নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

প্রজন্মের কবি

প্রজন্মের কবি › বিস্তারিত পোস্টঃ

'অরন্যক পৃথিবী'---পর্ব-১

১০ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১১:২৬

অরন্য টিশ্যু পেপার হাতে পার্কের বেঞ্চে বসে আছে।তারপাশে বসে তিথি কাদছে আর সে কিছুক্ষন পরপর টিশ্যু সাপ্লাই দিচ্ছে।আর মাত্র দুইটা টিশ্যুই বাকি আছে।মেয়ের কান্নার অবস্থা ভাল না।বোধহয় কান্না এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে আছে।কান্নার কয়েকটা ধাপ থাকে।প্রাথমিক অবস্থা,মধ্যবর্তী অবস্থা এবং শেষ অবস্থা।প্রাথমিক অবস্থায় নাকটানা এবং নিরব চোখের জল থাকে।মধ্যবর্তী অবস্থা সবচেয়ে ভয়ানক।এই পর্যায়ে হাউমাউ টাইপ কান্না হয়।অনেক সময় ক্রন্দন্কারীদের সামলানো ব্যাপক কষ্টসাধ্য হয়।শেষ পর্যায়ে থাকে অশ্রুমোচন এবং এক বুক অভিমান।তিথির কান্না এখন আছে প্রাথমিক পর্যায়ে।এখনো দুইটা পর্যায় বাকি।তাই আরো টিশ্যু লাগবে।পকেটের অবস্থাও ভাল না।দশটাকার একটা ছেড়া নোট আছে।এক প্যাকেট ফেসিয়াল টিশ্যু পাওয়া যাওয়ার কথা।কিন্তু কথা সেটা না।কথা হচ্ছে টাকাটা চলবে কি না।আমাদের দুইটাকাপ্রীতি আছে।দুই টাকা ছেড়া হলে আমরা সেটা হাসিমুখে নেই।কিন্তু অন্য নোটে টেপ মারা থাকলেও নেই না।কি কারন জানা নেই।



তিথি টিশ্যুর জন্য হাত বাড়ালো।অরন্য আগ্রহ সহকারে টিশ্যু এগিয়ে দিল।সে এই কাজ করে চরম মজা পাচ্ছে।মানুষের চোখের পানি মুছে দেয়া অবশ্যই অত্যন্ত পূন্যের কাজ।আর সেটা যদি হয় রুপবতী কোন রমনী তাহলে তো সেটা অত্যাবশকীয় কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম।



আর মাত্র একটা টিশ্যু বাকি আছে।অরন্যের চিন্তা বাড়ছে।টিশ্যু চিন্তার পাশাপাশি নতুন চিন্তা যুক্ত হয়েছে।নতুন চিন্তা হচ্ছে রিতু চিন্তা।এই একটা সমস্যা।একটা চিন্তা মাথার ভিতর ঢুকে গেলে এই চিন্তা ডালপালা মেলে দেয়।এক চিন্তা থেকে আরো হরেক রকম চিন্তার উদয় হয়।



রিতু অরন্যের ছাত্রী।মেয়ের মাথায় মারাত্মক সমস্যা।একটু দেরিতে পড়াতে গেলে তুলকালাম কান্ড করে ফেলে।এতক্ষনে বোধহয় বাসায় কেয়ামত হয়ে গেছে।কারন অরন্য ইতোমধ্যে আধা ঘন্টা দেরি করে ফেলছে।যাওয়ার কথা তিনটার সময়।এখন বাজে সাড়া তিনটা।আচ্ছা ঘড়িটা কি ঠিক সময় দিচ্ছে?এমন তো হতে পারে ঘড়ি ভুল সময় দিচ্ছে।পঞ্চাশ টাকার সস্তা ঘড়ি ভুল সময় দিলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।বরং এটাই স্বাভাবিক।

অরন্য কি করবে বুঝতে পারছে না।তিথিকে একা ফেলে সে কিভাবে যাবে?একটা মেয়ে পার্কে বসে একা একা কাদবে তার পাশে কেউ থাকবে না এটা তো হতে পারে না।কান্নার সময় প্রতিটা মানুষ তার পাশে কাউকে আশা করে।তিথিও হয়তো করে।হয়তো কেনো?অবশ্যই করে।তিথিও তো মানুষ!



তিথি আবার হাত বাড়ালো।অরন্য শেষ টিশ্যুটা দিয়ে বলল-টিশ্যু শেষ।চিন্তার কারন নেই।এখনি নিয়ে আসছি

-টিশ্যু লাগবে না অরন্য ভাই

-কেনো?আর কাদবে না?



অরন্যের কথায় তিথির মেজাজ খুব খারাপ হয়ে গেল।গাধা বলে কি!সে কি তার কান্না নিয়ে উপহাস করার চেষ্টা করছে?প্রতিটা ছেলেই মেয়েদের কান্না নিয়ে উপহাস করতে পছন্দ করে।সেও নিশ্চই উপহাস ই করছে।গলার স্বর তো তাই বলে।একটা মানুষকে দুইভাবে চেনা যায়।তার গলার স্বর আর চোখের ভাষা।কিন্তু পরিতাপের বিষয় এই গাধা চাশমিস গাধা।মোটা ফ্রেমের চশমা ভেদ করে চোখের ভাষা পড়া যাচ্ছে না।তিথি চিন্তা করেছিল বেচারা এত কষ্ট করে যখন টিশ্যু এনে দিচ্ছে তাই তাকে কিছু বলবে না।কিন্তু কিছু না বললে তো আর হচ্ছে না।কঠিন কিছু কথা বলার সময় এসে গেছে।



-আপনার খেয়ে দেয়ে কোন কাজ নেই?মানুষকে টিশ্যু সাপ্লাই দেয়ার দায়িত্ব সরকার আপনাকে দিছে যে পার্কে বসে যারা কাদবে তাদের টিশ্যু সাপ্লাই দিবেন?এ জন্য আপনি প্রতিদিন পার্কে আসেন?

-না।পার্কে তো আসি ঘুমানোর জন্য।দুপুরে পার্কে ঘুমানো অভ্যাস হয়ে গেছে।



অরন্য মিথ্যা বললো।সে পার্কে আসে তার মেসমালিকের কাছে থেকে বাচার জন্য।দুই মাসের মেস ভাড়া বাকি।



-ঘুমাতে এসেছেন তো ঘুমাবেন।এখানে দাড়িয়ে আছেন কেনো?

-হঠাৎ তোমাকে কাদতে দেখলাম তো তাই

-হঠাৎ ই তো দেখবেন।আপনার কি ধারনা আমি মাইক ভাড়া করে ঘোষনা দিয়ে তারপর কাদবো?

-না আমি সেটা বলি নি।তোমার কান্না দেখে খুব খারাপ লাগলো তাই

- মানুষের কান্না দেখলে আপনার খারাপ লাগে?

-হুম





তিথি বিড়বিড় করে বললো-মহাপুরুষ কোথাকার!

-কিছু বললে?

-না কিছু বলি নি।আপনার টিউশনি নেই?

-ছিল।আধা ঘন্টা দেরি হয়ে গেছে।চিন্তা করছি যাব না।

-খুব ই বাজে চিন্তা করছেন।টিউশনি মিস দেয়া ঠিক না।মানুষ মাস শেষে কষ্ট করে উপার্জন করা টাকা দিবে আর আপনি মাসের মধ্যে চৌদ্দবার টিউশনি মিস দিবেন তা তো ঠিক না।তাও যদি উপযুক্ত কোন কারন থাকতো তাও হত।একটা মেয়েকে টিশ্যু দেয়া অবশ্যই গুরুত্বপূর্ন কোন কাজের মধ্যে পড়ে না।

-তাহলে কি আমি টিউশনীতে যাব?

-অবশ্যই যাবেন এবং এক্ষুনি যাবেন।

-আচ্ছা।



অরন্য মন খারাপ করলো।তিথি এখন এখানে একা একা বসে কাদবে।সে থাকবে না।বেচারী চোখ মোছার টিশ্যুটাও পাবে না।টিশ্যুর অভাবে হয়তো ওড়না দিয়ে চোখ মুছবে।কাপড় নষ্ট হবে।তিথি কেনো কাদছিল সেটাও জানা হয় নি।অরন্যের আরো বেশি খারাপ লাগা শুরু হল।অরন্যের চোখ ভিজে উঠলো।কিন্তু চোখ মোছা যাবে না।হয়তো তিথি তার দিকেই তাকিয়ে আছে।তাকে চোখ মছার দৃশ্য দেখানো ঠিক হবে না।একজন পুরুষ মানুষের কান্না খুব ই দু:খজনক ব্যাপার।



তিথি একবার ভাবলো অরন্যকে ডেকে স্যরি বলবে।বেচারা খুব ই মন খারাপ করছে।এমনভাবে কথা বলা ঠিক হয় নি।সে তো ভুল কিছু করে নি।সে তো বরং তাকে সাহায্য ই করছিল।না।স্যরি বলে লাই দেয়ার কিছু নেই।পুরুষ জাতিকে লাই দিতে নাই।লাই দিলে এরা মাথায় উঠে যাবে।পরবর্তীতে দেখা যাবে স্যরিটা দাবি হিসেবে মনে করছে।এদের যত কম স্যরি বলা যায় তত ভাল।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.