নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আবু উযাইর

আবু উযাইর › বিস্তারিত পোস্টঃ

"জীবন বাঁচাতে হলে তার চোখ দুটি তুলে ফেলতে হবে"

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১:৪৪

রুমে ঢুকতেই খিলখিল হাসি। একটি বাচ্চা। ফুটফুটে, বয়স চার মাসের মতো। শিশুটি এসেছে বাবার কোলে চেপে। মা আছে সাথে, আরো এসেছে ফুপু। বাবার কোলে চেপেই সে বসলো আমার সামনে। মাথা নীচের দিকে। নীচের দিকে তাকিয়েই মাথা নাড়ছে অল্প অল্প, যেন মাটিতে কিছু খুঁজছে। বাবাকে জিজ্ঞেস করলাম আমি, “কি সমস্যা বলুন দেখি”।



বাবা বললেন, “ওর সমস্যা হলো এই নীচে তাকিয়ে থাকাটাই। শুয়ে থাকলে ঠিক আছে, কিন্তু বসে থাকলে বা কোলে থাকলেই মাথাটা ঝুঁকিয়ে চোখ দুটি নীচের দিকে দিয়ে রাখে। অনেক সময় এমন হয় যে, খুব অমনোযোগী থাকে। রুমে কেউ এসেছে কিনা সে খেয়াল নেই। হঠাৎ শব্দ পেলে চমকে সেদিকে তাকাবে”। তার নামটা জেনে নিলাম। ডাকলাম নাম ধরে। কিছুটা চমকে আমার দিকে তাকালো। সাথে হৃদয় নিংড়ানো একটা হাসি। বাবাকে কোলের একটু সামনের দিকে নিয়ে বসতে বললাম। বসার যায়গা পরিবর্তনের পর আবার মাথা নীচে, তবে কানটা যেন আমার দিকে খাড়া করে রাখা। আবার ডাকলাম আমি। আবারো সেই ভুবন ভোলানো হাসি দিয়ে চোখ তুলে চাইলো আমার দিকে। যেজন্য তাকে নিয়ে এসেছে বাবা-মা সেই চোখ পরীক্ষা করলাম। স্তব্ধ হয়ে রইলাম কিছুক্ষণ। যা দেখছি তা কি সত্যি?



আবার পরীক্ষা করলাম আমি, এরপর আরো একবার। ফুটফুটে এই শিশুটি দু’চোখের একটিতেও দেখতে পায় না, অন্ধ। তার চেয়েও ভয়ংকর ব্যাপারটি হলো তার দুচোখের ভিতরে বাসা বেঁধে আছে ভয়ংকর ক্যান্সার ‘রেটিনোব্লাস্টোমা’। জীবন বাঁচাতে হলে তুলে ফেলতে হবে তার চোখ দুটি, যত দ্রুত সম্ভব।





আমি তখনও স্তব্ধ। বাবা-মা অপেক্ষা করে আছেন। এ কথাগুলো গোপন যে করবো তারও উপায় নেই। অবশেষে বললাম। শিশু তখন বাবার কোলে। মা বসে আছেন সামনে। বললাম। বাবা শূণ্য চোখে তাকিয়ে আছেন। মা কাঁদছেন ডুকরে ডুকরে। তাঁকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছেন ফুপুটিও। কিছুক্ষণের ভেতর কোন শব্দ ছাড়াই বাবার চোখ বেয়েও গড়িয়ে পড়তে লাগলো পানি। যাকে নিয়ে এতো আবেগ, ছোট্ট সেই মানুষটি মাটির দিকে তাকিয়ে কান আমাদের দিকে দিয়ে রেখেছে, যেন শুনে বুঝতে চেষ্টা করছে প্রতিটি শব্দ। একটু পর মা উঠে এসে কাছে দাঁড়ালো। মা’র গন্ধ কি বুঝে ফেললো বাচ্চাটা? মাথা তুলে দৃষ্টিহীন চোখে চাইলো মা যেদিকে দাঁড়িয়ে আছে সে বরাবর। সাথে সেই অপার্থিব হাসি দিয়ে মায়ের কোলে যাবার জন্য হাত বাড়িয়ে দিলো সে। কোলে তুলে নিয়ে জড়িয়ে ধরে হু হু করে কাঁদতে লাগলেন মা টি। আমারও চোখ ভিজে উঠলো। কি ভীষণ কঠিন পরিস্থিতি, আল্লাহু আকবার।



রেটিনোব্লাস্টোমা চোখের ভেতরের একটি ক্যান্সার যা শিশুদের হয়। সাধারণত এক চোখে হয়, তবে কখনো কখনো এই বাচ্চাটির মতো দু চোখেও হতে পারে। সাধারণত এর চিকিৎসা হলো আক্রান্ত চোখকে তুলে ফেলা ও এর সাথে রেডিওথেরাপি, কেমোথেরাপি ও ক্রায়োথেরাপি ইত্যাদি। ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়লে রোগীকে সাধারণত বাঁচানো যায় না।



রেটিনোব্লাস্টোমা বাইরে থেকে দেখতে অনেকটা এমন





চোখের ভেতরে এই হলো ক্যান্সারটির অবস্থান





মনটা ভীষণ খারাপ ছিলো। নিজের চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ বোঝার চেষ্টা করলাম। যদি কাউকে এক ঘন্টার জন্যও চোখ বন্ধ করে রাখতে বলা হয়, তাহলেও তা হবে অসহনীয়। আর যার চোখ সারা জীবনের জন্য অন্ধ? আল্লাহু আকবার, কী ভয়াবহ ব্যাপার।



কোন অন্ধ লোক বা রোগীকে দেখার পর যে কাজটা আমি করি সেটা আবার করলাম। বাসায় এসে পড়লাম সাহাবা আবদুল্লাহ বিন উম্মে মাখতুম এর জীবনী, যিনি ছিলেন অন্ধ। রাসুলুল্লাহ সাঃ এর সাহাবাদের কথা সরাসরি উল্লেখ করে কুরআনে আয়াত খুব কম এসেছে। কিন্তু তাঁর কথা উল্লেখ করে আল্লাহ্‌ ষোলটি আয়াত নাজিল করেছেন। সেদিন থেকে নিয়ে রাসুলের জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি ছিলেন রাসুলের খুব ঘনিষ্টদের মধ্যে একজন। তাঁর মৃত্যুর ঘটনাও খুব চমকপ্রদ। পারস্য সাম্রাজ্যের সাথে মুসলিমদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ হয়েছিলো কাদেসিয়ায়। যুদ্ধের প্রস্তুতির সময় আবদুল্লাহ বর্ম পরে এসে হাজির হলেন খলিফা উমারের কাছে। অন্ধ ও অন্যান্য শারিরিক সমস্যায় থাকা লোকদের জন্য জিহাদে যোগদানের বাধ্যবাধকতা থেকে আল্লাহ্‌ কুরআনের একটি আয়াতে রেহাই দিয়েছেন। এর পরও সামর্থবানদের সাথে জিহাদে যেতে না পারার জন্য সারা জীবনই তাঁর খুব আফসোস ছিলো। কাদেসিয়ার যুদ্ধের সময় তিনি নিজেকে আর নিবারণ করতে পারলেন না, যুদ্ধের সাজ নিয়ে চলে এলেন ক্যাম্পে। আর বর্ম পরিহিত আবদুল্লাহর উপস্থিতি সবাইকে অবাক করলো। রাসুলের প্রিয়জন ও মর্যাদাবান সাহাবা হিসাবে সবাই তাঁকে বারণ করলো। তিনি বললেন, “তোমরা আমাকে সাথে নাও। আমি অন্ধ, তাই যুদ্ধ থেকে অন্তত পালিয়ে যাব না”। তাঁর কথার উপর না করার সিদ্ধান্ত কারো ছিলো না। বরং খলিফা উমার বিন খাত্তাব গুরুত্বপূর্ণ সেই যুদ্ধের মুসলিম বাহিনীর পতাকাটি তুলে দিলেন তাঁর হাতে।



যুদ্ধের তৃতীয়দিনে ত্রিশ হাজার সেনার মুসলিম বাহিনী দেড়লাখ রাজকীয় সেনার পারস্য বাহিনীর বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক বিজয় লাভ করে। সেদিনের যুদ্ধে যারা শহীদ হন তাদের ভেতর দেখা গেলো আবদুল্লাহ বিন উম্মে মাখতুম একজন। শত আঘাতে ক্ষত বিক্ষত তাঁর শরীর, তবে ইসলামের পতাকা শক্ত করে বুকে জড়িয়ে ধরা। সবার চোখ ভিজে এলো এ দৃশ্য দেখে। আল্লাহ্‌ তাঁকে শেষ পর্যন্ত শহীদ হিসাবেই মর্যাদা দিয়ে উঠিয়ে নিলেন।



মনটা শান্ত হলো আমার। আল্লাহর কাছে দোয়া করলাম সেই ছোট্ট শিশুটির জন্য, “প্রতিপালক, একে তুমি আবদুল্লাহ বিন উম্মে মাখতুমের মতো মর্যাদাবান করো। তার অপূর্ণতাকে তুমি পূর্ণ করো”।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +৮/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ২:০১

সায়িদ অহিদ বলেছেন: আমিন,সুম্মাআমিন।

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ২:৫৬

আবু উযাইর বলেছেন: আমিন।

২| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ২:৪৪

মিতাহামিদা০০৭ বলেছেন: আমিন! ইয়া আল্লাহ্‌!!!, এই অসুখ যেন র কারো নাহয় আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামিন!

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ২:৫৭

আবু উযাইর বলেছেন: আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন।

৩| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ সকাল ১০:৫৩

সবুজ সাথী বলেছেন: খুব আবেগী একটা পোস্ট। আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন।

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১:২৫

আবু উযাইর বলেছেন: আমিন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.