নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

“অর্থনৈতিক শুদ্ধতার পথে”

আবু আমাতুল্লাহ

“অর্থনৈতিক শুদ্ধতার পথে”—এই পথচলায় আমি খুঁজি এমন এক অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি, যেখানে ন্যায়, ভারসাম্য ও মানবিক মূল্যবোধ অটুট থাকে। ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রের অর্থনীতিকে এক স্বচ্ছ, নীতিনিষ্ঠ ও ন্যায়ের ভিত্তিতে দাঁড় করানোর চিন্তাই আমার লেখার মূল প্রেরণা। এই ব্লগে আপনি পাবেন সমসাময়িক অর্থনৈতিক বিষয়গুলোর একটি শুদ্ধ ও দায়বদ্ধ বিশ্লেষণ—যার মূল উৎস শাশ্বত জ্ঞান ও নৈতিকতা।”

আবু আমাতুল্লাহ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ড। ইউনুসের সামাজিক মুখোশে পুঁজিবাদ! প্রতারণা নয়তো? (পর্ব-০১)

১২ ই জুন, ২০২৫ সকাল ৯:১৬

ড.ইউনুস মনে করেন-‘একই সঙ্গে একজন উদ্যোক্তার দু’ধরনের বিনিয়োগ থাকতে পারে। এক ব্যবসায় তিনি ব্যক্তিস্বার্থ ছাড়া অন্য কোনও বিষয় মাথায় স্থান দিবেন না। একই সঙ্গে তিনি এমন ব্যবসাও চালাতে পারন সামাজিক উপকারই যার মূখ্য কাজ’। (গ্রামীণ ব্যাংক ও আমার জীবন পৃ.২০৬)

তার উক্ত দর্শন অনুসারে সমাজে অতি মুনাফালোভী পূঁজিবাদী মানুষটিই দিন শেষে কিছুটা সামাজিক হয়ে উঠবে। যেখানে সে মুনাফা আগের মতোই করবে, তবে ক্ষেত্র বিশেষ সামাজিক হওয়ায় সেখানের মুনাফা সমাজের জন্য ব্যয় হবে। একই লোকের মাঝে দু’ধরনের বৈশিষ্ট্য থাকবে-এক দিকে সে হবে পূঁজিবাদের রক্তচোষা লোভী ব্যবসায়ী, অপরদিকে সেই হবে কিছুটা সময়ের জন্য সামাজিক। এধরনের রক্তচোষা পূঁজিবাদী উদ্যোক্তা যেমন সমাজে থাকবে, পাশাপাশি কিছু দরিদ্র ব্যক্তিকেও উদ্যোক্তা হয়ে উঠার পথ তৈরি করা হবে। সেই দরিদ্র উদ্যোক্তাও এক সময় রক্ত চোষা পূঁজিবাদী হতে বাধা নেই।

এভাবে এক সময় যদি সবাই রক্তচোষা অতিমুনাফাখোর পূঁজিবাদী হয়ে উঠে-এতে অসুবিধা কী? দরিদ্র তখন থাকবে না। যাদুঘরে চলে যাবে। পৃথিবীর সবাই তখন রক্তচোষা পূঁজিবাদী হয়ে উঠবে। পূঁজিবাদীদের বিষাক্ত থাবায় পৃথিবীর অর্থনীতি হয়ে উঠবে-দরিদ্রমুক্ত পৃথিবী।

তাঁর এই দর্শন যে কতটা ফাঁকা, অবাস্তব ও অন্ত:সারশূন্য-তা বুঝতে অর্থনীতিবিদ হওয়ার প্রয়োজন নেই। কিভাবে একজন মানুষ এধরনের অপরিপক্ক চিন্তা করতে পারে যে, পূঁজিবাদের রক্তচোষা মনোভাবকে শতভাগ সমর্থন দিয়েই তার কাছ থেকে সামাজিক হওয়ার প্রত্যাশা পূরণ হবে? রক্তচোষাদেরকে শতভাগ সমর্থন দেয়া হলে, সেই সমাজে কখনই প্রান্তিক জনগোষ্ঠির উন্নয়ন হবে না। কারণ, সবাই সামাজিক হয়ে গেলে রক্তচোষাদের পথ রুদ্ধ হয়ে যাবে। আর এটি তো হবার নয়। এটি হলে তো পূঁজিবাদ থাকবে না। অথচ পূঁজিবাদ থাকতে হবে। আর পূঁজিবাদ থাকলে ‘সামাজিক ব্যক্তি’ কিভাবে তৈরি হবে?

বিষয়টি এমন হয়ে গেল-চোরকে স্বীকৃতি দেয়া হবে। চোরের চুরি পেশা স্বীকৃত হবে। আবার একই সাথে তাকে বলা হবে প্রতি শুক্রবারে চুরি না করে সামাজিক কাজ করবে। ভালো হয়ে থাকবে। এটি হবে তখন ‘চোর সমাজের সংস্কার’। পূঁজিবাদের অদ্ভূত সংস্কার চিন্তা-অনেকটা ‘চোর সংস্কার’ এর মতোই।

যারাই পূঁজিবাদের সংস্কার এর কথা বলেছে-তারা যুগে যুগে এ ধরনের অদ্ভুত ও অবাস্তব প্রস্তাব করেছে। এতে সমাজের কোনও কল্যাণ হয়নি। হাঁ, এতে পূঁজিবাদীরা খুশী হয়ে যায়। তাদের একটি ভালো পরিচয় আবিস্কার হয়। আবিস্কারককে তারা পুরুস্কৃত করে, নোবেল প্রাইজ দিয়ে বরণ করে।

রক্তচোষা পূঁজিবাদের সুদ শত বছর ধরে-প্রান্তিক জনগাষ্ঠির মাঝে প্রতিষ্ঠা করা যায়নি-সেটি ড.ইউনুস কথিত সামাজিক ব্যবসার নামে করতে সক্ষম হয়েছেন। সামাজিক ক্ষুদ্র ঋণের নামে পাহাড়ে পর্যন্ত সুদ এর বিস্তার ঘটাতে সক্ষম হয়েছেন। এতে পূঁজিবাদীরা খুশী না হয়ে উপায় আছে? এতো পূঁজিবাদেরই জয়। তাদেরকে মানুষ এখন ভালো বলতে শুরু করবে। পূঁজিবাদ দিয়েও সামাজিক হওয়া যায়। এই অবাস্তব ও অদ্ভুত উদ্ভাবনই ড.ইউনুসকে পশ্চিমা স্বীকৃতি এনে দিয়েছে।

এক সময় পূঁজিবাদ বিশ্ব মনে করত, দরিদ্র শ্রেণীর মানুষ কেবল-ই দান-খয়রাতের উপযুক্ত। তাদের দিকে ব্যবসা করা, পূঁজিবাদ বিস্তার করা যায় না। ড.ইউনুস সেই ধারণা পাল্টে দিলেন। you can do business with the poor; they are not just objects of charity. তারা এখন বিজনেস আইটেম!(Tom Heinemann )

এ কাজ করতে গিয়ে তাকে পূঁজিবাদ ও পশ্চিমা বিশ্বাসের প্রতি বিনীত হতে হয়েছে। ধর্মকে পাশ কাটিয়ে যেতে হয়েছে। পশ্চিমা রীতিতে বাংলাদেশের নারীদেরকে ঘরমুক্ত করতে হয়েছে। এলজিবিটি সমর্থনক গোষ্ঠি এনজিও ও দাতা গোষ্ঠির সহায়তাও নিতে হয়েছে । সর্বোপরি হয়ে উঠেছেন-একজন তথাকথিত পশ্চিমা সামাজিক মুখোশে পূঁজিবাদী সুশীল উদার ভদ্রলোক। এটাই হওয়ার কথা ছিল-কারণ, পশ্চিমা অর্থনীতি মূলত নিওলিবারাল পূঁজিবাদে বিশ্বাস করে, যেখানে ব্যক্তি স্বাধীনতা ও মুনাফা সর্বোচ্চ লক্ষ্য। ড. ইউনুস এই পূঁজিবাদকে বিরোধিতা না করে বরং সংস্কারের নামে তাকে পুনরুজ্জীবিত করেছেন। এটাই পশ্চিমাদের পছন্দ।

কেন তার উক্ত ‘পূঁজিবাদ সংস্কার প্রস্তাবনা’ অবাস্তব ও ত্রুটিযুক্ত-চলুন কিছু গুরত্বপূর্ণ দৃষ্টিকোণ থেকে তা বিশ্লেষণ করা যাক- (চলবে)
টিকা: ১। Tom Heinemann, The Micro Debt, documentary, NRK Brennpunkt, Norway, 2010. First aired in late 2010 on Norwegian state television NRK, the film investigates the darker sides of microfinance, including claims of coercion and unsustainable debt burdens on poor borrowers. The documentary sparked significant international controversy. https://tomheinemann.dk/the-micro-debt/
এই প্রামাণ্যচিত্রটি নরওয়ের রাষ্ট্রায়ত্ত টিভি চ্যানেল NRK (Norwegian Broadcasting Corporation)-এর জন্য নির্মিত হয়েছে এবং সুইডেনের SVT (Sveriges Television) ও ডেনমার্কের DR (Danish Broadcasting Corporation) সহ-প্রযোজক হিসেবে এতে যুক্ত ছিল।" অর্থাৎ এটি শুধু নরওয়ের প্রজেক্টই নয়, বরং স্ক্যান্ডিনেভিয়ার (Scandinavia) তিনটি দেশের রাষ্ট্রীয় মিডিয়ার যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত। এটি বোঝায় যে ডকুমেন্টারিটি আন্তর্জাতিক মানের সাংবাদিকতা ও প্রযোজনা প্রক্রিয়ায় নির্মিত হয়েছে, এবং এর প্রচার তিনটি ইউরোপীয় রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন নেটওয়ার্কে হয়েছে—যা এর প্রভাব ও বিশ্বাসযোগ্যতা আরও বাড়িয়েছে।

টিকা: ০২
যেসব বিদেশী দাতাসংস্থা গ্রামীণ ব্যাংকে অনুদান দিয়েছিল, সেগুলোর মাঝে অন্যতম হল- Ford Foundation, Norwegian Agency for Development Cooperation (Norad), Swedish International Development Cooperation Agency (Sida), Deutsche Gesellschaft für Internationale Zusammenarbeit (GIZ), Open Society Foundations (OSF)। তারা সকলেই এলজিবিটি প্রমোট করে। (গ্রামীণ ব্যাংক ও আমার জীবন, মুহাম্মদ ইউনুস, পৃ.২৭৭)
টিকা: ০৩
নিওলিবারাল পূঁজিবাদ (Neoliberal Capitalism) বলতে বোঝায়-অর্থনৈতিক চিন্তাধারার একটি বিশেষ ধারা, যা ১৯৭০-এর দশক থেকে বিশ্বব্যাপী বিস্তার লাভ করে এবং বর্তমানে অধিকাংশ আধুনিক রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক কাঠামোর ভিত্তি হিসেবে কাজ করছে। এর মূল বক্তব্য হলো—রাষ্ট্র নয়, বাজারই সর্বোত্তম সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী। এর বৈশিষ্ট্যসমূহ হল- বাজার ও ব্যবসায় রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ হ্রাস করা, করপোরেট কর কমানো ও প্রণোদনা, সরকারী সেবাসমূহ বেসরকারীকরণ করা (যেমন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পানি ইত্যাদি), বিদেশী বাজার উন্মুক্ত করে দেয়া ইত্যাদি। অতিমাত্রায় করপোরেট ও বাজারকে স্বাধীনতা দেয়ায় সাধারণ সামাজিক সেবাসমূহও পণ্যে রূপান্তর হয়ে যায়। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান—এসব মানুষের মৌলিক অধিকার নয়, বরং পণ্য। যার টাকা আছে সে-ই ভালো শিক্ষা ও চিকিৎসা পাবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক, মানিলন্ডারিং ইউনিট, ও নীতি নির্ধারণী সংস্থাগুলো কর্পোরেটদের স্বার্থরক্ষাকারী হয়ে ওঠে। কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো সরাসরি রাজনীতি ও নির্বাচনকে প্রভাবিত করে (Funding, media control)। রাজনৈতিক দলগুলো কর্পোরেট স্পন্সরে চলে। কোনো প্রতিষ্ঠান দরিদ্র মানুষের উপকার করছে কি না—তা গুরুত্বপূর্ণ নয়; বরং কতটুকু লাভ হচ্ছে সেটাই মুখ্য। "Social Business" এর মতো ধারণাও আসলে কর্পোরেট লাভের সামাজিক মুখ। Amazon, Google, Facebook, Nestle, Pfizer—এদের বাজার ও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা সমান! অনেক সময় এসব কোম্পানি সরকারের চেয়েও প্রভাবশালী। বর্তমান দুনিয়ায় এ ধরনের চরম পূঁজিবাদ-ই বিস্তার লাভ করছে। কর্পোরেট-মার্কেটনির্ভর অর্থনীতি আসলে একটি "Corporate Hijack of the State"—রাষ্ট্র ও সমাজকে কর্পোরেটদের লাভের জন্য ব্যবহারের একটি ক্ষতিকর ছক। পশ্চিমা সমাজে দিন দিন তা বিস্তার লাভ করছে। পূঁজিবাদ আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে।



(ছবি-এআই দিয়ে তৈরি)

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই জুন, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:২৮

ফেনিক্স বলেছেন:



ড: ইউনুস রুপকথার শয়তান থেকেও বড় প্রতারক; তিনি পশ্চিমের বিশ্বকে প্রতারণা করে, বিনা সুদে ডলার এনে, গরীব বাংলাীদের সেই ডলার উঁচু হারের সুদে দিয়ে নিজে বিলিওনিয়ার হয়েছে।

সে সেরা দক্ষ বাংগালী ও বিশ্ব সেরা শঠদের ১ জন।

২| ১৪ ই জুন, ২০২৫ সকাল ১১:৪৫

রাজীব নুর বলেছেন: ইউনুস ভালো লোক নয়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.