নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মায়াবী বাঁধন

আশিক - ই - মুস্তফা

কিছু আলো কিছু বাতাস আর কিছু ছবির সমন্বয়ে এই পৃথিবীর জীবন কেটে যায় । জীবন কখনোই থমকে দাড়ায় না একমাত্র মৃত্যু ছাড়া বরং আশার বাণী শুনিয়ে যায় ।

আশিক - ই - মুস্তফা › বিস্তারিত পোস্টঃ

কেউ এসে ছিল - পর্ব ৪

১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১:০৪

এই বলে সে দৌড় দিয়ে চলে গেল নীচে । দুঃসংবাদটা দেয়ার জন্য । সবাই এসে পরেছে । এসে অপেক্ষা করছে । কখন আমার ঘুম ভাঙবে তার জন্য । প্রায় সবাই আমাকে ডাক দিয়ে ঘুম থেকে উঠাতে চাইল । কিন্তু মামা সবাইকে না করেছে । তাই অপেক্ষা করছে সবাই । এতক্ষণে আমার ঘুম ভাঙতে শুরু করেছে । আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল । আমি তাকালাম সামনে । চোখ খুলেই আমার আত্মা বেরিয়ে যাবার দশা । আমার মুখ হা হয়েই রইল । সামনে দানবীয় হাসি মুখে দাড়িয়ে আছে বড় মামা । আমার দিকে মুখটা নামিয়ে এনে বলল,

“ ভালো ঘুম হয়েছে”।

আমি কি করবো বুঝতে পারছিলাম না , তাই মাথা দুলিয়ে বোঝালাম হ্যাঁ আমার ঘুম ভালো হয়েছে ।

“ভালো ঘুম না হলে আরেকটু ঘুমিয়ে নে ।”

মামার কথায় আরও আঁতকে উঠলাম আমি । তাকে দেখেই আমার আত্মা বেরিয়ে যাবার দশা , আর আমি নাকি আরও একটু ঘুমিয়ে নেবো । এই অবস্থায় কি কারো ঘুম হয় । আমার মন চাচ্ছে দৌড় দিয়ে পালিয়ে যাই । কিন্তু সেটা সম্ভব হবে না । আমার পা কাঁপছে । থামাতে চেষ্টা করছি কিন্তু পারছি না । কেন পারছি না জানি না । টেনশন কাজ করছে ।

মামা বলে উঠল , “ নাস্তা কর । তারপর তোর সাথে কথা আছে । পালাবি না ।”

আমি মাথা নেড়ে জানালাম আমি পালাচ্ছি না , আমি আছি বাসায় । সে থেকে আমি বাসাতেই আছি । এর মধ্যে নাস্তা খেয়েছি । নাস্তা টা ভালো লেগেছে । মনে করেছিলাম মা বানিয়েছে । কিন্তু আমার ধারনা ভুল । রূপা আজকে নাস্তা রেডি করেছে । সবার জন্যই করেছে। কিন্তু আমার জন্য সে স্পেশাল ভাবে বানিয়েছে । মা কে এটাও বলে রেখেছে যে কেউ যেন না জানে এটা । কিন্তু আমি আসল খবর পেয়েছি মার কাছ থেকেই । যখন মা নাস্তা দিয়ে যায় তখন বলেছিল আমাকে। মা এভাবে বলেছিল ,

“ তোর জন্য স্পেশাল নাস্তা ।”

আমি বললাম , “ তুমি বানিয়েছ?”

মা বলল, “ কেন আরও কেউ আছে নাকি?”

আমি বললাম , “ না । তা হবে কেন । প্রত্যেক দিন তো তুমিই বানাও । আজকেও তুমি বানিয়েছ । কিন্তু কোনদিন স্পেশাল নাস্তা বানাও নাই তাই জিজ্ঞেস করলাম।”

মা বলল , “তাই নাকি”।

আমি বললাম, “ হ্যাঁ তাই তো”।

আমি আরও বললাম, “নাস্তা দিয়ে কোনদিন বলও নাই যে এটা স্পেশাল । যেমন টা আজকে বললে ।”

মা বলল, “ এখনি এই অবস্থা । বিয়ে করলে তো তোকে খুজেই পাওয়া যাবে না ।”

আমি কিছু বললাম না । মা নীচে যাবার আগে বলে গেল যে নাস্তা রূপা বানিয়েছে । কি ছিল না সেখানে । আমার প্রিয় সবই ছিল । আমি খেলাম । খেয়ে তৃপ্তি পেলাম । কিন্তু সেটা কতক্ষণ থাকে কে জানে । পেটের তৃপ্তি মিটেছে কিন্তু মনের – সেটার কি হবে । আমি সেটার জন্যই অপেক্ষা করছি । কি হয় দেখা উচিত ।



নাস্তা শেষ করেছি এক ঘণ্টা আগে । আমার বর্তমান অবস্থান একটু ভালো জায়গায় । আমি আছি এখন নীচতলায় । ড্রয়িং রুমে । রুমটা বেশি বড় না । আবার ছোটও না । যাকে বলে মাঝারি সাইজ । রুমের এক পাশে টিভি । তার পাশে সোফা । এবং সেই সোফা মানুষের চাপে পিষ্ট হচ্ছে । তিন জন বসার জায়গায় পাঁচজন বসেছে । বাকি গুলোতে একই দশা । আমি আগে বলেছি আমার অবস্থা আগের চেয়ে ভালো । সেটা বলেছিলাম কারণ আমি আমার মধ্যে ভীত হওয়ার ভাব কেটে গেছে । এখন মনে আনন্দ হচ্ছে । পরিবেশটা উপভোগ করছি । আমাকে নিয়ে সবার আগ্রহ । কি করা হবে সেটা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে । কিন্তু আমি টেনশন করার বদলে কৌতূহল বোধ করছি । এতদিন এটা ছিল না । কাকে নিয়ে এটা বোধ হয় বুঝতে পারছেন । না পারলে অসুবিধা নাই । কৌতূহল রুপাকে নিয়ে । এবং নিজেকে নিয়েও । আমি ধীরে ধীরে রূপার প্রতি দুর্বল হচ্ছি । তার রূপ , গুণ আমাকে মোহিত করে ফেলেছে । মায়াজালে জড়িয়ে পরছি । প্রেমের মায়াজাল । বড়ই কঠিন মায়াজাল । আমি এখন দাড়িয়ে আছি সবার সামনে । এতক্ষণ একা ছিলাম । তবে একটু আগে রূপা আমার সাথে যোগ দিয়েছে । রূপা আমার একেবারে পাশে দাঁড়ায় নি । একটু দূরত্ব রেখে দাঁড়িয়েছে । আমি মুখে উদাস ও কৌতূহল ভাব আনার চেষ্টা করছি । দুটো একসাথে আনতে পারছি না । একটি করলে আরেকটি হচ্ছে না। আমি সেটা করার চেষ্টা করতে করতে টাইম পাস করার চেষ্টা করছি । প্রায় সবাই এসে পরেছে । তবে একজন এখনো আসে নাই । তিনি আর কেউ নন । বড় মামা । যিনি একটু বেশিই রাগী । তার রাগের লেভেল আপ ডাউন করে। সেটা বুঝা বড় কষ্টের কাজ । এমন দিন গেছে বাড়িতে একটা সাধারণ ঘটনা ঘটেছে কিন্তু মামা এতই চটেছে যে যাকেই পেয়েছেন সামনে তাকেই গালাগাল করেছেন । আমার এমনও হয়েছে যে বাড়িতে চোর এসে মামার একটা গুরুত্বপূর্ণ জিনিস চুরি করে নিয়ে গেছে । মামা সেটা কে কিছুই মনে করেনি । তাই আজকে তিনি কি করেন সেটা বুঝা যাচ্ছে না । আমি সেটা দেখার জন্যই উদগ্রীব হয়ে আছি । সবার শেষে মামা এলেন । আমার আর রূপার সামনে মুখোমুখি একটা সিট খালি ছিল । সেটাতে গিয়ে তিনি বসলেন । আজকে তার মন মনে হয় বড় ধরণের গালাগাল করার জন্য প্রস্তুত হয়ে এসেছে । অনেক আয়োজন করে তিনি সোফার খালি অংশে বসলেন । মুখে তৃপ্তির আবহাওয়া। যেটা আবার আমার ও রূপার জন্য অশনি সংকেত । সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে মামা মুখ খুললেন আমাকে উদ্দেশ্য করে প্রথম বলা কথাটি ছিল এমন,

“ কিরে গাধা ঘুম ভালো হয়েছে?”

একেবারে পষ্ট করে অপমান । মামা যে রেগে আছেন তা বোঝা যাচ্ছে এই ভাবে প্রশ্ন করায় ।

আমি বললাম , “ হ্যাঁ। খুব ভালো হয়েছে।”

মামা মনে হয় এরকমটাই আশা করেছিলেন । রাগ মনে হয় আরও একটু উসকে উঠল । সেটা বুঝা গেল পরের কথায় । তিনি বললেন,

“ তাতো হবেই । পাখি যে উড়ে এসে একেবারে মনের ভিতর বাসা বানাইসে । তাই না রাশেদ।”

এবার আরেকটু আক্রমণ । এটা কে কিছু মনে করলাম না । পাশ কাটিয়ে এড়িয়ে গেলাম । মামা জবাবের আশা করেছিলেন । আমি কিছুই বলি নাই । চুপ করে দাড়িয়ে রইলাম । চুপ থাকা সম্মতির লক্ষণ । মামা ধরে নিলেন তাই । আসলে গতকাল ঘুম হয়েছে – তবে অতো ভালো হয় নাই। যে টুকু সময় ঘুমিয়েছি বারবার রূপা স্বপ্নে হাজির হয়েছে । রূপার রূপ মোহিত করে রেখেছিল । আমি কিছু না বলায় মামা আরও চটে গেলো । পরের প্রশ্ন ছিল সরাসরি উত্তরের জন্য – প্রশ্নটি ছিল এমন ,

“তোদের পরিচয় কতো দিনের ?”

আমি বলার সুযোগ পেলাম না । এবার রূপা জবাব দিল । বলল, “ দেড় বছর”।

আমি না বলে ভালোই করেছি । আমার মুখ ফসকে প্রায় বেরিয়ে পরে ছিল “ মাত্র দেড় দিন’’। কোথায় দেড় দিন আর কোথায় দেড় বছর । আকাশ পাতাল তফাৎ । সিদ্ধান্ত নিলাম সরাসরি আমাকে জিজ্ঞেস না করলে উত্তর দিব না । রূপা কথা খুব গুছিয়ে বলতে পারে । যেটা আমি পারি না । রূপা এরপর সব প্রশ্নের জবাব খুব সুন্দর ভাবে দিতে লাগল । এমন ভাবে উত্তর দিচ্ছিল যে মামা কেও দ্বিধান্বিত মনে হচ্ছিল । প্রশ্নের পর প্রশ্ন করে ও রুপাকে আটকাতে পারছিল না । মামা রূপার পরিবার সম্পর্কে সব কিছু জিজ্ঞেস করে জেনে নিল । অনেক কথাই রূপা বানিয়ে বলেছে , তার একটা নমুনা দেই ,

মামা রূপা কে জিজ্ঞেস করলো “ তোমাকে গাঁধা টা কীভাবে পটালো?”

রূপা বলল , “ একদিন আমি ভার্সিটির বাসে করে যাচ্ছিলাম । বসার জায়গা না পেয়ে দাড়িয়ে ছিলাম । হঠাৎ করে দেখি একটা ছেলে আমার জন্য জায়গা ছেড়ে দিল । আমাকে ডেকে সেখানে বসতে বলল । আমি তার জায়গায় বসলাম । এবং তার সাথে কথা বলা শুরু করলাম । এভাবেই কথা শুরু । নাম জানা , পরিচয় , মোবাইলের নাম্বার আদান প্রদান । তারপর রাত জেগে কথা বলা । এভাবেই হয়ে গেলো ।”

রূপা যখন ঘটনাটা বলছিল , আমি একটু অবাক হয়েছিলাম । কারণ গতকাল রাতে আমি কল্পনায় যেভাবে ভেবেছি ঠিক সেভাবেই রূপা বর্ণনা করলো । অবাক হওয়ার মতই ব্যাপার । একই ভাবনা দুজনেই কিভাবে ভাবলাম । পুরাই কাকতালীয় ব্যাপার । দেখলাম সবাই রূপার কথা বিশ্বাস করে ফেলেছে । রূপা সব কিছুই ম্যানেজ করে ফেলল । আমার বিস্মিত হওয়া তখনো বাকি । কারণ এরপর যা হয়েছিল তাতে আমি আঁতকে উঠেছিলাম । নিজের মনকে বিশ্বাস হচ্ছিল না । আসলেই ঠিক শুনছি কি না । আচ্ছা এত ভনিতা না করে বলেই ফেলি । আমাকে আর রূপা কে জেরা করা শেষ হওয়ার পর আলাদা করে মামা আমাকে থাকতে বলল ।

মামা বলল, “ গাধা বাবা , তুমি একটু পর আমার রুমে আসো । তোমার সাথে কথা আছে ।”



( চলবে )

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.