![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বিশাল দিঘীর স্বচ্ছ জলে ভেসে বেড়ানো সাইবেরিয়ান হাস, আর সুউচ্চ গাছের ডালে বসে কিচির মিচির শব্দে প্রকৃতি ভরিয়ে তোলা পাখির কলকাকলি, সেই সাথে হাজারো দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখর পরিবেশ এখন শুধুই স্মৃতি দুর্গাসাগরে। এক সময় যেখানে অতিথি পাখি দেখা আর প্রিয়জনদের নিয়ে অবসর সময় কাটানেরা জন্য মুখরিত হতো হাজারো দর্শনার্থীদের পদভারে। আগের মত অতিথি পাখি আর আসছেনা দুর্গসাগরে, তাই দর্শনার্থীদের সংখ্যাও কমে গেছে। কিছু পাখি শিকারির দৌরাত্ম আর যান্ত্রিক জীবনের প্রভাবের কারণে ঐতিহ্য হারাতে বসেছে দক্ষিণাঞ্চলে এই জনপ্রিয় পর্যটন স্পটটি।
এক সময় শীত আসলেই দক্ষিণাঞ্জলের দর্শনার্থীদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হতো দুর্গাসাগর। বরিশাল শহর থেকে ১১ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে বাবুগঞ্জ থানার মাধবপাশা গ্রামের এই দীঘিটি বরিশালের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহৎ এই দিঘীটির আয়তন ২৫০০ হেক্টর। বরিশালের প্রাচীন ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৭৮০ সালে রাজা জয় নারায়নের মা রানী দুর্গাবতী এ দিঘিটি খনন করান। এরপর রাজা জয় নারায়ন তার মায়ের নামেই দিঘীর নামকরণ করেন। স্থানীয়ভাবে এটি অবশ্য মাধবপাশার দিঘী নামেও পরিচিত।
বিশাল এ দিঘীর ঠিক মাঝখানে রয়েছে একটি দ্বীপ; যা দিঘীর সৌন্দর্য বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে। দ্বীপটিকে ঘিরে নানা কল্পকাহিনী লোকমুখে শোনা গেলেও দ্বীপটি আসলে কৃত্রিম। মূলত দিঘীর সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্যই খনন করার সময় এ দ্বীপটি করা হয়। বড় বড় কিছু গাছ এবং ঘন জঙ্গল কৃত্রিম দ্বীপটির পরিবেশকে করেছে আরও রহস্যময়।
দিঘীর প্রতিটি পাড়ের প্রস্থ প্রায় ৬০-৭০ ফুট। প্রাচীন বিভিন্ন প্রজাতির গাছসহ দিঘীর চারপাশে রয়েছে অসংখ্য ছোট বড় গাছ। সেসব গাছের ফাক দিয়ে ইট বাঁধানো পথে হাটতে হাটতে দর্শনার্থীরা লাভ করে প্রকৃতির অপার সান্নিধ্য। দিঘীর পশ্চিম পাড়ে রয়েছে বিশাল একটি শান বাঁধানো ঘাট। দর্শনার্থীদের জন্য রয়েছে দিঘীর স্বচ্ছ পানিতে গোসল করারও সুযোগ। এছাড়া একটি বিশ্রামাগার, পিকনিক স্পট, নামাজের ঘর ছাড়াও রয়েছে বিশুদ্ধপানির জন্য গভীর নলকূপ। দিঘীর বাইরে দর্শনার্থীদের জন্য গড়ে ওঠেছে বেশকিছু দোকান পাট।
শীতের শুরু অর্থাৎ নভেম্বর মাস থেকে দুর্গসাগরে শুরু হয় অতিথি পাখিদের আগমন, থাকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। ইউরোপের সাইবেরিয়া সহ বিভিন্ন জয়গা থেকে প্রচন্ড শীতে টিকতে না পেরে একটু আরামদায়ক আশ্রয়ের খোজে এদেশে আসে পাখিরা। বিভিন্ন জলাকীর্ণ জায়গায় আশ্রয় নেয় এসব পাখি। অসংখ্য গাছগাছালি আর মিঠা পানির কারণেই হয়তো দুর্গাসাগর শুরু থেকেই অতিথি পাখিদের কাছে খুব প্রিয়। নানা রং বেরংয়ের হাজারো পাখি সারাদিন বিচরণ করে দিঘির জলে। যা এক নৈসর্গিক পরিবেশের সৃষ্টি করে। মূলত অতিথি পাখির এত বিপুল সমারোহের কারণেই দুর্গসাগর ভ্রমণ পিয়াসীদের কাছে এত প্রিয়। প্রতিদিন অসংখ্য দর্শনাথী আসে এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে।
দুর্গাসাগর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা কর্মীদের মতে, শীত মৌসুমে প্রতিদিন প্রায় চার থেকে পাচশো দর্শনার্থী বেড়াতে আসে দুর্গাসাগরে। এছাড়া প্রায় প্রতিদিনই আসে কোন না কোন বনভোজন দল। বছরের অন্যান্য সময় অবশ্য দর্শনার্থীর সংখ্যা কম থাকে।
তবে সা¤প্রতি সময়ে দুর্গাসাগরে অতিথি পাখির আগমন অনেক কমে গেছে। এক সময়ের অতিথি পাখির অভয়ারণ্যে এখন আর আগের মত নেই পাখিদের বিচরণ। শীত মৌসুমে এখন সামান্য কিছু পাখি দেখা যায় এখানে। তবে সে সংখ্যাও কমছে দিন দিন। আর তাই কমছে দর্শনার্থীদের সংখ্যা, আবেদন হারাচ্ছে শতবর্ষের প্রাচীন এই ভ্রমণকেন্দ্রটি।
স্থানীয় লোকজনের সাথে আলাপ করে জানা যায়, কিছু পর্যটক ও স্থানীয় গুটিকয়েক লোকের বেপরোয়া পাখি শিকারের কারণেই কমছে অতিছি পাখির সংখ্যা। এছাড়া দিঘীর পাশ দিয়েই ব্যস্থ মহাসড়ক থাকার কারণে গাড়ির শব্দে দিঘির সেই নিরিবিলি পরিবেশ আর নেই। অনিয়ন্ত্রিত পাখি শিকার আর যাহবাহনের শব্দের কারণে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে অতিথি পাখিরা। তাছাড়া বেড়ানোর নামে কিছু তরুণ-তরুণীর উছৃঙ্খল ও অসামাজিক আচার-আচরণের কারণেও অনেকে এখানে আসতে চান না। স্থানীয় দোকানদার আনসার আলী জানান, ‘পাচ-ছয় বছর আগে যে পরিমাণ অতিথি পাখি আসতো এখন তার দশ ভাগের এক ভাগও আসেনা। বন্দুক আর ফাঁদ পেতে পাখি ধরার কারণেই মুলত পাখি আসা কমেছে। আর অতিথি পাখি আসেনা তাই দর্শনার্থীরাও আসতে চায় না।’
স্থানীয় কিছু সেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোগে পাখি শিকার বন্ধে সচেতনতা তৈরি করা হলেও তা খুব একটা কাজে আসেনি প্রশাসনের অনাগ্রহের কারণে। স্থানীয় লোকজনের মতে, প্রাচীণ এই স্থানটির সংরক্ষণের জন্য এখনই অবাধে পাখি শিকার বন্ধ করা প্রয়োজন। ≠
©somewhere in net ltd.