রের ফলে কার্বনডাইঅক্সাইড ও মিথেনের (ল্যান্ডফিল থেকে মিথেন তৈরি হয়, যা কার্বনডাইঅক্সাইডের চেয়ে বহুগুণ শক্তিশালী) মত ক্ষতিকর গ্যাস তৈরি হয়, যা ধীরে ধীরে পুরো পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়িয়ে তুলছে। এই তাপমাত্রার বৃদ্ধির কারণে পৃথিবীর জলবায়ু এমনভাবে পরিবর্তন হতে শুরু করেছে যে, প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলো তীব্র আকার ধারণ করছে, ঘন ঘন হচ্ছে, অসময়ে হচ্ছে। ঋতু পরিবর্তন, ভৌগোলিক বিশেষ বৈশিষ্ট্যগুলো পরিবর্তন- এসব এখন আমাদের সামনে ধীরে ধীরে স্পষ্ট হচ্ছে। এর প্রভাব পরবে অর্থনীতিতে, খাদ্য উৎপাদনে, আন্তর্জাতিক-আঞ্চলিক ভূরাজনৈতিক সম্পর্কে। আর এসব নিয়ে আলোচনা করতে, সমাধান খুঁজতে ও মতানৈক্যে পৌঁছতেই স্কটল্যান্ডের সবচেয়ে জনবহুল শহর গ্লাসগোতে বিশ্বের অধিকাংশ দেশের সরকারপ্রধান, জনপ্রতিনিধি, বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী, পরিবেশবিদ, অর্থনীতিবিদ, বিশেষজ্ঞ ও শিশু-কিশোরেরা পর্যন্ত সমবেত হয়েছে বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক ২৬ তম সম্মেলনে, যার প্রধান উদ্যোক্তা ও আহবায়ক হচ্ছে জাতিসংঘ।



আরো লিখতে থাকলে, এই লেখা শেষ হতে অনেক সময় লাগবে। তাই এখানেই শেষ করছি। একই কথা অনেকবার বলে আসছি আমার ফেসবুক প্রোফাইলে। তাতে যদি কারো মনোজগতে পরিবর্তন আসে, কেউ যদি প্র্যাক্টিক্যাল লাইফে নতুনত্ব নিয়ে আসে, এবং অন্যদেরকে পজিটিভ চেইঞ্জের দিকে অনুপ্রাণিত করে, তবে তাতেই আমার এই সময় বিনিয়োগে সার্থকতা।
----------------------------------------------
[P.S.: United Nations Development Programme in Bangladesh এর #DoYourPart ক্যাম্পেইনে অংশ নিতে পারেন। বিশেষত নিজের গ্রামের বন্ধু, স্বজন ও পরিচিতজনদের সাথে এসব শেয়ার করতে পারেন। ওরা এসব ব্যাপারে সবচেয়ে কম সচেতন, সবচেয়ে কম জ্ঞাত। ওরা ধরেই নিয়েছে, ঘর থেকে বাইরে গাছের নিচে, ঘাসের মধ্যে, ফসলের মধ্যে- ছুঁড়ে ফেলা প্লাস্টিক ও অপচনশীল আবর্জনাগুলো নিজ থেকেই গায়েব হয়ে যাবে। কিন্তু ওরা জানে না, ওরা নিজেদের হাতে নিজের ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য মহাবিপর্যয় ডেকে আনছে। হয় সচেতন করুন, কিংবা ভয় দেখান। যেকোন একটা সবার জীবন বাঁচাবে।]
----------------------------------------------
যারা মনে করে COP26 মানে Eurotrip মারা, ফ্যামিলি সহ ঘুরতে যাওয়া, ৫/১০টা এওয়ার্ড পাওয়া, অন্যের/সরকারি টাকায় রাজার হালে থাকা-খাওয়া, ভিনদেশে পলিটিক্যাল শোডাউন করা, কিংবা শত শত কোটি টাকার ক্লাইমেট ফান্ড নিজেদের বাগে নিয়ে আসা, তারা কিংবা তাদের চামচারা এই লেখা পড়লেও কিছু বুঝবে না, বা মানবে না। তাদের জন্য সবকিছুই ধান্ধাবাজি, ধোঁকাবাজি, লোকদেখানো, চেতনাব্যবসাঃ-
এক নজরে কপ২৬
-----------------------------------------------
সব কথার শেষ কথা, আমাদেরকে বুঝতে হবে- সম্পদের সীমাবদ্ধতা, এবং সীমিত প্রাকৃতিক সম্পদের সীমাবদ্ধতা উপযোগিতার কথা। এটা অস্বীকার করা মানে নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারা। আল্লাহ আমাদেরকে বিবেক-বুদ্ধি দিয়ে বানিয়েছেন নিজেদের বিচক্ষণতা ও বিচার-বিশ্লেষণের ক্ষমতা ব্যবহার করে সঠিক ও সবার জন্য উপকারী সিদ্ধান্ত নিয়ে সেই অনুসারে কাজ করার জন্য। রিযিকের মালিক আল্লাহ বলেই আমরা সবকিছুকে "ফর গ্র্যান্টেড" ধরে নিবো, সেটা কিছুতেই হতে পারে না। মানবজাতির এরকম বোকামিই কি পরিমাণ মানবিক বিপর্যয় বয়ে আনছে যুগে যুগে, সেটা আমরা নিজ চোখেই দেখছি।

Overpopulation means Oversumption, Overproduction & Overexploitation

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই নভেম্বর, ২০২১ রাত ৯:৪১

চাঁদগাজী বলেছেন:



এগুলো করা সম্ভব।

২| ০৮ ই নভেম্বর, ২০২১ রাত ৯:৪৫

আহমেদ জী এস বলেছেন: আবীর চৌধুরী ,





বৈশ্বিক জলবায়ু বিপর্যয় এর কথা জেনে, কাগজে - মিডিয়াতে বিপর্যয়ের অসংখ্য তথ্য দেখে, নিজের চারপাশে প্রতিদিন তার কুফল দেখেও মানুষ কেন যে তা গায়ে মাখছেনা সেটাও একটা গবেষণার বিষয়!

৩| ০৮ ই নভেম্বর, ২০২১ রাত ১০:০৬

চাঁদগাজী বলেছেন:



আপনি যা বলছেন, এটাই যথেষ্ট, নাকি আরো কিছু করতে হবে?

৪| ০৮ ই নভেম্বর, ২০২১ রাত ১০:২২

কালো যাদুকর বলেছেন: চাষ / বাগান করেছি এবং আপনার সাথে একমত শুধু যে সাশ্রয় হয়তা নয়, স্বাস্থেরও উন্নতি হয়।

এলেখার শেষ নেই। আরো কত কিছ করার আছে বিশ্ব নাগরিক হিসেবে |

৫| ০৯ ই নভেম্বর, ২০২১ রাত ১২:৪১

রাজীব নুর বলেছেন: আমাদের দেশের মানুষ নুজের পরিবারের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারে না। অন্যসব করবে কখন?

৬| ১০ ই নভেম্বর, ২০২১ বিকাল ৪:০৫

জ্যাকেল বলেছেন: একশ বছরের মধ্যে সামার টেম্পারেচার ৬০ ডিগ্রি হইতে পারে। তখন হিট স্ট্রোকে মানুষ এমনিতেই কমে যাবে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.