নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মায়াবী বাঁধন

আশিক - ই - মুস্তফা

কিছু আলো কিছু বাতাস আর কিছু ছবির সমন্বয়ে এই পৃথিবীর জীবন কেটে যায় । জীবন কখনোই থমকে দাড়ায় না একমাত্র মৃত্যু ছাড়া বরং আশার বাণী শুনিয়ে যায় ।

আশিক - ই - মুস্তফা › বিস্তারিত পোস্টঃ

কেউ এসে ছিল - পর্ব ৫

২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:২২

আমি বললাম , “ কেন ? এখানে বলা যায় না ।”

মামা বলল, “ না । এখানে বলা যায় না । কারণ তুই একটা গাধা । গাধার চেও গাধা ।”

আমি তখন কিছুই বলি নাই । কারণ মামার মাথা গরম । তুই তোকারি , গালাগালি কোনটাই বাদ যায় নাই । আমি আর কথা বাড়ালাম না । বের হয়ে গেলাম । মামা ও বের হয়ে তার রুমে চলে গেলো । আমি আধা ঘণ্টা পর মামার রুমে গেলাম । দরজার সামনে দাড়িয়ে টোকা দিলাম ।

বললাম, “ আসতে পারি ।”

মামা বলল, “ আয় গাধা বাবা আয় ।”

আমি ভিতরে ঢুকলাম । আমি ভিতরে ঢুকতেই মামা বলল, “ দরজাটা লাগা ।”

আমি দরজা লাগিয়ে দিলাম । মামা একটা চেয়ারে বসে ছিল । সামনে একটা টেবিল । ছোট খাটো । টেবিলে একটা বই উপর করে রাখা । বোঝা গেলো মামা বই পরছিল । আমি আসায় বইটা উপর করে রেখে দিয়েছে ।

মামা বলল, “ ঐ খালি চেয়ার টা নিয়ে আমার সামনা সামনি বস ।”

আমি চেয়ার টা টেনে নিয়ে সামনা সামনি বসলাম ।

মামা আমাকে বলল, “ মেয়েটার নাম যেন কি?”

আমি বললাম , “ রূপা”

মামা বলল, “ও আচ্ছা । মেয়েটা ভালো । তোর পছন্দ আছে । তোর সাথে মানাবে ।”

আমি টাসকি খেলাম মামার কথা শুনে । একটু আগে তার বলা কথা আর এখন যে কথা শুনছি তাতে কোনই মিল নাই ।

মামা আবার বলল, “ আজকেই মেয়েটাকে তার বাসায় দিয়ে আয় । আর তার বাবার সাথে কথা বলে আয় বিয়ের ব্যাপারে । শুভ কাজ তাড়াতাড়ি করা ভালো । আর হ্যাঁ , যাবার সময় এক প্যাকেট মিষ্টি নিয়ে যাস । খালি হাতে যাবি না । খালি হাতে গেলে তোকেও খালি হাতে আসতে হবে । যদি টাকা না থাকে আমার কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকা নিয়ে যাস । বাজার থেকে সবচেয়ে ভালো মিষ্টি কিনে নিয়ে যাবি । পারবি নাকি , ও ভুলেই তো গেছি তুই একটা গাধা । আমার পরিচিত দোকান আছে , নাম্বার টা নে। ফোন করে আমার কথা বলবি , ভেজাল মুক্ত খাটি মিষ্টি তোকে দিয়ে দেবে ।”



আমি আর রূপা পাশাপাশি হাঁটছি । তবে একটু দূরত্ব বজায় রেখে । আমাদের বর্তমান অবস্থান শিখা চিরন্তনের পাশে উঁচু দেয়ালের উপর । সেখানে বসলাম আমরা । অনেক লোক এসেছে আজ ছুটির দিন বলে । রূপার হাতে একটা সুটকেস । তাতে আবার চাকা আছে । তাই কোন সমস্যা হচ্ছে না । একবার আমি রুপাকে বলেছিলাম সুটকেসটা আমার কাছে দিতে । কিন্তু রূপা দেয় নাই । নিজের কাছেই রেখেছে। আমাদের মাঝে কথা স্বাভাবিক ভাবেই হচ্ছে । মনে হচ্ছে অনেক দিনের পরিচয় আমাদের । অথচ দুই দিন ও হয় নাই । মানুষ কীভাবে এত তাড়াতাড়ি খাপ খাইয়ে নিতে পারে , আমি বুঝি না । রুপাকে দেখে মনে হচ্ছে না যে সে চিন্তিত । কারণ তাকে আমার সাথে পাঠানো হয়েছে তাকে বাসায় দিয়ে আসার জন্য । তাই আবার আমাদের বাসায় যাবার রাস্তা মোটামুটি বন্ধ । আমার মনে অবশ্য ফুর্তি ভাব এসে পরেছে । কারণ পকেট ভর্তি টাকা । পাঁচ হাজার টাকা । গতকালও আমার পকেট ছিল ফাঁকা । আজ সেটার স্বাস্থ্য বেশ ভালো । পুরো পাঁচ অবশ্য নেই । কারণ হোটেল সাউদিয়াতে গিয়ে রাতের খাবারের বিলটা দিয়ে এসেছি । আর সঙ্গে দুপুরের জন্য পেট পূজা করে আসা হয়েছে । তবে যা আছে তাই অনেক । ভাবছি কি করা যায় । এদিকে রূপা বারবার তারেকের মোবাইলে ট্রাই করছে সেই তখন থেকেই । কিন্তু মোবাইল সুইচ অফ । গতকাল থেকেই তারেকের মোবাইল সুইচ অফ । আজো একই অবস্থা । রূপার কপাল একবার কুচকাচ্ছে আবার স্বাভাবিক হচ্ছে । কিন্তু বাইরে থেকে যাতে কিছু বোঝা না যায় তাই মুখে হাসি থাকছেই । কিন্তু আমি বুঝতে পারছি তার অবস্থা ।

আমি জিজ্ঞাসা করলাম , “ ফোন ধরছে না ?”

রূপা বলল, “ না । ফোন ধরছে না ।”

আমি বললাম, “ একটু পরে ট্রাই করো । পেয়ে যাবে ।”

রূপা বলল, “আচ্ছা।”

আমি বললাম , “ চলো ঐ দিকে যাই । ঐখানে একটা লোক কিছু বোতল নিয়ে দাড়িয়ে আছে । বল দিয়ে থ্রো করে ফেলতে পারলে একটা ড্রিংক ফ্রি।”

রূপা বলল, “ আমি পারি না ।”

আমি বললাম, “ আমিও পারি না । তবে চেষ্টা করবো । চলো যাই ।”

রূপার ইচ্ছা ছিল না । কিন্তু আমার আগ্রহ দেখে শেষে রাজি হয়ে গেলো ।

কিন্তু দেখা গেলো রূপা তিনটা থ্রো করে প্রত্যেকবারেই সব কয়টা ফেলে দিল । এবং তিনটা এনার্জি ড্রিংক ফ্রি পেয়ে গেলো । কিন্তু আমি ছয় বার চেষ্টা করে একবারও ধারে কাছে যেতে পারলাম না । আমার অবস্থা দেখে রূপা হাসতে লাগল । আমি কিন্তু ইচ্ছে করে এলোমেলো ভাবে বল থ্রো করেছি । যাতে রূপার মন একটু ফ্রেশ হয় আর ফোন করে তারেককে না পাওয়ার কথা কিছুক্ষণের জন্য হলেও ভুলে থাকে । এরপর আরও কিছু মজার গেম খেললাম ।

আমি রুপাকে বললাম , “ গরম না ঠাণ্ডা খাবে ।”

রূপা বলল, “ গরম কফি ।”

আমি বললাম, “ কফি তো হবে না , চলো এক কাপ রং চা খাই।”

রূপা বলল, “ চলো তাহলে”।

একটু হাঁটতেই এক পিচ্ছি কে দেখলাম চা নিয়ে ঘুরছে । তাকে ডাক দিলাম ।

বললাম , “ এই পিচ্ছি এই দিকে আয়।”

পিচ্ছি টা এই দিকে এসে বলল, “ কি খাইবেন? চা না বিস্কুট”।

আমি বললাম, “ দুই কাপ চা”।

পিচ্ছিটা দুই কাপ চা রেডি করে আমাদের দিল। এর নাম টা জিজ্ঞেস করা হয় নাই । তাই এবার বললাম,

“ তোর নাম কি রে ?”

“ জে আমার নাম মিলন” পিচ্ছি টা বলল।

আমি বললাম , “খুব সুন্দর নাম তো তোর । স্কুলে যাস না।”

“ না । তয় একটু পর আপনে গো মতো আপা আর ভাই আইসা আমাগো ঐ গাছ তলায় পড়াইব । হেই খানে অনেক মজা ।” মিলন বলল

আমি বললাম , “তাই নাকি । দারুণ তো ।”

মিলন বলল, “ হ হেই খানে অনেক মজা করে সব্বাই । আমিও করি ।”

“তোদের পড়া দেখতে হবে । আমি আর তোর এই আপা যাব ।” আমি বললাম

“ তয় চলেন আমার লগে ।” মিলন বলল

আমি রূপা কে বললাম , “যাবা নাকি ?”

রূপা বলল, “ হ্যাঁ , আমি যাব।”

এরপর আমি , রূপা আর মিলন হাঁটতে লাগলাম । হেটে মিলনরা যেই গাছ তলায় পরে সেখানে চলে এলাম ।

মিলন আমাদের এক লোক দেখিয়ে বলল, “ হেই যে গাছ তলায় যে ভাই বইয়া আছে হে আমাদের পড়ায় ।”

মিলন ডাক দিল, “ ও সাগর ভাই , দেহেন মেহমান আইসে আইজকা।”

মিলন যাকে সাগর ভাই বলে ডাক দিল তিনি মুখ ঘুরিয়ে তাকালেন । আমাদের দেখে মুখে হাসি এনে আমাদের দিকে এগিয়ে এলেন । এসে হাত বাড়িয়ে দিলেন হ্যান্ডসেক করার জন্য । আমিও হাত বাড়িয়ে হ্যান্ডসেক করলাম । সাগর ভাই বললেন,

“ স্বাগতম তোমাদের এই ছোট বিদ্যা পাঠে।”

আমি বললাম, “ ধন্যবাদ আপনাকে ।”

সাগর ভাই বললেন, “ নাম কি তোমাদের ?”

আমি বললাম, “ আমি রাশেদ । রুপাকে দেখিয়ে বললাম “ওর নাম রূপা”।

সাগর ভাই বললেন, “ ঘুরতে বের হয়েছ তাই না । আর নিশ্চয় মিলন এর কাছে আমাদের কথা শুনেছ ।”

আমি আর রূপা একসঙ্গে বললাম , “ হ্যাঁ । চা খেতে গিয়ে আপনাদের কথা মিলনের কাছে শুনলাম । দেখতে ইচ্ছে হল , তাই মিলনের সাথে চলে এলাম ।”

সাগর ভাই বললেন , “ খুব ভালো করেছো। তোমাদের মতো ছেলেমেয়ে আছে বলেই তো আমাদের এই ছোট পাঠশালা টিকে আছে । ”

রূপা সাগর ভাই কে বলল, “ কীভাবে চালান এটা । কষ্ট হয় না ।”

সাগর ভাই বললেন , “ কষ্ট যে হয় না তা না । তবে তোমাদের মতো ছেলেমেয়ে কম পারিশ্রমিকে এদের পড়ায় বলেই পারছি । ”

রূপা বলল, “ বই খাতা কীভাবে যোগান দেন এদের ?”

সাগর ভাই বলল, “ বই খাতা আমরা একটা এনজিও র মাধ্যমে পেয়ে থাকি । বেতন এরাই দেয় । ঝরে পড়া শিশুদের নিয়ে তাদের একটা প্রোগ্রাম এর আওতায় এটা চলছে ।”

রূপা বলল, “ আমরা কি আপনাদের সাথে যোগ দিতে পারি ?”

সাগর ভাই আনন্দের সাথে বললেন , “ অবশ্যই পার ।”

এরপর আরও কিছু সময় কাটিয়ে সাগর ভাই আর তার টিমের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে এলাম । অনেকক্ষণ পর রূপা মোবাইল বের করলো তারেক কে কল করার জন্য । আমি রূপা কে মোবাইল বের করতে দেখে বললাম,

“তারেক কে ফোন করবে? দাও আমার কাছে আমি ট্রাই করি ।”

আমি রূপার কাছ থেকে ফোনটা নিয়ে কল করলাম ডায়াল লিস্ট থেকে তারেকের নাম্বারে । এবং প্রথম বারেই পেয়ে গেলাম । রূপার দিকে বাড়িয়ে বললাম , “ নাও রিং হচ্ছে । কথা বল ।”

রূপা ফোনটা নিয়ে একটু দূরে চলে গেলো । বেশ কিছুক্ষণ কথা বলে আবার আমার কাছাকাছি এলো । এই সময়টায় আমার মনটা বেশ উদাস লাগছিল । বুঝতে পারছি আমি রূপার প্রতি দুর্বল হয়ে পরেছি। কিন্তু এটা সম্ভভ নয় । রূপা তারেককে ভালবাসে । আমি চাইলেও রুপাকে কাছে পাবো না । রূপার মন জুড়ে তারেকের অস্তিস্ত । আমার ভাবনায় ছেদ ঘটালো রূপা । তাকে আনন্দিত মনে হচ্ছে । সে তার আনন্দ আমার সাথে শেয়ার করতে চাচ্ছে । আমি রূপার কথায় মনোযোগ দিলাম । রূপা বলছে ,

“ তারেক আসছে । একটু পর আমাকে এসে নিয়ে যাবে ।”

আমি বললাম , “ খুব ভালো কথা । তোমার তো আনন্দ করা উচিত । ”

রূপা বলল, “ হ্যাঁ । তা হওয়া উচিত , কিন্তু আমার মন যেন কেমন করছে । কিছু ভালো লাগছে না , এমনকি তারেকের আসার খবর ও নয় । এমন কেন হচ্ছে জানি না ।”

আমি বললাম , “ তুমি তারেককে অনেক ভালোবাসো তাই এমন অনুভূত হচ্ছে । যখন তারেক কে কাছে পাবে তখন সব চিন্তা দূর হয়ে যাবে ।”

এরপর রূপা আর কিছু বলেনি । তারেক যতক্ষণ আসে নাই ততক্ষণ রূপা আমার সাথে আর একটা কথাও বলে নাই । কিন্তু আমার মনে হচ্ছিল রূপা আরও কিছু বলতে চেয়েছিল । কিন্তু বলেনি । মনের কোণে চেপে রেখেছে । আমিও যে কিছু বলতে চেয়েছিলাম । কিন্তু বলার মতো সাহস সঞ্চিত না থাকায় আর বলা হয় নি মনের কথা ।

তারেক এরপর এসে রুপাকে নিয়ে যায় । যাবার আগে রূপার চোখে অশ্রু ছিল । এই অশ্রু কিসের জন্য তারেক কে পাওয়ার জন্য না আমাকে এখানে ফেলে চলে যাওয়ার জন্য আমি জানি না । তবে আমার মন বলতো দ্বিতীয় কারণের জন্য ।



অনেক বছর পরের কথা ..................



রূপার আজ বিবাহ বার্ষিকী । তারেকের সাথে তার বিয়ের আজ পঁচিশ বছর পূর্তি । এই জন্য তারেক আজ একটা পার্টি দিয়েছে । কিন্তু রুপার মন উদাস হয়ে আছে । একটু আগে তার ছেলে এসে ছিল । ছেলেটা বড় হয়ে গেছে দেখতে দেখতে ।ছেলের বয়স এখন তেইশ । রূপা তার ছেলের নাম রেখেছে রাশেদ । রূপার একটা মেয়েও আছে মেয়েটা দেখতে অবিকল রূপার মতো হয়েছে । মেয়ের বয়স ও আঠারো পেরিয়ে গেছে । মেয়েটার মন আজ খারাপ । রূপা মেয়ের কাছে গিয়ে বলল, “কিরে মন খারাপ কেন ?”

রূপা মেয়ের নাম রেখেছে রূপসা । রূপসা মাকে বলল, “ আমার এক বন্ধু কে সেই কখন থেকে ফোন করছি, পাচ্ছি না । ফোন সুইচ অফ করে রেখেছে ।”

রূপা বলল, “ আমাকে দে আমি করছি । দেখি পাই কি না ।”

রূপা ডায়াল লিস্ট থেকে রূপসার সেই বন্ধুর নাম্বারে কল করলো । রূপা শুনতে পেল রিং হচ্ছে । ফোনটা রূপসার দিকে দিয়ে বলল, “নে রিং হচ্ছে ।”

রূপসা ফোন নিয়ে একটু দূরে চলে গেলো কথা বলতে । রূপা কিছু মনে করলো না ।

এই সময় রূপার কাছে পুরনো কথা মনে পরে গেলো । রাশেদের কথা মনে পরে গেলো । না বলা কথা টি আজও রূপার মনে ব্যথা দেয় । তার আজ কি নেই । তারেকের সাথে সুখের সংসার , দুই ছেলে মেয়ে । কষ্ট নেই । তবু কেন মন কাঁদে ............... (শেষ )

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.