![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেশকে ভালোবাসি, ভালোবাসি দেশের মানুষকে মানবতাকে
সুখের উল্লাস নিয়ে নতুনের কেতন উড়িয়ে আসে নববর্ষ। বিগত বছরের ব্যর্থতা, অস্থিতিশীলতা কাটিয়ে উঠতে কোটি বাঙ্গালী বরণ করে নতুন বর্ষ। বৈশাখ শুধু নবর্বর্ষের সূচণাই নয় আমাদের শত শত বছরের প্রবাহমান ঐতিহ্যের স্মারকও বটে। বাঙ্গালীর জাতিসত্ত্বা, স্বাতন্ত্র, সংস্কৃতি ও কৃষ্টি কালচারও ওপ্রোতভাবে জাড়িত। ১৫৮৫ খৃষ্টাব্দে মোগল সম্রাট আকবরের নির্দেশে আমীর ফতেহুল্লা সিরাজী হিজরী বর্ষকে বহাল রেখে ৩৫৪ দিনের স্থলে ৩৬৫ দিন ধার্য্য করে একটি নতুন সনের সূচনা করেন। তখন থেকেই এদেশে বাংলা সনের প্রচলন শুরু হয়। পূর্বেও বাংলার মানুষ নববর্ষকে স্বাগত জানাতো এখনো জানায়। কিন্তু আগে নববর্ষ উৎসবে যে পবিত্র উচ্ছাস উদ্দীপনা ছিল তা এখন সুদূর কল্পনা। পূর্বে নববর্ষ বরণ করা হতো হীনতা নীচতা সংকীর্ণতা ক্লেদ গ্লানীকে ঝেড়ে ফেলে জীবনে স্বস্তি সজিবতা, আশার আলো ফিরিয়ে আনার এবং পাপের প্লাবনে প্লাবিত সমাজকে পুণ্যের বাবিধারায় ধুয়ে মুছে সাফ করতে। নিজেদের মাঝে পারষ্পরিক ভেদাভেদ দূর করে আত্মীয় স্বজন পাড়াপড়শীদের মাঝে মৈত্রী সৃষ্টি করতে। এ উপলেক্ষ বিভিন্ন কল্যাণ মূলক কাজের আয়োজন করা হতো। বাংলা সন অনুযায়ী বহু ধর্মীয় সভা, ইসলামী জলসা, ঈসালে সওয়াব এবং ওয়াজ মাহফিলও অনুুষ্ঠিত হতো। ব্যবসায়ীরা হালখাতা করে বিগত বছরের পাওনা আদায় ও নতুন বছরের নাম সংযোজন করতো। ঘরবাড়ী দোকান পাট ধুয়ে মুছে, পুরোনা ভুল ভ্রান্তির জন্য অনুতপ্ত হয়ে নতুন বর্ষে নতুন মেজাজে জীবন শুরু করতো। বৈশাখ এলেই বাংলার বধুরা হস্তশিল্প কুটির শিল্প, সহ নানা রকমের পিঠা তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে যেতো। গ্রাম বাংলায় মেলা বসার ধুম পড়ে যেতো। মেলায় মাটির হাড়ি পাতিল বাঁশের তৈরি বিভিন্ন ব্যবহার্য্য বস্তু সামগ্রী বেলুন পিড়ি, কাঠ. বাঁশ ও বেতের তৈরি নানা রকমের তৈজসপত্র কুমারের মাটির পাতিল, বাসন-কোসন. সানকি ইত্যাদি শিশুদের খেলনা মজার মজার খাদ্যদ্রব্য ,তিলা, কদমা. বিন্নি উফরা ও রংবেরংগের ঘুড়ি সহ বিচিত্র সব বস্তু নিয়ে দোকানিরা পসরা সাজিয়ে বসত। এতে গ্রামীণ সংস্কতির উজ্জীবন ও অর্থনীতির সঞ্চালন সম্ভবপর ছিল । কৃষকরা বৈচিত্রময় নামের পাকাধান ঘরে তুলে আনতো। ঘরে ঘরে মিষ্টান্ন আর পিঠা পায়েসের আয়োজন করে আত্মীয় স্বজন, পাড়া পড়শীদের খাওয়ানো হতো। মোটকথা বৈশ্খা এলেই বাংঙ্গালীদের মাঝে সুখ ও আনন্দের বন্যা বয়ে যেত। আহ; কোথা সেই রূপালী দেশের মনকাড়া রূপ। আছে সেই মাতৃভূমি . কিন্তু নেই সেই ্ ইতিহাস, ঐতিহ্য। বর্তমানে বৈশাখের নামে যা হয় তার সংঙ্গে বাংগালী সংস্কৃতির কোন মিল আছে কিনা এর সদুত্তর এদেশের ইতিহাসের কাছেই ভাল পাওয়া যাবে। কিন্তু একটি চি˝িত মহল এ মাটির হাজার বছরের নিজস্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে ভূলুন্ঠিত করে পরিকল্পিত ভাবে বিজাতীয় ব্রা˛ণ্য সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠার অপপ্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মহল বিেেশষের পৃষ্ঠপোষকতায় হিন্দু দেবী কালী মূর্তির ন্যায় রক্তলাল জিহ্বা বেরকরা ভয়ানক দৃশ্য . ভূত, পেত্মীর মুখোশ, হিন্দু দেবতা কার্তিকের বাহন, লক্ষ্মীদেবীর পেঁচামূর্তি। গনেশের মূর্তি, মনসা দেবীর সাপের মূর্তি, কুকুর, গাধাসহ বিভিন্ন বন্য জন্তু জানোয়ারের মুখোশ ও সিঁদুর আর ধুতি পরে ঢাক ঢোল করতাল মন্দিরা বাজিয়ে বের করা হয় বৈশ্খাী শোভাযাত্রা। বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়েরর চারুকলা ইনািস্টটিউটের শোভাযাত্রায় গ্রাম বাংলার শাশ্বত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শন করে দেব দেবী আর বন্য হিংস্র প্রাণীদের প্রতিকৃতি ধারণ করে নোংরা সংস্কৃতিকেই টেনে আনা হয় প্রতিবছর। কিন্তু তাদের শোভাযাত্রায় স্থান পায়না এ মাটির আপন সংস্কৃতি কৃষকের লাঙ্গল, ধানের বোঝা নিয়ে বাড়ী ফেরা কিশোরের নদীতে ঝাপ, ভরা বর্ষণে নৌকার বাইচ, হাটের দোকানের শুভ হালখাতা, কুল বধুর ঘোমটা মাথায় লাজ নম্র চলনে কলসী কাঁখে বাড়ী ফেরার শান্ত দৃশ্য। এ ছাড়া নববর্ষ উদযাপনের নামে চলে আল্পনা আকার ধুম, কিন্তু কোন কালে এ অঞ্চলে অল্পনা আকার সংস্কৃতি ছিল কিনা সে প্রশ্ন অবান্তর এ নগ্ন সংস্কৃতিকে বাংগালীর শাশ্বত সাংস্কৃতির উপর চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। বিশেষ করে রাজধানির এক শ্রেণীর লোকের আচরণ আমাদের চিরায়ত সাংস্বৃতিক ঐতিহ্যকেই শুধু ধরাশায়ী করছেনা, বরং আমাদের শাশ্বত মূল্যবোধ কে ছিন্ন ভিন্ন করে দিচ্ছে। হাজার টাকার পান্তাভাতে ৬০০ টাকার ইলিশ মাছের প্রাতঃরাস গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠির উপর শহরের বড়লোকদের ঢং বৈকি? পহেলা বৈশাখে শ্লীলতার গন্ডি ভেংগে ছেলে মেয়েরা যে ভাবে হৈহুল্লোর ও তরুণীর গায়ে তরুণের, তরুণের গায়ে তরুনীর উল্কি আকার চিত্র শুধু ইসলামের দৃষ্টিতে কেন, হিন্দু বৌদ্ধ খিষ্টান কোন সমাজেই এর নজীর পাওয়া যায় না। তাহলে এ মাটি ও মানুষের হাজার বছরের শাশ্বত সংস্কৃতি কে ভুলণ্ঠিত করে যারা আমাদের রাধা কৃষ্ণ সাজিয়ে মাঠে নামাচ্ছে তাদের মতলবটা কি? এর মাধ্যমে কি মুসলিম জাতি সত্তার বিসর্জন ও বা˛ণ্য সংস্কৃতিকে প্রতিষ্ঠার ভয়াবহ পায়তারা চলছে না?
©somewhere in net ltd.