![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মোহাম্মদ আবুল হোসাইন চৌধুরী
লক্ষ্য বা টার্গেট বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন সুন্দর পরিকল্পনা। যা আপনাকে পৌঁছে দিবে সাফল্যের স্বর্ণদুয়ারে। লক্ষ্য বা টার্গেট বাস্তবায়নে সুন্দর পরিকল্পনার ওপর আলোচনা করার আগে প্রয়োজন পেশা বা ক্যারিয়ার, উদ্দেশ্য ও স্তর বিন্যাসের ওপর আলোচনা করা।
পেশা বা ক্যারিয়ার
জীবন বাঁচানোর জন্য জীবিকা হিসেবে মানুষ কোন না কোন কাজ করে থাকেন। এই কাজ করার মাধ্যমেই মানুষ কোন একটি বিষয়ে নিজেকে দক্ষ করে জীবিকার পথ হিসেবে তা বেছে নেয়। জীবিকার পথ হিসেবে মানুষ যে পন্থাকে বেছে নেয় তাই মূলত তার পেশা বা ক্যারিয়ার। জীবনের ধাপে ধাপে উন্নতির সোপানে অগ্রসর হওয়ার নামও পেশা বা ক্যারিয়ার।
পেশা বা ক্যারিয়ার চাকরি জীবনের অনুক্রমিক পরিকল্পনা। পেশা বা ক্যারিয়ারের বিভিন্ন রকম অর্থ রয়েছে। এগিয়ে যাওয়া, জীবিকা, অধিকতর দায়িত্ব প্রাপ্তি, অধিকতর পদমর্যাদা, সম্মান ও দক্ষতা অর্জন প্রভৃতি। আমরা অবশ্য পেশা বা ক্যারিয়ার বলতে একজন ব্যক্তির কর্মজীবনের পর্যায়ক্রমিকভাবে অধিষ্ঠিত পদগুলো বুঝাবো। কোন ব্যক্তির সারাজীবনের কার্যাবলী ও কার্য সম্পর্কিত অভিজ্ঞতা ও পদের অনুক্রমিক উপলব্ধি ও পরিবর্তনই হলো ক্যারিয়ার।
পেশা বা ক্যারিয়ারের অভিধানিক অর্থ জীবনের পথে অগ্রগতি, জীবনায়ন, বিকাশক্রম, জীবিকা অর্জনের উপায় বা বৃত্তি ইত্যাদি। ক্যামব্রিজ ইন্টারন্যাশনাল ডিকশনারি অব ইংলিশে পেশা বা ক্যারিয়ারের যে সংজ্ঞা প্রদান করেছেন তা হলো-শিক্ষা বা প্রশিক্ষণের ভিত্তিতে অর্জিত এমন এক কর্ম যেখানে ব্যক্তির সমগ্র কর্মজীবনে গুণগত এবং অভিজ্ঞতা সম্পর্কিত উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি আসে, দায়িত্বের ব্যাপকতা বৃদ্ধি পায় এবং জীবনযাপনে পর্যাপ্ত অর্থের নিশ্চয়তা থাকে।
পেশা বা ক্যারিয়ার একটি চলমান প্রক্রিয়া
মানবজীবনে পেশা বা ক্যারিয়ার একটি চলমান প্রক্রিয়া। পেশা বা ক্যারিয়ার মানুষের সারা জীবনের কার্যাবলী ও কার্য সম্পর্কিত অভিজ্ঞতা ও পদের অনুক্রমিক উপলব্ধি ও পরিবর্তনের প্রক্রিয়া। মানুষ তার প্রয়োজনে দক্ষতা ও যোগ্যতার সৃষ্টিশীল উন্নয়ন ঘটায় এবং অন্যের কাছে আরো বেশি করে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলার জন্য চেষ্টা করে যায়। তাই এ প্রক্রিয়াটি প্রত্যেকের জন্য একরকম নয় এবং ব্যক্তির চারপাশের পরিবেশ এবং যেসব বিষয় জীবনের ওপর প্রভাব বিস্তার করে যেমন-পরিবার, সমাজ বিভিন্ন ধারা, সামাজিক নীতি এবং শ্রমবাজার ইত্যাদির ওপর নির্ভর করে। ক্যারিয়ার বলতে শুধু নির্দিষ্ট ধরনের কাজকর্ম অথবা পছন্দের একটি কাজের জন্য নিজের উন্নয়নকেই বোঝায় না বরং পেশা বা ক্যারিয়ারের এখন বিস্তর ধারণা রয়েছে।
কাজ, পেশা এবং জীবনের লক্ষ্য এক নয়
আমরা অনেকে কাজ, পেশা বা ক্যারিয়ার এবং জীবনের লক্ষ্যকে এক মনে করি। আসলে কাজ, পেশা বা ক্যারিয়ার এবং জীবনের লক্ষ্য এক নয়। বরং পেশা বা ক্যারিয়ারের সাথে সাফল্যের শিখরে আরোহণকে আমরা এক বলতে পারি। কাজ, পেশা বা ক্যারিয়ার এবং জীবনের লক্ষ্য এ তিনটি বিষয় পরস্পর সম্পর্কযুক্ত হলেও একটি বিষয় নয়। মূলত মানুষ তার পেশা বা ক্যারিয়ার ঠিক করতে বা লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের কাজ করে থাকেন
ক্যারিয়ার গঠন
ক্যারিয়ার গঠন বলতে বুঝায় কর্মী জীবনের পর্যায়ক্রমিক ধাপগুলো। ক্যারিয়ার গঠনের ক্ষেত্রে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনে সুনির্দিষ্ট কর্মপন্থা গ্রহণ করে। ক্যারিয়ার গঠন আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা জানি মানুষ প্রায়ই তার ক্যারিয়ার বাছাই এবং তা অর্জন করতে গিয়ে সমস্যায় পড়ে যায়। আর ব্যবস্থাপকগণও কর্মীদের নিয়ন্ত্রণ ও গতিশীল করতে গিয়ে নতুন ও অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির মুখোমুখিও হন। ঐতিহাসিক বিশ্বাস হলো, প্রত্যেক কর্মীই সুযোগ পেলে উচ্চ পদে আসীন হতে চায় তবে যোগ্য কর্মী দিয়ে শূন্যপদ পূরণ করা হয় এবং একজন যোগ্য কর্মী সারাজীবন যোগ্য থাকবেন এ ধারণাটি সত্য নয়। জীবন পাল্টে যাচ্ছে এবং কর্মীদের জীবন-জীবিকা ও আকাক্সক্ষার পরিবর্তন ঘটছে। এ রকম একটি অবস্থায় কেমন ক্যারিয়ার বাছাই এবং ক্যারিয়ার গঠন মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনার গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ে পরিণত হয়েছে। কিছুকাল আগেও প্রতিষ্ঠান নিজেই কর্মীদের ক্যারিয়ার গঠনের ব্যাপারে সহযোগিতা করতো। প্রতিষ্ঠানের মানবসম্পদ কর্মীদের ক্যারিয়ার সম্পর্কে ধারণা পেতে তথ্য ও অন্যান্য সহযোগিতা প্রদান করতো এবং এভাবেই প্রতিদিন সত্যিকারের যোগ্য ও দক্ষ কর্মী সংগ্রহ করতো। মানুষের জীবনে অর্জিত জ্ঞান এবং কর্ম আপাতত পৃথক মনে হলেও তাদের মধ্যে যথেষ্ট মিল রয়েছে এবং এগুলো একই সুতোয় গাঁথা। প্রয়োজনমাফিক এগুলোর পরিবর্তন এবং পুনঃপরিবর্তন করা হয়। আর মানুষের জীবন জ্ঞান ও কর্মকে সুবিন্যস্তভাবে পরিচালিত করার প্রক্রিয়াই ক্যারিয়ার। প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মানবসম্পদ অথবা চাকরি প্রার্থীদের ব্যক্তিগত দক্ষতা ও যোগ্যতার উত্তরোত্তর উন্নয়ন, আচরণ, দৃষ্টিভঙ্গি একটি কাক্সিক্ষত মাত্রায় নিয়ে যাওয়া এসবই ক্যারিয়ারের অন্তর্ভুক্তি। প্রতিষ্ঠানও চায় তার মানবসম্পদকে ভবিষ্যতের জন্য উপযুক্তভাবে গড়ে তুলতে। তাই ক্যারিয়ার গঠনে শুধু ব্যক্তির ভূমিকা নয়, প্রতিষ্ঠানেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। ক্যারিয়ার গঠনে অবশ্য দুইটি দৃষ্টিভঙ্গি লক্ষণীয়। একটি প্রাতিষ্ঠানিক দৃষ্টিভঙ্গি অপরটি ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি।
প্রাতিষ্ঠানিক দৃষ্টিভঙ্গি হলো : ১) কর্মীদের কর্মদক্ষতা ও সামর্থ্য বৃদ্ধি, ২) শ্রম ঘুর্ণায়মানতা হ্রাস, ৩) পর্যাপ্ত মানবসম্পদ সরবরাহ, ৪) বৈচিত্র্যে সংবেদনশীলতা, ৫) প্রতিক্রিয়া ও ক্রমানুসর।
ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি হলো : ১) আত্মসমালোচনা, ২) স্থিতিস্থাপকতা, ৩) শিক্ষা, ৪) ক্ষমতায়ন, ৫) চাকরির নিরাপত্তা।
একজন নিয়োগকর্তার সামনে যখন কোন নির্দিষ্ট কাজ করানোর জন্য একই দক্ষতা ও যোগ্যতাসম্পন্ন অনেক বিকল্প প্রার্থী থাকে তখন নিয়োগকর্তা যে কাউকেই পছন্দ করতে পারেন। কিন্তু এসব বিকল্প প্রার্থীর মধ্যে থেকে যদি কারো মধ্যে অধিকতর প্রতিভা খুঁজে পাওয়া যায় তাহলে নিয়োগকর্তা তাকেই নিয়োগ দিতে আগ্রহী হবে। বাড়তি যোগ্যতা, অতিরিক্ত অর্জন এবং প্রতিষ্ঠানের প্রতি আনুগত্য অন্যদের চেয়ে একজন প্রার্থীকে পৃথক করে তোলে। আর এজন্য একজন কর্মীর ক্যারিয়ার গঠনের বিকল্প নেই। ক্যারিয়ার গঠনে ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের যৌথ উদ্যোগ এবং ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। মোটকথা পেশা উন্নয়ন হলো প্রতিষ্ঠান কর্তৃক কর্মীদের জন্য তাদের আনুষ্ঠানিক ও কাঠামোগত কর্মপদ্ধতি যাতে কর্মীদের জ্ঞান, সচেতনতা ও সামর্থ্য বৃদ্ধি পায় যা পেশার উৎকর্ষ সাধনে গঠিত নির্দেশনা প্রদান করে। ক্যারিয়ার গঠন কর্মীদের দক্ষতা, জ্ঞান ও মনোভাবে পরিবর্তন করে। ক্যারিয়ার গঠন কর্মীদের যোগ্যতা ও প্রত্যাশার সাথে প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয়তা সমন্বয় করে। পেশা গঠনে প্রতিষ্ঠান দীর্ঘমেয়াদী প্রয়োজনীয়তা ও গতিশীল পরিবর্তনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে কর্মীদের উন্নয়নের ব্যবস্থা করে।
পেশা বা ক্যারিয়ারে উদ্দেশ্য
মস্তিষ্কজাত অপার সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে ব্যক্তিগত সফলতার সাথে সাথে মানবজাতিকে উপকৃত করাই পেশা বা ক্যারিয়ার ভাবনার মূল উদ্দেশ্য। পেশা বা ক্যারিয়ার শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণের সাথে সম্পর্কিত বিষয়। যেখানে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা কিংবা প্রশিক্ষণ নেই, পেশা বা ক্যারিয়ার সেখানে অনুপস্থিত। পেশা বা ক্যারিয়ার মানে শুধু পেশাজীবন নয়, আমাদের পুরো কর্মজীবন। পেশার অতিরিক্ত ব্যক্তির সহজাত গুণাবলী, জীবনের লক্ষ্য, উচ্ছাকাক্সক্ষা, লালিত বিশ্বাস ও আদর্শ, সন্তুষ্টি, মানবিক দায়িত্ব, অর্থ প্রাপ্তি ইত্যাদি বিষয়গুলো ক্যারিয়ারে ওতপ্রোতভাবে অর্ন্তভুক্ত। পেশা বা ক্যারিয়ারের দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে যে, আপনি যা-ই করবেন সেটা যতটুকু সম্ভব প্রতিষ্ঠানের কল্যাণের জন্য করবেন, মানুষের কল্যাণ ও উপকারের জন্য করবেন। আপনার মেধাকে আপনি সর্বোত্তম পর্যায়ে ব্যবহার করবেন। এই সেবা দেয়ার জন্য সেই সেবাটাই আপানাকে প্রতিদান দেবে। মেধাকে দক্ষতায় এবং সেবায় রূপান্তরের জন্য সর্বোত্তম চেষ্টা করতে হবে। আপনি যত সেবা দিতে পারবেন দুনিয়া এবং আখেরাতের কল্যাণ তত আপনার হতে থাকবে। বর্তমানে পেশাদারিত্বের (প্রফেশনালিজম) সাথে বৈশ্বিক চেতনা (গ্লোবালাইজেশন) সংযুক্ত হয়েছে। তাই এর গুরুত্ব আরো বেড়েছে। পেশার উন্নয়ন করা, দক্ষতার উন্নয়ন ঘটানো, নিজেকে অধিকতর যোগ্য করে কাজের ক্ষেত্রে উপস্থাপন।
পেশা বা ক্যারিয়ারে স্তর বিন্যাস
পেশাকে নিয়ে ব্যাখা বিশ্লেষণ করার একটা প্রচলিত মাধ্যম হলো স্তরভিত্তিক পেশা আলোচনা। একজন কর্মীর জীবনে প্রথম কাজ শুরু করার পর তার উন্নয়ন ঘটে, পূর্ণতা পায় এবং বৃদ্ধ বয়সে পেশাগত দক্ষতা ক্ষয় পেয়ে সমাপ্তির পথে এগোয়। ধাপে ধাপে কর্মী তার পেশাগত বিভিন্ন স্তর অতিক্রম করে এবং বিচিত্র অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে। পেশা বা ক্যারিয়ারের ৬ (ছয়টি) স্তর রয়েছে-
১. স্বপ্নময় স্তর বা সময় : শিক্ষাজীবনের শুরু থেকে কর্মজীবনে প্রবেশের আগ পর্যন্ত সময়ই স্বপ্নময় বা সময় স্তর। অধিকাংশ মানুষ জীবনের প্রথম পঁচিশ বছর অতিক্রম করার সঙ্গে সঙ্গে স্বপ্নময় সময় অতিক্রম করে। এ সময় পেশা বা ক্যারিয়ার বা পেশা সম্পর্কিত নানা প্রত্যাশা বা স্বপ্ন একজন ব্যক্তির মনে জন্ম নেয়, যার অধিকাংশই অবাস্তব এবং অলীক। এসব পেশা বা ক্যারিয়ার ভাবনা কয়েক বছরের মধ্যেই অপ্রাপ্তিতে রূপ নেয়। পরিণতিতে ব্যক্তি হতাশায় নিমজ্জিত হয়।
২. প্রতিষ্ঠার স্তর বা অনুসন্ধান স্তর : সাধারণত কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করে অথবা শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রস্তুত যে কোনো যুবক-যুবতীর কর্মজীবনের প্রস্তুতি হিসেবে অনুসন্ধান স্তর শুরু হয়। এই স্তরে সেই ব্যক্তি কাক্সিক্ষত বা পছন্দের পেশা খুঁজতে থাকে। একজন কর্মীর চাকরি খোঁজা এবং প্রথম নিয়োগ লাভের পর রয়েছে সহকর্মী কর্তৃক ব্যক্তিকে গ্রহণ, কাজ শেখা এবং কাজ করতে গিয়ে সফলতা বা ব্যর্থতার স্বাদ গ্রহণ করা প্রভৃতি সুস্থিতি স্তরের অন্তর্ভুক্ত। এই ধাপটিই শুরু হয় অনিশ্চয়তা এবং উত্তেজনা দিয়ে। তারপরই দরকার হয় একটা আশ্রয় আর নিজের অবস্থানটা আরো শক্ত করা। প্রথম চাকরি গ্রহণের সময়টা প্রতিষ্ঠার সময় হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে এ স্তরের মেয়াদ ২৫ থেকে ৩৫ পর্যন্ত এই দশ বছরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
৩. পেশার মধ্যবর্তী স্তর : পেশার এ স্তরে একজন ব্যক্তির পেশাগত দক্ষতা পূর্ণতার দিকে চলে আসে। তার কর্মদক্ষতা ও কাজের মানের উন্নয়ন ঘটে এবং প্রতিষ্ঠান তার মেধা ও যোগ্যতাকে কাজে লাগাতে চায়। তিনি নতুন কর্মীদের কাছ থেকে যথেষ্ট সম্মানও পেয়ে থাকেন এবং নতুন কর্মীদের প্রশিক্ষক হিসেবে তার ভূমিকা থাকে। তবে পেশার এ স্তরেও কর্মী পেশাগত সমস্যায় পড়তে পারে। তাকে চাকরি ছেড়ে দিতে হতে পারে অথবা কর্মদক্ষতা হ্রাস পেতে পারে। তবে এ সমস্যাগুলো সাধারণত ঘটে কর্মীর কর্মজীবনের বাইরের নানা ঘটনার কারণে। পেশা জীবনের এই সময়টার মেয়াদই সবচেয়ে দীর্ঘ। এদেশে ৩৫ থেকে ৫৫ বছর বয়স পর্যন্ত সময়কে আমরা একজন ব্যক্তির পেশা বা ক্যারিয়ারের মধ্যবর্তী স্তর হিসেবে অভিহিত করতে পারি।
৪. পেশার স্থিতি স্তর বা পেশার শেষ স্তর : এ স্তরটি একজন কর্মীর জন্য স্বস্তির স্তর। এই সময়টাতে একজন মানুষ তার পেশা সম্পর্কে নতুন কিছুই শেখে না, কিংবা শেখার আগ্রহও থাকে না। এ পর্যায়ে ব্যক্তি তার কার্যসম্পাদন প্রক্রিয়ায় পূর্ববর্তী বছরগুলোর তুলনায় কম দক্ষতার পরিচয় দিতে শুরু করে। অতীতের ভালো কার্যক্ষমতা এবং সুনামের সাথে কাজ করার পুরস্কার হিসেবে প্রতিষ্ঠান তাকে বাড়তি কোনো দায়িত্ব দিয়ে চাপের মধ্যে রাখে না। এমনকি পুরানো ও বয়োজ্যেষ্ঠ এসব কর্মীর কাছ থেকে পূর্বের মতো কার্যদক্ষতাও আশা করে না। তবে তাদের অভিজ্ঞতাকে মূল্য দেয় এবং নব্য কর্মীদের এ অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা গ্রহণের জন্য উৎসাহিত করে। পেশার মধ্যস্তরের শেষ পর্যায়ে দক্ষ কর্মীরা নিজেদেরকে মানসিকভাবে গুটিয়ে ফেলতে শুরু করে। সাধারণত ৫৫ থেকে ক্যারিয়ারে স্থিতির স্তর শুরু হয়।
৫. অবনতি বা অবসর স্তর : নির্দিষ্ট সময় পর মানুষের কর্মক্ষমতা হ্রাস পায়। তাই অতীত সফলতার সাথে প্রতিষ্ঠানে কাজ করলেও নির্মম বাস্তবতার দরুণ তাকে অবসরের প্রস্তুতি নিতে হয়। প্রতিষ্ঠানও এক্ষেত্রে তাকে অবসরে যেতে সহযোগিতা করে। অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাকে পাদপ্রদীপের বাইরে চলে যেতে হয়। ব্যবস্থাপনায় পরবর্তীতে যারা আসবেন তাদেরকে কাজ বুঝিয়ে দিতে হয়। তবে এ সময় অবসর গ্রহণকারী কর্মীদের ভবিষ্যৎ আর্থিক অনিশ্চয়তার কাথা ভেবে দুশ্চিন্তায় পেয়ে বসে।
৬. অবসর পরবর্তী স্তর : অবসর গ্রহণকারী কর্মী শারীরিক কাজের কর্মী হলে পরবর্তীতে তার আর কোনো কাজের সুযোগ থাকে না কিন্তু তিনি ব্যবস্থাপনায় নিযুক্ত থাকলে পরবর্তীতে তার জন্য কাজের সুবিধা খোলা থাকে। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে তারা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান। তবে এসব নিয়োগ নির্ভর করছে তাদের অতীত কাজের ফলাফল এবং সুনামের ওপর।
পরিকল্পনা
লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রয়োজন সুন্দর পরিকল্পনা। দেখতে দেখতে চলে যায় বছর। বছরের প্রথম দিকটা আপনার ভবিষ্যৎ পর্যালোচনার সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। যদিও পুরোটা বছরজুড়ে পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করতে হয়। হিসাব কষে দেখলেন, সর্বশেষ বছরে ব্যর্থতার পাল্লাটাই ভারী। কিংবা পাননি আশানুরূপ সাফল্য। পেশাগত জীবনে একই মুদ্রার দুই পিঠ সাফল্য ও ব্যর্থতা। গেল বছরটা খারাপ গেছে বলে এ বছর হাল ছেড়ে দেবেন! শুরু থেকেই যদি হিসাব করে এগোনো যায়, ব্যর্থতা পেছনে ফেলে এগিয়ে যাওয়া যায় অনেকটাই। আপনি কতটা সফল হবেন, তা নির্ভর করে প্রচেষ্টার ওপর। নির্দিষ্ট লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যেতে অন্যান্য সব ধরনের চিন্তা-ভাবনা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিন। অতীতের সফলতা বা ব্যর্থতা সামনে রেখে ভবিষ্যৎ সফলতার জন্য একটি সুন্দর পরিকল্পনা করুন। বেনজামিন ফ্রাঙ্কলিনের ভাষায় : “প্রস্তুতিতে ব্যর্থ হয়ে মূলত তুমি নিজেকে ব্যর্থতার জন্য প্রস্তুত করলে”।
পরিকল্পনা হলো কার্যতালিকা, পূর্বানুমান, টার্গেট বাস্তবায়ন ও লক্ষ্য অর্জনের জন্য করণীয় কার্যবলী যার ভিত্তিতে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছা যায়। নিজস্ব চিন্তা-চেতনার আলোকে প্রদত্ত টার্গেট বাস্তবায়নের জন্য সার্বিক প্রচেষ্টা। পরিকল্পনা হলো ফ্লোচাট। যার ওপর ভিত্তি করে কাজ করা যায়। তাই আমাদেরকে পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। পরিকল্পনার আলোকে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। পরিকল্পনা ভবিষ্যতের সাথে সম্পর্কিত। কি করা হবে, কিভাবে করা হবে, কখন করা হবে, কতক্ষণে করা হবে তা পূর্বেই নির্ধারণ করাকে পরিকল্পনা বলা হয়। পরিকল্পনা পূর্ব অভিজ্ঞতা, পরিসংখ্যানগত তথ্যাদি যুক্তিসম্মত কারণের ওপর ভিত্তি করে রচিত হয়। এটি কখনো অলীক কম্পনাপ্রসূত নয়। অদূর ভবিষ্যতে করণীয় কার্যসমষ্টির অগ্রিম সুচিন্তিত বিবরণী। আমরা কোথায় আছি এবং ভবিষ্যতে কোথায় যেতে চাই তার মধ্যকার সেতুবন্ধন।
পরিকল্পনার প্রকারভেদ
পরিকল্পনা সাধারণত ৩ (তিন) প্রকার :
১. সময়ভিত্তিক পরিকল্পনা
২. সংগঠন কাঠামোভিত্তিক পরিকল্পনা
৩. প্রকৃতিগত পরিকল্পনা।
সময়ভিত্তিক পরিকল্পনা
সময়ভিত্তিক পরিকল্পনা ৩ (তিন) প্রকার :
১.স্বল্প মেয়াদী পরিকল্পনা : স্বল্প মেয়াদী পরিকল্পনা স্বল্প সময়ের জন্য প্রণীত হয়। সচরাচর এর মেয়াদ এক বছর বা তার কম সময়ের জন্য প্রণীত হয়।
২. মধ্য মেয়াদী পরিকল্পনা : এটি এক বছরের বেশি সময়ের জন্য প্রণীত ও ব্যবহৃত হয়। এর মেয়াদকাল পাঁচ বছর পর্যন্ত বাড়ানো যেতে পারে।
৩. দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা : এটি পাঁচ বছরের বেশি সময়ের জন্য প্রণীত হয়ে থাকে। এর মেয়াদ ১০-১৫ বছর পর্যন্ত বাড়ানো যেতে পারে।
সংগঠন কাঠামোভিত্তিক পরিকল্পনা
সংগঠন কাঠামোভিত্তিক পরিকল্পনা ৪ (চার) প্রকার :
১. বিভাগীয় পরিকল্পনা : কোন প্রতিষ্ঠান উৎপাদনের ভিত্তিতে বিভিন্ন বিভাগে বিভক্ত হলে প্রত্যেক বিভাগের জন্য পৃথক পৃথক পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হয়।
২. কার্যভিত্তিক পরিকল্পনা : বৃহদায়তন ব্যবসায় সংস্থার প্রধান প্রধান কাজের জন্য পৃথক পৃথক পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হয়। যেমন- উৎপাদন পরিকল্পনা, কর্মী পরিকল্পনা, বিপণন পরিকল্পনা প্রভৃতি কার্যভিত্তিক পরিকল্পনার দৃষ্টান্ত।
৩. আঞ্চলিক পরিকল্পনা : যখন কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দেশ-বিদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে থাকে তখন প্রত্যেক আঞ্চলিক বিভাগ বা শাখার জন্য পৃথক পরিকল্পনা তৈরি করতে হয়। এরূপ পরিকল্পনাই আঞ্চলিক পরিকল্পনা।
৪. কর্পোরেট বা হেড কোয়ার্টার পরিকল্পনা : এ প্রকার পরিকল্পনা সমগ্র কারবার প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রধান কার্যালয় বা হেড অফিস কর্তৃক প্রণীত হয়।
প্রকৃতিগত পরিকল্পনা
প্রকৃতিগত পরিকল্পনা ৩ (তিন) প্রকার :
১. লক্ষ্য : যে পরিকল্পনা অভিপ্রেত ফল অর্জনের জন্য প্রণীত হয় তাকে লক্ষ্য বা এড়ধষং বলে। অর্থাৎ কোন নির্ধারিত ফল লাভের উদ্দেশে যে পরিকল্পনা রচিত হয় তাই লক্ষ্য। অভিপ্রেত ফল অর্জনের মাধ্যম হিসেবে লক্ষ্য রচনা করা হয়। লক্ষ্যের পরিধি অত্যন্ত ব্যাপক। (১) উদ্দেশ্য (ঙনলবপঃরাব) (২) মিশন (গরংংরড়হ) (৩) সীমারেখা (উবধষষরহবং) (৪) কোটা (ছঁড়ঃধ) (৫) মান (ঝঃধহফধৎফং) লক্ষ্যবিন্দু প্রভৃতি এর অন্তর্ভুক্ত।
২. স্থায়ী পরিকল্পনা : ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সকল স্তরের সর্বপ্রকার কার্যের জন্য প্রত্যেক সময় নতুন করে পরিকল্পনা তৈরি করা ব্যবস্থাপকের পক্ষে সম্ভবপর হয় না। এতে তার অহেতুক প্রচুর সময় অর্থ ও শক্তি ক্ষয় হয়। এজন্য কতিপয় অপরিবর্তনীয় ক্ষেত্রে স্থায়ী পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়। এ ধরনের পরিকল্পনা একবার ব্যবহারের পরই বাদ দেয়া হয় না; বরং এটি বিভিন্ন সময়ে পুনঃ পুনঃ ব্যবহার করা হয়। এজন্য একে পুনঃব্যবহার্য পরিকল্পনা বা জবঢ়ঁঃবফ টংব ঢ়ষধহ বলা হয়।
৩. একার্থক পরিকল্পনা : নির্দিষ্ট কোন একটি অর্থে বা উদ্দেশে যে পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয় তাকেই একার্থক পরিকল্পনা বলে। ঝরসঢ়ষব ঁংব ঢ়ষধহ কথাটির অর্থ একবার ব্যবহারযোগ্য পরিকল্পনা। বিশেষ কোন আস্থা বা সমস্যা মোকাবিলার জন্য একার্থক পরিকল্পনা তৈরি করা হয় এবং উদ্দেশ্য হাসিল হয়ে গেলেই তার পরি সমাপ্তি ঘটে।
পরিকল্পনার উদ্দেশ্য
উদ্দেশ হলো পরিকল্পনা কাঠামোর ভিত্তি। এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের কার্যাবলীর প্রান্তসীমা নির্দেশিত হয়। এটা সুস্পষ্ট এবং পরিমাপযোগ্য, নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে ভবিষ্যৎ অর্জনের লক্ষ্যে ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক কার্যাবলীর সমষ্টি উদ্দেশ্য অর্জনকে কেন্দ্র করেই ব্যবস্থাপনার সকল কাজ আবর্তিত হয়। উদ্দেশ্য না থাকলে ব্যবস্থাপনার কোন কাজেরই প্রয়োজন হতো না। প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্যের সাথে ব্যক্তিগত উদ্দেশ্য বা স্বার্থের বিরোধ হলে প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।
পরিকল্পনার গণগত বৈশিষ্ট্য
১. সুষ্পষ্ট উদ্দেশ্য : আপনাকে সুস্পষ্ট উদ্দেশ্যের ওপর ভিত্তি করে পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। উদ্দেশ্য স্পষ্ট না হলে যত সতর্কতার সাথেই পরিকল্পনা করা হোক না কেন এটি লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হবে।
২. সহজবোধ্য ও সহজসাধ্য: পরিকল্পনা সহজবোধ ও সহজসাধ্য হওয়া আবশ্যক। জটিল ও দুর্বোধ্য পরিকল্পনায় নমনীয়তার অভাব এবং তা সফলতা অর্জনে ব্যর্থ হয়। পরিকল্পনা কর্মীদের মধ্যে বোধগম্য হতে হবে।
৩. কার্যাবলী বিশ্লেষণ ও শ্রেণী বিভাগ : পরিকল্পনা প্রতিষ্ঠানের কার্যাবলীর যথাযথ বিশ্লেষণ শ্রেণী বিভাগ করতে সহায়তা করে।
৪. সমন্বয় ও যোগসূত্র : প্রতিষ্ঠানের প্রত্যেক প্রকার ক্ষুদ্র ও বৃহৎ পরিকল্পনার সাথে যোগসূত্র থাকা আবশ্যক। অনেক সময় সাধারণ পরিকল্পনাকে অনেকগুলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পরিকল্পনায় ভাগ করা হয়। এক্ষেত্রে সাধারণ পরিকল্পনা ও ক্ষুদ্র পরিকল্পনাগুলোর মধ্যে যোগসূত্র থাকতে হবে।
৫. নিরবিচ্ছন্নতা : নিরবিচ্ছিন্নতা পরিকল্পনার অবশ্যকীয় গুণাবলীর একটি। কারবার-সংস্থা যাতে কোন সময় পরিকল্পনাবিহীন না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা দরকার। এজন্য একটি পরিকল্পনা শেষ হবার পূর্বেই আরেকটি পরিকল্পনা প্রস্তুত রাখতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে বৃহদায়তন কারবারের একাধিক পরিকল্পনার অস্তিত্ব দেখা যায়।
৬. নমনীয়তা: পরিবর্তনশীলতা বা নমনীয়তা আদর্শ পরিকল্পনার আরেকটি উল্লেখযোগ্য গুণ। সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে চলার উপযোগী করে পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়। প্রয়োজন হলে এর রদবদল করা যায়।
৭. ভুল-ত্রুটিশূন্যতা : আদর্শ পরিকল্পা ভুল ও ত্রুটিমুক্ত হওয়া আবশ্যক। অভিজ্ঞতা এবং পূর্বের ঘটনা ও তথ্যাবলীর বিশ্লেষণের ওপর ভিত্তি করে পরিকল্পনা রচিত হলে তার সর্বাধিক ত্রুটিমুক্ততা নিশ্চিত হয়।
৮. সমতা: কারবারের বিভিন্ন কার্যের মধ্যে সমতা বিধান উৎকৃষ্ট পরিকল্পনার একটি লক্ষণ।
৯. সম্পদসমূহের পূর্ণ সদ্ব্যবহার: উৎকৃষ্ট পরিকল্পনা কারবারের সম্পদসমূহের (যেমন-ধন, জন, মাল, কল-কব্জা ইত্যাদি) পূর্ণ সদ্ব্যবহারের ব্যবস্থা করে।
১০. মিতব্যয়িতা : মিতব্যয়িতা পরিকল্পনার একটি অত্যাবশ্যকীয় গুণগত বৈশিষ্ট্য। ব্যয়বহুল পরিকল্পনা দক্ষতার পরিচায়ক নয়। পরিকল্পনা প্রণয়নে মাত্রারিক্ত ব্যয় বর্জনীয়।
১১. ব্যাপকতা : পরিকল্পনা কারবার সংগঠনের সর্বস্তরে ও সকল কার্যক্ষেত্রে পরিব্যাপ্ত হতে হবে। উৎপাদন, বণ্টন, অর্থসংস্থান, কর্মীসংস্থান প্রভৃতি সকল কাযের জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা থাকতে হবে। এমনকি, নি¤œ স্তরের শ্রমিক-কর্মীরা কখন কোন্ কাজ কিভাবে করবে তারও পরিকল্পনা থাকতে হবে।
১২. যথার্থতা : পরিকল্পনা সুনির্দিষ্ট ও যথাযথ হতে হবে। এতে বাহুল্যবোধক বা অবান্তর কোন কিছুর সমাবেশ ঘটবে না। এটি যথাযথ, নিখুঁত ও নির্ভুল হতে হবে।
১৩. বাস্তবতা : পরিকল্পনা অবশ্যই বস্তুনিষ্ঠ হবে। এতে আকাশকুসুম কল্পনা, জুয়া খেলা বা অবাস্তবতার উপাদান থাকবে না। বিগত অভিজ্ঞতা বা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সংঘটিত তথ্যাবলীর ভিত্তিতে রচিত হবে দক্ষ পরিকল্পনা। অন্যথায় পরিকল্পনা বিফল হবে।
১৪. ভবিষ্যৎমুখিতা : পরিকল্পনা প্রণীত হবে কোন নির্দিষ্ট ভবিষ্যৎ সময়ের জন্য। তবে এটি প্রণীত হবে অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে এবং বর্তমান ও ভবিষ্যতের পরিবেশ পরিস্থিতি বিচারে।
১৫. সৃজনশীলতা: পরিকল্পনা নিঃসন্দেহে একটি সৃজনশীল কাজ। এতে পরিকল্পনাকারীর চিন্তা-চেতনা ও উদ্ভাবনী শক্তির প্রতিফলন ঘটবে। গবেষণা ও অনুসন্ধানের মাধ্যমে এতে নতুন নতুন কলাকৌশলের বিকাশ ঘটবে। উদ্ভাবিত হবে নতুন নতুন পদ্ধতি ও নতুন নতুন ডিজাইন।
১৬. গ্রহণযোগ্যতা : পরিকল্পনা অবশ্যই সংগঠন সদস্যবৃন্দ বা শ্রমিক-কর্মচারীদের নিকট গ্রহণযোগ্য হতে হবে। অলীক কল্পনাপ্রসূত বা অবাস্তব পরিকল্পনা কখনই সকলের নিকট গ্রহণযোগ্য হবে না। এজন্য পরিকল্পনা প্রণয়নে সংশ্লিষ্ট অধস্তন ব্যবস্থাপক ও নির্বাহীদের মতামত বা পরামর্শ নিতে হবে। এ কারণেই অনেকে পরিকল্পনা বা সিদ্ধান্ত গ্রহণে সংশ্লিষ্ট অধস্তন নির্বাহীদের অংশগ্রহণের ব্যবস্থা করার পরামর্শ দেন।
পরিকল্পনা প্রণয়ন
যে কোন পরিকল্পনা প্রণয়নের পূর্বে আমাদেরকে প্রতিষ্ঠান ও বিভাগের অতীত ও বর্তমান রেকর্ড, সফলতা, ব্যর্থতা কিংবা উন্নয়ন পলিসি ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে হবে। তার আলোকে টার্গেট বাস্তবায়নের ভাবনা মাথায় নিয়ে সুদূরপ্রসারী চিন্তা ভাবনা, পর্যালোচনা, বিশ্লেষণ ও নানা আঙ্গিকে গবেষণা চালিয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। যে কোন কর্মসূচি বাস্তবায়নে পরিকল্পনা গুরুত্বপূর্ণ। যা কাজের গতি সঞ্চালনের একটি সুষ্ঠু প্রক্রিয়া এবং একটি নিখুঁত ফ্লোচাট। প্রতিষ্ঠান ও বিভাগের অতীত ও বর্তমান রেকর্ড, সফলতা, ব্যর্থতা কিংবা উন্নয়ন পলিসি ইত্যাদি বিষয়গুলো সামনে রেখে পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। পরিকল্পনা হতে হবে সুদুরপ্রসারী, দীর্ঘমেয়াদী ও বাস্তবমুখী। সাফল্যের জন্য বছরের শুরুতেই ভালভাবে কাজের পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। এতে আপনার পেশায় বা প্রতিষ্ঠানের উন্নতির জন্য একটা প্রস্তুতি নেয়াও হয়ে যায়। তবে পরিকল্পনাটা হেলায়ফেলায় নিলে কিন্তু বিসমিল্লায় গলদ! শুরুটাই যদি ভালো না হয়, ভালো একটি কর্মবর্ষ আশা করছেন কিভাবে? তাই বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিন। তৈরি করুন যুতসই ও যুগোপযোগী একটি বর্ষপরিকল্পনা। দিনক্ষণ হিসাব করে এ পরিকল্পনা নিলে তা আপনার প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে নিয়ে যাবে সামনের দিকে।
১. ব্যক্তিগত কর্মপরিকল্পনা তৈরি করুন : আপনার ব্যক্তিগত কর্মপরিকল্পনা ঠিক করে নিন। সুন্দর একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করে ধীরে ধীরে এগিয়ে যান।
২. পরিকল্পনা আঁটবেন যেভাবে : পরিকল্পনা করার জন্য টেকসই, বাঁধাই করা একটি খাতা নিন। যদি আপনার পরিকল্পনা কম্পিউটারে লেখেন, তাহলে তা নিরাপদে সংরক্ষণ করা যায় এমন জায়গায় কাজ শুরু করুন। দিন, সপ্তাহ, মাস, বছর হিসাব করে মাসিক অথবা আপনার সুবিধা অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ের ছক করে ফেলুন। নতুন পরিকল্পনা করার আগে অতীতের লাভ-ক্ষতি হিসাব করে নিন। বছরের শুরুতেই যে কাজটি আপনি হাতে নিচ্ছেন, তাতে সাফল্য পেলে ভালো হয়। এতে আপনি পরবর্তী কাজের অনুপ্রেরণা পাবেন। এজন্য অপেক্ষাকৃত সহজ কাজ বা মিশন হাতে নিন। ঠিক করে নিন বছরের অন্যান্য কার্যসূচিও। তবে সব কিছুই হতে হবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। সারা বছরের জন্য একটা প্রাথমিক বাজেট তৈরি করুন। বাজেটটিতে আয়-ব্যয়ের হিসাব আলাদা আলাদা লিখুন। আপনার প্রতিযোগীদের কৌশল বোঝার চেষ্টা করুন। তারপর আপনার প্রতিষ্ঠানের কৌশলগত পরিকল্পনা ঠিক করে নিন। নিজের কৌশলের বিশেষ দিকগুলো গোপন রাখুন, যাতে তা অন্যরা জানতে না পারে। পরিকল্পনা তৈরির সময় অভিজ্ঞ, পারদর্শী কারো সহযোগিতা নিতে পারেন।
৩. কাজকে ছোট ছোট অংশে ভাগ করে নিন : কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছতে আপনার কাজগুলোকে সামর্থ্য অনুযায়ী ছোট ছোট অংশে ভাগ করে নিন। যা হতে হবে নির্দিষ্ট এবং বাস্তবসম্মত। ফলে আপনি কাজগুলোকে সহজে শেষ করতে পারবেন। কাজ যদি সামর্থ্যরে বাইরে হয় তা শেষ করা অসম্ভব হবে।
৪. গুরুত্ব অনুযায়ী কখন কোন কাজটি করবেন তা সাজিয়ে নিন : লক্ষ্য অর্জনের আরেকটি পূর্বশর্ত হচ্ছে উপযুক্ত সময়ে উপযুক্ত কাজটি করা। আমরা জানি রিপোর্ট জমা দেয়ার আগেই গবেষণা করতে হয়। নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে কাজ করতে শিখুন এবং কাজ শুরু করুন। কারণ আপনার কাজের যদি কোনো টাইমলাইন বা সময়সীমা বেঁধে দেয়া না থাকে তাহলে কখনো আপনি এটা সম্পন্ন করতে পাবেন না। তাই কাজের গুরুত্ব অনুযায়ী কখন কোন কাজটি করবেন তা সাজিয়ে নিন।
৫. দায়িত্ব ভাগ করে দিন : বছরের শুরুতেই বৈঠকে যার যার দায়িত্ব ভাগ করে দিন। এ সময় মাথায় রাখতে হবে, কে কোন বিষয়ে বেশি অভিজ্ঞ বা দক্ষতা রাখেন। যে যে বিষয়ে দক্ষ কেবল তাকে সে বিষয়ের সঙ্গে নিযুক্ত করার চেষ্টা করুন। আপনার প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নতুন বা অনভিজ্ঞদের যুক্ত করুন অভিজ্ঞ কোনো কর্মীর সহযোগী হিসেবে। তুলনামূলক বেশি দায়িত্ব দিতে পারেন দক্ষ কর্মীদের কাঁধে। একই সাথে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে তাদের বিশেষ সুযোগ-সুবিধা দেয়ার বিষয়টি। আর এটিও প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে, পরিকল্পনারই একটি অংশ। যেসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে লেনদেন করতে হয়, সেসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করার ঠিকানা, ফোন নম্বার ইত্যাদি সংরক্ষণ করুন। কোন কাজ করতে কী কী করার প্রয়োজন হতে পারে, তার একটি রূপরেখা তৈরি করে নিন। সে অনুযায়ী দায়িত্ব পাওয়া কর্মীকে সহযোগিতা করুন।
৫. প্রতিষ্ঠানভেদে পরিকল্পনা : প্রতিষ্ঠানভেদে বর্ষপরিকল্পনা ভিন্ন হতে পারে। সব প্রতিষ্ঠানের ধরনতো আর এক রকম নয়! আর প্রতিষ্ঠানের পরিধি যতো বড় হবে, পরিকল্পনাও আঁটতে হবে সেভাবেই। থাকতে পারে প্রতিষ্ঠানের একাধিক শাখা। প্রতিটি শাখা অফিসের জন্য আলাদা করে কাজ নির্ধারণ করুন ও পরিকল্পনা আঁটুন। তবে তা অবশ্যই মূল পরিকল্পনার সঙ্গে মিল রেখে। নতুন বছরে আপনার প্রতিষ্ঠানের কাজ ও পরিধি বাড়াতে চাইলে এর সম্ভাবনা, অনিশ্চয়তা, লাভ-লোকসান, ঝুঁঁকি, অর্জনের বিষয়গুলো ভালোভাবে বিবেচনায় আনতে হবে সবার আগে। এর জন্য অভিজ্ঞ লোকবল নিয়োগ করুন। মাথায় রাখতে হবে লজিস্টিক সাপোর্টের বিষয়টিও। তবে পরিধি বাড়ালেই কেবল চলে না, সব ক্ষেত্রে তদারকি খুবই দরকারি। এর জন্য প্রয়োজনে মনিটরিং সেল গঠন করুন। তদারকি ব্যবস্থাপ জোরদার করুন।
৬. বাধা বিপত্তি উপেক্ষা করে কাজে স্থির থাকুন : কাজ করতে গিয়ে যতো বাধা বিপত্তিই আসুক না কেন কখনো নিরুৎসহিত হওয়া যাবে না। সবসময় আপনার লক্ষ্যে স্থির থাকুন। প্রত্যেকটি সফলতার পেছনে রয়েছে কাক্সিক্ষত বিষয়ের ওপর সুস্পষ্ট ধারণা। সফলতার সবচেয়ে বড় উপায় হচ্ছে আপনাকে সবসময় লক্ষ্য অর্জনের জন্য ক্ষুধার্ত থাকতে হবে।
৭. দরকারি কিছু বিষয় : বছরের পরিকল্পনা করার পর পুরো বিষয় নিয়ে আপনি নিজে খুঁটিনাটি যাচাই-বাছাই করুন। এ বিষয়ে অভিজ্ঞ কারো মতামতও নিতে পারেন। পরিকল্পনার একাধিক অনুলিপি বা কপি তৈরি করুন। আপনার নিজের কপিটি সতর্কতা ও যতেœর সঙ্গে সংরক্ষণ করুন। কম্পিউটারে কাজ করে থাকলে একাধিক প্রিন্ট কপি অথবা সিডিতে সংরক্ষণ করুন। অনেকে বছরের পরিকল্পনা করেই বসে থাকে। তাতে পরিকল্পনা কোনো কাজে আসে না। প্রতি মাসে চলমান অথবা শেষ হওয়া কাজের সঙ্গে পরিকল্পনাটি মিলিয়ে দেখতে হবে, অগ্রগতি কতটুকু।
৮. কৌশল ঠিক করুন : প্রতিযোগীদের কৌশল বোঝার চেষ্টা করুন। কয়েকটি সফল প্রতিষ্ঠানের ওপর জরিপ করে কৌশল ঠিক করুন। আপনার প্রতিষ্ঠানের কৌশলের বিশেষ দিকগুলো গোপন রাখুন, যাতে তা অন্যরা জানতে না পারে।
৯. কাজের অগ্রগতি মিলিয়ে দেখুন : মাস শেষ হওয়ার পর বর্ষপরিকল্পনাটির সঙ্গে চলমান অথবা শেষ হওয়া কাজের অগ্রগতি মিলিয়ে দেখুন। কাজ পরিকল্পনা অনুসারে না এগোলে সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা বা উদ্যোগ নিন।
১০. পরিকল্পনায় সংযোজন, বিয়োজন করুন : পরিকল্পনা অপরিবর্তিত হবে, এমনটি নয়। সময় ও পরিস্থিতি অনুযায়ী পরিকল্পনায় সংযোজন, বিয়োজন ও সংশোধন করতে পারেন।
১১. সময় ব্যবস্থাপনা : কর্মপরিকল্পনা এবং সাফল্যের জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সময় ব্যবস্থাপনা। আপনাকে অবশ্যই সময় ব্যবস্থাপনা জানতে হবে। সময় ব্যবস্থাপনা আপনার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে, যদি আপনি সঠিকভাবে তা প্রয়োগ করতে পারেন। এর জন্য যা করতে হবে :
ক. আপনার প্রতিদিনের কাজগুলো লিপিবদ্ধ করুন
খ. প্রতিটি কাজে এখন আপনি গড়ে কত সময় ব্যয় করছেন তা নিরূপণ/ঠিক করুন
গ. প্রতিটি কাজে গড়ে কতটুকু সময় প্রয়োজন তা বের করুন
ঘ. প্রতিটি কাজে গড়ে আপনি কতটুকু সময় অতিরিক্ত ব্যয় করেন তা বের করুন
ঙ. এখন সিদ্ধান্ত নিন কীভাবে আপনি আপনার সময় ব্যয় করবেন?
প্রতি রাতে ঘুমানোর আগে আগামীকাল আপনার করণীয় কাজগুলো একটি কাগজে লিপিবদ্ধ করুন এবং তার পাশে কোন সময়ে তা করবেন তা লিখুন। আপনার হাতের অতিরিক্ত সময় অন্য কোনো প্রয়োজনীয় কাজে ব্যয় করুন।
১২. কাজের চাপ ব্যবস্থাপনা : পরিকল্পনার জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে কাজের চাপ ব্যবস্থাপনা। আমাদের দেশে এ বিষয়টিকে খুব কম গুরুত্ব দেয়া হয়। আপনি যদি চাপ কমাতে না পারেন, তবে তা আপনার সফলতার জন্য বাধা হয়ে দাঁড়াবে। আমরা অনেক নেতিবাচক পরিবেশের মধ্যে বড় হচ্ছি, এর ফলে কাজের চাপ ব্যবস্থাপনা আমাদের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। চাপ কমানো ও ব্যবস্থাপনার জন্য আমাদের যা করতে হবে :
১. নিজের ওপর বিশ্বাস রাখা
২. নেতিবাচক লোকদের এড়িয়ে চলা
৩. সবকিছু সহজে গ্রহণ করা
৪. মাথা ঠা-া রাখা
৫. সবসময় ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখা
৬. নেতিবাচক বিষয়কে ইতিবাচকভাবে দেখা
৭. মেডিটেশন অনেক সময় আমাদের চাপ কমাতে পারে, তাই মেডিটেশন করা যেতে পারে। বাংলাদেশে এখন এর ব্যাপক চর্চা হচ্ছে।
উপরোক্ত বিষয়গুলোর প্রতি মনোযোগী হলে আপনি সহজেই পরিকল্পনা করতে পারবেন। কারণ পরিকল্পনার জন্য আপনাকেই সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
আপনি যতো শুরু থেকে আপনার পরিকল্পনা করতে পারবেন ততো তাড়াতাড়ি আপনি সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবেন। পরিকল্পনার জন্য যে বিষয়টি দরকার তা হলোÑ সাফল্য সম্পর্কে ধারণা থাকা। সাফল্য অর্জনের জন্য নিম্নলিখিত গুণাবলিগুলো আপনার মধ্যে থাকতে হবে। নিজেকে জানুন, দেখুন তো আপনার মধ্যে এই গুণসমূহ আছে কিনা। এই গুণাবলিগুলো জন্মসূত্রে না থাকলেও কাজের মাধ্যমে অর্জন সম্ভব।
১. সাধারণ জ্ঞান : আপনাকে সব বিষয়ে সাধারণ জ্ঞানের অধিকারী হতে হবে। এ জ্ঞান আপনাকে বিভিন্ন বিষয়ে যে কোনো ব্যক্তির সাথে আলাপ আলোচনায় অংশগ্রহণে সামর্থ্য করবে। কাজেই আপনার দেশ বিদেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও অন্যান্য পরিস্থিতি সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান থাকতে হয়।
২. নিজ বিষয়ে পরিপূর্ণ জ্ঞান : যে কাজটি করবেন তা সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকতে হবে। ভাসা ভাসা ধারণা নিয়ে কাজ করলে সফল হওয়া যায় না। মহান আল্লাহতায়ালার ঘোষণা “হে নবী আপনি বলে দিন যারা জানে আর যারা জানে না তারা কি সমান হতে পারে?” না কোনো ক্ষেত্রেই সমান হতে পারে না। তাই আপনাকে সাধারণ জ্ঞান, মৌলিক আদর্শের জ্ঞানসহ পেশার জ্ঞান সম্পর্কে শ্রেষ্ঠত্ব বা উত্তমদের কাতারে সামিল হতে হবে। আপনি যে পেশারই হোন না কেন আপনাকে সেই পেশার জ্ঞান অর্জন করতে হবে যথাযথভাবে। পেশার জ্ঞানকে সর্বোচ্চ কাজে লাগানোর জন্য এর যাবতীয় খুঁটিনাটি বিষয় আপনাকে আয়ত্ত করতে হবে। তাহলে আপনার পথ চলা সুদৃঢ় ও পদস্খলমুক্ত হবে। জ্ঞানের ব্যাপ্তি ও গভীরতা থাকা আপনার জন্য একান্ত আবশ্যক।
৩. সাহস ও আত্মপ্রত্যয় : সাহসকিতা একটি উত্তম গুণ। যে কোনো ঝুঁকিপূর্ণ কাজ সম্পাদনের জন্য যথেষ্ট সাহসিকতার প্রয়োজন রয়েছে। আপনার মধ্যে অদৃশ্য সাহস ও সুদৃঢ় আত্মপ্রত্যয় থাকতে হবে। আপনাকে প্রায়শই নতুন প্রযুক্তি ও ধ্যান ধারণা প্রয়োগের ব্যাপারে উদ্যোগী ভূমিকা পালন করতে হয়। পর্যাপ্ত সাহস, মনোবল ও আত্মপ্রত্যয়ন থাকলে আপনার পক্ষে যে কোনো পরিবেশ পরিস্থিতির মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।
৪. বুদ্ধিমত্তা : আপনাকে সুতীক্ষè মেধা ও বুদ্ধিমত্তার অধিকারী হতে হবে। তাৎক্ষণিকভাবে যে কোনো সূক্ষ্ম ও জটিল বিষয় বা সমস্যা বুঝাবার মতো বুদ্ধিমত্তা থাকতে হবে।
৫. কাজ করার দক্ষতা : উন্নত ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার জন্য অনেককেই একসাথে অনেক কাজ করতে হয়। আপনার কার্যক্ষমতার প্রতি লক্ষ্য রেখে কাজ সাজিয়ে নিয়ে সময়ের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে আরও বেশি কাজ সম্পন্ন করুন। দেখবেন আপনার কার্যক্ষমতা বেড়ে গেছে।
৬. নেতৃত্ব : নেতৃত্ব হলো এমন একটি শক্তিশালী উপাদান বা কৌশল যা অধস্তন বা দলের বিভিন্ন লোকের প্রকৃতি ও স্বরূপকে সামনে রেখে তাদের এমনভাবে পরিচালিত করা যাতে সবাই আস্থার সাথে ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে দলীয় বা সাংগঠনিক উদ্দেশ্য অর্জনে তৎপর হয়। বস্তুত কোনো সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের নিমিত্তে কোনো ব্যক্তি বা দলের আচরণ, মনোভাব, প্রচেষ্টা ও সামগ্রিক কর্মকা-ের ওপর প্রভাব বিস্তারের প্রক্রিয়াই হলো নেতৃত্ব। নেতৃত্ব হচ্ছে একটি প্রভাবিতকরণ কার্যক্রম।
৭. ভুল থেকে শিক্ষা নেয়ার দক্ষতা : আমরা যদি আমাদের দৈনন্দিন কাজকর্মগুলোর দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাবো যে, আমরা একই ভুল বার বার করতে থাকি। একই ভুল বার বার করলে আপনি ভালো কিছু পাওয়ার আশা করতে পারেন না। নিজের ভুল শুধরানোর জন্য সহজ এই পদ্ধতিটি প্রয়োগ করে দেখতে পারেন : প্রতিদিন কি ভুল করছেন তা এক জায়গায় লিখে রাখুন। তারপর গত সাত দিনে কি কি ভুল করেছেন সেগুলো পড়–ন। আপনি লক্ষ্য করবেন একই ভুল আপনি সপ্তাহে একাধিকবার রিপিট করেছেন। হাই-ফ্রিকোয়েন্সি ভুলগুলো থেকে নিজেকে শুধরানো শুরু করুন, দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হউন ভুলগুলো রিপিট করবেন না। ভুল থেকে শিক্ষাগ্রহণ করা ইসলামী জীবনব্যবস্থার অন্যতম স্তম্ভ। ইসলামী পরিভাষায় একে বলে তাওবা (ফিরে আসা)। জীবনে সফলতার অন্যতম চাবিকাঠি হলো তাওবা। কারণ, তাওবাকারী তার তাওবার মাধ্যমে প্রমাণ করে যে, সে নিজের পরিবর্তন চায়, উন্নতি চায়। তাওবা পানি ঢেলে দেয় অহঙ্কার আর গোয়ার্তুমির আগুনে।
৮. সৃজনশীলতা : সৃজনশীলতা আপনার জন্য একটি অন্যতম মৌলিক গুণ। আপনাকে হতে হবে পরিপক্ব প্রতিষ্ঠানকে বেগবান করতে হলে নিত্যনতুন পরিকল্পণা গ্রহণ করতে হয়। প্রতিষ্ঠানের সুবিধা অসুবিধায় অভ্যন্তরীণ ও বহিরাগত ষড়যন্ত্রের মোকাবিলায় রাষ্ট্র নানা আইন কানুনের কারণে আপনাকে নতুন ধরনের নানা কর্মসূচি ও কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হয়। অনেক সময় কর্মপদ্ধতি পরিবর্তন করতে হয়। তরিৎ গতিতে অনাক্সিক্ষত ও অপ্রত্যাশীত অবস্থায় উপস্থিত অনেক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয় কাজেই আপনি যদি সৃজনশীল মানসিকতার না হন তাহলে প্রতিষ্ঠান চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
৯. আত্মবিশ্বাস : আত্মবিশ্বাস ছাড়া কোনো কাজেই সফলতা আশা করা যায় না। বলা হয় আত্মবিশ্বাসের সাথে শুরু করা মানেই হলো অর্ধেক কাজ করে ফেলা। আত্মবিশ্বাস মানে নিজেকে চেনা। নিজের সৃজনশীলতার ওপর আস্থা রাখা। হীনমন্যতা দূর করা। দৈনন্দিন ও প্রত্যাহিক জীবনে আত্মবিশ্বাস ও দৃঢ়তার সাথে কাজ করুন।
১০. যথাযথ বাচনভঙ্গি : আপনাকে হতে হবে নম্র ও কোমল আচরণের। নিজেদের মধ্যে পারস্পরিক নরম ও কোমল আচরণ করতে হবে। কথায় বলে মুখে মধু মাখো তবে বিশ্ব বিজয় করতে পারবে। কাজেই সকলে সঙ্গে সুমিষ্টি ভাষায় কথা বলা, ছোট বড় সকলকে আগে সালাম দেয়া হাসিমুখে কথা বিনিময় করা, এককথায় সদাচরণের মাধ্যমে অপর ভাইয়ের হৃদয় জয় করার যোগ্যতাকে অর্জন করতে হবে। আপনাকে আপনার কর্মীদের সাথে তো বটেই সাধারণ মানুষের সাথে রূঢ় আচরণ করা যাবে না। প্রচ- কাজ ও মানসিক চাপ, রাগ, ক্ষোভ, শারীরিক অসুস্থতা ইত্যাদি কারণে মানুষের আচরণ রূঢ় হয়ে যায়। আপনাকে এসব মানবীয় দুর্বলতাকেও সামলিয়ে নিয়ে কোমল আচরণ করতে হবে। তারপরও যদি নিজেকে সামলে নেয়া সম্ভব না হয় তবে কাজের ক্ষতি না হলে সাময়িক সমস্যার জন্য স্থান ও পরিবেশ পরিবর্তন করা যেতে পারে। তবে প্রশাসনিক কাঠামো, প্রটৌকল, প্রশাসনিক ও সাংগঠনিক শৃঙ্খলা বিনষ্ট হয় এবং আনুগত্যের ক্ষেত্রে ন্যূনতম, শিথিলতা প্রদর্শিত হওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি করে এমন কোমল আচরণ আদৌ গ্রহণযোগ্য নয়। সুন্দর আচরণ ও সুন্দর উপস্থাপনার কারণে অনেক সময় কঠিন কাজও খুবই সহজে হয়ে যায়।
১১. অন্যের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট থাকা : রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন তোমাদের মাঝে সেই উত্তম যে মানুষের উপকার করে। তিনি আরো বলেছেন পৃথিবী বাসীর প্রতি সদয় হও তবে আসমানের অধিবাসীরা তোমাদের প্রতি সদয় হবে। আপনাকে অণ্যের প্রতি সদয় হতে হবে, অপরের সুখ-দুঃখে পাশে দাঁড়াতে হবে, সহপাঠী ও প্রতিবেশীর সমস্যা দূরকরণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। অপর ভাইয়ের দায়িত্বের বোঝা লাঘবে মনোনিবেশ করতে হবে, মোটকথা খেদমতে খাল্ক বা সৃষ্টির সেবায় নিয়োজিত হতে হবে।
১২. ভাগ্য : আপনার ভাগ্য পূর্বেই নির্ধারিত হয়ে আছে। এ কথা বিশ্বাস করতে হবে যে, দুনিয়ায় তাই ঘটে যা আল্ল¬াহ ঠিক করে রেখেছেন। ভালো ও মন্দ যা-ই ঘটে আল্ল¬াহর ফায়সালামতেই ঘটে থাকে। তাঁর ইচ্ছা ছাড়া গাছের পাতাও নড়ে না। আল্ল¬াহতায়ালা মানুষকে কোনো কাজ সমাধা করার ক্ষমতা দেননি। মানুষ কোনো কাজের জন্য ইচ্ছা ও চেষ্টা করতে পারে মাত্র। কাজটি পুরা হওয়া আল্ল¬াহর ইচ্ছার উপর নির্ভর করে। যদি তাকদিরে থাকে তাহলে সমাধা হবে। তাকদিরে না থাকলে কাজটা সম্পন্ন হবে না। তাই ভাগ্যের ওপর বিশ্বাস রাখতে হবে।
১৩. সহযোগিতার মনোভাব ও অনানুষ্ঠানিক সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষমতা : সুযোগ্য নেতৃত্বের জন্য আপনাকে পারস্পরিক সহযোগিতা ও সমন্বয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে আপনার কাজ করা উচিত। অধস্তনদের অসুবিধা, দুঃখ কষ্টের সময় আপনার এগিয়ে আসা উচিত। এটা আপনার একটি সামাজিক দায়িত্ব। আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক ছাড়াও আপনার অধস্তন ও সহকর্মীদের সাথে অনানুষ্ঠানিক সম্পর্ক স্থাপনের গুণ থাকতে হবে।
১৪. হাস্যরস : আপনাকে হেসে, সুন্দর করে কথা বলতে হবে। স্মিতহাস্যে কথা বলুন সবার সাথে। মানুষ যদি বিরক্তিকরও হয়, আপনার কথা শুনে সে যেন আপনার বিরক্তিটুকু ধরতে না পারে। মোটকথা আপনার সাথে কথা বলে যেন কারো মনে না হয় আপনি রূঢ় আচরণ করছেন।
১৫. সৌজন্যবোধ : সব জায়গাতেই কিছু ন্যূনতম সৌজন্যতা মেনে চলা উচিত। এতে যেমন বুদ্ধিমত্তার পরিচয় পাওয়া যায় তেমনি দায়িত্বশীলেরও পরিচয় পাওয়া যায়। খুব জোরে জোরে কথা বলবেন না। বিশেষ করে কর্মক্ষেত্রে। ধুপধাপ পা ফেলে না হেঁটে নিঃশব্দে হাঁটার চেষ্টা করুন। কারো সাহায্যে নেয়ার পর ধন্যবাদ জানানোও কিন্তু সৌজন্যতাবোধের মধ্যে পড়ে। কাউকে বিরক্ত করলে দুঃখিত বলুন। এগুলো খুবই ফর্মাল আচরণ মনে হলেও সৌজন্যতাবোধের বহিঃপ্রকাশও বটে।
১৬. বিশ্বাস অর্জনের দক্ষতা : আপনার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করার মাধ্যমে আপনাকে বিশ্বাস অর্জন করতে হবে। আর এ বিশ্বাস তখনই অর্জন হবে যখন আপনি উক্ত দায়িত্ব সততার সাথে যথাসময়ে সুন্দরভাবে আদায় করবেন বা আদায় করাবেন। সৎ মানুষকে সবাই বিশ্বাস ও সম্মান করেন। বিশ্বাসের জন্য সততার বিকল্প নেই।
১৭. ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি : আমরা সবাই জানি নেতিবাচকের চেয়ে ইতিবাচক কর্মকা- ও মনোভাব সবার কাছেই গ্রহণযোগ্য। সফলভাবে উন্নতির শিখরে আরোহণ করতে ইতিবাচক মনোভাবের বিকল্প নেই। সত্যিকার অর্থে প্রত্যেকটি কাজেই ইতিবাচক মনোভাবের প্রধান্য বেশি। আমি অথবা আপনি এটা ভালো করেই জানি উপদেশ দেয়া সহজ তবে পালন করাটাই কঠিন। সেই সাথে আমরা এটাও জানি ইতিবাচক অবস্থান একজন মানুষকে কোলাহল, উত্তেজনা, উগ্রতা, দুশ্চিন্তা থেকে দূরে রাখে। আপনি যখন মনের দিক থেকে সৎ থাকবেন, তখন আপনা আপনি মন প্রফুল্ল থাকবে। নিজের সাথে বোঝাপড়াটাও ভালো হবে। মনকে প্রফুল্ল রাখতে স্বপ্নের চাকরিটাই না শুধু যে কোনো কাজেই সফলতা পেতে পারি আমরা।
১৮. ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখা : আপনাকে অন্যেদের প্রতিও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখতে হবে। যাতে করে তারাও সফলভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারে।
১৯. সময়ানুবর্তী হওয়া : প্রত্যেক মানুষেরই উচিত সময়ের সঠিক ব্যবহার করা। সময়ে কাজ সময়ে করতে পারলে যে কোনো ব্যক্তিই সফলভাবে উন্নতির শিখরে আরোহণ করতে পারবে। অযথা সময় ক্ষেপণকারীর একজন ব্যক্তি প্রয়োজনীয় সময় এসে হাঁপিয়ে উঠে। ফলে সে তার কাজে ভুল করে। পরে করবো বলে ফেলে রাখলে কোনো কাজেরই সফল সমাধান দেয়া সম্ভব নয় তাই সময় সচেতন হয়ে উঠুন। আপনাকে সর্বদাই সময়ের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে। অধীনস্থ কর্মীদের দিয়ে সময়ের কাজ সময়মত শেষ করাতে হবে। এই জন্য আপনার সময় সচেতনতা দায়িত্ববোধ থাকা প্রয়োজন।
২০. প্রস্তুত থাকা : সবসময় কাজ করার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। কাজের রুটিন তৈরি করতে হবে। আপনি কোন কাজ কখন, কিভাবে করবেন তার জন্য তালিকা তৈরি করতে হবে তাতে আপনার প্রস্তুতি হয়ে যাবে।
২১. নিজের লক্ষ্য সম্পর্কে সচেতন থাকা : আমরা সবাই আমাদের জীবনে ভালো কিছু করতে চাই, সফলতা অর্জন করতে চাই, বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জন করতে চাই। তাই লক্ষ্য অর্জনের জন্য আপনাকে কাজের তালিকা তৈরি করে তালিকা অনুযায়ী এগিয়ে যেতে হবে। আপনি যেখানে কাজ করে থাকেন সেখানে আপনাকে কাজের তালিকা করতে হবে। আপনার দৈনিক, সাপ্তাহিক এবং মাসিক কার্যক্রমের তালিকায় আপনার কার্যক্রম পরিচালনা করলে লক্ষ্য অর্জন করতে পারবেন।
২২. নিয়ন্ত্রণে রাখা : যখন আপনি কোনো টিমওয়ার্ক করবেন, তখন এর সফলতার জন্য অন্যের ওপর নির্ভর করা উচিত নয়। আপনার কাজের নিয়ন্ত্রণ আপনার কাছে থাকলেও অন্যদেরটা আপনার কাছে নয়। আপনি হয়তোবা আপনার কাজ পুরোপুরিভাবে চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু অন্যরা ঠিকমতো কাজ না করলে কখনো আপনি লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবেন না। কর্মস্থলে আপনার কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে নিন এবং আপনার অর্জনকে সমৃদ্ধ করুন। কাজ আপনার নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
২৩. সঠিকভাবে ও পরিপূর্ণভাবে কাজ সম্পন্ন করা : লক্ষ্য অর্জনের আরেকটি পূর্বশর্ত হচ্ছে উপযুক্ত সময়ে উপযুক্ত কাজটি করা। আপনার করণীয় কাজগুলোকে গুরুত্বের ক্রমানুসারে সম্পন্ন করুন। প্রতিদিন সকালে কাজের একটা লিস্ট করে ফেলবেন, তারপর গুরুত্বের ক্রমানুসারে সাজান। প্রতিটা কাজ করতে কতক্ষণ সময় লাগতে পারে সেই অনুযায়ী পাশে বরাদ্দ সময় লিখুন। নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে কাজ করতে শিখুন এবং কাজ শুরু করুন। কারণ আপনার কাজের যদি কোনো টাইমলাইন বা সময়সীমা বেঁধে দেয়া না থাকে তাহলে কখনো আপনি এটা সম্পন্ন করতে পাবেন না। তারপর ক্রমানুসারে কাজ শেষ করুন। দেখবেন আপনার সকল কাজ সঠিকভাবে শেষ হয়ে গেছে। সফলতার জন্য দক্ষতার উন্নয়ন প্রয়োজন। কিন্তু দক্ষতা বিষয়টি অনেক ব্যাপক এবং একটি দক্ষতা, আরেকটি দক্ষতার ওপর নির্ভরশীল। আপনি শুধু একটি বা দুটি বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করলে সাফল্য লাভ করবেন, এটা মনে করা ঠিক না। সাফল্য লাভ করার জন্য যতোবেশি দক্ষতা অর্জন করা যায় ততোই ভালো। দক্ষতা উন্নয়নের জন্য ১. আইটি, ২. কমিউনিকেশন ও ৩. ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে জানতে হবে।
১. আইটি দক্ষতা : বর্তমান সময় আপনি যদি কম্পিউটার না জানেন, তাহলে আপনাকে শিক্ষিত বলা যাবে না। শুনতে খারাপ লাগলেও এটাই সত্যি। আবার তার মানে আপনি কম্পিউটারে উচ্চশিক্ষিত হবেন তা নয়। আইটি দক্ষতা বলতে বোঝায় কম্পিউটার ব্যবহার করে চিঠি বা কোনো ডকুমেন্ট লিখতে, সুন্দরভাবে প্রিন্ট করা জানতে হবে। জানতে হবে কীভাবে কম্পিউটার ব্যবহার করে আপনি ডাটা ম্যানেজমেন্ট করতে পারেন। কম্পিউটার ব্যবহার করে কীভাবে একটি প্রেজেন্টেশন করতে পারেন। এ ছাড়া ইন্টারনেট ব্যবহারও ভালোভাবে জানতে হবে। এর পাশাপাশি যদি কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার ও মেইনট্যানেন্স জানা থাকে তবে আপনি আইটি দক্ষতার প্রধান ধাপগুলো পূর্ণ করবেন।
২. কমিউনিকেশন দক্ষতা : আপনি কীভাবে অন্য একজন ব্যক্তির কাছে সুন্দরভাবে আপনাকে উপস্থাপনা করতে পারছেন, তাই হলো আপনার কমিউনিকেশন দক্ষতা। অর্থাৎ আপনার কথা-বার্তা, আচার-ব্যবহারের মাধ্যমে আপনি আপনাকে কতটা আকর্ষণীয় করে তুলবেন অন্যদের কাছে। কমিউনিকেশন দক্ষতায় দক্ষ হতে হলে আপনাকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো চর্চা করতে হবে।
ক. আপনার সাধারণ জ্ঞান ও বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করবেন সবসময়।
খ. আপনার আত্মবিশ্বাস বাড়াতে হবে এবং বাচনভঙ্গির উন্নতিসাধন করার চেষ্টা করতে হবে। বাচনভঙ্গির উন্নয়নের জন্য উপস্থিত বক্তৃতা বা বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে হবে নিয়মিতভাবে। এমনকি বন্ধু-বান্ধব মিলে এই কাজটি করতে পারেন নিজেদের দক্ষতা উন্নয়নের জন্য।
গ. পোশাক-পরিচ্ছদের ব্যাপারে যতœবান হউন এবং যা আপনাকে মানায় এবং অন্যরা পছন্দ করে তা পরিধান করুন।
ঘ. আপনার বিভিন্ন মুদ্রাদোষ পরিহার করুন এবং হাতের নখ, চুলের খুশকি এবং অন্যান্য রোগ-জীবাণু সম্পর্কে সতর্ক থাকুন।
ঙ. আয়নার সামনে অথবা বন্ধুদের সাথে কথা বলা চর্চা করুন এবং আঞ্চলিকতা যতটা পারুন পরিহার করুন।
৩. ব্যবস্থাপনা দক্ষতা : পেশা বা ক্যারিয়ারকে সুন্দর করতে ব্যবস্থাপনা দক্ষতায় আপনার দক্ষতা থাকা প্রয়োজন। ব্যবস্থাপনা দক্ষতায় আপনি দক্ষতা দেখাতে পারলে আপনি সহজে অন্যদের চোখে পড়বেন এবং আপনি ধীরে ধীরে পেশা বা ক্যারিয়ারের শীর্ষে পৌঁছাতে পারবেন। ব্যবস্থাপনা দক্ষতা বাড়ানোর জন্য আপনাকে যা করতে হবে, তা হলো :
ক. আপনাকে নেতৃত্বের গুণাবলি চর্চা করতে হবে। নেতা ভাবলেই নেতা হওয়া যায় না। তবে নিজের ওপর বিশ্বাস রাখতে হবে এবং নেতৃত্ব দেয়ার মানসিকতা থাকতে হবে।
খ. যে কোনো কাজ হাতে নিলে তা সুন্দরভাবে শেষ করার মানসিকতা থাকতে হবে। মাঝ পথে কোনো কাজ যদি কঠিন মনে করে ছেড়ে দেন, তাহলে বুঝবেন আপনার মধ্যে ব্যবস্থাপনা দক্ষতার অভাব রয়েছে। কোনো কাজ কঠিন মনে হলে চিন্তা করে বের করবেন কীভাবে তা অন্য উপায়ে সম্পন্ন করা যায়। কারা আপনাকে এই বিষয়ে সাহায্য করতে পারে ইত্যাদি।
গ. ব্যবস্থাপনা দক্ষতার অন্যতম একটি প্রধান বিষয় হলো সময় ব্যবস্থাপনা। এর পাশাপাশি মানুষের বিশ্বাস অর্জন করাও একটি ব্যবস্থাপনা দক্ষতা। আপনার সৌজন্যবোধ আপনাকে বিশ্বাস অর্জনে সহায়তা করবে।
ঘ. ভুল থেকে সঠিকটা শিক্ষা নেয়ার দক্ষতা থাকতে হবে। তার সাথে সাথে হাস্যরস বোধ আপনাকে একজন দক্ষ ব্যবস্থাপক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সহায়তা করবে।
পরিকল্পনার জন্য আপনি ওপরে উল্লিখিত দক্ষতাগুলোর যতগুলো আয়ত্ত করতে পারবেন, আপনার সম্ভাবনা ততোই উজ্জ্বল হবে।
পরিকল্পনা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ
পরিকল্পনা সঠিক এবং উন্নত ধরনের করতে হলে কতগুলো পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য পদক্ষেপগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো :
১. প্রতিষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য যে প্রধান মুখ্য পরিকল্পনা করা হয় তা অর্জন এবং বাস্তবায়নের জন্য শীর্ষ হতে নিম্নস্তরের দিকে পর্যায়ক্রমে অনেক পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হয়। উদ্দেশ্য অর্জনের পূর্বশর্ত হচ্ছে সব পরিকল্পনার ভেতর সুষ্ঠু সমন্বয় বা সমঝোতা। তাই উন্নত পরিকল্পনা প্রণয়ের জন্য প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন পরিকল্পনার ভেতর সঠিক সমন্বয় বিধান করা প্রয়োজন। এ সমন্বয় বিধান দুই পর্যায়ে করা যায়। প্রথমটি হচ্ছে পরিকল্পনা প্রণয়নের সময়েই বিভিন্ন পরিকল্পনার ভেতর সঠিক সমন্বয় বিধান করে এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে যদি বাস্তবায়নের সময় সমন্বয়ের প্রয়োজন অনুভূতি হয়, তবে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পর্যায়ে সমন্বয় বিধান করা।
২. সময়কাল নির্ধারণ পরিকল্পনা প্রণয়নের একটি অন্যতম বিষয়। কারণ একটি পরিকল্পনা অনির্দিষ্ট সময় ধরে চলতে পারে না। পরিকল্পনার প্রতিটি কার্য নির্দিষ্ট সময়ের ভেতর সম্পূর্ণ করতে হয়। সুতরাং সঠিক চিন্তা ভাবনার মাধ্যমে পরিকল্পনার প্রতিটি কার্য নির্দিষ্ট সময়ের ভেতর সম্পূর্ণ করতে হয়। সুতরাং সঠিক চিন্তা ভাবনার মাধ্যমে পরিকল্পনায় কার্যাবলি এবং উদ্দেশ্যের গুরুত্ব ও পারিপার্শ্বিক অন্যান্য বিষয় বিবেচনা করে পরিকল্পনার সময়কাল স্থির করতে হয় এবং সঠিক সময়কাল স্থির করা হলে পরিকল্পনা উন্নতি হয়।
৩. প্রতিষ্ঠানের নিম্নস্তরে সঠিকভাবে পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে একটি বিরাট অসুবিধা হলো এই যে, অনেক সময় এ স্তরের ব্যবস্থাপকদের কাজ তাদের ওপরের স্তরের ব্যবস্থাপকবৃন্দ কর্তৃক গৃহীত পরিকল্পনা সঠিকভাবে উপস্থাপন করা হয় না। আবার তারা প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য বিভিন্ন নীতি ইত্যাদি বিষয়ে সম্যক অবগত থাকেন না। ফলে ওইসব নিম্নস্তরের ব্যবস্থাপকের পক্ষে সঠিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভবপর হয় না। পরিকল্পনা উন্নততর এবং বাস্তবায়নের জন্য প্রতিষ্ঠানের সকল স্তরের বেতর পরিকল্পনাবিষয়ক যোগাযোগের ব্যবস্থা থাকতে হবে অর্থাৎ নিম্নস্তরে পরিকল্পনাবিষয়ক তথ্য সরবরাহ করতে হবে যতে প্রতিষ্ঠানের উচ্চ এবং নিম্নস্তরের ভেতর পরিকল্পনা ব্যবধানের সৃষ্টি না হয়।
৪. প্রতিষ্ঠানের পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন তখনই ভালো হয় যখন পরিকল্পনা বাস্তবায়নকারী ব্যবস্থাপকবৃন্দ পরিকল্পনা প্রণয়নে অংশগ্রহণ করেন। ব্যবস্থাপকগণ আলোচনা বা উপদেশ দানের মাধ্যমে পরিকল্পনা প্রণয়ণে অংশগ্রহণ করতে পারে।
৫. পরিকল্পনা উন্নত এবং সুষ্ঠু বাস্তবায়নের জন্য প্রতিষ্ঠানের সব কর্মচারীর ভেতর পরিবর্তন গ্রহণ করার মানসিকতা সৃষ্টি করতে হয়। কারণ অধিকাংশ মানুষের একটি সাধারণ মানসিকতা এই যে, তারা পরিবর্তনকে সহজভাবে গ্রহণ করতে পারে না। তবে পরিকল্পনার জন্য আপনি নিম্নলিখিত ভুলগুলো পরিহার করুন-
১. আপনি যা ভালো পারেন তার সাথে আপনার পছন্দের পার্থক্য সৃষ্টি করা : অনেকেই বলে আপনার গলা ভালো তাই বলে আপনি এই সিদ্ধান্ত নিলেন যে আপনি সারা জীবন আচার অনুষ্ঠানে গান গেয়ে কাটিয়ে দিবেন। এ সিদ্ধান্ত আপনার জন্য ভুল হতে পারে, যদি না আপনি এটা বিচার করেন যে, পেশা হিসেবে গান গাওয়াটা উপভোগ করতে পারবেন কিনা। আপনি কোন ব্যাপারে ভালো তার আগে গুরুত্বপূর্ণ হলো আপনি কি করতে পছন্দ করেন। আপনি যা করতে পছন্দ করেন তাতে আপনি যথেষ্ট দক্ষ না হলেও পরিশ্রম ও সাধনার বলে আপনি তা অর্জন করতে পারেন।
২. শখের সাথে পেশার পার্থক্য না করা : আপনি হয়তো দৌড়ানো, আইন, বইপড়া, এবং ঝুড়ি বানানো পছন্দ করেন। আপনি হয়তো ভাবছেনÑ এগুলোকে একটি পেশায় আনা যায় কিনা। উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। আপনার এ রকম কিছু করতে হবে না। কোনো একটি সাধারণ পেশা আপনার সব শখ মেটাবে এ রকম ভেবে বসাটা একটা বড় রকমের ভুল। মনে রাখবেন এর অর্থ এই নয়Ñ আপনি আপনার পেশাকে পছন্দ করছেন না। আপনি আসলে পেশার ওপর আপনার শখকে গুরুত্ব দিচ্ছেন।
৩. পেশার একটি দিকের সাথে অবস্থার সামগ্রিক পার্থক্য না করা : অনেক সময় কেউ কেউ কোনো পেশা স্থির করার সময় এমন ভেবে বসেন যে, তারা তেমন কিছু না করেই তা হয়ে যেতে পারবেন। যেমন- কেউ লিখতে পছন্দ করেন। লেখালেখির পেশার সুযোগগুলো না দেখেই ভেবে নিন যে, একজন লেখক হয়ে যাবেন এটা ভুল।
২| ২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৫:৪৬
আধখানা চাঁদ বলেছেন: ভাল পোস্ট।
তবে আকারে দীর্ঘ, প্রয়োজনীয় প্যারার অভাব লক্ষ্যণীয়। দুই ভাগে ভাগ করে দিলে পড়তে আরো সুবিধা হত।
©somewhere in net ltd.
১|
২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১০:৪৬
ঢাকাবাসী বলেছেন: মোটামুটি ভাল লিখেছেন তবে্ বেশী হওয়াতে পড়া কঠিন।